Category: Chicken Breed

Details about various chicken breed.

  • লেয়ার মুরগি পালন

    বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প দ্রুত বর্ধনশীল একটি সেক্টর। আমাদের দেশের প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৩৮ ভাগ আসে মুরগির মাংস ও ডিম থেকে। লেয়ার ডিম উৎপাদনকারী একটি মুরগির বিশেষ জাত যা পোল্ট্রি শিল্পের একটি উল্লেখযােগ্য অংশ। সঠিকভাবে লেয়ার মুরগি পালন করলে মূলধন লগ্নিকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাভবান হতে পারে।

    লেয়ার মুরগি পালনে অধিক জায়গার প্রয়ােজন হয় না। তাই লেয়ার মুরগি পালন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা। এটি জীবিকা নির্বাহের একটি উপায় হিসেবে দেশে বেকার যুবক ও নারীদের কর্মসংস্থান ও আয়ের উৎসের পাশাপাশি তাদের পরিবারে প্রাণিজ আমিষের অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই লেয়ার পালন শুরুর আগে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত লেয়ার পালনের মূল বিষয়গুলাে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    লেয়ার মুরগি কী ?

    ডিম উৎপাদনের জন্য যেসব মুরগি পালন করা হয় সেগুলােকে ডিম পাড়া মুরগি বা লেয়ার বলে। অধিক ডিম উৎপাদনশীল বিশুদ্ধ জাতের মােরগ-মােরগির মধ্যে বংশপরম্পরায় প্রজননের মাধ্যমে হাইব্রিড লেয়ার মুরগি তৈরি করা হয়, যা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ডিম উৎপাদানের জন্য পালন করা হয়।

    ডিমের খােসার রঙের উপর ভিত্তি করে লেয়ারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় :

    ১) সাদা ডিম উৎপাদনকারী জাত : পালকের রং সাদা।

    ২) লাল ডিম উৎপাদনকারী জাত : পালকের রং বাদামি।

    বাংলাদেশে প্রাপ্ত হাইব্রিড লেয়ার ও এদের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম :

    বাংলাদেশে সরকারীভাবে নতুন হাইব্রিড লেয়ার জাত স্বর্ণা ও শুভ্রা আনুষ্ঠানিক উদ্বােধন করা হয়েছে। তবে তা এখনাে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায়নি। বিদেশ থেকে প্যারেন্ট স্টকের একদিনের বাচ্চা এনে বড় করে তাদের পাড়া ডিম ফুটিয়ে বিভিন্ন স্ট্রেইনের লেয়ার হাইব্রিড বাচ্চা উৎপাদন করা হয় এবং খামারিদের মাঝে বিক্রি করা হয়। এই প্যারেন্ট স্টকের মুরগি ডিমপাড়া শেষে বাতিল হয় এবং নতুন করে আবার প্যারেন্ট স্টক এর একদিনের বাচ্চা আনতে হয়।

    তবে বর্তমানে কিছু হ্যাচারি বা ব্রিডার ফার্ম গ্রান্ড প্যারেন্ট স্টক বাইরে থেকে নিয়ে এসে এদেশে পালন করায় প্যারেন্ট স্টকের একদিনের বাচ্চা কমমূল্যে তাদের কাছ থেকে অন্যান্য যাচারি কিনতে পারছে।

    লেয়ার মুরগির সাধারণ বৈশিষ্ট্য

    • ডিম উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে বছরে ২৮০-৩২০টি।
    • ১৮-২০ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সবগুলাে মুরগি একই সাথে ডিম উৎপাদন করে।
    • এদের ডিমের ওজন দেশি মুরগির চেয়ে ১০-১৫ গ্রাম বেশি (৫০-৬০ গ্রাম)
    • কুচে হওয়ার প্রবনতা কম থাকে।
    • ডিম উৎপাদনের সময়কালে পালক ছাড়ে না।

    লেয়ার মুরগির খামার স্থাপন

    লেয়ার খামারের স্থান নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয় :

    • খামার তৈরির নির্বাচিত স্থান লােকালয় বা আবাসিক ঘনবসতি এলাকা থেকে দূরে শুষ্ক, উঁচু ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা বিদ্যমান এমন থেকে হবে।
    • যাতায়াতের সুবিধা থাকতে হবে।
    • অন্য মুরগির খামার বা প্রাণীর ঘর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে হবে।
    • পর্যাপ্ত আলাে ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
    • আশপাশে পচা ডােবা ও নর্দমামুক্ত থেকে হবে।
    • পানি ও বিদ্যুতের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
    • ডিম উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট কাঁচামালের সহজলভ্যতা থাকতে হবে
    • ডিম বাজারজাতকরণের সুবিধা থাকতে হবে।
    • ভবিষ্যতে খামারটি সম্প্রসারণ করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে জমি নির্বাচন ও ক্রয় করতে হবে।
    • বন্য জন্তু বা অবাঞ্ছিত লােকজন দ্বারা আমার ক্ষগ্রিস্ত হবে না এমন স্থান হবে।
    • বিষ্ঠা ও লিটার সরিয়ে ফেলার সুযােগ থাকতে হবে।
    • খামার ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়ার সুবিধা থাকতে হবে।

    খামারের অবকাঠামাে নির্মাণ

    মুরগির ঘর নির্মাণে কোনাে ভুল বা ক্রটি করা চলবে না। মুরগিকে আরামদায়ক পরিবেশ নিরাপদ ও রােগমুক্ত রাখার জন্য ঘরের প্রয়ােজন। খােলামেলা উঁচু জায়গায় প্রচুর আলাে ও বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় তৈরি করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে দুই ধরনের ঘরে মুরগি পালা হয়। যথা :

    1. খােলামেলা ঘর। (ওপেন শেড)
    2. আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত ঘর। (কন্ট্রোল শেড)

    লেয়ার খামারের খােলামেলা ঘর তৈরির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলাে বিবেচনা করতে হবে:

    ১. ঘরের অবস্থান ও প্রকৃতি :

    এই ঘর দক্ষিণে খােলা থাকে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘরের খােলামেলা স্থানে পর্দা দ্বারা ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা। ঘরের মধ্যে মুরগি আবদ্ধ রাখার জন্য খােলা স্থান জাল দ্বারা ঘিরে দেওয়া হয়। ঘরে লিটার ধরে রাখার জন্য খােলা স্থানের নিচের অংশ ১-১.৫ ফুট দেয়াল দ্বারা ঘিরে দেওয়া থাকে। নিরাপত্তার জন্য সম্পূর্ণ অংশ তারের জাল দ্বারা ঘেরা থাকে।

    ২. ঘরের প্রশস্ততা :

    সাধারণত ছােট খামার ঘরের প্রশস্ততা খাঁচার আকার অনুসারে করতে হয়। লিটার পদ্ধতিতে ঘরের প্রশস্ততা সর্বনিম্ন ১০ ফুট এবং উর্ধ্বে ২৫ ফুট করা যায়।

  • মুরগির বিভিন্ন জাত পরিচিতি ও সাধারণ বৈশিষ্ট

    মুরগির বিভিন্ন জাত পরিচিতি ও সাধারণ বৈশিষ্ট

    বহু প্রাচীনকাল অর্থাৎ (প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্ব) থেকে মােরগ-মুরগিকে পােষ মানিয়ে গৃহপালিত পাখি হিসেবে পালনের ইতিহাস জানা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন জঙ্গলের বন্য মুরগি থেকে আধুনিক গৃহপালিত মােরগ-মুরগির উৎপত্তি হয়েছে বলে জানা যায়। ইউরােপীয় বণিকেরা এশিয়া থেকে মুরগি সংগ্রহ করে সেগুলােকে নিজের দেশে নিয়ে যেত। ধারণা করা হয় যে, নিম্নলিখিত চারটি বন্য প্রজাতির থেকে আধুনিক মােরগ-মুরগির উৎপত্তি হয়েছে।

    নামইংরেজি নামবৈজ্ঞানিক নাম
    রেড জঙ্গল ফাউলRed jungle fowlGallus gallus
    সিলােন জঙ্গল ফাউলCeylon Jungle fowlGallus lafayetti
    গ্রে জঙ্গল ফাউলGrey Jungle fowlGallus Sonnerratti
    জাভা জঙ্গল ফাউলJava Jungle fowl Gallus varius
    মুরগির আদি জাত

    উল্লিখিত Gallus gallus প্রজাতিটি মােরগ-মুরগির প্রধান পূর্বপুরুষ বলে ধরা হয়। তবে চারটি প্রজাতিই অত্যন্ত সম্পর্কযুক্ত এবং এগুলাে ইন্টারব্রিউ হিসেবে পরিচিত। 

    জাতের সংজ্ঞা শ্রেণি (Class) : যে সমস্ত মােরগ-মুরগির জাত কোনাে এক বিশেষ জায়গা থেকে উদ্ভূত বা উৎপন্ন হয়েছে, সে সমস্ত জাতকে সমষ্টিগতভাবে একটি শ্রেণি বলা হয়। 

    যেমন : এশিয়াটিক শ্রেণি, আমেরিকান শ্রেণি ইত্যাদি।

    জাত (Breed): একই শ্রেণির অন্তর্গত একটি জাতের মােরগ-মুরগির নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য থাকবে, যেমন- দেহের আকার, আকৃতি, চামড়ার রং, আঙ্গুলের সংখ্যা, পায়ের নালা পালকবিহীন না পালকাবৃত, ডিমের রং ইত্যাদি। এই বৈশিষ্ট্যগুলাে পরবর্তী বংশধরে সমভাবে প্রকাশ পাবে।

     যেমন – লেগহর্ন, ব্লাক অস্ট্রালপ ইত্যাদি জাত।

    উপজাত (Variety): পালকের রং এবং মাথার খুঁটির ধরনের উপর ভিত্তি করে একটি জাতের উপবিভাগকে উপজাত বলা হয়। | যেমন- লেগহর্ন জাতের মধ্যে আবার একক খুঁটি বিশিষ্ট হােয়াইট লেগহর্ন, গােলাপ সদৃশ ঝুঁটি বিশিষ্ট হােয়াইট লেগহর্ন ইত্যাদি উপজাত রয়েছে।

    স্ট্রেইন (Strain): কোনাে একক প্রজননকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কমপক্ষে ৫ বংশ পরম্পরায় প্রজননের মাধ্যমে সৃষ্ট একই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মুরগির উপজাতকে স্ট্রেইন বলে। যেমন: স্টার ক্রস, স্টার ব্রো। এটা বিশেষ উদ্দেশ্যে বংশ পরম্পরায় ইনব্রিডিং-এর মাধ্যমে তৈরি হয়।

    উপযােগিতার উপর ভিত্তি করে মুরগির শ্রেণি বিভাগ : 

    উপযােগিতার উপর ভিত্তি করে মুরগির জাতকে বিভিন্নভাবে শ্রেণি বিন্যাস করা যায়। যেমন

    ১. উৎপাদন অনুসারে :

    উৎপাদন অনুসারে মুরগির জাতকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। 

    (ক) ডিম উৎপাদনকারী জাত : এই শ্রেণির মুরগি সাধারণত আকারে ছােট হয়। এরা খুব তাড়াতাড়ি অর্থাৎ ২০ সপ্তাহ বয়সের মধ্যেই ডিম পাড়া শুরু করে। এরা ডিম উৎপাদন করে বেশি কিন্তু ডিমের আকার তুলনামূলকভাবে ছােট হয়। ডিম উৎপাদনের পর কুঁচে হয় না। যেমন- লেগহর্ন, মিনার্কা, ফাউমি, এনকোনা। 

    (খ) মাংস উৎপাদনকারী জাত : এই শ্রেণির মুরগি আকারে বড় হয় এবং ওজন বেশি হয়। এরা চলাফেরায় ধীরগতিসম্পন্ন এবং শান্ত প্রকৃতির হয়। যেমন- ব্রাহ্মা, কোচিন, ল্যাংশেন, আসিল এবং মালয়ী। 

    (গ) ডিম ও মাংস উৎপাদনকারী জাত : এই শ্রেণির মুরগি ডিম ও মাংস উৎপাদনে ভালাে। এদের ওজন | মাঝারি ধরনের এবং ডিমের ওজন বেশি। যেমন- রােড আইল্যান্ড রেড, কর্নিশ, জার্সি জায়ান্ট, অস্ট্রালপ নিউহ্যাম্পশায়ার, প্রাইমাউথ রক বা ক্রয়লার ইত্যাদি। 

    (ঘ) শােভা দর্শনকারী শ্রেণি : এই শ্রেণির মুরগি শােভা বর্ধন – খেলাধুলা এবং মােরগ লড়াই দেওয়ার জন্য পালন করা হয়। যেমন- ইয়ােকোহামা, জাপানি বেন্টাম, আসিল ইত্যাদি।

    ২. উৎপত্তি অনুসারে মুরগির জাতের শ্রেণি বিন্যাস :

    উৎপত্তি স্থান অনুসারে মুরগির শ্রেণি চারটি।

     (ক) আমেরিকান শ্রেণি (American Class): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আশপাশের দেশসমূহে এই শ্রেণির মুরগির উৎপত্তি হয়েছে। যেমন- নিউহ্যাম্পশায়ার, ল্যামােনাস, প্লাইমাউথ রক, আর-আই-আর, জার্সি জায়ান্ট। 

    আমেরিকান শ্রেণির অধীনে মােট ১৩টি জাত রয়েছে। এ জাতগুলাে যুক্তরাষ্ট্র উৎপন্ন হয়েছিল বলে এদেরকে আমেরিকান শ্রেণির জাত বলা হয়ে থাকে। সাধারণত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আনা ছােট জাতের কর্মঠ মুরগির সাথে এশিয়া থেকে আমদানি করা বড় আকারের মােরগের সংকর প্রজনন করে আমেরিকান শ্রেণির মুরগি সৃষ্টি করা হয়েছিল। এখানে এদের বৈশিষ্ট্যগুলাে উল্লেখ করা হয়েছে।

    সাধারন বৈশিষ্ট্যসমূহ:

    এদের পায়ের নালা পালকবিহীন। কানের লতি লাল রঙের। গায়ের চামড়া হলুদ ও ডিমের রং বাদামি। সাধারনত ডুয়াল পারপাজ বা ডিম মাংস উভয়ের জন্যই এরা উপযোগি।

    (খ) ইংলিশ শ্রেণি (English Class): এই শ্রেণির মুরগিসমূহের উৎপত্তি হয়েছে মূলত ইংল্যান্ডে। তবে অস্ট্রাপ মুরগির উৎপত্তি হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতে। এদের মাংস খুব সুস্বাদু। যেমন- সাসেক্স, অরপিংটন, ডর্কিং, কর্নিশ, রেডক্যাপ, হাউড্যান্স ইত্যাদি।

    সাধারন বৈশিষ্ট্যসমূহ:

    এদের পায়ের নালা পালকবিহীন। গায়ের চামড়া সাদা ও কানের লতি লাল রঙের। ডিমের রং লাল ও বাদামি। সাধারনত ডিম মাংস উভয়ের জন্যই এরা উপযোগি।

    (গ) এশিয়াটিক শ্রেণি (Asiatic Class) : এই শ্রেণির মুরগিসমূহ উৎপত্তি লাভ করেছে এশিয়া মহাদেশে। যেমন- অসিল, মালয়ী, ল্যাংশেন, কোচিন, ইয়ােকোহামা, ব্রাহ্মা, বেন্টাম। 

    এশিয়াটিক শ্রেণির মুরগি সাধারণত আকারে বড় এবং মাংস উৎপাদনের জন্য ভালো। তবে এ শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত সমুহ বাণিজ্যিকভিত্তিতে ডিম বা মাসে উৎপাদনে জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি। ল্যাংশ্যান ও এর উপজাতের মুরগি ছাড়া বাকিদের চামড়ার রঙ হলুদ। এখালে এদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল।

    সাধারন বৈশিষ্ট্যসমূহ:

    সাধারণত এদের পায়ের নালায় পালক থাকে। কানের লতির লাল রঙের। ডিমের কালার  বাদামি। গায়ের চামড়া হলুদ হয়ে থাকে । এ্ররা অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। ডিম উৎপাদনের হার কম। তাই সাধারনত এদেরকে মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। 

    (ঘ) ভূমধ্যসাগরীয় শ্রেণি (Mediterranean Class) : ভূমধ্যসাগরীয় শ্রেণির জাতগুলাের উৎপত্তিস্থল ইটালি ও আশপাশের অঞ্চলে। ভূমধ্যসাগরের আশপাশের দেশ যেমন- ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, মিসর ইত্যাদি দেশে এই শ্রেণির মুরগি উৎপত্তি লাভ করেছে। যেমন- লেগহর্ন, ফাউমি, মিনার্কা, এনকোনা, বাটারক্যাপ, স্প্যানিশ, ব্ল-আন্দালুসিয়ান।

    এদের মধ্যে লেগহর্ণ সবচেয়ে জনপ্রিয়।  ডিম উৎপাদনের জন্য এরা বিখ্যাত। লেগহর্ন জাত মুরগির জাত উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।মিনকা ছাড়া অন্য সবগুলাে জাত ছােট আকারের।

    সাধারন বৈশিষ্ট্যসমূহ:

    এদের পায়ের নালা পালকবিহীন। পালক আঁটসাঁট ও দেহের সাথে সুবিন্যস্ত। এরা আকারে ছােট। কুঁচে হওয়ার অভ্যাস একেবারেই নেই। অপেক্ষাকৃত কম বয়সে ডিম দেয়া শুরু করে। ডিম উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এদের গায়ের চামড়ার রঙ সাদা অথবা হলুদ। কানের লতি সাদা রঙের। ডিমের খােসার রঙ সাদা।

    উৎপত্তিস্থান অনুযায়ী মুরগির শ্রেণিবিন্যাসঃ

    আমেরিকান (জাত)ইংলিশ (জাত)ভূমধ্যসাগরীয় (জাত)এশিয়াটিক (জাত)
    রোড আইল্যান্ড রেড
    নিউ হ্যাম্পশায়ার
    প্লাইমাউথ রক
    ওয়েইন্ডােট জ্যভিস
    জার্সি জায়ান্টস 
    ল্যামােন্যাস 
    ডােমনিকুইস
    সাসেক্স 
    অস্ট্রালর্প 
    করনিস্ 
    রেড ক্যাপস
    ডরকিংস
    লেগহর্ন
    মিনরকাস 
    এনকোনাস 
    স্প্যানিশ 
    আন্দালুসিয়ান 
    বাটার কাপস
    ফাওমি
    ব্রাহমা
    কোচিন 
    ল্যাংশ্যান 
    আসিল 
    ফোনিক্স 
    উৎপত্তিস্থান অনুযায়ী মুরগির শ্রেণিবিন্যাস

    ৩. ওজন অনুসারে শ্রেণিবিন্যাস:

    ওজন অনুযায়ী মুরগির শ্রেণি তিনটি।

    (ক) হালকা জাত: এই শ্রেণির মুরগির গড় ওজন ১.৮-২.৪ কেজি। যেমন-লেগহর্ন, ফামি, মিনার্কা। 

    (খ) মাঝারি জাত: এই শ্রেণির মুরগির গড় ওজন ২.৫-৩.০ কেজি। যেমন-ডর্কিং, নিউহ্যাম্পশায়ার, রােড। আইল্যান্ড রেড, প্লাইমাউথ রক। 

    (গ) ভারী জাত: এই শ্রেণির মুরগির গড় ওজন ৩ কেজির বেশি। যেমন- আসিল, জার্সি জায়ন্ট, কর্নিশ।

    ৪. কুঁচে হওয়ার প্রবণতা অনুযায়ী মুরগির জাত বিন্যাস :

    কুঁচে হওয়ার প্রবণতা অনুযায়ী মুরগিরকে দুইটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। 

    (ক) সিটার (Sitter): এই শ্রেণির মুরগি ডিম পাড়ার পর ডিমে তা দেয়ার লক্ষণ প্রকাশ করে। বাচ্চার। ভালাে যত্ন নেয়। যেমন- ব্রাহ্মা, আসিল, কোচিন, ল্যাংশেন । 

    (খ) নন সিটার (Non sitter): এই শ্রেণির মুরগি ডিম পাড়ার পর ডিমে তা দেয়ার লক্ষণ প্রকাশ করে না বা কুঁচে হয় না। এরা বাচ্চার যত্ন নেয় না। যেমন- লেগহর্ন, মিনার্কা, এনকোনা।

    পরিশেষেঃ

    মুরগির সাধারন বৈশিষ্ট সমূহ এদের জাতের উপর নির্ভরশীল। মুরগির বিভিন্ন জাত এর মাঝে সংকরায়নের মাধ্যমে আবার উন্নত মানে প্রোল্ট্রি মুরগি ও এর বিভিন্ন জাত তৈরী করা হয়। এজন্য জাত উন্নয়নে মূল জাতের মুরগী সংরক্ষন করা অত্যন্ত গুরুত্ববহন করে।

  • ব্লাক অস্ট্রালপ মুরগি – জাতের তথ্য ও বিবরণ

    ব্লাক অস্ট্রালপ মুরগি – জাতের তথ্য ও বিবরণ

    ব্লাক অস্ট্রালপ মুরগি বেশ প্রাচীন একটি মুরগীর জাত। এটি মূলত ‘ডুয়াল পারপাজ’ বা ‘দ্বৈত ঊদ্দেশ্য’ পালনের জন্য জনপ্রিয় একটি জাত। আমাদের দেশে এটি নতুন পরিচিত হলেও উপমহাদেশে এদের প্রাচীন অস্তিত্ব বিদ্যমান। মূলত ব্লাক অস্ট্রালপ অস্ট্রেলিয়ার একটি ডুয়াল পারপাজ মুরগির জাত।

    অস্ট্রালপ মুরগির ব্রিডিং তথ্য

    ব্লাক অস্ট্রালপ মুরগি ১৯ শতকের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ায় ডেভেলপ হয়। ব্রিটিশ ব্লাক অরপিংট জাতের কিছু মুরগির সাথে রোড আইল্যান্ড রেড মুরগির সাথে সংকরায়নের মাধ্যমে ব্লাক অস্ট্রালপ জাতটি তৈরি করা হয়।

    ব্লাক অস্ট্রালপ

    উদ্দ্যেশ্য ছিল ভারী জাতের একটি ডুয়াল পারপাজ ব্রিড তৈরী করা, যেটি অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

    পরবর্তিতে বিখ্যাত লেগহর্ন ও পলিমিউথ রক মুরগির সাথে ক্রস করে জাতটির বিভিন্ন বৈশিষ্টের উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।

    জাতের সাধারণ বৈশিষ্ট

    এরা দেখতে কিছুটা আয়তক্ষেত্রাকার, অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ দেহ এবং ঘন কালো রঙের। এদের ছোট লালচে ঝুটি ও মাথার আকৃতি কিছুটা বড়। পালক বেশ নরম, ঘন কালো ও সিল্কি টাইপের।

    এরা দীর্ঘ কাল বাঁচে ও একটা লম্বা সময় ধরে ডিম দিয়ে থাকে। ডিমের রঙ হালকা বাদামি। মুরগি খুব একটা কুচে হয়না। সাধারণত, মোরগের ওজন প্রায় ৩.৫ থেকে ৪.৫ কেজি এবং মুরগীর ওজন প্রায় ২.৫-৩ কেজি।

    জাতের আচরণ বা মেজাজঃ

    ব্লাক অস্ট্রালপ মুরগি চঞ্চল কিন্তু নমনিয় প্রকৃতির। ভারী জাতের মুরগি হলেও এরা বেশ ডিম দিয়ে থাকে। অন্য জাতের মুরগির সাথে এরা সামান্য আক্রমনাত্বক হতে পারে। মোরগের মাঝে আগ্রাসী ভাব দেখা যায়।

    এদের আবদ্ধ ও খোলা, উভয় পরিবেশেই পালন করা যায়।

    ব্লাক অস্ট্রালপ মুরগির রোগ বালাই

    ব্লাক অস্ট্রালপ

    ব্লাক অস্ট্রালপ মুরগির তেমন বিশেষ কোন রোগ বালাই নেই। সাধারন মুরগির মতই রোগ বালাই দেখা দিতে পারে। তবে কালো পালক এবং ভারী জাত হওয়াতে এদের হিট স্ট্রোক প্রবনতা বেশী। গরমকালে এই বিষয়টা লক্ষ রাখা দরকার।

    পালনের উদ্দ্যেশ্য

    এরা একটি বিখ্যাত ‘ডুয়াল পারপাজ’ বা ‘দ্বৈত পালনের’ মুরগির জাত। তবে এদের প্রথমত মাংস ও পরে ডিমের জন্য পালন করা হয়। অনেক খামারি এর প্যারেন্টস স্টক করতেও পালন করে থাকেন।

    নিচের টেবিলে এক নজরে ব্লাক অস্ট্রালপ জাতের মুরগির তথ্য দেয়া আছে।

    ব্লাক অস্ট্রালপ মুরগি  | জাতের তথ্য বা প্রোফাইল

    জাতের নাম: ব্লাক অস্ট্রালপ।
    অন্য নাম: অস্ট্রালপ, কালো টাইগার।
    পালনের উদ্দ্যেশ্য: মাংস এবং ডিম উভয় দ্বৈত-উদ্দেশ্য।
    জাতের আচরণ: শান্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ, কৌতুহলী, সহজে পালন।
    আকার: ভারী। সাধারণত ৩ থেকে ৫ কেজি।
    তা দেয়ার প্রবনতা: কম।
    ঝুঁটি: ছোট।
    জলবায়ু সহনশীলতা: সকল জলবায়ু।
    ডিম রঙ: হালকা বাদামী
    ডিমের আকার: বড়
    ডিম উৎপাদনশীলতা: মোটামুটি ভাল। বছরে ২৫০ ডিম (৬৫-৭০%)
    বৈচিত্র্য: শুধুমাত্র কালো
    মূল দেশ : অস্ট্রেলিয়া।

    আরো পড়তে পারেন..

    কাদাখনাথ মুরগি

    বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশী মুরগি ও তার বৈশিষ্ট্য

    ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    সিল্কি মুরগির বৈশিষ্ট্য এবং সমস্ত তথ্য

    ক্রয়লার বা কয়লার মুরগি সম্পর্কিত তথ্

  • সোনালি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    সোনালি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    সোনালি মুরগি বাংলাদেশের ডেভেলপকৃত নিজস্ব জাতের মুরগি। ২০১৭ সালে গনপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার জি আই স্বত্বের জন্য সোনালি মুরগিকে নির্বাচিত করে। ১৯৮৭ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল জলিল সোনালী জাতের মুরগী উদ্ভাবন করেছিলেন। পরবর্তিতে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শাহ জামাল স্যারের তত্বাবধনে জাতটির উন্নয়ন করানো হয়।

    ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলায় সোনালি মুরগির বিকাশ ঘটে। এরপর দ্রুতই এর আশে পাশের জেলা সমূহ ও পরবর্তিতে সারা বাংলাদেশেই এটি ছড়িয়ে পড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মাংস ও ডিমের স্বাদের কারনে সোনালি মুরগি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।

    মূলত আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী মুরগির জাত উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে সোনালি মুরগি ডেভেলপ করা হয়। দেশি মুরগির সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে উন্নত জাতের ডিমের মুরগি তৈরি করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। ভালো বাজার দরের কারনে বর্তমানে সোনালি মুরগিকে বানিজ্যিকভাবে পালন করা হয়।

    সোনালি মুরগির জাত উন্নয়ন

    আর আই আর ও ফাউমি জাতের মুরগির ক্রসে সোনালি মুরগি ডেভেলপ করা হয়। এজন্য সোনালিকে ক্রসব্রিড মুরগি বলা হয়। সোনালির প্যারেন্ট সিলেকশন, এই দুই জাতের মুরগির উন্নত লাইনের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে। বানিজ্যিকভাবে, মাংসের জন্য সাধারনভাবে আর-আই-আর এর মোরগ ও ফাউমি জাতের মুরগি ব্যাবহার করা হয়। আর ডিমের জন্য এর রিভার্স অর্থাৎ ফাউমির মোরগ ও আর-আই-আর এর মুরগি নেয়া হয়।

    ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    বর্তমানে অনেক ব্রিডার খামারি সোনালি মুরগির সাথে ভারী জাতের মোরগ-মুরগি ক্রস করে থাকেন। বাজারে এটি হাইব্রিড সোনালি নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে সোনালি মুরগির স্বকীয়তা ও ডিম উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

    sonali-chicken

    সোনালি মুরগি পালনের উদ্দ্যেশ্য

    বানিজ্যিকভাবে সোনালি মুরগি প্রধানত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের সোনালি মুরগির বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। সোনালির মাংস ও ডিম বেশ সুস্বাদু। দেশি মুরগির ন্যায় ডিমের স্বাদ ও চাহিদার কারনে ডিমের জন্যও অনেক খামারি সোনালি পালন করে থাকেন।

    একদিন বয়সি বাচ্চার চাহিদা থাকায় অনেকেই সোনালি মুরগির ব্রিডার ফার্ম করে থাকেন। এছাড়াও এদের জাত সহনশীলতা ও উন্নত ডিম উৎপাদনশীলতার কারনে গ্রাম-গঞ্জের অনেক বাড়িতে দেশী মুরগির ন্যায় সোনালি মুরগী পালন করা হয়।

    সোনালি পালনের বিস্তারিত জানতে আমাদের নিচের লেখাটি পড়তে পারেন।

    সোনালী মুরগী পালন পদ্ধতি

    সোনালি মুরগির বৈশিষ্ট্য

    এদের নামকরন এদের গায়ের রঙের কারনে দেয়া হয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুরগির পালকের রং গাঢ় বাদামি বা সোনালি বর্ণ ধারণ করে। সোনালির পায়ের রং হলুদ। আর আই আর মুরগির সাথে এদের পার্থক্য করা যায় এদের পায়ের রং দেখেই।

    সোনালি জাতের মোরগের ওজন প্রায় ৩.২ কেজি এবং মুরগীর ওজন প্রায় ২.২ কেজি হয়ে থাকে। তবে উন্নত খাদ্য ও ব্যাবস্থাপনায় ওজন আরো বেশি হতে পারে। লালচে ঝুঁটি ও সোনালি পালকবিশিষ্ট এই জাতের মুরগি অন্যান্য দেশি মুরগির মতোই ১৬ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে।

    সোনালি জাতের মুরগীর আচরণ

    সাধারণত সোনালি মুরগি বেশ চঞ্চল। আবদ্ধ পরিবেশে পালন করা গেলেও এরা আবদ্ধ থাকা পছন্দ করেনা। দেশি মুরগির স্বভাব লক্ষনীয়। চড়ে খেতে পছন্দ করে। সোনালি মোরগ বেশ কর্তৃত্বপরায়ন। সোনালি মোরগ কিঞ্চিৎ আক্রমনাত্বক হতে পারে। সাধারণত এরা অপরিচিত বিশেষ আগমন পছন্দ করেনা।

    নীচে সোনালি মুরগির সম্পূর্ণ জাতের তথ্য একনজরে দেয়া হলো।

    সোনালি মুরগি >> জাতের তথ্যঃ

    জাতের নামসোনালি মুরগি (Sonali Chicken)
    অন্য নামপাকিস্তানি, দেশি কক।
    পালনের উদ্দ্যেশ্যমাংস ও ডিম উভয়।
    জাতের আচরণসামান্য আগ্রাসি, সহজে পালন।
    আকারমাঝারী। মুরগি ১.৫-২.৫ কেজি ও মোরগ ২.২-৩.৫ কেজি
    তা দেয়ার প্রবণতাসাধারন।
    ঝুঁটিছোট গোলাপি।
    জলবায়ু সহনশীলতাসকল জলবায়ু।
    ডিমর রঙবাদামী ক্রীম।
    ডিমের আকারমাঝারি।
    ডিম উৎপাদনশীলতাভালো (১৮০-২০০ ডিম/বছর) প্রায় ৭৫%
    বৈচিত্র্যবিভিন্ন রঙের।
    উৎপত্তিস্থলবাংলাদেশ প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর।

    আরো পড়তে পারেন..

    মুরগির বিভিন্ন জাত পরিচিতি ও সাধারণ বৈশিষ্ট

    কাদাখনাথ মুরগি

    সিল্কি মুরগির বৈশিষ্ট্য এবং সমস্ত তথ্য

    বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশী মুরগি ও তার বৈশিষ্ট্য

    ক্রয়লার বা কয়লার মুরগি সম্পর্কিত তথ্

  • কালো জাতের মুরগি- আয়াম সিমানি

    কালো জাতের মুরগি- আয়াম সিমানি

    পৃথিবিতে প্রাপ্ত যত কালো মাংস জাতের মুরগি আছে তার মধ্যে আয়াম সিমানি অন্যতম। এটি ইন্দোনেশিয়া ও জাভা দ্বীপপুঞ্জের একটি প্রাচীন মুরগির জাত। ১২০০ শ্বতাব্দীর শুরু থেকে জাতটি পরিচিতি পায়। মূলত তখন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কাজে এটি ব্যাবহৃত হত।

    ডাচ কর্নেল সেটেলার এর মাধ্যমে প্রথম আয়াম সিমানি মুরগি সারা বিশ্বে পরিচিতি পায়। পরবর্তিতে ১৯৯৮ সালে আরেক ডাচ বিজ্ঞানী জ্যান স্টভেরিক এটি ইউরোপে নিয়ে ব্রিডিং করান। এর ফলে ইউরোপেও জাতটির ব্যাপ্তি ঘটে।

    ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে আয়াম সিমানি মুরগি পালন করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এটি পাওয়া না গেলেও এর সমগোত্রিয় জাত কাদাখনাথ মুরগি বেশ জনপ্রিয়।

    আয়াম সিমানি মুরগির বৈশিষ্ট্য

    Ayyam Cemani Chicken
    Ayyam Cemani Chicken

    আয়াম সিমানির পালক, ঠোঁট, পা, ঝুটী ইত্যাদি সব কালো রঙের। এমনকি এদের হাড়-মাংসও কালো রঙের হয়ে থাকে। তবে এদের রক্তের রঙ লাল। বিষেশ একধরনের হরমোন ও জেনেটিক বৈশিষ্টের কারনে এদের মাংস এমন কালো রঙের হয়। সাধারনত মোরগ ২ থেকে ২.৫ কেজি ও মুরগি ১.৫ থেকে ২ কেজি হয়ে থাকে।

    এরা সাধারন মানের ডিম দিয়ে থাকে। যা বছরে প্রায় ১৮০-২০০ টা পর্যন্ত। ডিমের ওজন ৪৫ গ্রাম। ডিমের রঙ হালকা বাদামি ও নীলাভ। কালো মাংসের সিল্কি মুরগি ডিমে তা দিতে খুব পছন্দ করলেও আয়াম সিমানি সম্পূর্ন এর বিপরীত। এরা সাধারণত ডিমে তা দিতে পছন্দ করেনা।

    আচরণ / মেজাজ

    এরা বেশ চঞ্চল জাতের একটি মুরগি। কিছুটা বন্য স্বভাব লক্ষনীয়। পোকা-মাকড় ও শাক-পাতা এদের প্রিয়। আবদ্ধ পরিবেশ এরা খুব একটা পছন্দ করেনা। মোরগ কিছুটা আক্রমনাত্বক হতে পারে। তবে এরা বেশ বন্ধুত্বপূর্ন। মানুষের ধারেকাছে এরা থাকতে পছন্দ করে।

    নীচে আয়াম সিমানি মুরগির সম্পূর্ণ জাতের তথ্য একনজরে দেয়া হলো।

    আয়াম সিমানি মুরগি
    আয়াম সিমানি মুরগি

    আয়াম সিমানি মুরগি >> জাতের তথ্যঃ

    জাতের নামআয়াম সিমানি (Ayam Cemani)
    অন্য নামব্লাকবেন, কালিমাসি
    পালনের উদ্দ্যেশ্যমাংস ও ডিম, সৌখিন, (Ornamental)
    জাতের আচরণশান্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ, সহজে পালন।
    আকারমাঝারী-বড়।
    তা দেয়ার প্রবণতাকম, তেমন প্রবণতা নেই।
    ঝুঁটিমাঝারী কালো।
    জলবায়ু সহনশীলতাউষ্ণ জলবায়ু।
    ডিমর রঙবাদামী ক্রীম ও হালকা নীলাভ।
    ডিমের আকারমাঝারি
    ডিম উৎপাদনশীলতামোটামুটি (১৬০-১৮০ ডিম/বছর) প্রায় ৬৫%
    বৈচিত্র্যশুধুমাত্র কালো।
    উৎপত্তিস্থলইন্দোনেশিয়া, জাভা উপদ্বীপ।

    কালো জাতের মুরগি

    পৃথিবিতে মাত্র তিনটি পিউর জাতের কালো মুরগি দেখা যায়। তার মধ্যে একটি আয়াম সিমানি ও অন্য দুটি হচ্ছে কাদাখনাথ সিল্কি মুরগি। এদের সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের লেখাগুলি পড়তে পারেন।

    আরো পড়তে পারেন..

    সিল্কি মুরগির বৈশিষ্ট্য এবং সমস্ত তথ্য

    কাদাখনাথ মুরগি

  • ব্রয়লার মুরগির জাত | যেভাবে ব্রয়লার মুরগি ডেভেলপ করা হয়

    ব্রয়লার মুরগির জাত | যেভাবে ব্রয়লার মুরগি ডেভেলপ করা হয়

    বিশ্বব্যাপী ব্রয়লার মুরগি প্রোটিন যোগানের অন্যতম প্রধান উপাদেয়। ব্রয়লার মুরগি পালন সহজ ও লাভজনক হওয়ায় অদিকাংশ খামারীরা ব্রয়লার পালনের মাধ্যমেই তাদের প্রোল্ট্রি ব্যাবসা শুরু করে থাকেন। ব্রয়লার মুরগি একটি হাইব্রিড মুরগি হলেও এর বিভিন্ন জাত রয়েছে। কোম্পানি ভেদে ব্রয়লার মুরগির জাত ভিন্ন হয়ে থাকে। নিচে ব্রয়লার মুরগি সম্পর্কে বিষদ আলোচনা করা হলো।

    ব্রয়লার মুরগি কি

    ব্রয়লার মুরগি হচ্ছে জেনেটিকালি ডেভেলপকৃত একটি উন্নত জাতের মুরগি। যেটি মূলত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। ব্রয়লার সাধারনত ৪ থেকে ৭ সপ্তাহের ভিতরেই বিক্রয় উপযোগি হয়।

    বিভিন্ন উন্নত জাতের মুরগির জেনেটিকালি ইম্প্রুভ করে ব্রয়লার মুরগির প্যারেন্ট লাইন তৈরি করা হয়। ফলে এরা স্বাভাবিকভাবেই উন্নত বৈশিষ্ট নিয়ে জন্মায়। দ্রূত শারিরিক বৃদ্ধির জন্য কোন অস্বাভাবিক প্রক্রিয়া গ্রহন করা হয়না। এজন্যই ব্রয়লার FDA অনুমোদিত সম্পূর্ন নিরাপদ আমিষের যোগান বলে বিবেচিত।

    ব্রয়লার মুরগি
    ব্রয়লার মুরগি

    যেভাবে ব্রয়লার মুরগির জাত ডেভেলপ করা হয়

    প্রথমত বিশুদ্ধ ভারী জাতের মুরগি যেমনঃ কর্ণিশ, সাসেক্স, প্লাইমাউথ রক ইত্যাদি নির্বাচন করা হয়। এদের মধ্যে সংকরায়ন ঘটিয়ে উন্নত জাতের কয়েকটি লাইন তৈরি করা হয়।

    উক্ত লাইন থেকে সিলেকশন পদ্ধতিতে ভালো জাতের মোরগ-মুরগি নির্বাচন করা হয়। এভাবে ভারী জাতের লাইনের মোরগ ও উন্নত ডিমের লাইনের মুরগির কয়েকটি ধাপে পুনরায় ক্রস করানো হয়। এদের থেকে ব্রয়লার মুরগির গ্রান্ড-প্যারেন্টস তৈরি করা হয়।

    এই গ্রান্ডস প্যারেন্ট থেকে ব্রয়লার মুরগির প্যারেন্টস ও এই প্যারেন্টস থেকেই ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করা হয়।

    নিচে একটি ছবির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি দেখানো হলো।

    ব্রয়লার মুরগির জাত ডেভেলপমেন্ট
    ব্রয়লার মুরগির জাত ডেভেলপমেন্ট

    ব্রয়লার মুরগি ডেভেলপকারী কোম্পানি

    পৃথিবী বিখ্যাত কয়েকটি কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির জাত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে এভিয়াজেন, লোহম্যান, কব-ভেন্ট্রিস, হাববার্ড, টেট্রা ইত্যাদি কোম্পানি।

    এই কোম্পানি সমূহ ব্রয়লার মুরগির জেনেটিকালি ভ্যারিয়েশন ঘটিয়ে অথবা অন্য কোন কোম্পানির স্বত্ত কিনে আবার বিভিন্ন নামে ব্রান্ডিং করে। যেমন, এভিয়াজেন কোম্পানির রস, ইন্ডিয়ান-রিভার, আরবর-একর নামের ব্রান্ড রয়েছে।

    ব্রয়লার মুরগির জাত নির্বাচন কিভাবে হয়

    মুলত ব্রয়লার মুরগি ডেভেলপকৃত কোম্পনি সমূহই ব্রয়লারের নাম দিয়ে থাকে। এই নাম ডেভেলপকৃত মুরগির ভিন্ন বৈশিষ্টের কারনেই দেয়া হয়। যেমন রস ব্রান্ডের তিনটি জাত রয়েছে; রস-308, রস-708, রস 308 AP । ঠিক তেমনি কব-ভেন্ট্রিস রয়েছে; কব-৫০০, কব-৭০০ জাতের ব্রয়লার।

    প্রতিটি জাতেরই ভিন্ন বৈশিষ্ট থাকতে পারে। কোন জাত তাপ সহ্য করতে পারেনা, কোন জাতের আবার পালক কম হয়, বা কোন জাত ২৪ দিনের পর দ্রুত বাড়ে। ফলে এদের ম্যানেজমেণ্টে ভিন্নতা রয়েছে। এজন্য ব্রয়লার মুরগির জাত সঠিকভাবে জেনে নেয়া প্রয়োজন।

    ব্রয়লার মুরগির জাত

    পৃথিবীখ্যাত কয়েকটি কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির গ্রান্ড প্যারেন্টস তৈরি করে থাকে। এসব কোম্পানি হতেই আমাদের দেশে জনপ্রিয় কিছু ব্রয়লার মুরগির জাত আমদানি করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেঃ-

    এভিয়াজেন এর ব্রান্ড

    • ইণ্ডিয়ান রিভার
      • লোহম্যান মিট (বর্তমানে আই আর নামে)
    • আরবর একর’স
    • রস এর
      • রস-308,
      • রস-708,

    কব_ভেনট্রিস এর

    • কব-500
    • কব-700

    হাববার্ড এর

    • এফিসিয়েন্সি প্লাস
    • হাববার্ড এফ ১৫ (হাবার্ড ক্লাসিক)

    ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি

    ব্রয়লার উন্নত জাতের মুরগি হওয়ায় এরা ধকল সহ্য করতে পারেনা। সঠিক ব্যাবস্থাপনা না করা হলে ব্রয়লার পালনে লাভ করা স্বম্ভব নয়। তবে প্রতিটি ব্রয়লার জাতের আলাদা ব্যাবস্থাপনা থাকতে পারে। যেগুলি সধারনত জাত ডেভেলপকৃত কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে দেয়া থাকে।

    উধাহরন স্বরুপ এখানে ‘আরবর-একরস‘ এর ব্রয়লার ম্যানেজমেন্ট গাইড লিঙ্ক দেয়া হলো।

    আমাদের এই লেখাটি আপনাকে আরো সহজ ভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

    লাভজনক ব্রয়লার মুরগি পালনে যে বিষয় গুলি জানা দরকার

    অন্য যেকোন কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট গাইডের জন্য আমাদের মেইল করুন। Email: admin@poultrygaints.com

    আরো পড়ুন..

    ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তালিকা

    লেয়ার মুরগির খাদ্য তালিকা

    ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    ব্রয়লার মুরগি সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে বা আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করতে পারেন।

  • বানিজ্যিক লেয়ার মুরগি নিয়ে কিছু তথ্য

    লেয়ার মুরগি কি?

    শুধুমাত্র ডিম উৎপাদনের জন্য যেসকল মুরগি পালন করা হয় তাদেরকে লেয়ার মুরগি বলা হয়। জেনেটিকালি উন্নয়ন ঘটিয়ে অধিক ডিম উৎপাদনের জন্য এ ধরণের মুরগি ডেভেলপ করা হয়। সাধারণত, এরা ১৮ থেকে ১৯ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম দিতে শুরু করে এবং টানা ৭২ থেকে ৭৮ সপ্তাহ বা প্রায় দেড় বছর বয়স পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। 

    পৃথিবী বিখ্যাত লেয়ার মুরগি উৎপাদন কোম্পানি ও এদের উদ্ভাবিত জাত

    হাই-লাইন

    হাই-লাইন ইন্টারন্যাশনালের সূচনা গত শতাব্দীর শুরুতে। হাই-লাইন ইন্টারন্যাশনাল বা হাই-লাইন আমেরিকান-মালিকানাধীন বহু-জাতীয় জেনেটিক্স সংস্থা। ওয়ালেস তাঁর বাবার দক্ষিণ আইওয়া ফার্মে জেনেটিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন। জেনেটিক উন্নতির প্রচেষ্টা থেকেই স্বপ্নটি এসেছিল যে একটি নতুন সংস্থা চালু করা।

    ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হাই-লাইন ইন্টারন্যাশনাল। হাই-লাইন কোম্পানি তাদের গ্রাহকদেরকে উদ্ভাবনী পরিচালনার সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা দিয়ে সহয়তা করে থাকে। ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্যরেখে, হাই-লাইন ইন্টারন্যাশনাল উন্নতজাত উদ্ভাবনে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করছে।

    বাংলাদেশে হাই-লাইন এর জনপ্রিয় লেয়ার মুরগিঃ

    গুনগতমান ও ডিমের জন্য হাই-লাইন ব্রাউন ও হাই-লাইন হোয়াইট বাংলাদেশে সবথেকে জনপ্রিয়। বাংলাদেশে কাজি ফার্মস সহ কয়েকটি কোম্পানি হাই-লাইন এর লেয়ার মুরগি বিপানন করে থাকে।

    হেন্ডরিক্স জেনেটিক্স

    হেন্ডরিক্স জেনেটিক্স বিশ্বের সবথেকে বড় লেয়ার ব্রিডিং কোম্পানি। এরা লেয়ার মুরগির ৬ টি বিখ্যাত ব্রান্ড নিয়ে ১০০ টিরও বেশি দেশে কাজ করে। সারাবিশ্বেই এদের ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে।

    ১৯২৩ সালে হেনড্রিক্স জেনেটিক্স তাদের যাত্রা শুরু করে। মূলত এই সংস্থাটি বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্রান্ডের কোম্পানি অধিগ্রহন করে ও নিজেরা জাত উন্নয়ন করে। সম্প্রতি এরা ফ্রান্সের বিখ্যাত স্যাসো কোম্পানিটিকেও এরা কিনে নিয়েছে।

    হেনড্রিক্স জেনেটিক্স এর ব্রান্ডগুলি হচ্ছে..

    বাংলাদেশে হেন্ডরিক্স জেনেটিক্স এর জনপ্রিয় লেয়ার জাতঃ

    হেনড্রিক্স জেনেটিক্স এর সবকটি ব্রান্ডই বাংলাদেশে বিপুল জনপ্রিয়। তবে প্রতিটি ব্রান্ডেরই কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট রয়েছে।

    লোহম্যান

    লোহম্যান বিভিন্ন ধরণের উন্নত লেয়ার মুরগির জাত সরবরাহ করে। লোহম্যান সাধারনত ডিম পাড়া লেয়ার মুরগির জাত উন্নয়ন করে থাকে। লোহমান ব্রাউন, লোহমান এলএসএল হোয়াইট ও লোহম্যান ট্রাডিশনাল এই তিনটি ব্রান্ড কোম্পানিটি মার্কেটজাত করে থাকে। এটি মূলত একটি জার্মান কোম্পানি।

    বাংলাদেশে লোহম্যান এর জনপ্রিয় লেয়ার জাতঃ

    লোহমান ব্রাউন, লোহমান এলএসএল হোয়াইট লেয়ার জাত বাংলাদেশে জনপ্রিয়। লোহম্যান এর জাতগুলি ডিমের সাইজের জন্য বিখ্যাত।

  • কালো জাতের কাদাকনাথ মুরগি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

    কালো জাতের কাদাকনাথ মুরগি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

    কাদাকনাথ মুরগি একটি প্রাচীন ভারতীয় মুরগির জাত। ধারনা করা হয়, ভারতের মধ্যপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলীয় ‘ঝাবুয়া’ এবং ‘ধার’ জেলাতে কাদাকনাথ মুরগির আদি নিবাস। আঞ্চলিক ভাষায় জাতটি ‘কালি-মাসী’ নামে পরিচিত। কাদাকনাথ মুরগি শুধুমাত্র দেখতেই কালো নয়, বরং এদের মাংসও কালো।

    পৃথিবিতে মাত্র তিনটি কালো মাংসের জাতের মুরগি পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কাদাকনাথ মুরগি অন্যতম। বাকি জাত দুটি হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ান ‘আয়াম-চেমানি‘বা ‘আয়্যাম কেমানি’ ও ‘সিল্কিজাতের মুরগি।

    সাধারনত কাদাকনাথ মুরগীর উৎপাদন ব্যয় কম, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। অন্য জাতের তুলনায় খদ্য খরচ কম হওয়ার কারনে খামারিরা এই জাতের মুরগি বাণিজ্যিক উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন।

    কাদাকনাথ মুরগির মাংসে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন এবং খুবই কম মাত্রায় ফ্যাট ও ক্লোস্টেরল বিদ্যমান। যার ফলে মানুষের কাছে কাদাকনাথ মুরগির মাংসের চাহিদা অনেক বেশি। তাছাড়াও উপমহাদেশের অনেক গোত্রের মানুষ একে পবিত্র বলে মনে করে থাকে। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে এদের ব্যাবহার লক্ষনীয়।

    কাদাখনাথ মুরগি
    ছবিঃ কাদাখনাথ মুরগি

    কালো মাংসের কারনে এদের ওষধি গুণ রয়েছে বলে মানুষের মাঝে প্রচলিত ধারণা আছে। মূলত মেলামিন নামক হরমোনের কারনে এদের মাংসের রঙ কালো হয়ে থাকে।

    কাদাকনাথ মুরগির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য

    কালোমাসি বা কালো মুরগির মাথার ঝুঁটি থেকে পা, অর্থাৎ এর সমস্ত অঙ্গের রং কালো। পালক, চামড়া, ঠোঁট, নখ, ঝুঁটি, জিভ, মাংস এমনকি হাড় পর্যন্ত কালো রঙের।

    কাদাকনাথের তিনটি ভ্যারাইটি আছে; জেট কালো, সোনালী এবং পেনসিল্ড। জেট কালো জাতটি সম্পূর্নরুপে কালো হয়ে থাকে। এদের ঝুঁটি, পা ও ঠোটও কালো রঙের।

    কাদাকনাথের চামড়ার রঙও কালো। সোনালি ও পেন্সিল্ড জাতের গলা ও পীঠে হালকা সোনালি বা পেন্সিল কালারের পালকের ছিটা থাকে। তবে সব গুলির মাংস ও হাড় কালো।

    কাদাকনাথ মোরোগের ওজন প্রায় ১.৮-২ কেজি এবং মুরগির ওজন ১.২-১.৫ কেজি হয়ে থাকে। দেশী মুরগির মত এরা বাদামি ক্রীম কালারের ডিম দেয়।

    সাধারনত বছরে ১২০ থেকে ১৫০ টি ডিম দিয়ে থাকে। এরা খুব কমই ডিমে তা দিয়ে থাকে।

    জাতের আচরণঃ

    কাদাকনাথ মুরগি দেখতে খব সুন্দ্র তবে চঞ্চল প্রকৃতির। সাধারনত দেশী মুরগীর মত চড়ে খেতে পছন্দ করে। মোরগগুলি সামান্য আক্রমনাত্নক হতে পারে। দেশী মুরগীর সাথে এদের সহজে পালন করা যায়। অন্য জাতের মুরগির উপর তেমন একটা চড়াও হয়না।

    কাদাকনাথ মুরগির পুষ্টিগুণ

    খাদ্যগুণের বিচারে কাদাখনাথ মুরগির মাংসে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন রয়েছে। সাধারণ মুরগির তুলনায় এই মুরগির মাংসে কোলেস্টরেলের মাত্রাও অনেক কম।

    কোলেস্টরেল কম থাকে বলে এজাতের মুরগি রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

    কাদাখনাথের মাংসে ফ্যাটি অ্যাসিড উপাদান অনেক বেশি। প্রোটিনের মাত্রাও অন্য সব মুরগির মাংস থেকে কয়েক গুণ বেশি।

    কাদাকনাথ মুরগি | একনজরে জাতের তথ্যঃ

    জাতের নামকাদাকনাথ বা কাদাখনাথ।
    অন্য নামকালোমাসি বা কালিমাসি, কেদারনাথ।
    পালনের উদ্দ্যেশ্যমাংস ও ডিম উভয় (দ্বৈত-উদ্দেশ্য)।
    জাতের আচরণশান্ত, হালকা মেজাজ ,সহজে পালন।
    আকারমাঝারী। মোরগ ১.৮-২ কেজি এবং মুরগি ১.২-১.৫ কেজি।
    তা দেয়ার প্রবণতাতেমন প্রবণতা নেই।
    ডিমর রঙবাদামী ক্রীম।
    ডিমের আকারছোট। ৩০-৩৫ গ্রাম।
    ডিম উৎপাদনশীলতাবছরে প্রায় ১৫০ টি। প্রায় ৬০%
    বৈচিত্র্যকালো, সোনালী ও পেনসিল্ড।
    জলবায়ু সহনশীলতাসব জলবায়ু (শক্তসমর্থ)।
    ঝুঁটিকালো-মাঝারী একক ঝুঁটি।
    উৎপত্তিস্থলভারতের মধ্য প্রদেশ।
    টেবিলঃ কাদাখনাথ মুরগির তথ্য

    আরো পড়তে পারেন..

    বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশী মুরগি ও তার বৈশিষ্ট্য

    ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    সিল্কি মুরগির বৈশিষ্ট্য এবং সমস্ত তথ্য

    রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

  • বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশী মুরগি ও তার বৈশিষ্ট্য :

    বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশী মুরগি ও তার বৈশিষ্ট্য :

    দেশী মুরগি বলতে উপমহাদেশে প্রাপ্ত প্রাচীন মুরগির জাতকে বুঝায়। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে অনেক আগে থেকেই দেশি মুরগি পালন করা হয়ে আসছে। সাধারনত এরা হালকা ওজনের এবং ছোট আকারের ডিম দিয়ে থাকে। ঐতিহ্য, সুস্বাদু ও গুণগত মাংস ও ডিমের কারণে, ওজনে কম হওয়ার পরও এদের মার্কেট ভ্যালু আছে। অঞ্চলভেদে উপমহাদেশে বিভিন্ন দেশি মুরগি দেখতে পাওয়া যায়। নিম্নে উপমহাদেশে প্রাপ্ত কিছু দেশি মুরগির জাত ও এর তথ্য উল্লেখ করা হল।

    আসিল মুরগি :

    কুমিল্লা জেলার সরাইল, সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলায় এদের উৎপত্তি। এ জাতের মোরগ দেখতে অনেকটা মুরগির মতোই। এরা বেশ বড় হয়। আসিল মুরগি অনেক শক্তিশালী ও কৌশলী। বিশেষ করে লড়াইয়ের মাঠে। লড়াইয়ে দক্ষ বলে এই জাতটির নামকরণ করা হয়েছে আসিল। এরা ফাইটিং মুরগি হিসেবে পরিচিত বিধায় চড়া দামে বিক্রি হয়। লড়াই করে এমন মোরগের মূল্য এক লাখ টাকাও হতে পারে।

    আসিল মুরগির গঠন বা আকৃতি :

    দের দেহের গঠন বলিষ্ঠ এবং এরা খুব শক্তিশালী। এদের বুক প্রশস্ত। অন্যান্য সাধারণ মুরগির জাতের তুলনায় আসিল মুরগির পা এবং ঘাড় বেশ দীর্ঘ। ঠোঁট বেশ বড় ও মজবুত। আসিল মুরগির বিভিন্ন জাত রয়েছে। বৈচিত্রের উপর নির্ভর করে এদের পালকের রঙ কালো, লাল বা মিশ্রিত হতে পারে। এদের মাথা বেশ চওড়া এবং একটি ছোট মটর ঝুঁটি রয়েছে। বেশিরভাগ আসিল মুরগির জাতগুলি আকারে বড় এবং খুব শক্ত। এদের রোগব্যাধি বেশ কম হয়ে থাকে।

    আসিল-মুরগি

    আসিল মুরগির বৈশিষ্ট্য :

    1. এদের শরীর অত্যন্ত সুঠাম ও সবল।
    2. গলা ও পা লম্বা।
    3. বুক ও উরুতে পালক থাকে।
    4. ডিম কম দেয় এবং ডিম আকারে ছোট ও বাদামি রঙের।
    5. পালকের রং কালো, লাল বা মিশ্র রঙের।
    6. মাথার ঝুঁটি ছোট ও মটর ঝুঁটি।
    7. এরা খুব পরিশ্রমী ও কষ্টসহিষ্ণু।
    8. মোরগের গড় ওজন প্রায় 3-4 কেজি এবং মুরগির গড় ওজন প্রায় 2.5-3 কেজি।

    চাটগাঁয়ে বা মালয় :

    এটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় এবং মালয়েশিয়া উপদ্বীপে পাওয়া যায় বলে এ জাতটির যথাক্রমে নাম দেওয়া হয়েছে চাটগাঁয়ে এবং মালয়। তাছাড়া উত্তর ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলেও এ জাতের মুরগি দেখা যায়।

    মালয় মুরগি একটি শক্ত-পালকযুক্ত মুরগির জাত। প্রায় অসিল মুরগির মত দেখতে এই জাতটি দিয়েও মোরগ-লড়াই করানো হয়। এটি সবচেয়ে উঁচু মুরগির জাত যা 90 সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচুতে গলা দিতে পারে। মালয় মুরগি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন মুরগি বলে বিবেচিত।

    চাটগাঁয়ে-মুরগি

    চাটগাঁয়ে বা মালয় মুরগির বৈশিষ্ট্যাবলী :

    • চামড়া হলুদ ও ডিমের খোসা বাদামি।
    • মাথায় ছোট আকারের লালচে ঝুঁটি আছে।
    • গলা ও ঠোঁট লম্বা এবং মাথা ছোট।
    • পালকের রং লাল।
    • লেজের পালক লাল কালোর মিশ্রণ বা সোনালি এবং হালকা হলুদ প্রকৃতির পা লম্বা, মোটা ও ভারী।
    • এরা দেখতে খুব লম্বা ও মাংসের জন্য ভালো।
    • লম্বা পায়ের জন্য এদের ডিমের ‘তা’ দিতে বসতে কষ্ট হয়।
    • মোরগের ওজন 4-4.5 কেজি ও মুরগির ওজন 3-4 কেজি।
    • মুরগিগুলো মা হিসেবে ভালো নয়, ফলে ছানার ভালো যত্ন নেয় না।

    গলাছিলা মুরগি :

    গলাছিলা মুরগি একটি পুরানো পোল্ট্রি মুরগির জাত। প্রাকৃতিকভাবে এদের গলা,ঘাড় ও ভেন্ট (প্রজননতন্ত্র) পালকবিহীন। গলাছিলা মুরগির উদ্ভব কোথায় হয়েছিলো তা অস্পষ্ট, তবে মনে করা হয় যে, এই জাতটি এশিয়া থেকে নবম শতাব্দির দিকে হাঙ্গেরিয়ানদের দ্বারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। এই মুরগির জাতকে টার্কেন, কালেনেক, ট্রান্সিলভেনিয়ান নেকেড নেক মুরগি ইত্যাদি ও বলা হয়।

    আমাদের দেশে এটি প্রাচীন কাল থেকেই দেখা যায়। তবে কুমিল্লা বা ময়নামতি অঞ্চলে এদের প্রাথমিক আবাস হিসেবে ধারনা করা হয়। বর্তমানে অনেক খামারী জাতটিকে দেশি মুরগি হিসেবে খামারে লালন-পালন করে থাকেন।

    অনেকে এই জাতটিকে মুরগির একটি সংকর এবং টার্কি হিসেবে ভাবেন। তবে এটি সত্য নয়, বরং এগুলি খাঁটি মুরগির জাত। বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়।

    hen-naked-neck
    ছবিঃ গলাছিলা

    গলা ছোলা মুরগির বৈশিষ্ট্যাবলী :

    • এদের গলায় কোন পালক থাকে না।
    • চামড়া হলুদ বা লাল রঙের হয়।
    • পারকের রং সাদা কালোর মিশ্রণ বা লাল।
    • এদের দেখতে ছোট আকারে টার্কি মোরগ মনে হয়।
    • ওয়াটিল বেশ বড় ও লাল রঙের।
    • পা মোটা ও শক্ত।
    • ডিমের খোসা সাদা।
    • ডিমে ‘তা’ দেয় এবং বাচ্চার ভালো যত্ন নেয়।
    • অন্য দেশি মুরগির তুলনায় আগে (180 দিনে) ডিম আসে।
    • বছরে 90-120 টি ডিম দেয় এবং ডিমের ওজন 40 গ্রাম।
    • মোরগের ওজন 1.5-2.25 কেজি এবং মুরগির ওজন 1.2-1.5 কেজি।

    হিলি মুরগি :

    চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় পাওয়া যায়। এটি সম্পূর্ণ দেশি মুরগির জাত যা মাংস উৎপাদনের দিক থেকে সাধারণ দেশী মোরগ-মুরগি থেকে প্রায় দ্বিগুণ। আর স্বাদের দিক থেকেও অনন্য হওয়ায় স্থানীয়ভাবে এসব হিলি মোরগ ও মুরগি খুবই জনপ্রিয় এবং স্থানীয় বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এসব মোরগ ও মুরগি অন্যান্য দেশি বা বিদেশী মোরগ ও মুরগির তুলনায় 2-3 গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে হিলি মুরগির জাত উন্নয়নে কার্যক্রম চলছে।

    হিলি মুরগি

    হিলি মুরগির বৈশিষ্ট্যাবলী :

    • ডিমের রং হালকা বাদামি।
    • মোরগের ওজন 2-3.5 কেজি ও মুরগির ওজন 1.5-2 কেজি।
    • বছরে 80-100 টি ডিম দেয়।
    • ডিমের ওজন 42 গ্রাম।
    • দেশি মুরগির মতো একই সময়ে ডিম পাড়া শুরু করে।

    ইয়াছিন মুরগি :

    এ জাতের মুরগি বাংলাদেশের বান্দরবান ও টেকনাফ এলাকায় পাওয়া যায়। কোন কোন গবেষক মনে করেন যে, শত শত বছর আগে সাদা মোরগ নামে পরিচিত বৃহদকায় এক শ্রেণীর পক্ষিকুলের পালন করা হতো দেয়াঙ পাহাড়ে এবং তার পাদদেশে। দেয়াঙ পাহাড়ের মুরগিগুলো ছিল সাধারণত : দেশীয় মোরগ-মুরগির চেয়ে 5-7 গুণ বড় এবং মোরগের দীর্ঘ পা ও গলা দেখতে অনেকটা ময়ূর আকৃতির ছিল। পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাতে এই সাদা মোরগই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ইয়াছিন মুরগি নামে পরিচিতি লাভ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মুরগির এই জাতটি বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায়। তবে বর্তমানে আবারও বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ইয়াছিন মুরগির জাত উন্নয়নে কার্যক্রম চলছে।

    ইয়াছিন মুরগির বৈশিষ্ট্যাবলী :

    • ডিমের রং হালকা বাদামি।]
    • মোরগের ওজন 2-3.5 কেজি ও মুরগির ওজন 1.5-2.5 কেজি।
    • বছরে 60-70 টি ডিম দেয়।
    • 20 দিন বয়সে প্রথম ডিম দেয়।

    দেশী মুরগি :

    বাংলাদেশের অধিকাংশ মুরগি এ পর্যায়ে পড়ে। কারণ এদের ওজন, গঠন, পারকের রং ও ‍ডিম উৎপাদনে এত বেশি তারতম্য দেখা যায় যে, এদের কোনো বিশেষ জাতের মধ্যে ফেলা যায় না বা এদের কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নেই।

    দেশি মুরগি
    ছবিঃ দেশি মুরগি

    দেশী মুরগির বৈশিষ্ট্যাবলী :

    • ডিমের রং চক সাদা।
    • মোরগের ওজন 1.5-2 কেজি ও মুরগির ওজন 1-1.5 কেজি।
    • ডিমের ওজন 40 গ্রাম।
    • বছরে গড়ে 50-60 টি ডিম পাড়ে।
    • কুচে খাওয়ার প্রবণতা বিদ্যমান।
    • ছানার খুব যত্ন করে এবং বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
    • এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদেশি জাত অপেক্ষা অনেক বেশি।
    • এরা বাড়ি বা বাড়ির আশপাশে ছিটিয়ে থাকা খাদ্য খেয়ে জীবনধারণ করে।
    • ওজনে হালকা, দেহ সুগঠিত ও পেশি মজবুত।
    • এদের মাংস ও ডিম উভয়ই সুস্বাদু।
    • চতুর ও চঞ্চল হওয়ায় শত্রুরা সহজে ধরতে পারে না।

    সোনালি মুরগি :

    রোড আইল্যান্ড রেড মোরগ ও ফাউমি মুরগির মধ্যে সংকরায়নের মাধ্যমে সোনালি জাতের মুরগির সৃষ্টি হয়েছে। এটি একটি সংকর জাতের দেশী মুরগি। অনেকে একে দেশি জাতের মুরগি বলে মনে করে। সোনালি মুরগি সব আবহাওয়ার জন্য উপযোগি। উত্তর বঙ্গে বিশেষ করে জয়পুরহাট, বগুড়া, নওগা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি সোনালি পালন করা হয়।

    সোনালি মুরগি

    সোনালি মুরগির বৈশিষ্ট্যাবলী :

    • এদের রোগ বালাই কম হয়।
    • আমাদের দেশি আবহাওয়ায় সহজে খাপ খাওয়াতে পারে।
    • দৈহিক ওজন 2-2.5 কেজি।
    • এরা খুবই চালাক এবং চরে খেতে অভ্যস্ত।
    • বছরে  200-250 টি ডিম দেয়।
    • ডিমের ওজন 40-50 গ্রাম।

    আরো পড়তে পারেন..

    কাদাখনাথ মুরগি

    ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    সিল্কি মুরগির বৈশিষ্ট্য এবং সমস্ত তথ্য

    রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

  • সিল্কি মুরগি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও এর বৈশিষ্ট্য

    সিল্কি মুরগি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও এর বৈশিষ্ট্য

    সিল্কি মুরগি (Silkie chicken) জনপ্রিয়, প্রাচীন সৌখিন মুরগির একটি জাত। বর্তমানে এই জাতটি বিনোদন, প্রদর্শনী ও ঔষধি গুণাগুণ এর জন্য পালন করা হয়। এদের নরম তুলতুলে পালক বিদ্যমান। রেশমের মতো পালকের কারণেই এদের এমন (সিল্কি) নামকরন করা হয়েছে। ধারনা করা হয়, এই জাতটি প্রাচীন এশিয়াটিক মুরগীর একটি বংশধর।

    যদিও সিল্কি মুরগি কয়েকশ বছর ধরে পৃথিবিতে বিচারনশীল, কিন্তু এদের সঠিক উৎপত্তিস্থল এখনো জানা যায়নি। ধারনা করা হয়, চীন, ভারত বা জাপানের উপসাগরীয় অঞ্চলে এদের আদিবাস। বিজ্ঞানীরা জানান, খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ বছরেরও আগে চীনে এই মুরগি্র অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। তারপর বাকি দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সিল্কির প্রথম উল্লেখ মেলে মার্কোপোলোর বৃত্তান্তে। সিল্কি মুরগির জাতটি 1887 সালে আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশন এর স্ট্যান্ডার্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়।

    সিল্কি-মুরগি
    সিল্কি-মুরগি

    বর্তমানে সিল্কি মুরগি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় শোভাময় মুরগি হিসেবে স্বীকৃত। জাতটি সৌখিন এবং প্রদর্শনী উভয় উদ্দেশ্যেই পালন ও ব্রিডিং করানো হয়। সিল্কি মুরগির একটি ছোট (bantam) সংস্করণ আছে (মূলত ছোট জাতটিই বেশি জনপ্রিয়)। এটি সাধারণত প্রদর্শনী মেলায় প্রদর্শন করা হয়। নিচে এই জাতের মুরগির বৈশিষ্ট্য, আচরণ, মেজাজ  এবং সিল্কি মুরগীর সম্পূর্ণ প্রজনন তথ্য বর্ননা করা হলো।

    সিল্কি মুরগি বৈশিষ্ট্য

    সিল্কির সুনির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সিল্কি অত্যন্ত সুন্দর এবং শান্ত স্বভাবের একটি পাখি। এরা হালকা ওজনের, নরম তুলতুলে পালক দ্বারা আচ্ছাদিত। শিশুদের সাথে সিল্কি মুরগি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে। শান্ত প্রকৃতির যতো মুরগি আছে, এদের মধ্যে সিল্কি অন্যতম। সিল্কি মুরগির ডিমে তা দেওয়ার প্রবনতা খুবই প্রবল।

    এদেরকে দেখে মনে হয়, এরা যেন নরম তুলতুলে পশমের জামা পড়ে আছে। এদের পালকে বার্বিচেল (barbicels) অভাব আছে। বার্বিচেল সাধারণত মুরগির পালক প্রসারিত করে। এমন নরম তুলতুলে পালকের জন্য এরা মোটেও উড়তে পারেনা।

    সিল্কি মুরগি আকা্রে ছোট, তাই ভুলে কিছু দেশে একটি বান্টাম (bantam) জাত বলা হয়। আসলে সিল্কি মুরগি বড় জাতের একটি আদর্শ প্রজনন। বান্টাম সিল্কি মূলত সিল্কি মুরগির একটি আলাদা বৈচিত্র্য। সাধারণত এদের দুটি স্বতন্ত্র জাত দেখা যায়। দাড়িযুক্ত (Bearded) আর দাড়িছাড়া (Not-Bearded)। দাড়ি যুক্ত সিল্কি মুরগির ঠোঁটের নীচে, অতিরিক্ত পালকের আবরণ দ্বারা কানের লতি পর্যন্ত আবৃত থাকে।

    সিল্কি মুরগি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। সাদা, কালো, ধূসর, এবং নীল রঙের সিল্কি প্রতিযোগিতামূলক প্রদর্শনের জন্য স্বীকৃত। অন্যান্য রঙও বিদ্যমান, যার মধ্যে রয়েছে; লাল, স্প্ল্যাশ, কোকিল আর ল্যাভেন্ডার ।

    সিল্কি-মুরগি
    ছবিঃ উইকিপিডিয়া

    আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের স্ট্যান্ডার্ড অফ পার্ফেকশন অনুসারে, সিল্কির জাতের মুরগির ছোট আকারের কালো ঝুঁটি, নীলাভ কানের লতি (earlobes) এবং কালো চঞ্চু (wattles) আছে। এদের স্বাভাবিকের পরিবর্তে কালো চামড়া, হাড় এবং চারটি নখের বদলে পাচটি করে নখ রয়েছে। অন্যান্য মুরগির জাতে এই বিরল পাচ নখের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে; যেমন, ডার্কিং(Dorking) এবং সুলতান (Sultan)। এদের পা গাঢ়-নীল সঙ্গে প্রচুর পালক। সিল্কির মাংস ধূসর-কালো।

    স্ট্যান্ডার্ড সিল্কি মোরগের ওজন প্রায় 1.8 কেজি  ও মুরগি প্রায় 1.36 কেজি। তবে ব্যান্টাম সিল্কির ওজন বিভিন্ন মানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। যেমন,আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড অফ পার্ফেকশন অনুযায়ী,মোরগের জন্য 1 কেজি, এবং মুরগি জন্য  0.907 কেজি। ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, মোরগের ওজন 0.6 কেজি এবং মুরগির 0.5 কেজি। এবং অস্ট্রেলিয়ান পোল্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, মোরগের জন্য 0.68 কেজি এবং মুরগির জন্য 0.57 কেজি ধরা হয়।

    আচরণ / মেজাজ

    সাধারনত সিল্কি মুরগির আচরণ হালকা মেজাজের। এরা উড়তে পারেন। তাই ছোট খাটো বেড়া বা খাঁচার ভিতরে এদেরকে সহজেই পালন করা যায়। সাধারণত অন্য কারো ক্ষেতে বা বাগানে স্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করলে সামান্য ক্ষতি বা কোন ক্ষতি করে না বললেই চলে।

    এরা অল্প পরিমানে ডিম দেয়। তবে এরা বিভিন্ন কালারের বা ক্রিম কালারের ডিম বেশি পারে। এদের ডিমে তা দেয়ার প্রবনতা খুব বেশি এবং বাচ্চা প্রতিপালনে এরা বিশেষভাবে দক্ষ। এমনকি এরা অন্যান্য মুরগির ডিমও তা দেয়। এজন্য এদেরকে প্রায়শই অন্যান্য মুরগির জন্য পালক মা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ এদেরকে আদর্শ প্রাকৃতিক ইনকুবেটার হিসাবে বিবেচনা করে।

    সিল্কিকে শুষ্ক অবস্থায় রাখা উচিত। কারণ এদের পালক জলরোধী নয়। সিল্কি মুরগি পোষা পাখি হিসাবে খুবই উপযুক্ত। বিশেষ করে শিশুদের জন্য। কারন, এরা খুব শান্তশিষ্ট এবং বন্ধুত্বপূর্ণ।

    সিল্কির ত্বক, অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, হাড় কালো রঙের। কাদাখনাথ মুরগির মত এদেরও অনেক ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। পেশীবহুল শরীর গঠনের জন্য অনেকে শখ করে সিল্কির মাংশ খায়। এছাড়াও অটিজম, ডায়বেটিক, আথারোস্ক্লেরোসিস সহ অনেক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে এটাকে ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ পোল্ট্রি সায়েন্সের এক গবেষণাতে বলা হয়েছে, এদের ডিমেরও অনেক গুণাগুণ বিদ্যমান। সিল্কি মুরগি গড় জীবদ্দশা প্রায় নয় বছর।

    নীচে সিল্কি মুরগির সম্পূর্ণ জাতের প্রোফাইল একনজরে দেয়া হলো।

    সিল্কি মুরগি >> জাতের তথ্যঃ

    জাতের নাম গ্যালাস গ্যালাস ডোমেস্টিকাস (Gallus gallus domesticus)
    অন্য নামসিল্কি (Silkie chicken)
    পালনের উদ্দ্যেশ্যশোভাবর্ধন কারী, সৌখিন, (Ornamental)
    জাতের আচরণশান্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ, মাতৃত্বপূর্ন, হালকা মেজাজ ,সহজে পালন।
    আকারমাঝারী-বড়।
    মেজাজশান্ত,হালকা মেজাজ।
    তা দেয়ার প্রবণতাঘন ঘন।
    ঝুঁটিছোট কালো। আখরোট।
    জলবায়ু সহনশীলতাসকল জলবায়ু।
    ডিমর রঙবাদামী ক্রীম ও বিভিন্ন কালার।
    ডিমের আকারমাঝারি
    ডিমউৎপাদনশীলতামোটামুটি (প্রায় ১০০-১২০ ডিম/বছর)
    বৈচিত্র্যকালো, সাদা, গ্রে, নীল, বিভিন্ন কালারের।
    উৎপত্তিস্থলচীন,জাপান বলে মনে করা হয়।

    আরো পড়তে পারেন..

    কাদাখনাথ মুরগি

    বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশী মুরগি ও তার বৈশিষ্ট্য

    ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য