সিল্কি মুরগি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও এর বৈশিষ্ট্য

সিল্কি মুরগি (Silkie chicken) জনপ্রিয়, প্রাচীন সৌখিন মুরগির একটি জাত। বর্তমানে এই জাতটি বিনোদন, প্রদর্শনী ও ঔষধি গুণাগুণ এর জন্য পালন করা হয়। এদের নরম তুলতুলে পালক বিদ্যমান। রেশমের মতো পালকের কারণেই এদের এমন (সিল্কি) নামকরন করা হয়েছে। ধারনা করা হয়, এই জাতটি প্রাচীন এশিয়াটিক মুরগীর একটি বংশধর।

যদিও সিল্কি মুরগি কয়েকশ বছর ধরে পৃথিবিতে বিচারনশীল, কিন্তু এদের সঠিক উৎপত্তিস্থল এখনো জানা যায়নি। ধারনা করা হয়, চীন, ভারত বা জাপানের উপসাগরীয় অঞ্চলে এদের আদিবাস। বিজ্ঞানীরা জানান, খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ বছরেরও আগে চীনে এই মুরগি্র অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। তারপর বাকি দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সিল্কির প্রথম উল্লেখ মেলে মার্কোপোলোর বৃত্তান্তে। সিল্কি মুরগির জাতটি 1887 সালে আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশন এর স্ট্যান্ডার্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়।

সিল্কি-মুরগি
সিল্কি-মুরগি

বর্তমানে সিল্কি মুরগি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় শোভাময় মুরগি হিসেবে স্বীকৃত। জাতটি সৌখিন এবং প্রদর্শনী উভয় উদ্দেশ্যেই পালন ও ব্রিডিং করানো হয়। সিল্কি মুরগির একটি ছোট (bantam) সংস্করণ আছে (মূলত ছোট জাতটিই বেশি জনপ্রিয়)। এটি সাধারণত প্রদর্শনী মেলায় প্রদর্শন করা হয়। নিচে এই জাতের মুরগির বৈশিষ্ট্য, আচরণ, মেজাজ  এবং সিল্কি মুরগীর সম্পূর্ণ প্রজনন তথ্য বর্ননা করা হলো।

সিল্কি মুরগি বৈশিষ্ট্য

সিল্কির সুনির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সিল্কি অত্যন্ত সুন্দর এবং শান্ত স্বভাবের একটি পাখি। এরা হালকা ওজনের, নরম তুলতুলে পালক দ্বারা আচ্ছাদিত। শিশুদের সাথে সিল্কি মুরগি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে। শান্ত প্রকৃতির যতো মুরগি আছে, এদের মধ্যে সিল্কি অন্যতম। সিল্কি মুরগির ডিমে তা দেওয়ার প্রবনতা খুবই প্রবল।

এদেরকে দেখে মনে হয়, এরা যেন নরম তুলতুলে পশমের জামা পড়ে আছে। এদের পালকে বার্বিচেল (barbicels) অভাব আছে। বার্বিচেল সাধারণত মুরগির পালক প্রসারিত করে। এমন নরম তুলতুলে পালকের জন্য এরা মোটেও উড়তে পারেনা।

সিল্কি মুরগি আকা্রে ছোট, তাই ভুলে কিছু দেশে একটি বান্টাম (bantam) জাত বলা হয়। আসলে সিল্কি মুরগি বড় জাতের একটি আদর্শ প্রজনন। বান্টাম সিল্কি মূলত সিল্কি মুরগির একটি আলাদা বৈচিত্র্য। সাধারণত এদের দুটি স্বতন্ত্র জাত দেখা যায়। দাড়িযুক্ত (Bearded) আর দাড়িছাড়া (Not-Bearded)। দাড়ি যুক্ত সিল্কি মুরগির ঠোঁটের নীচে, অতিরিক্ত পালকের আবরণ দ্বারা কানের লতি পর্যন্ত আবৃত থাকে।

সিল্কি মুরগি বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। সাদা, কালো, ধূসর, এবং নীল রঙের সিল্কি প্রতিযোগিতামূলক প্রদর্শনের জন্য স্বীকৃত। অন্যান্য রঙও বিদ্যমান, যার মধ্যে রয়েছে; লাল, স্প্ল্যাশ, কোকিল আর ল্যাভেন্ডার ।

সিল্কি-মুরগি
ছবিঃ উইকিপিডিয়া

আমেরিকান পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের স্ট্যান্ডার্ড অফ পার্ফেকশন অনুসারে, সিল্কির জাতের মুরগির ছোট আকারের কালো ঝুঁটি, নীলাভ কানের লতি (earlobes) এবং কালো চঞ্চু (wattles) আছে। এদের স্বাভাবিকের পরিবর্তে কালো চামড়া, হাড় এবং চারটি নখের বদলে পাচটি করে নখ রয়েছে। অন্যান্য মুরগির জাতে এই বিরল পাচ নখের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে; যেমন, ডার্কিং(Dorking) এবং সুলতান (Sultan)। এদের পা গাঢ়-নীল সঙ্গে প্রচুর পালক। সিল্কির মাংস ধূসর-কালো।

স্ট্যান্ডার্ড সিল্কি মোরগের ওজন প্রায় 1.8 কেজি  ও মুরগি প্রায় 1.36 কেজি। তবে ব্যান্টাম সিল্কির ওজন বিভিন্ন মানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। যেমন,আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড অফ পার্ফেকশন অনুযায়ী,মোরগের জন্য 1 কেজি, এবং মুরগি জন্য  0.907 কেজি। ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, মোরগের ওজন 0.6 কেজি এবং মুরগির 0.5 কেজি। এবং অস্ট্রেলিয়ান পোল্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, মোরগের জন্য 0.68 কেজি এবং মুরগির জন্য 0.57 কেজি ধরা হয়।

আচরণ / মেজাজ

সাধারনত সিল্কি মুরগির আচরণ হালকা মেজাজের। এরা উড়তে পারেন। তাই ছোট খাটো বেড়া বা খাঁচার ভিতরে এদেরকে সহজেই পালন করা যায়। সাধারণত অন্য কারো ক্ষেতে বা বাগানে স্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করলে সামান্য ক্ষতি বা কোন ক্ষতি করে না বললেই চলে।

এরা অল্প পরিমানে ডিম দেয়। তবে এরা বিভিন্ন কালারের বা ক্রিম কালারের ডিম বেশি পারে। এদের ডিমে তা দেয়ার প্রবনতা খুব বেশি এবং বাচ্চা প্রতিপালনে এরা বিশেষভাবে দক্ষ। এমনকি এরা অন্যান্য মুরগির ডিমও তা দেয়। এজন্য এদেরকে প্রায়শই অন্যান্য মুরগির জন্য পালক মা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ এদেরকে আদর্শ প্রাকৃতিক ইনকুবেটার হিসাবে বিবেচনা করে।

সিল্কিকে শুষ্ক অবস্থায় রাখা উচিত। কারণ এদের পালক জলরোধী নয়। সিল্কি মুরগি পোষা পাখি হিসাবে খুবই উপযুক্ত। বিশেষ করে শিশুদের জন্য। কারন, এরা খুব শান্তশিষ্ট এবং বন্ধুত্বপূর্ণ।

সিল্কির ত্বক, অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, হাড় কালো রঙের। কাদাখনাথ মুরগির মত এদেরও অনেক ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। পেশীবহুল শরীর গঠনের জন্য অনেকে শখ করে সিল্কির মাংশ খায়। এছাড়াও অটিজম, ডায়বেটিক, আথারোস্ক্লেরোসিস সহ অনেক রোগের প্রতিষেধক হিসেবে এটাকে ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ পোল্ট্রি সায়েন্সের এক গবেষণাতে বলা হয়েছে, এদের ডিমেরও অনেক গুণাগুণ বিদ্যমান। সিল্কি মুরগি গড় জীবদ্দশা প্রায় নয় বছর।

নীচে সিল্কি মুরগির সম্পূর্ণ জাতের প্রোফাইল একনজরে দেয়া হলো।

সিল্কি মুরগি >> জাতের তথ্যঃ

জাতের নাম গ্যালাস গ্যালাস ডোমেস্টিকাস (Gallus gallus domesticus)
অন্য নামসিল্কি (Silkie chicken)
পালনের উদ্দ্যেশ্যশোভাবর্ধন কারী, সৌখিন, (Ornamental)
জাতের আচরণশান্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ, মাতৃত্বপূর্ন, হালকা মেজাজ ,সহজে পালন।
আকারমাঝারী-বড়।
মেজাজশান্ত,হালকা মেজাজ।
তা দেয়ার প্রবণতাঘন ঘন।
ঝুঁটিছোট কালো। আখরোট।
জলবায়ু সহনশীলতাসকল জলবায়ু।
ডিমর রঙবাদামী ক্রীম ও বিভিন্ন কালার।
ডিমের আকারমাঝারি
ডিমউৎপাদনশীলতামোটামুটি (প্রায় ১০০-১২০ ডিম/বছর)
বৈচিত্র্যকালো, সাদা, গ্রে, নীল, বিভিন্ন কালারের।
উৎপত্তিস্থলচীন,জাপান বলে মনে করা হয়।

আরো পড়তে পারেন..

কাদাখনাথ মুরগি

বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশী মুরগি ও তার বৈশিষ্ট্য

ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

2 thoughts on “সিল্কি মুরগি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও এর বৈশিষ্ট্য”

Leave a Comment