Category: মুরগি পালন

মুরগি পালন সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন তথ্য।

  • কালারবার্ড মুরগি পালন পদ্ধতি || কৌশল ও খামার ব্যবস্থাপনা।

    কালারবার্ড মুরগি পালন পদ্ধতি || কৌশল ও খামার ব্যবস্থাপনা।

    কালারবার্ড মুরগি অনেকের কাছেই অপরিচিত একটা নাম। কিন্তু এই মুরগি পালন যেমন সহজ, তেমনই লাভজনক। আর এর স্বাদ অনেকেটা দেশী মুরগির মতো। তাই দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অনেক খামারি ভাইয়েরা কালারবার্ড মুরগি পালনের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু ইচ্ছে সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবে তারা সাহস করতে পারছেন না।

    আমাদের আজকের লেখাটি তাদের জন্য, যারা চান কালারবার্ড মুরগি পালন করতে, কিন্তু জানেন না কীভাবে শুরু করবেন। আশা করি বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটি পড়ে আপনি কালারবার্ড মুরগির পালন পদ্ধতি, কৌশল ও খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব তথ্য জানতে পারবেন।

    বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটি ২ টি পর্বে বিভক্ত। আমরা আজকের পর্বের মাধ্যমে উপর্যুক্ত ৭টি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

    আশা করি (বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে লিখিত) এই প্রবন্ধ থেকে সকল খামারি ভাইয়েরা বেশ উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।

    প্রিয় পাঠক, এই লেখাটির পড়ার আগে আপনাকে কিছু শব্দের সাথে পরিচিত হতে হবে। তাহলে পুরো লেখাটি বোঝতে সহজ হবে। যেমন-

    • হোবার : বাচ্চাদের তাপ দেয়ার জন্য গোল ঢাকনার মতো যে জিনিসটায় বাতি লাগানো থাকে, সেটিকেই হোবার বলে। এটি সাধারণত টিনের তৈরি এবং এটি উপর থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
    • লিটার: মুরগির থাকার জন্য খামারে ধানের যে তুষ বা কাঠের গুঁড়া দেয়া হয় তাকে লিটার বলে।
    • চিকগার্ড/বর্ডার: সোজা বাংলা বেড়া। এটি সাধারণত প্লেনশিট (টিন) দিয়ে তৈরি। তবে কাগজের কার্টুন, মোটা কাপড় বা চট দিয়েও তৈরি করা যায়। এটি দিয়ে মুরগির বাচ্চাদের ঘেরাও করে রাখা হয়। একটি আদর্শ চিকগার্ডের উচ্চতা হচ্ছে ১৮ ইঞ্চি

    কালারবার্ড মুরগি পরিচিতি:

    ইংরেজি ‘কালার’ শব্দের অর্থ ‘রং’ এবং ‘বার্ড’ শব্দের অর্থ ‘পাখি’। শাব্দিক অর্থে ‘কালারবার্ড’ মানে ‘রঙিন পাখি’। মূলত কালারবার্ড হলো বিভিন্ন রঙের বা বর্ণের মুরগি । দেখতে দেশি মুরগির মতোই অনেকটা। তবে আদতে দেশি মুরগি না। চেক রিপাবলিকান জাতের মুরগির সংকরায়নের মাধ্যমে এই মুরগির জাত উৎপন্ন করা হয়েছে

    প্রথম দেখায় অনেকেই এদের সোনালী মুরগি মনে করে ভুল করতে পারেন। কেননা সোনালী মুরগি আর কালারবার্ড দেখতে প্রায় একই রকম। তবে পার্থক্য তো অবশ্যই আছে। যেমন অতি অল্প দিনেই কালারবার্ডের ওজন এক কেজি হয়ে যায়, যা সোনালী মুরগির ক্ষেত্রে হয় না। এ নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে। সুতরাং বলা যায়, কালারবার্ড হলো এক ধরনের মুরগি, যা দেখতে অবিকল দেশি মুরগির মতোই (বিভিন্ন বর্ণের)। এদের বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়।

    কালারবার্ড মুরগির বৈশিষ্ট্য:

    ‘কালারবার্ড মুরগির বৈশিষ্ট্য’ লিখে অনলাইনে সার্চ দিলে ভূরিভূরি তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সব তথ্যই একেবারে সত্য নয়। কালারবার্ড পালন করে আমি যে-ই বৈশিষ্ট্যগুলো খোঁজে পেয়েঠি তা-ই নিচে উল্লেখ করা হলো।

    • প্রথমত, এই জাতের মুরগির বৈশিষ্ট্য আমাদের দেশী মুরগির মতই। ফলে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় পালনে অধিক উপযোগী।
    • দ্বিতীয়ত, এই মুরগির মৃত্যুরহার অনেক কম। বাচ্চা অবস্থায় ১-২%। তবে কোম্পানি ভেদে এই মান কম-বেশি হতে পারে।
    • তৃতীয়ত, খাবার খায় কম, ওজন আসে বেশি। যেমন, ৪৫ দিনে ২ কেজির থেকে কম খাবার খেয়ে গড়ে ১ কেজি বা তারচেয়ে বেশি ওজন আসে।

    তাছাড়াও এই মুরগির –

    • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
    • তুলনামূলক ওষুধ কম লাগে।
    • অন্যান্য মুরগির তুলনায় অধিক তাপ সহনশীল। ফলে হিটস্ট্রোক হয় না। গরমের দিনে ফ্যানও কম লাগে।
    • অল্প জায়গায় অধিক পালন করা যায়। আমরা ১১৪০ বর্গফুট জায়গায় ১৩০০ মুরগি অনায়াসেই পালন করতে পারি।
    • কালার বার্ডের মাংসের স্বাদ অনেকটাই দেশী মুরগির মতো।

    কালারবার্ড পালনের উপযুক্ত সময়:

    বছরের প্রায় সব সময়ই এই মুরগি পালন করা যায়। তবে শীতকালে বৃদ্ধি একটু কম হয়। তীব্র গরমে যদিও তেমন সমস্যা হয় না। তবে সবচে’ উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুআরির শুরুর দিক থেকে-জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

    খামারে কালারবার্ড বাচ্চা তোলার আগে করণীয়:

    এই ক্ষেত্রে অন্য মুরগি পালনের মতোই খামার প্রস্তুত করতে হয়। যেমন-

    1. মাকড়শার জালসহ আটকা পড়া সব ময়লা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়।
    2. খামার পাকা হলে জীবাণুনাশক দিয়ে ধুতে হয়।
    3. কাঁচা হলে, কাদা দিয়ে লেপে (প্রলেপ) দিতে হয়।
    4. তারপর জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হয়।
    5. তারপর চুন মিশ্রিত পানি ছিটাতে হয়।
    6. অতঃপর কয়েকদিন রেখে দিতে হয়।

    বাচ্চা তোলার আগের দিন করণীয়:

    বাচ্চা তোলার আগের দিন খামারের পর্দা নামিয়ে দিতে হবে। ব্রুডার প্রস্তুত করে কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে। এতে করে ব্রুডারের তাপ সঠিক মাত্রায় উপনীত হয়। তখন বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার সাথে সাথে আরামবোধ করে। তা না হলে হিট পেতে সময় লাগে। অবশ্য গরমের দিনে এতো আগে বাতি না জ্বালালেও সমস্যা হয় না। ২ কি ৩ ঘণ্টা আগে বাতি জ্বালিয়ে হলেও চলে।

    কালারবার্ড মুরগির ব্রুডার ব্যবস্থাপনা:

    এই জাতের মুরগি ব্রয়লারের মতো এতো দুর্বল নয়। তাই ব্রুডার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এতো দুঃচিন্তার কারণ নেই। আপনি একটি হোবারের সাহায্যে ৩০০ থেকে ৩৫০ বাচ্চাকে অনায়াসেই হিট দিতে পারবেন। তবে শীতকালে এক হোবারের নিচে ৪০০ হলেও সমস্যা নেই। আমরা ৪৩০ পর্যন্ত রেখেছি। সমস্যা হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। তবে হাঁ, শীতকালে বাচ্চাদের ২০ দিনেরও বেশি তাপ দিতে হয়েছে। যদিও এবার শীতের প্রকোপ ছিলো বেশি। কিন্তু সব সময় তো এমন শীত থাকবে না। শীত কম থাকলে বাচ্চার হিটও কম লাগে। গ্রীষ্মকালে তো বাচ্চার হিট লাগে না বললেই চলে। এটি কালারবার্ড মুরগির পালনের একটা মজার দিক।

    কালারবার্ড মুরগির লিটার ব্যবস্থপনা:

    লিটার হিসেবে ধানের তুষ দিবেন। কাঠের গুঁড়াও দেয়া যায়। তবে তুষই ভালো এবং সহজলভ্য। লিটার কত ইঞ্চি দিবেন? আমরা গরমের দিনে ২ ইঞ্চি দিয়েছি। বেশি হলে সমস্যা নেই। খুব বেশি গরম পড়লে অবশ্য ১.৫ ইঞ্চি দিলেও চলবে। সমস্যা হয় না। তবে তুষের উপরের পেপার বিছিয়ে দিতেই হবে। এটি না করলে সমস্যা। কত দিন রাখবেন পেপার? ২ থেকে ৩ দিন। মাঝে মাঝে মুরগির বিষ্ঠায় ভিজে যাবে পেপার। তখন আবার নতুন পেপার বিছিয়ে দিবেন। এতে বাচ্চাগুলো ভালো থাকবে। ফলে ভালো থাকবে আপনার মনটাও।

    কালারবার্ড মুরগীর বাচ্চা
    কালারবার্ড মুরগীর বাচ্চা

    বাচ্চা কিছুটা বড় হলে লিটার পা দিয়ে নেড়ে দিতে হবে। মুরগির বিষ্ঠা অনেক বেশি হয়ে গেলে চালনী দিয়ে চেলে দিতে হবে।

    খামারে বাচ্চা তোলার পর করণীয়:

    খামারে বাচ্চা তোলার পর ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত গ্লুকোজের পানি খাওয়াতে হয়। সাথে ভিটামিন সি দিলে ভালো। এতে বাচ্চা তৎক্ষণিক শক্তি পায়। ধকল দূর হয়। কেননা বাচ্চা পরিবহন করার ফলে তাদের উপর প্রচুর ধকল যায়। তা দূর করার জন্যই এই আপ্যায়ন!

    বাজারে অবশ্য গ্লুকোজ এবং ভিটামিন-সি এর প্রি-মিক্স পাওয়া যায়। এটি খাওয়ানো যেতে পারে। আবার অনেককে দেখেছি পানিতে চিনি মিশিয়ে খাওয়াতে। সাথে লেবুর রস। দোকানে গ্লুকোজ পাওনা না গেলে বিকল্প হিসেবে এটি খাওয়ানো যেতে পারে। কী আর করার! ধকল দূর করতে হবে তো!

    গ্লুকোজের পানির সাথে অল্প অল্প করে খাবারও দিতে হবে। প্রথম কয়েকদিন পেপারের উপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর ট্রে মধ্যে দিতে হয়। খাবারে পাশাপাশি চলে সাদা পানি। অনেকে পানির সাথে লাইসোভিট মিশিয়ে দেন। এটি ভালো। এতে বাচ্চাগুলো ফুরফুরা থাকে। ঘণ্টা তিনেক পর পর বাচ্চাগুলো খেয়াল নিতে হয়, দেখতে হয় বাচ্চাগুলো সঠিক তাপ পাচ্ছে কি না।

    কীভাবে বুঝবেন বাচ্চাগুলো সঠিক তাপ পাচ্ছে?

    ব্রুডারে বাচ্চাদের তাপ দেয়ার দেয়ার সময় তিন ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-

    1. বাচ্চাগুলো হয়ত প্রয়োজনের চেয়ে কম তাপ পায়। কিংবা
    2. বাচ্চাগুলো হয়ত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তাপ পায়। অথবা
    3. বাচ্চাগুলো সঠিক তাপ পায়।

    প্রয়োজনের চেয়ে কম কিংবা বেশি; উভয় তাপই বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। তাই বর্ডারে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

    প্রশ্ন হলো কীভাবে বোঝবো বাচ্চাগুলো সঠিক তাপ পাচ্ছে কিংবা পাচ্ছে না?

    বিষয়টা একদমই সহজ। যখন দেখবেন-

    1. বাচ্চাগুলো জড়সড় হয়ে হোবারের নিচে বসে আছে, তখনই বোঝতে হবে, বাচ্চাগুলো পর্যাপ্ত তাপ পাচ্ছে না।
    2. বাচ্চাগুলো হোবার তথা বাতির নিচ থেকে সরে গিয়ে চিকগার্ড তথা বর্ডারের গা ঘেঁষে বসে থাকছে, তখন বুঝবেন হিট বেশি হচ্ছে।
    3. বাচ্চাগুলো খাবার খাচ্ছে, এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে, সুষমভাবে ছড়িয়ে আছে তখন বুঝবেন বাচ্চাগুলো সঠিক তাপই পাচ্ছে।

    তাপ কম হলে কী করবেন?

    1. হোবারটি নিচে নামিয়ে দিবেন। তাতে যদি কাজ না হয়,
    2. বেশি পাওয়ারের বাতি লাগাবেন। তাতেও কাজ না হলে,
    3. বাতির পরিমাণ বাড়াবেন।

    বাচ্চাগুলো বেশি তাপ পেলে কী করবেন?

    একদম সহজ। এই ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত বিপরীত কাজগুলো করবেন। যেমন

    1. হোবারটি আরেকটু উপরে উঠিয়ে দিবেন। তাতে কাজ না হলে,
    2. কম পাওয়ারের বাতি দিবেন। কিংবা,
    3. বাতির সংখ্যা কমিয়ে দিবেন।

    মূলত, হোবারটি উপরে ওঠিয়ে দিলেই হয়। তারপর পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন, বাচ্চাগুলো ব্রুডারে সুষমভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কি না। ছোটাছুটি করছে কি না।

    আজকের পর্ব এইটুকুই। পববর্তী পর্বে আমরা বাকি বিষয়গুলো যেমন কালারবার্ড মুরগির রোগ-বালাই ও ওষুধপাতির ব্যবহারবিধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আপনার দুআয় আমাদের ভুলবেন না। ফি-আমানিল্লাহ।

    -মো: কাউছার হামিদ

  • ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট ও খাদ্য গ্রহনের তালিকা

    লাভজনকভাবে ব্রয়লার পালনের জন্য নিয়মিত মুরগির ওজন বৃদ্ধি ও খাদ্য গ্রহনের চার্ট লক্ষ রাখা জরুরী। নিচে ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট ও খাদ্য গ্রহনের তালিকা দেয়া হল।

    বয়স (দিন)ওজন (গ্রাম) খাদ্য গ্রহন (গ্রাম)দৈনিক বৃদ্ধি (গ্রাম)মোট খাদ্য গ্রহন (গ্রাম)
    ৪০-৪৪
    ৬২১৮১৩
    ৮০১৭১৮২৯
    ১০১২০২১৫০
    ১২৪২৪২৩৭৩
    ১৫০২৭২৬১০১
    ১৭৯৩১২৯১৩২
    ২১১৩৫৩২১৬৭
    ২৪৭৩৯৩৫২০৫
    ২৮৬৪৩৩৯২৪৮
    ১০৩২৮৪৭৪২২৯৬
    ১১৩৭৩৫২৪৬৩৪৭
    ১২৪২২৫৭৪৯৪০৪
    ১৩৪৭৫৬১৫২৪৬৫
    ১৪৫৩১৬৭৫৬৫৩২
    ১৫৫৯০৭২৫৯৬০৪
    ১৬৬৫২৭৭৬২৬৮১
    ১৭৭১৮৮৩৬৬৭৬৪
    ১৮৭৮৬৮৯৬৯৮৫২
    ১৯৮৫৮৯৪৭২৯৪৭
    ২০৯৩৩১০০৭৫১০৪৭
    ২১১০১০১০৬৭৭১১৫৩
    ২২১০৯০১১২৮০১২৬৫
    ২৩১১৭২১১৮৮২১৩৮৩
    ২৪১২৫৭১২৪৮৫১৫০৬
    ২৫১৩৪৪১৩০৮৭১৬৩৬
    ২৬১৪৩৩১৩৬৮৯১৭৭২
    ২৭১৫২৪১৪১৯১১৯১৩
    ২৮১৬১৬১৪৭৯২২০৬০
    ২৯১৭১০১৫৩৯৪২২১৩
    ৩০১৮০৫১৫৮৯৫২৩৭১
    ৩১১৯০১১৬৩৯৬২৫৩৪
    ৩২১৯৯১৬৯৯৭২৭০৩
    ৩৩২০৯৭১৭৪৯৮২৮৭৬
    ৩৪২১৯৬১৭৯৯৯৩০৫৫
    ৩৫২২৯৫১৮৩১০০৩২৩৮
    ৩৬২৩৯৫১৮৮১০০৩৪২৯
    ৩৭২৪৯৫১৯২১০০৩৬১৮
    ৩৮২৫৯৫১৯৬১০০৩৮১৪
    ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট ও খাদ্য গ্রহনের তালিকা

    বিঃদ্রঃ উপরোক্ত চার্ট টি বিভিন্ন বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানির ম্যানুয়াল এবং ফিল্ড থেকে সংগৃহীত ডাটার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বাচ্চার জাত, বাচ্চার কোয়ালিটি, ফিডের কোয়ালিটি, ফার্মের ম্যানেজমেন্ট, বায়োসিকিউরিটি, পরিবেশ এবং সর্বোপরি রোগ-বালাইয়ের কারনে চার্টে উল্লেখিত ডাটার মান বয়স অনুযায়ী কম-বেশি হতে পারে।

    উপরের টেবিল থেকে কয়েকটি বিষয় লক্ষ করা যেতে পারে। যেমন ৩৫ দিনের পর থেকে খাদ্য গ্রহন বাড়তে থাকলেও ওজন বৃদ্ধির হার কিন্তু বাড়েনা। ফলে ৩৫ দিন পর্যন্ত ব্রয়লার মুরগি পালন লাভজনক

    আরো পড়ুনঃ ব্রয়লার মুরগির খাবার তালিকা

    ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়

    ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় হলো সঠিক পরিচর্যা করে ব্রয়লার মুরগি পালন করা। এর জন্য প্রথমত ভালোমানের খাদ্য দেয়া জরুরী। এছাড়াও  ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ হিসেবে বিভিন্ন ভিটামিন গ্রোথ প্রোমোটার খাওয়ানো যেতে পারে।বাজারে বিভিন্ন ব্রয়লার মুরগির গ্রোথ প্রোমোটার পাওয়া যায়। যেগুলি মূলত বিভিন্ন মাল্টি ভিটামিন।ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় বা সঠিক পরিচর্যা নীচে আলোচনা করা হলো।

    সঠিক ভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় গুলো ধাপে ধাপে দেওয়া হলো।

    • প্রথমে খামার পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে।
    • খামারে বাচ্চা আনার পূর্বে খামার জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার পরিছন্ন করতে হবে।
    • খামারটি আলো-বাতাস এর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
    • মুরগির বাচ্চা ব্রুডারে আনার আগে প্রোবাইটিক স্প্রে করা যেতে পারে।
    • বাচ্চা আনার সাথে সাথে পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
    • সুস্থ সবল ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা খামারে আনতে হবে। একটি ভালো মানের বাচ্চার ওজন ৩৫ গ্রাম হতে হবে।
    • খামারে লিটার শুকনা রাখতে হবে।
    • লিটার ভেজা ভাব হলে তা পরিবর্তন করতে হবে।
    • ব্রয়লার মুরগির ব্রুডিং এ তাপমাত্রা সঠিক রাখতে হবে।
    • ব্রয়লার মুরগির ২ ব্যাচের মাঝে সর্বনিম্ন ১৫ দিন গ্যাপ রাখতে হবে।
    • খামারের মুরগি গুলোকে সময় মত ভ্যাকসিন করতে হবে।

    এই সকল বিষয় গুলো খেয়াল রাখলে ব্রয়লার মুরগির ভালো ওজন পাওয়া যাবে। মুরগির রোগ না হওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারলে, ব্রয়লার মুরগির ভালো ওজন পাওয়া যাবে।

  • ডিমের জন্য কোন মুরগি ভাল – জানুন বিস্তারিত

    ডিমের জন্য কোন মুরগি ভাল – জানুন বিস্তারিত

    ডিমের জন্য কোন মুরগি ভাল এটা নিয়ে আমাদের অনেকেরই জানার আগ্রহ আছে। আজ আপনাদের এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।

    প্রথমেই আপনাকে মুরগি পালনের পদ্ধতি নিয়ে জানতে হবে। কারন, পালন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে সর্বাধিক ডিম পারা মুরগি হবে কোনটি। যেমন বানিজ্যিক লেয়ার মুরগি সবথেকে বেশি ডিম পাড়লেও আপনি দেশি মুরগির মত করে পালন করলে সর্বাধিক ডিম পাবেননা।

    অর্থাৎ, আপনি কি পদ্ধতিতে মুরগি পালন করবেন তার উপর নির্ভর করছে ডিমের জন্য কোন মুরগি ভাল হবে

    হাইব্রিড লেয়ার মুরগি – সবথেকে বেশি ডিম পারা মুরগি

    যদি আপনি খাচায় বা আবদ্ধ পদ্ধতিতে বানিজ্যিক আকারে মুরগি পালন করতে চান, তবে বানিজ্যিক লেয়ার মুরগি হচ্ছে সবথেকে বেশি ডিম পারা মুরগি।

    হাইব্রিড লেয়ার মুরগি বছরে প্রায় ৩৫০ ডিম দেয়। অর্থাৎ ৯৫% ডিম দিয়ে থাকে। তবে লেয়ার মুরগি পালনের জন্য আপনাকে যথেষ্ট পরিচর্যা ও সঠিক ব্যাবস্থাপনা করতে হবে।

    লেয়ার মুরগি

    লেয়ার মুরগি দুই ধরনের হয়ঃ সাদা ও লাল লেয়ার। এর মধ্যে সাদা লেয়ার মুরগি লাল লেয়ারের থেকে তুলনামূলক বেশী ডিম পারে।

    আবার কোম্পানি ভেদে লেয়ার মুরগির কিছু ভিন্নতা রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় BB 300 লেয়ার সবথেকে ভালো ডিম দেয়া লেয়ার মুরগি হিসেবে বিবেচিত।

    হাইব্রিড লেয়ার মুরগি কোথায় পাবেন?

    আমাদের দেশে অনেক কোম্পানিই লেয়ার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে। দেশব্যাপি এসব কোম্পানির নির্দিষ্ট পরিবেশক বা ডিলার রয়েছে। নিকটস্থ যেকোন ডিলার থেকে বুকিং এর মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট কোম্পানির বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারবেন।

    আর-আই-আর মুরগি – ডিমের রাজা

    আপনি যদি মুরগি পালনে নতুন হয়ে থাকেন, তবে আপনার জন্য ভালো ডিম পারা মুরগি হতে পারে আর-আই-আর জাতের মুরগি। এরা বছরে প্রায় ২৮০ থেক ৩২০ টি প্রর্যন্ত ডিম পাড়ে। এদের পরিচর্যা তুলনামূলক সহজ।

    আংশিক আবদ্ধ পদ্ধতির জন্য আর-আই-আর জাতের মুরগি সবথেকে ভালো হতে পারে।

    আর আই আর মুরগি নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই লেখাটি পড়তে পারেনঃ রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    কোথায় পাবেন আর-আই-আর মুরগি?

    সাধারনত সরকারি হাঁস-মুরগির খামার গুলিতে আপনি আর-আই-আর জাতের মুরগি পাবেন। সরকারিভাবে গ্রামীন জনগোষ্ঠী ও নারী উন্নয়নের জন্য এই বাচ্চা সরবরাহ করা হয়।

    এছাড়াও কিছু কিছু হ্যাচারী থেকে এই জাতের মুরগি সংগ্রহ করা যেতে পারে।

    ফাউমি মুরগি

    আবদ্ধ পদ্ধতিতে দেশীয় মুরগির মধ্যে সবথেকে ভালো ডিম পাড়ে ফাউমি মুরগি। এরা বছরে প্রায় ৩০০ থেকে ৩২০ টা ডিম পারে। এদের ডিম দেয়ার হার খুব ভালো। সহজে কুচেভাব হয়না। তবে এরা আকারে ছোট ডিম পাড়ে।

    ফাউমি মুরগি নিয়ে জানতে পড়ুনঃ ফাউমি মুরগি

    কোথায় পাবেন ফাউমি মুরগি ?

    সাধারনত সরকারি হাঁস-মুরগির খামার গুলিতে আপনি ফাউমি মুরগি পাবেন। সরকারিভাবে গ্রামীন জনগোষ্ঠী ও নারী উন্নয়নের জন্য এই মুরগির বাচ্চা সরবরাহ করা হয়।

    এছাড়াও কিছু কিছু হ্যাচারী থেকে আপনি ফাউমি মুরগি সংগ্রহ করতে পারেন।

    সোনালি মুরগি

    সোনালি মুরগি হচ্ছে আর-আই-আর মোরগ ও ফাউমি মুরগির ক্রস জাত। এদের মাংসের স্বাদ প্রায় দেশি মুরগির মত। আমাদের দেশে জাতটি মাংসের জন্য খামারিরা পালন করে থাকেন। তবে এদেরকে খোলা বা মুক্ত অবস্থায়ও পালন করা যায়। প্রায় দেশি মুরগির মত স্বভাব চরিত্রের সোনালি মুরগি দেশি মুরগির তুলনায় অধিক ডিম দিয়ে থাকে।

    সোনালী মুরগিও প্রায় ৭৫% ডিম দিয়ে থাকে। এজন্য পিউর বা ক্লাসিক সোনালি মুরগি পালন করা ভালো হবে।

    সোনালি মুরগি নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ সোনালি মুরগি

  • ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা ।। যেভাবে তৈরি করবেন ফাউমি মুরগির খাদ্য

    ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা ।। যেভাবে তৈরি করবেন ফাউমি মুরগির খাদ্য

    ফাউমি মুরগি পালন অন্যান্য মুরগির তুলনায় সহজ। সাধারন খাদ্যে ভালো এরা তুলনামূলক প্রোডাকশন দিয়ে থাকে। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অন্যন্য। তবে ডিমের জন্য ফাউমি মুরগি পালন করা হলে, সঠিক নিয়মে ফাউমি মুরগির খাদ্য তালিকা প্রনয়ন করতে হবে।

    ফাউমি মুরগির খাদ্য তালিকা করতে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। যেমন বয়স, পালনের উদ্দেশ্য, আবহাওয়া, পুষ্টিমান ইত্যাদি। সাধারণত এক মাস বয়স পর্যন্ত স্টার্টার, বাড়ন্ত সময়ে গ্রোয়ার ও ডিম পাড়ার সময়ে লেয়ার ফিড সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

    যথাযথ পুষ্টিমান জেনে আপনি সহজেই ফাউমি মুরগির খাদ্য তৈরী করতে পারেন।

    ফাউমি মুরগি সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুনঃ ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    বয়স অনুসারে ফাউমি মুরগিকে সাধারণত ৩-৫ ধরণের খাবার দেয়া হয়।

    খাবারের নামবয়স (সপ্তাহ)
    স্টার্টার০-৬ সপ্তাহ
    গ্রোয়ার৭-১৪ সপ্তাহ
    লেয়ার ১১৫-৪৫ সপ্তাহ
    লেয়ার ২৪৬-৯৫ সপ্তাহ

    ফাউমি মুরগির খাদ্য তালিকা

    ফাউমি মুরগির জন্য ১০০ কেজি খাবার তৈরির একটি তালিকা দেয়া হলো।

    উপাদানস্টার্টারগ্রোয়ারলেয়ার ১লেয়ার ২
    ভূট্টা৫২ কেজি৫৪কেজি৫৫ কেজি৫৬ কেজি
    সয়াবিন মিল২৫ কেজি২৪ কেজি২২ কেজি২২ কেজি
    রাইচ পালিশ১০ কেজি১০ কেজি৮ কেজি৭.৫ কেজি
    প্রোটিন ৬০%৮ কেজি৫ কেজি৪ কেজি৩ কেজি
    লাইমস্টোন / ঝিনুক চূর্ণ২ কেজি২.৫ কেজি৮ কেজি১০ কেজি
    লবণ৩০০ গ্রাম২৮০ গ্রাম২৮০ গ্রাম২৮০ গ্রাম
    ডিসিপি৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৫০০ গ্রাম৫০০ গ্রাম
    সালমোনেলা কিলার৩০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩২০ গ্রাম
    প্রিমিক্স২০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম
    ডিএল- মিথিওনিন১৫০ গ্রাম১৩৫ গ্রাম১৩০ গ্রাম১২৫ গ্রাম
    এল-লাইসিন১০০ গ্রাম৯০ গ্রাম৮০ গ্রাম৬০ গ্রাম
    কোলিন ক্লোরাইড৬০ গ্রাম৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম
    টক্সিন বাইন্ডার১২৫ গ্রাম১৩৫ গ্রাম১৫০ গ্রাম১৫০ গ্রাম
    সোডা৫০ গ্রাম৭৫ গ্রাম
    সয়াবিন তেল২০০ গ্রাম১৫০ গ্রাম১০০ গ্রাম
    মোটঃ১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি

    ফাউমি মুরগি খাদ্য পুষ্টিমান চাহিদা

    বয়স অনুযায়ী খাবারে পুস্টিগুণের চাহিদা পরিবর্তন হয়। শীত গরম অনুযায়ী এনার্জি কম বেশি হয়। ফাউমি মুরগির খাদ্য তৈরিতে নিম্নলিখিত চার্টটি বিবেচনায় রাখতে হবে।

    পুষ্টি উপাদানস্টার্টারগ্রোয়ারলেয়ার ১লেয়ার ২
    মেটাবলিক এনার্জি (kcal/kg)২৭৫০-২৯৫০২৭০০-২৮৫০২৭৮০-২৯০০২৭৫০-২৯০০
    ক্রুড প্রোটিন (g/day)২০-২২১৭-১৯১৬-১৭১৬-১৭
    লাইসিন (mg/day)৯৫০-১১১০৮০০-৭৯০৬২০-৬৮০৬৭০-৭৪০
    মিথিওনিন (mg/day)৪৫০-৪৯০৩৯০-৪৩০৩৫০-৩৮০৩৪০-৩৭০
    ক্যালসিয়াম (g/day)২.৬০২.৮০-৩.৯০
    সোডিয়াম ও ক্লোরাইড (mg/day)২০০১৮০১৮০১৮০
    থিওনিন (mg/day)৬৫০-৭৮০৫৫০-৬৪০৫৫০-৫৮০৫০০-৫৬০
    সোনালি মুরগির খাবার

    বিশেষ নোটঃ উল্লেখিত তালিকাতে সয়াবিন তেল ওজন ধরা হয়নি। এবং টক্সিন বাইন্ডার, সালমোনেলা কিলার, ভিটামিন-মিনারেলস প্রিমিক্স প্রয়োজন অনুযায়ী স্ব-স্ব কোম্পানীর নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে।

    ফিড এডিটিভস সমূহঃ

    এনজাইম৬০ গ্রাম৫০ গ্রাম৮০ গ্রাম৭৫ গ্রাম
    প্রোবায়োটিক৬০ গ্রাম৫০ গ্রাম৪৫ গ্রাম৪৫ গ্রাম৪৫ গ্রাম
    ককসিডিওস্ট্যাট৩০ গ্রাম৩৫ গ্রাম
    ফাইটেজ০.৭৫ গ্রাম০.৭৫ গ্রাম
    থিওনিন৬০ গ্রাম৫০ গ্রাম৩৫ গ্রাম৪৫ গ্রাম৪০গ্রাম

    বিশেষ নোটঃ খামারের মুরগির স্বাস্থ, উৎপাদন, খাদ্য উপাদানের গুণগত মান ও আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এ খাদ্য তালিকাটিতে পরিবর্তন করা যেতে পারে।

    উল্লেখ্য যে, খাদ্য তালিকায় উল্লেখিত ফিড এডিটিভস সমূহে প্রয়োজন অনুযায়ী স্ব-স্ব কোম্পানীর নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে অথবা অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান কর্তৃক পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা যেতে পারে।

    আরো পড়ুনঃ যেভাবে তৈরি করবেন সোনালি মুরগির খাবার

  • দেশি মুরগি পালন – বানিজ্যিকভাবে দেশি মুরগির খামার ব্যাবস্থাপনা

    দেশি মুরগি পালন – বানিজ্যিকভাবে দেশি মুরগির খামার ব্যাবস্থাপনা

    প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে দেশি মুরগি পালন। স্বল্প বিনিয়োগ, সহজ ব্যাবস্থাপনা ও ভালো বাজার দরের কারনে দেশী মুরগী পালন বর্তমানে বেকার যুবকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।

    লাভজনকভাবে দেশি মুরগি পালন করতে হলে সঠিক পরিচর্যা ও খামার ব্যাবস্থাপনা সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। আমরা এখানে দেশি মুরগি পালনের বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি দেশি মুরগি পালন প্রশিক্ষণ সম্পর্কে আপনার ধারনা সঠিক থাকবে।

    দেশি মুরগি পালনের সুবিধা

    দেশি মুরগি পালন দিন দিন বেশকিছু কারনে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। স্বল্প বিনিয়গে বেশি মুনাফা অর্জনে দেশি মুরগি পালন হতে পারে আদর্শ ব্যাবসা। অন্যান্য হাইব্রীড মুরগির তুলনায় দেশি মুরগি পালন করা সহজ।

    অন্যান্য যেকোনো মুরগির তুলনায় দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো। ফলে দেশি মুরগির মৃত্যুহার কম। দেশি মুরগি পালনে ঔষধ খরচ তেমন একটা হয়না। তবে লাভজনক খামার গড়ে তুলতে চাইলে বায়োসিকিউরিটি ভালোভাবে মেনে চলতে হবে।

    উচ্ছিষ্ট বা সাধারন মানের খাদ্যেও দেশি মুরগি জীবনধারন করতে পারে। প্রয়োজনীয় মিনারেল নিজে থেকেই চড়ে বেড়িয়ে সংগ্রহ করতে পারে। দেশি মুরগী পালনের অন্যতম সুবিধা হলো, এর খাদ্য খরচ কম।

    সবথেকে আকর্ষনীয় বিষয় হলো, দেশি মুরগির বাজার চাহিদা। সাধারণত ব্র্রয়লার বা কক মুরগির মত দেশি মুরগির বাজারদর কমে যায়না। সারা বছরই দেশি মুরগির বাজার দর ভালো থাকে।

    দেশি মুরগির জাত নির্বাচন

    দেশি মুরগি বলতে আমরা একটি নির্দিষ্ট মুরগি বুঝালেও আসলে দেশি মুরগির কয়েকটি জাত রয়েছে। আমাদের দেশে প্রাপ্ত যেমন, গলাছিলা, হিলি, অসিল সহ কমন দেশি মুরগির জাত রয়েছে। এগুলির একেকটির একেক রকম জাতগত বৈশিষ্ট রয়েছে।

    আমাদের দেশে সরকারি ভাবে দেশি মুরগির জাত উন্নয়ন নিয়ে কাজ হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বি,এল,আর,আই কমন গলাছিলা ও হিলি মুরগির জাত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে দেশি মুরগির খামার করা যেতে পারে।

    দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি

    দেশী মুরগী পালনের কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। যেমন,

    • সম্পূর্ন আবদ্ধ অবস্থায়
    • আংশিক আবদ্ধ
    • উন্মুক্ত বা সম্পূর্ন খোলা-মেলা পরিবেশ।

    সাধারন ভাবে আমাদের দেশে দেশি মুরগি উন্মুক্ত বা খোলা-মেলা পরিবেশেই বেশি পালন করা হয়ে থাকে। তবে কমার্শিয়াল বা ব্যাবসায়িক ভাবে এই পদ্ধতি তেমন লাভজনক নয়।

    আবার যেহেতু দেশি মুরগি প্রকৃতিগত ভাবে চঞ্চল ও চড়ে বেড়ানো স্বভাবের তাই এদেরকে সম্পূর্ন আবদ্ধ অবস্থায় ফার্মের মত করে পালন করাও উচিত নয়। সম্পূর্ন আবদ্ধ অবস্থায় দেশি মুরগি পালন করা হলে এটি এর গুনগত বৈশিষ্ট ক্রমান্বয়ে হারাতে থাকবে।

    প্রোল্ট্রি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশি মুরগিকে আংশিক আবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন করা সবথেকে উত্তম। এক্ষেত্রে দেশি মুরগির জন্য থাকার ঘর বা শেড ও পাশাপাশি চড়ে বেড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত উন্মুক্ত পরিবেশ দিতে হবে।

    দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে দেশি মুরগি চড়ে বেড়িয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও মিনারেল সংগ্রহ করবে। এর ফলে মুরগি পালনের খাদ্য খরচও কমে আসবে।

    যেভাবে দেশী মুরগির ঘর প্রস্তুত করবেন

    দেশী মুরগী পালনে ঘর হবে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা। প্রস্থ সাধারনত ২০ থেকে ২৫ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট বা চাহিদা অনুযায়ী করা যেতে পারে।

    মুরগির ঘরের মেঝে হবে মাটি থেকে কমপক্ষে এক ফুট উচুতে এবং চারপাশ ভালোভাবে নেট দিয়ে ঘেরা দিতে হবে। খেয়াল রাখা প্রয়োজন, বাহিরহতে কোন কিছু যেন শেডে প্রবেশ করতে না পারে।

    মাঝারী আকারের দেশি মুরগি পালনে প্রতিটি মুরগির জন্য ০.৮৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। অর্থাৎ, ৫০০ দেশি মুরগির জন্য ৪২৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। তবে পূর্ন বয়সের বা ডিমের জন্য পালন করলে মুরগি প্রতি কমপক্ষে ১.৫ বর্গফুট জায়গা দিতে হবে।

    আংশিক আবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন করলে চারপাশ ভালোভাবে নেট দিয়ে ঘেরা দিতে হবে। চড়ে বেড়ানোর স্থানে যেন শিয়াল, বেজি, ইদুর ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে।

    দেশি মুরগির বাচ্চা পালন পদ্ধতি

    বাচ্চা উঠানোর পূর্বে ব্রুডার ঘরের সমস্ত জিনিস ভালোভাবে পরিস্কার করে নিতে হবে। ভালোবভাবে ব্রুডার তৈরি করতে হবে। ঘরের চারপাশে কাপরের পর্দা দিতে হবে।

    বাচ্চা আসার ১০ মিনিট আগেই পানির পাত্র এবং খাবার পাত্র যথাযথ জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।

    প্রথম দুই ঘন্টা শুধুমাত্র জীবানুমুক্ত সাদা পানি দিতে হবে। দুর্বল বাচ্চা পৃথক করে গ্লুকোজের পানি ফোটায় ফোটায় খাইয়ে দিতে হবে।

    ব্রুডারে ছাড়ার ১০ মিনিট পর খাবার দিতে হবে। এক্ষেত্র শুধুমাত্র প্রথমবার পেপারে ছিটিয়ে দিয়ে পরে অবশ্যই ট্রেতে খাবার দিতে হবে।

    বাচ্চার অবস্থা ৩ ঘন্টা পরপর পর্যবেক্ষণ করতে হবে দেখতে হবে তাপ বেশী হচ্ছে কিনা। কোন সমস্যা থাকলে সমাধান করতে হবে এবং বাচ্চা মৃত থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে।

    খাবার পানি শেষ হলে খাবার পানি দিতে হবে। পেপার ভিজে গেলে পাল্টে দিতে হবে। ২৪ ঘন্টা পর পেপার সম্পূর্ন ভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে।

    দেশি মুরগিকে প্রথম একমাস পর্যন্ত ভালোভাবে যত্ন নিতে হবে এবং বাহিরে ছাড়া যাবেনা। সকল প্রকার শিকারি প্রানী বিশেষ করে কাক-শকুন, বিড়াল, বেজি ইত্যাদি থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

    দেশী মুরগীর খাদ্য তালিকা

    লাভজনকভাবে দেশি মুরগি পালনে জন্য খাদ্য খরচ কমিয়ে আনা জরুরী। বাজারে প্রাপ্ত সোনালী ফিডের সাথে দানাদার জাতীয় খাদ্য দিতে হবে।

    চড়ে বেরিয়ে দেশি মুরগি নিজে থেকেই ঘাস, শাক-সবজি ও লতাপাতা খেয়ে থাকে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় মিনারেল এরা নিজে থেকেই সংগ্রহ করতে পারে।

    শুধুমাত্র ফিড খাইয়ে দেশি মুরগি পালন করলে এর মাংসের স্বাদ ও গুনগত বৈশিষ্ট লোপ পায়। ফলে উপোযুক্ত বাজার দর পাওয়া যায়না।

    অপরদিকে শুধুমাত্র দানাদার খাদ্য প্রয়োগ করেও কাংখিত ওজন পাওয়া যায়না। এক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ ৬০ ভাগ ফিড ও বাকি ৪০ ভাগ দানাদার খাদ্য দেয়া যেতে পারে।

    দানাদার খাদ্য হিসেবে ধান, চালের খুদ, গম, ভুট্টা ভাঙ্গা, বিভিন্ন ডাল ও শষ্যদানা দেয়া যেতে পারে।

    দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

    অনেকের ধারনা দেশি মুরগির রোগ বালাই হয়না। জিনগত ভাবে দেশি মুরগি পরিবেশের সাথে খাপখাইয়ে নিতে পারলেও বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

    নিয়মিত টিকা প্রাদান ও যথাযথ ভিটামিন মিনারেল প্রয়োগ করলে দেশি মুরগি তেমন রোগাক্রান্ত হয়না।

    এখানে দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো।

    রানীক্ষেত

    দেশি মুরগিতে রাণীক্ষেত রোগের লক্ষণ সচারচর বেশি দেখা যায়। এ রোগ হলে মুরগী খাওয়া বন্ধ করে দেয়। মাথা নিচু ও চোখ বন্ধ করে ঝিমাতে থাকে। সাদা চুনের মত পাতলা মল ত্যাগ করে। নাক দিয়ে সর্দি ও মুখ দিয়ে লালা ঝরে।

    সঠিকভাবে নিয়মিত টিকা প্রদান করলে রাণীক্ষেত রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

    আরো জানতে পড়ুনঃ দেশি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    গামবোরো

    দেশি মুরগির আরেকটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ হচ্ছে গামবোরো। বিরনা নামক এক ভাইরাসের ফলে এই রোগ হয়ে। সাদা চুনের মত বিষ্ঠা ত্যাগ করে বলে, গ্রামাঞ্চলে এটি চুনারোগ বলেও পরিচিত।

    গামবোরো রোগের জন্য টিকা বা ভ্যাকসিন দিতে হবে।

    কেন গামবোরো হয়? এই রোগের লক্ষন ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পড়ুনঃ মুরগির রোগ ও চিকিৎসা – গামবোরো

    রক্ত আমাশয়

    দেশি মুরগির অন্যতম একটি রোগ হচ্ছে রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস। সাধারনত এটি বাচ্চা মুরগিকেই বেশী ক্ষতি করে। তবে যেকোন বয়সের দেশি মুরগির এটি হতে পারে। এই রোগ সাধারনত বিষ্ঠার মাধ্যমে ছড়ায়।

    চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টল্ট্রাজুরিল বা এম্প্রোলিয়ায়ম জাতীয় ঔষধ ব্যাবহার করা যেতে পারে।

    ফাউল পক্স

    ফাউল পক্স একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। দেশি মুরগির যে কোন বয়সেই ফাউল-পক্স হতে পারে। তবে বাচ্চা অবস্থায় আক্রান্ত হলে বেশি মারা যায়।

    সাধারণত শরীরের পালক বিহীন জায়গায় সাধারণত শক্ত গোটা উঠে এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে। এই রোগে মুরগির দেহে জ্বর আসে।

    চিকিৎসা হিসেবে যথাসময়ে ফাউল-পক্স এর টিকা প্রদান করতে হবে।

    ফাউল কলেরা

    কলেরা একটি পানি বাহিত রোগ। কলেরা হলে মুরগি সবুজ তরল মল ত্যাগ করে। খাদ্য কম খায় এবং ডিম পারা বন্ধ করে দেয়।

    কলেরা রোগের সরকারি টিকা রয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সালফার জাতীয় ড্রাগ দেয়া যেতে পারে। প্রোবায়োটিকের মাধ্যমে এই রোগটি নিয়ন্ত্রন করা যায়।

    দেশী মুরগী পালনের ব্যাবসায়ীক হিসাব

    এখানে আমরা ৫০০ দেশি মুরগি পালন এর আয়-ব্যায়ের সম্ভাব্য হিসেব করেছি। সময় ও বাজারদর তারতম্যে এই হিসেব পরিবর্তনযোগ্য ।

    এককালীন খরচ

    খরচের খাতমূল্য টাকায় (আনূমানিক)
    ঘর তৈরি (টিনের সেমি পাকা) ৫০,০০০৳
    খাদ্য ও পানির পাত্র ৩,৫০০৳
    ব্রুডার সরঞ্জামদি ও পর্দা ১,৫০০৳
    মোট৫৫,০০০৳
    এককালীন খরচ

    ৫০০ দেশি মুরগি পালনে খরচের হিসাব

    খরচের খাত মূল্য টাকায় (আনূমানিক)
    একদিনের বাচ্চা (৫০০ পিছ * ৩০৳)১৫,০০০৳
    মোট খাদ্য (৫০ কেজি *২০বস্তা * ৪০৳)৪০,০০০৳
    মেডিসিন২,৫০০৳
    ভ্যাকসিন ৮০০৳
    লিটার ১,২০০৳
    বৈদ্যুতিক বিল১,০০০৳
    মোট ৬০,৫০০০৳
    ৫০০ দেশি মুরগি পালনে খরচের হিসাব

    বিঃদ্রঃ এখানে বাজারে বিক্রয় উপযোগি দেশি মুরগী পালন এর হিসেব দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য বাচ্চা, খাদ্য সহ অন্যান্য খরচের খাত সমূহের দাম পরিবর্তনশীল। এখানে শুধুমাত্র ধারনা দেয়া হয়েছে।

    দেশি মুরগি পালনে আয়ের পরিমান (সম্ভাব্য)

    ৫০০ মুরগির ওজন ৪৫০ কেজি (±৫০) * ২৫০৳ = ১,১২,৫০০৳ (± ১০,০০০৳)

    অর্থাৎ ৫০০ দেশি মুরগি পালনে সম্ভাব্য লাভের পরিমান প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, এই লাভের পরিমান বাজার দরের পরিবর্তনে কমবেশি হতে পারে।

    দেশি মুরগির লাভজনক খামার ব্যাবস্থাপনা

    লাভজনকভাবে দেশি মুরগির খামার করতে চাইলে সঠিক ব্যাবসায়ীক হিসেব-নিকেশ এর নিকল্প নেই। যেহেতু আমাদের দেশে বাজারদর ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে থাকে তাই বাজারদর সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে।

    যথাসম্ভব খাদ্য খরচ কমিয়ে আনতে হবে। সর্বোপরি বায়োসিকিউরিটি মেনে চলতে হবে এবং মুরগীকে সুস্থ রাখতে হবে।

    আশাকরি দেশি মুরগি পালন সম্পর্কে আপনি একটি ধারনা পেয়েছেন। আপনার মতামত আমাদের জানাতে কমেন্ট করতে পারেন। শুভকামনা রইলো।

  • মুরগি পালনঃ লিটারের প্রকারভেদ ও ব্যবস্থাপনা

    মুরগি পালনঃ লিটারের প্রকারভেদ ও ব্যবস্থাপনা

    পোল্ট্রি মুরগি পালনে লিটারের ভূমিকা খুবই গুরত্বপূর্ণ। আবদ্ধ অবস্থায় পোল্ট্রি পালনের ক্ষেত্রে লিটার পদ্ধতিতে মুরগির বিছানা হিসাবে লিটার ব্যবহার করা হয়। পোল্ট্রি লিটার অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যায়। লিটার এক দিকে যেমন পোল্ট্রি উৎপাদনে সহায়তা করে ঠিক তেমনি সঠিকভাবে লিটারের যত্ন না নিলে এ থেকে বিভিন্ন রােগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই লিটার সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়ােজন।

    লিটার কি?

    পশুপাখির বিছানাকেই ইংরেজিতে লিটার (Liter) বলে অর্থাৎ লিটার বলতে পোল্ট্রির ঘরের শয্যা হিসেবে ব্যবহৃত নানাবিধ বস্তুকেই বােঝায়। এক কথায় বাসস্থান আরামদায়ক করার জন্য মুরগির ঘরে যে বিছানা ব্যবহার করা হয় তাকে লিটার বলে।

    যে সকল বস্তু লিটার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ঃ

    ব্যবহৃত উপকরণের ভিত্তিতে লিটারের শ্রেণিবিন্যাস

    মুরগির ঘরে লিটার বা বিছানা হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন দ্রব্যাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ব্যবহৃত দ্রব্যের নাম অনুযায়ী লিটারকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা

    • তুষের লিটার।
    • কাঠের গুঁড়ার লিটার
    • খড়ের ছােট টুকরার লিটার
    • আখের ছােবড়ার লিটার।
    • বালির লিটার।
    • নারিকেলের ছােবড়ার লিটার

    মুরগির ঘরে লিটার স্থাপনের কৌশল :

    • লেয়ার ঘরে ওঠানাের ১ সপ্তাহ পূর্বে লিটার দ্রব্য স্থাপন করতে হবে।
    • লিটার বিছানাের পূর্বে ভালােভাবে ঘরের মেঝে শুকাতে হবে।
    • লিটারের দ্রব্য অবশ্যই নরম ও আরামদায়ক হবে।
    • লিটার ভেজা থাকলে রােদে শুকিয়ে ১০ % আর্দ্রতায় আনতে হবে। কারণ বেশি আর্দ্র হলে অ্যামােনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়।
    • লিটার হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে খুব জোরে চাপ দিলে যদি জমাট না বাঁধে বা ঝরে না যায় তাহলে লিটারের অবস্থা ভালাে হিসাবে ধরে নিতে হবে।
    • শুকনা লিটার ব্যবহারের পূর্বে জীবাণুমুক্ত করে ঘরের মেঝেতে লিটার বিছিয়ে রাখতে হবে।
    • বিছানা বা লিটার যাতে বৃষ্টির ছাপে ভিজে না যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
    মুরগির ঘরে লিটার স্থাপন
    চিত্রঃ মুরগির ঘরে লিটার স্থাপন

    মুরগির ঘরে লিটার ব্যবস্থাপনা:

    • লিটার যাতে মলমূত্রাদি বা খাবার পানির মাধ্যমে ভিজে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
    • লিটারের আর্দ্রতা বৃদ্ধির ফলে ছত্রাক যাতে জন্মাতে না পারে সেজন্য লিটার আচড়া ভালােভাবে ওলট পালট করে দিতে হবে।

    দুই মাস পর লিটারের কার্যকারিতা শুরু হয়। এ সময়ের লিটারকে বিল্টআপ লিটার বলে। দুই মাস পর থেকে মুরগি নিজেরাই লিটার উল্টেপাল্টে নেয় বলে এই সময় মাসে একবার পরিচর্যা করতে হয়।

    দুই মাস পর লিটারের মধ্যে প্রতি ১০০ মুরগির জন্য ২২৫ গ্রাম কাঁকর ছড়িয়ে দিতে হয়। আর্দ্রতা কম থাকলে পানি স্প্রে করতে হবে। লিটার ভিজে গেলে এর আর্দ্রতা কমানাের জন্য ঘরের মধ্যে বাতাসের প্রবাহ বাড়াতে হয়। এতে কাজ না হলে পুরােনাে লিটারে সাথে নতুন শুকনা লিটার মেশাতে হয় বা ভিজা লিটার ফেলে দিয়ে নতুন লিটার দিতে হবে।

    লিটারের আর্দ্রতা দূর করার জন্য মাঝে মাঝে সুপার ফসফেট প্রতি ১ ঘন মিটারের জন্য ২২৫ গ্রাম হিসাবে মেশাতে হবে। লিটার কেক হলে ভেঙে দিতে হবে।

    পুরু বিছানা যাতে জমাট না বাঁধে সে জন্য তাতে শুষ্ক চুন (১০ বর্গ মিটারে ৭-১০ কেজি চুন) সমানভাবে ছড়িয়ে দিয়ে বিছানা নেড়ে মিশিয়ে দিতে হবে।

    ব্যবহার শেষে লিটার পুনরায় ব্যবহার করতে চাইলে প্রতি ১ ঘন মিটার লিটারে ১ কেজি চুনের গুঁড়া মিশিয়ে ১ সপ্তাহ স্তুপ করে রাখলে পরিশুদ্ধ হয় এবং পরবর্তীতে এই লিটার ব্যবহার করা যায়।

    মুরগির পালে যদি রােগ-ব্যাধি না থাকে তবে তাদের ব্যবহৃত লিটার পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে পুরােনাে লিটার ব্যবহার না করাই উত্তম। সংক্রামক রােগে আক্রান্ত পালের ব্যবহৃত লিটার পুড়িয়ে ফেলতে হয়।

    ডিপ লিটার পদ্ধতি কি?

    ডিম উৎপাদনের জন্য যেসকল মুরগি পালন করা হয়, এদের মেঝেতে ডিপ লিটার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ডিপ লিটার পদ্ধতিতে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি পুরু করে লিটার বিছাতে হবে। এবং নিয়মিত উল্টেপাল্টে দিতে হবে। সাধারণত বছর শেষে একবার লিটার পালটিয়ে দেয়া হয়।

    যে সকল কাজে মুরগির লিটার ব্যবহার করা যায়ঃ

    প্রতিটি বয়স্ক মুরগি দৈনিক গড়ে ১১৩-১২০ গ্রাম বিষ্ঠা ত্যাগ করে থাকে যার মধ্যে ২২-২৫ গ্রাম শুদ্ধ বস্তু থাকে। এই ২২-২৫ গ্রাম দৈনিক লিটারের সাথে সংযুক্ত হয়। এ ছাড়া লিটার পরিচর্যার সময় চুন ও সুপার ফসফেট লিটারের মধ্যে মেশানাে হয়। বিভিন্ন পােকা, ছত্রাক, রােগজীবাণু লিটারের মধ্যে জন্মে, যা লিটারের গাজন প্রক্রিয়ায় মারা যেয়ে লিটারের গুণাগুণ বৃদ্ধি করে।

    ১০০০ মুরগির খামারে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক বিষ্ঠা উৎপাদনের পরিমাণঃ

    সময়মুরগি প্রতি বিষ্ঠা উৎপাদন (গ্রাম)১০০০ মুরগি থেকে মােট বিষ্ঠা উৎপাদন (টন)
    দৈনিক ১১৩ ১১৩ কেজি-০.১১৩ টন
    সাপ্তাহিক৭৯১০.৭৯১
    মাসিক৩৩৯০৩.৩৯
    বার্ষিক ৪০৬৮০ ৪০.৬৮

    এই লিটার বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়, যথা

    (ক) জৈব সার হিসাবেঃ ডিপ লিটার এ নাইট্রোজেনের পরিমাণ গােবর সার অপেক্ষা ১০ গুণ বেশি। ২৫টি মুরগি বছরে ১ টন জৈব সার তৈরি করতে পারে। ডিপ লিটার খােলা স্থানে না রেখে একটি একক চালা ঘর করে চারিদিকে বেড় দিয়ে এর মধ্যে জমা করতে হবে।

    তবে লিটার পরিচয়ে কম্পােষ্ট সার তৈরি করলে গুণাগুণ আরও বৃদ্ধি পায়। মাটিতে গর্ত করে পচনশীল আবর্জনার স্তর তৈরি করে তার উপর লিটার দিয়ে ভরতে হবে। এর উপর কচুরিপানা, ঘাস, লতা পাতা দিয়ে ভরাট করে গর্তটি মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। এ অবস্থায় দুই সপ্তাহ রেখে গর্ত থেকে তুলে সরাসরি জমিতে ব্যবহার করা যায় লিটার সরাসরি চারাগাছে।

    লিটারের ব্যবহার
    চিত্রঃ লিটারের ব্যবহার

    (খ) মাছের খাদ্যে হিসেবেঃ ডিপ লিটার মাছের জন্য সুষম খাদ্য। এ খাদ্য দিলে মাছের জন্য অন্য কোনাে সম্পূরক বা পরিপূর্ণ খাবার এর প্রয়ােজন হয় না। এছাড়া খরচও কম হয়। লিটার পানিতে মাছের জন্য প্রয়ােজনীয় ফাইটোপ্লাংটন ও জুপ্লাংটন জাতীয় উদ্ভিদ উৎপাদনে সাহায্য করে যা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

    প্রতি হেক্টরে ৪৫.৫ কেজি লিটার প্রয়ােগ করা যেতে পারে। তবে লিটার বা বর্জ্য পদার্থ পুকুরে সরাসারি মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার না করে পচানাের পর ব্যবহার করতে হবে।

    (ঘ) বায়ােগ্যাস হিসাবেঃ পারিবারিক ব্যবহারের জন্য প্রয়ােজনীয় বায়ােগ্যাস তৈরি করা যায় । লিটার থেকে বাতি জ্বালানাে ও রান্নার কাজে বায়ােগ্যাস ব্যবহৃত হয়।

    (ঘ) হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবেঃ কিছু খাদ্য উপাদান মুরগির পরিপাকতন্ত্রের অপরিপাক অবস্থায় থাকে এবং মলের সাথে বেরিয়ে আসে। মুরগির পারিপাকতন্ত্রে বিপাকীয় কার্যক্রমে সংঘটনের ফলে অনেক উপজাত খাদ্য গবাদিপশুর খাদ্য উপযােগী মূল্যবান পুষ্টি উপাদানে রূপান্তরিত হয়।

    হাঁস-মুরগির মলে দুর্গন্ধ, রােগজীবাণু ও ক্ষতিকর কিছু পদার্থ থাকে। এই সমস্ত প্রতিকারের জন্য এনরােবিক পদ্ধতিতে ফারমেনটেশন করতে হয়। গবদিপশুর দানাদার খাদ্যের পরিবর্তে শতকরা ৮০ ভাগ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় ।

    (ঙ) পুনরায় ব্যবহারঃ লিটার-সামগ্রী পরিশুদ্ধ করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। প্রতি এক ঘনমিটার লিটারে এক কেজি চুনের গুঁড়া মিশিয়ে এক সপ্তাহ স্থূপ করে রাখলে লিটার পরিশুদ্ধ হয়। এই পরিশুদ্ধ লিটার পুনরায় লিটার হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

    (চ) সার হিসেবে ব্যবহারঃ লিটার মৃত হাঁস-মুরগির সাথে কম্পােস্ট করে সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। লিটারের সাথে মৃত হাঁস-মুরগি কম্পােষ্ট বিন পদ্ধতির মাধ্যমে কম্পােস্ট করে সার তৈরি করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।

  • কোন মুরগি কত দিনে ডিম দেয় – জানুন বিস্তারিত

    কোন মুরগি কত দিনে ডিম দেয় – জানুন বিস্তারিত

    মুরগি পালনে একটা সাধারন প্রশ্ন আমাদের মাথায় আসে যে মুরগি কত দিনে ডিম দেয়? আসলে মুরগি কতদিন বয়সে ডিম পাড়বে তা, কয়েকটি বিষয়ের উপর সরাসরি নির্ভর করে। যেমন মুরগির জাত, খাদ্যমান, স্থান, কাল, ওজন ইত্যাদি।

    নিচে আপনাদের মনে আসা কোন মুরগি কত দিনে ডিম দেয় বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।

    লেয়ার মুরগি কত দিনে ডিম দেয়?

    ডিমপারা হাইব্রিড লেয়ার মুরগি সাধারনত ১৮ থেকে ১৯ সপ্তাহ বয়সে ডিমে দেয়া শুরু করে। যা ২৩ থেকে ২৪ সপ্তাহ বয়সে সর্বোচ্চ উৎপাদনে আসে। এবং একটানা ৯৫-১০০ সপ্তাহ পর্যন্ত লাভজকভাবে ডিম দিয়ে থাকে। এরপর পর্যায়ক্রমে ডিম দেয়ার হার কমতে থাকে।

    লেয়ার মুরগির ডিম পারা যেসকল বিষয়ের উপর নির্ভর করে

    বানিজ্যিক লেয়ার মুরগি সঠিক সময়ে সর্বোচ্চ ডিম পারার সক্ষমতা কতগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। নিচে সেটি বর্নণা করা হলো।

    দেশি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় ?

    জাতভেদে দেশি মুরগি সাধারনত পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ মাস বয়সে ডিম দে্যা শুরু করে। তবে ভালো মানের খাদ্য দিলে এর আগেও ডিম দিতে পারে। উন্নত জাতের দেশি মুরগি একাধারে ২ থেকে ২.৫ বছর ডিম পারে। এরপর ক্রমান্বয়ে ডিম দেয়ার হার কমতে থাকে।

    দেশি মুরগি বছরে কতটি ডিম দেয়?

    জাতভেদে দেশি মুরগি বছরে ১৫০ থেকে ১৮০ টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। সাধারনত দেশি মুরগি একবারে ১২ থেকে ১৮ টি ডিম পারে। এরপর মুরগি কুঁচে হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ডিম দেয়ার প্রাবল্য কমতে থাকে। দেশি মুরগির কুঁচে হওয়ার প্রবনতা কমাতে নিয়মিত ডিম সরিয়ে নিতে হবে।

    মুরগির কুঁচে ছাড়ানোর উপায়

    প্রায় সব জাতের মুরগির কুঁচে হওয়ার প্রবনতা আছে। তবে দেশি মুরগির এই প্রবনতা বেশি। মুরগির কুঁচে সরানোর কয়েকটি উপায় এখানে দেয়া হলো।

    • মুরগিকে উন্নত মানের খাদ্য দিতে হবে।
    • ডিম পারার পর যত দ্রুত সম্ভব তা সংগ্রহ করতে হবে।
    • নিয়মিত ভিটামিন ও মিনারেল দিতে হবে।
    • কৃত্রিম আলোর ব্যাবস্থা করতে হবে।
    • কুচে মুরগিকে আলাদা ভাবে রাখতে হবে।

    সোনালি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় ?

    সাধারনত সোনালি মুরগি ১৯ সপ্তাহ বা সাড়ে চার মাস বয়স থেকে ডিম পাড়া শুরু করে। তবে এই ডিম দেয়া বৃদ্ধির হার ধীরগতির। ছয় মাস বয়স থেকে এরা ভালোভাবে ডিমে আসে। সোনালি মুরগির পালনের জন্য কৃত্রিম আলোক ব্যবস্থগাপনা বা লাইটিং জরুরি। শীতকালে সাধারনত একটু দেরিত ডিমে আসা শুরু করে।

    সোনালি মুরগি কতদিন ডিম পাড়ে

    সোনালী মুরগি ২ থেকে ২.৫ বছর ডিম পারে। তবে বানিজ্যিকভাবে লাভজনক বিবেচনায় ডিম পারার ১৬-১৮ মাসে মুরগি কার্ল করা হয়। সোনালি মুরগি বছরে প্রায় ১৮০-২০০ টি ডিম দিয়ে থাকে। অরজিনাল ক্লাসিক সোনালি প্রথম বছরে প্রায় ৮০% ডিম দিতে পারে।

    ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয় ?

    ফাউমি মুরগি একটু দেরিতে ডিমে আসে। সাধারণত পাচ থেকে সাড়ে পাচ মাস বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। যদিও ফাউমি মুরগি সোনালি মুরগির তুলনায় দেরীতে ডিম পারা শুরু করে তবে, এরা দীর্ঘদিন একটানা ডিম পারে।

    ফাউমি মুরগি বছরে কতটি ডিম দেয়?

    ফাউমি মুরগি বছরে প্রায় ২৫০-২৮০ ডিম দেয়। দেশীয় যেকোন জাতের মুরগীর তুলনায় ফাউমি মুরগি ভালো ডিম পাড়ে। ফাউমি মুরগির ডিমের আকার তুলনামুলক ছোট।

    ব্রয়লার মুরগি কি ডিম পাড়ে ?

    জ্বি, ব্রয়লার মুরগি ডিম দিয়ে থাকে। বানিজ্যিক ব্রয়লার মুরগি বাচ্চা উৎপাদনের জন্য প্যারেন্ট স্টক তৈরি করতে হয়। ব্রয়লারের এই প্যারেন্ট স্টক বানিজ্যিক লেয়ার মুরগির মতই ডিম দিয়ে থাকে। সাধারনত ১৮ সপ্তাহ বয়স থেকে ব্রয়লার মুরগি ডিম পারে।

    টাইগার মুরগি কত দিনে ডিম পাড়ে

    টাইগার মুরগি মূলত ১৮ সপ্তাহ বা সাড়ে চার মাস বয়স থেকে ডিম পাড়া শুরু করে। এই মুরগি বছরে ১৭০ থেকে ২০০ টি ডিম দেয়। টাইগার মুরগী মূলত দুই থেকে আড়াই বছর ভালোভাবে ডিম পাড়ে। এরপর ডিম দেয়ার হার কমে যায়।

    এধরনের তথ্যনির্ভর লেখা নিয়মিত পেতে আমাদের উৎসাহিত করুন। যেকোন একটি বিজ্ঞাপনে ক্লিক করুন এবং আপনার মতামত আমাদেরকে জানান।

  • মুরগির ঘর প্রস্তুতকরণঃ বাচ্চা উঠানোর পূর্বেই যে কাজগুলি করতে হবে।

    মুরগির ঘর প্রস্তুতকরণঃ বাচ্চা উঠানোর পূর্বেই যে কাজগুলি করতে হবে।

    মুরগির ঘর প্রস্তুতি ও বাচ্চা উঠানোর পূর্বে যে কাজগুলি করতে হয়, সে বিষয়ে আমাদের দেশের অনেক নতুন খামারি জানেন না। মুরগি পালনের ঘর প্রস্তুতি ও বাচ্চা তোলার পূর্বে বেশ কিছু আবশ্যকীয় কাজ করতে হয়।

    নতুন বা পুরাতন যে ঘর হােক না কেন, ‘অল-ইন, অল-আউট’ পদ্ধতি অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। একটি ঘরে এক ব্যাচ বাচ্চা পালন করে বিক্রি করার কমপক্ষে ১৪ দিন পর অন্য ব্যাচ ওঠাতে হবে। এ পদ্ধতি শুধুমাত্র রােগ প্রতিরােধই করে না রােগের জীবাণুকে ধ্বংস করতেও সহায়তা করে।

    মুরগি পালনের জন্য ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলাে অনুসরণ করতে হবে।

    ব্রুডার ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নঃ

    • ঘর খালি হওয়ার সাথে সাথে সমস্ত সরঞ্জাম, হােভার, ব্ৰডার গার্ড, লিটার, খাঁচা ইত্যাদি বের করতে হবে।
    • পুরাতন লিটার ফার্ম থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিটার দূরে সরিয়ে ফেলতে হবে।
    • ঘরের দেয়াল, দরজা, জানালা, নেট, পর্দা, ভেন্টিলেটর, ফ্যান, বাল্ব ইত্যাদি ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করতে হবে।
    • ঘরে কোন মেরামত, সংস্কার ইত্যাদি প্রয়ােজন হলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
    • পরিষ্কার পানি দিয়ে দেয়াল, মেঝে, খাদ্য ও পানির পাত্র ধুতে হবে।
    • পাইপ দিয়ে উচ্চ চাপযুক্ত পানি প্রবাহের মাধ্যমে ঘর পরিষ্কার উত্তম।

    ঘরের মেঝে, খাঁচা ও অন্যান্য সরঞ্জাম জীবাণুমুক্তকরণঃ

    • জীবাণুনাশক যেমন-(পভিসেপ, সুপারসেপ্ট, আয়ােসান) দিয়ে খাবার ও পানির পাত্র, হােভার, ব্ৰডার গার্ড, ব্রডার হিটার, দেয়াল, মেঝে, ছাদ, পর্দা ও খামারের আশপাশে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
    • ভেজা মেঝের উপর ১০০ বর্গফুট স্থানে ১ কেজি হারে শুকনা কস্টিক সােডা ছড়াতে হবে এবং ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর মেঝে শুকিয়ে গেলে কস্টিক সােডার উপর হালকা পানি স্প্রে করতে হবে। পরে সমস্ত ঘর পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
    • বাচ্চা উঠানাের ৬ দিন পূর্বে বাচ্চার সমস্ত জিনিসপত্র আবার জীবাণুমুক্ত করে শুরু করে ভিতরে রাখতে হবে।
    মুরগির ঘর ও সরঞ্জাম জীবাণুমুক্তকরণ
    মুরগির ঘর ও সরঞ্জাম জীবাণুমুক্তকরণ

    জীবাণুনাশক না পাওয়া গেলে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। দেখা গেছে, ডিটারজেন্ট পোকা-মাকড় ও জিবানু ধ্বংস করতে পারে।

    মুরগির ঘরে লিটার বিছানাে ও অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপনঃ

    • বাচ্চা ব্রুডিং এর এক দিন পূর্বে ঘর ভালােভাবে শুকানাের পর লিটার বিছাতে হবে।
    • লিটারের উপর গােল করে চিকপার্ড স্থাপন করে তার মাঝামাঝি স্থানে হােভার সিলিং-এর সাথে ঝুলিয়ে দিতে হয়।
    • ব্রুডার গার্ডের ভেতর হােভারের নিচে লিটারের উপর কাগজ, চিক বক্সের ঢাকনি বা প্লাস্টিক শিট বিছাতে হবে।
    • হােভারের সাথে হিটার (বাহু, ব্রডার স্টোভ, গ্যাস বার্নার) সংযুক্ত করতে হবে।

    আরো জানতে পড়ুনঃ মুরগির লিটার ও এর ব্যবস্থাপনা

    ফিউমিগেশন :

    ব্রডার ঘরে বাচ্চা উঠানোর ১২ ঘন্টা পূর্বে সম্পূর্ণ ঘর চট বা পলিথিন দিয়ে ঘিরে ফিউমিগেশন উপকরণ ব্যবহার করে ঘরের মধ্যে ফিউমিগেশন করা হয়। ব্রুডার ফিউমিগেশন করার জন্য ৩ গুণ ঘনত্বের ফিউমিগেশন উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।

    প্রতি ১০০ ঘন ফুট স্থানের জন্য ৬০ গ্রাম পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও ১২০ মিলি, ফরমালডিহাইড ব্যবহার করতে হবে।

    ব্রুডিং স্থানের পরিমাণ হিসাব করে মােট পরিমাণ পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ৪/৫ টি মাটি, কাচ বা পােরসেলিন পাত্রে ভাগ করে বিভিন্ন স্থানে সমদূরত্বে স্থাপন করতে হবে।

    পরিমাণমতাে ফরমালডিহাইড সমপরিমাণে খুব দ্রুত সবগুলাে পাত্রে ঢেলে দিতে হবে এবং ঘর বন্ধ। করে বের হয়ে আসতে হবে।

    ফিউমিগেশন করার সময় সমস্ত ঘর ও সরঞ্জাম একই সাথে জীবাণুমুক্ত হয়। ফিউমিগেশন করার ২০-৩০ মিনিট পর পর্দা সরিয়ে সম্পূর্ণ গ্যাস বেরিয়ে যেতে দিতে হবে। ফিউমিগেশনের পর বাচ্চা প্রদানের ২/৩ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ঘর তালাবদ্ধ রাখতে হবে।

    মুরগির ঘরে ফিউমিগেশন
    চিত্রঃ খামারে ফিউমিগেশন

    মুরগির ঘরের চারিদিকে পরিষ্কারকরণ :

    মুরগির ঘর প্রস্তুতি ও খামারে বাচ্চা উঠানোর আগেই খামার ঘরের আশেপেশের কিছু কাজ করে নিতে হবে। ব্রুডার ঘরের চারপাশে ৫-৬ ফুট পরিমাণ জায়গায় ঘাস কেটে পরিষ্কার করতে হবে।

    পুরাতন মুরগির ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানাের ব্যবস্থা করতে হবে বাচ্চা উঠানাের কয়েকদিন পূর্ব থেকেই ঘরের ফুটবাথে জীবাণুনাশক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

    বাচ্চা উঠানাের পর প্রতিদিন ১ (এক) বার করে ঘরের বাইরের চতুর্পাশ্বে ৫% ফরমালিন দ্বারা স্প্রে করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরের আশেপাশে কোনাে প্রাণী বা লােক চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।

    মুরগির খামার ও এর আশেপাশের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখার কৌশলঃ

    নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাসস্থান এবং এর পারিপার্শ্বিকের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় থাকবে।

    (১) মুরগির জাত ও উদ্দেশ্ হিসেবে প্রয়ােজনীয় পরিমাপের ঘর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি করে তৈরি করতে হবে, যাতে মুরগি পর্যাপ্ত আলাে-বাতাস পায়।

    (২) খামারে পানি জমে স্যাঁতসেঁতে না হতে পারে সে জন্য প্রয়ােজনীয় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে।

    (৩) মুরগির ঘরের উপরিভাগের তারের জাল দিয়ে যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

    (৪) ঘরে যাতে বৃষ্টির ছাঁট পড়ে লিটার ভিজে না যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

    (৫) গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা খুব বৃদ্ধি পেলে তাপ কমানাের জন্য

    • ঘরের চালে পানি ছিটানাে হয়।
    • খামারের চারিদিকে পানি ছড়ানাে হয়।
    • শেডের মধ্যে ফগিং মেশিণ দিয়ে পানি স্প্রে করে কুয়াশা তৈরি করা হয়
    • ঘরের ভিতরে ও বাইরে ফ্যান ব্যবহার চালানাে হয়

    (৬) মুরগির ঘর প্রস্তুতকরণ ও খামারে নতুন বাচ্চা উঠানাের আগে খামার সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রথমে পানি দ্বারা পরিষ্কার করে পরে পানির সাথে জীবাণুনাশক মিশিয়ে খামার জীবনাণুমুক্ত করা হয়।

    (৭) খামারে ভালাে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত আর্দ্রতাযুক্ত খাদ্যেরমাধ্যমে অ্যাসপারজিলােসিস ও বিষক্রিয়াসহ জটিল রােগ হতে পারে।

    (৮) হ্যাচারি থেকে সুস্থ সবল বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। তা না হলে সালমােনেলােসিস,মাইকোপ্লাজমােসিস ইত্যাদি রােগ হ্যাচারি থেকে খামারে আসতে পারে।

    (৯) খামারে মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রতিবার খামারে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় জীবাণুনাশক ব্যবহার করে হাত ও পা অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

    (১০) বর্জ্য পদার্থ, বিষ্ঠা, লিটার নিয়মিত পরিষ্কারসহ মুরগির ঘরের ভেতরের পরিবেশ অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মতহতে হবে।

    (১১) খামারে যাতে বন্যপ্রাণী ও ইদুর জাতীয় প্রাণী প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কেননা বন্যপ্রাণী ও ইঁদুর দ্বারা রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমা, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সালমােনেলাসহ গুরুত্বপূর্ণ রােগ খামারে আসতে পারে।

    (১২) খামারে কোনাে মুরগি অসুস্থ হলে দ্রুত সম্ভব পৃথক করে ফেলতে হবে। মারা গেলে তা সাথে সাথে সরিয়ে নিয়ে অবশ্যই মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।

    (১৩) খামারে কোনাে জটিল সমস্যা দেখা দিলে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মােকাবেলা করতে হবে।

    পরিশেষে..

    সুন্দর ও লাভজনক খামার ব্যাবস্থাপনার জন্য ভালোভাবে মুরগির ঘর প্রস্তুতি গুরুত্ববহন করে। উত্তম রুপে ব্রুডার ঘর পরিষ্কার করলে খামার রোগমুক্ত থাকে। ব্রুডার ঘরে বাচ্চা অবস্থায় যদি মুরগি রোগাক্রান্ত হয়, তবে ঐ মুরগি থেকে পরবর্তিতে লাভ করা দুষ্কর। একজন আদর্শ খামারী হিসেবে আপনার খামারকে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন ও বায়োসিকিউরিটি মেনে চলবেন।

  • মুরগি পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি

    মুরগি পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি

    মােরগ-মুরগি পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। মুরগির সঠিক উৎপাদন পেতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নির্মাণ করতে হবে। মুরগির বাসস্থান যে এলাকায় তৈরি করা হবে, সে এলাকায় প্রাপ্ত উপকরণের উপর ভিত্তি করে পদ্ধতি গ্রহন করা উচিত। এতে নির্মাণ ব্যয় অনেক কম হবে এবং খামারিরা অতি সহজেই নির্মাণ করতে পারবেন। আমাদের দেশে খামারিরা সাধারনত ৩টি পদ্ধতিতে ডিমপাড়া মুরগি পালন করে থাকে। যথাঃ

    • লিটার পদ্ধতি
    • মাচা পদ্ধতি ও
    • খাঁচা পদ্ধতি।

    নিন্মে প্রতিটি পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

    লিটার পদ্ধতিতে মুরগি পালনঃ

    এই পদ্ধতিতে ঘরের মেঝের উপর বিছানা হিসাবে কাঠের গুঁড়া, তুষ, খড়ের ছােট ছােট টুকরা ইত্যাদি ব্যবহার করে মুরগি পালন করা যায়। লিটারের সহজলভ্যতা ও দামের উপর নির্নয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম লিটার ব্যবহার করা হয়। তবে বেশিরভাগ স্থানে ধানের তুষ ব্যবহার করা হয়।

    আরো জানতে পড়ুনঃ লিটারের প্রকারভেদ ও ব্যবস্থাপনা

    লিটার পদ্ধতি আবার দুই প্রকার :

    (ক) লিটার পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে ঘরের মেঝেতে ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে লিটার বিছানো থাকে।

    (খ) ডিপ লিটার পদ্ধতি: ঘরের মেঝেতে পুরু বা মােটা করে লিটার দেওয়া হয়। সাধারণত ৪-৮ ইঞ্চি,পুরু করে লিটার দেওয়া হয়।

    লিটার পদ্ধতিতে বাচ্চা মুরগির জন্য ২-৩ ইঞ্চি, বাড়ন্ত মুরগির জন্য ৩-৪ ইঞ্চি ও ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জন্য ৪-৮ ইঞ্চি পুরু করা উচিত। মুরগি ঘরে উঠানাের ১ সপ্তাহে পূর্বে লিটার সরবরাহ করতে হবে।

    মুরগির-লিটার
    লিটার পদ্ধতিতে মুরগি পালন

    লিটার পদ্ধতিতে মুরগি পালনের সুবিধা :

    • নির্মাণ ব্যয় কম।
    • লিটার ব্যবহার করলে মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝের সাথে লেপ্টে থাকে না।
    • ঘর শুকনা ও দুর্গন্ধমুক্ত থাকে।
    • ঘরে মুরগির অবস্থানকাল পর্যন্ত পরিষ্কার করতে হয় না।
    • ডিম পাড়া শেষে বাতিল মুরগি বিক্রির পর লিটার পরিষ্কার করতে হয় ।
    • ডিমের গুণগুণ ভালাে হয় ও ডিম কম ভাঙে।
    • ডিম উৎপাদন বেশি হয়।
    • মুরগির স্বাস্থ্য ভালাে থাকে।
    • মুরগি বেশি আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য বােধ করে।
    • তুলনামূলক সহজ ব্যবস্থাপনা।
    • লিটারের মধ্যে একপ্রকার ভিটামিন ও আমিষ তৈরি হয় যা মুরগি লিটার থেকে খুঁটে খায়। •
    • লিটার জৈব সার হিসাবে জমিতে ব্যবহার করা যায় এবং জৈব খাদ্য হিসাবে মাছের জন্য ব্যবহার
    • করা যায়।

    লিটার পদ্ধতিতে মুরগি পালনের অসুবিধা :

    • শ্রমিক খরচ বেশি।
    • ডিম ময়লা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
    • অধিক জায়গা প্রয়ােজন হয়।
    • রােগব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
    • মেঝেতে ডিম পাড়ার প্রবণতা হতে পারে।
    • ভিজা লিটার মুরগির স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
    • লিটারের আর্দ্রতা বেশি থাকলে অ্যামােনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয় যা মুরগির জন্য ক্ষতিকর।

    মাচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন

    ঘরের মধ্যে সমস্ত মেঝেজুড়ে মেঝের উপর ২৭ ইঞ্চি উঁচুতে মাচা তৈরি করা হয়। অনেক সময় পরিবেশ অনুসারে আরও উঁচু মাচা যুক্ত ঘর তৈরি করা হয়। মাচার ফাঁক দিয়ে মুরগির পায়খানা মাচার নিচে জমা হলে নিচে ঢুকে পরিষ্কার করতে হয়। ডিম পাড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত ঘরের নিচে পায়খানা জমা হয়। এই পদ্ধতিতে মাচার নিচে মাছির উপদ্রব হয় এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়, ফলে মাঝে মাঝে বিষ্টা পরিষ্কার করে ফেলা হয়। বড় বাণিজ্যিক খামারে এ পদ্ধতি তেমন জনপ্রিয় নয়। সেখানে মাচার নিচে বাতাস প্রবাহ বাড়িয়ে পায়খানা শুকানাে ব্যবস্থা থাকে।

    মাচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন
    মাচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন

    মাচা পদ্ধতির সুবিধা:

    • রােগব্যধি কম হয়।
    • লিটার পদ্ধতির তুলনায় বেশি মুরগি রাখা যায়।
    • বিছানার দরকার হয় না।
    • মুরগির বিষ্ঠা মাছের খাদ্য হিসেবে বেশি উপযােগী।

    মাচা পদ্ধতির অসুবিধা:

    • নির্মাণ ব্যয় বেশি।
    • ডিম ভাঙার সম্ভাবনা বেশি।
    • প্রজননের জন্য অসুবিধা।
    • মুরগির বিষ্ঠা পরিষ্কার করতে অসুবিধা।
    • মাছির উপদ্রব বেশি।

    খাঁচা পদ্ধতিতে মুরগি পালন

    বর্তমানে আধুনিক বিশ্বে খাঁচা পদ্ধতিতে দক্ষভাবে ডিমপাড়া মুরগি পালন করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি খাঁচার খােপের মাপ দৈঘ্য ১৮”x প্রস্থ ১২”x উচ্চতা ১৯” হলে, সেখানে অনায়াসে ৩টি ডিম পাড়া মুরগি রাখা যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের খাঁচা বাজারে পাওয়া যায়।

    (ক) একক ডেক খাঁচাঃ ঘরের মধ্যে একক সারিতে স্থাপন করা হয়। প্রতি খাঁচা ঘরের মধ্যে একই সমতলে থাকে। মুরগির পায়খানা সরাসরি খাঁচায় নিচে ঘরের মেঝেতে পড়ে। খাঁচা ঘরের সিলিং-এর সাথে ঝুলিয়ে বা পিলারের উপর স্থাপন করা যায়।

    (খ) দুই ডেক খাঁচাঃ খাঁচা সিড়ির আকারে একটির উপর অপরটি দুই সারিতে স্থাপন করা যায়। প্রতি সারিতে খাঁচায় অবস্থিত মুরগির পায়খানা সরাসরি খাঁচার নিচে মেঝের উপর পড়ে। খােলামেলা ঘরের জন্য এই খাঁচা উপযােগী।

    (গ) তিন ডেক খাঁচাঃ এই প্ৰকৃত্রি খাঁচা একটির উপর অগটি দুইভাবে সার্বিদ্ধ করে স্থাপন করা যায়। প্রথমত, সরাসরি একটি উপর অপর সারির খাঁচা স্থাপন করা যায়। প্রতি সারিতে খাঁচার নিচে মুরগির পায়খানা জমা হওয়ার জন্য ট্রে দেয়া থাকে। যা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হয়। দ্বিতীয়ত, তিন সারিতে পরস্পরের উপর সিঁড়ির আকারে খাঁচা সাজানাে হয়। প্রতি তলার খাঁচার মুরগির পায়খানা সরাসরি খাঁচার নিচে মেঝেতে পড়ে। লােহার আঙ্গেল দ্বারা তৈরি করে এক সারিতে সিরি আকারে প্রতিটি অবকাঠামাের উপর ২৪টি খাঁচা স্থাপন করা যায়। একটি খাঁচায় একটি মুরগি হিসাবে ২৪টি খাঁচায় ৭২টি মুরগি পালন করা যায়। অনুরূপভাবে স্থাপিত প্রচার প্রচলন বেশি। প্রতি অবকাঠামাে ৬ ফুট ৭ ফুট এবং পায়াসহ উচ্চতা ৪.৫ ফুট। এভাবে ৪ বা ৫ ডেক স্থাপন করা যায়।

    (ঘ) ফ্লাট ডেক টাইপঃ একই সারিতে একই সমতলে ঘরের মধ্যে খাঁচা স্থাপন করা হয়। প্রতি সারিতে খাঁচা খুব কাছাকাছি স্থাপন করা । পরিচর্যা করার জন্য সারির মধ্যভাগে যাতায়াতের রাস্তা থাকে না। প্রতি সারির নিচ দিয়ে মটর চালিত চওড়া বেল্ট চালু থাকে। সেখানেই মুরগির পায়খানা পড়ে। এই চল বেল্ট পায়খানা টেনে ঘরে বাইরে নিয়ে যায়। ডিম সংগ্রহের জন্য চওড়া কনভেওয়র বেল্ট মটরের সাহায্যে চালু করা হয়।

    (ঙ) পিরামিড টাইপ বহুতল খাঁচাঃ তিন সারিতে পরস্পরের উপর সিঁড়ির আকারে খাঁচা সাজানাে হয়। এভাবে উভয় পাশে যখন ৩ সারিতে পরস্পরের উপর সিঁড়ির আকারে খাঁচা সাজানাে হয়, তখন এতে পিরামিডের মতাে মনে হয়। প্রতি তলার খাঁচার মুরগির পায়খানা সরাসরি খাঁচার নিচে মেঝেতে পড়ে। লােহার অ্যাঙ্গেল দ্বারা তৈরি করে এক সারিতে সিড়ির আকারে প্রতি অবকাঠামাের উপর ২৪টি হিসাবে উভয় পাশে মােট ৪৮টি খাঁচা স্থাপন করা যায়। প্রতি খাঁচায় ৩টি মুরগি হিসাবে ৪৮টি খাঁচায় ১৪৪টি মুরগি পালন করা যায়।

    Automatic 3 tier layer cage system

    খাঁচা পদ্ধতির সুবিধা:

    • অল্প জায়গায় বেশি মুরগি পালন করা যায়।
    • পরিচর্যা ও যত্ন নেওয়া সহজ।
    • রােগ বিস্তারের সম্ভাবনা কম।
    • খাঁচার মধ্যে মুরগি কখনও কুঁচে হয় না। ডিম পাড়ার সাথে সাথে গড়িয়ে খাঁচার বাইরে চলে আসে।
    • মুরগির ডিম খাওয়া অভ্যাস জন্মাতে পারে না।
    • ডিম ময়লা হয় না।
    • মুরগির কৃমিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম।
    • বিষ্ঠা দিয়ে বায়ােগ্যাস তৈরি করা যায়।

    খাঁচা পদ্ধতির অসুবিধা:

    • খাঁচার নিচে মুরগির পায়খানা জমে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় ও মাছির উপদ্রব হয়।
    • নিয়মিত পায়খানা পরিষ্কার করা বিরক্তিকর।
    • দুর্গন্ধে পার্শ্ববর্তী পরিবেশ দূষিত হয়।
    • খাঁচা তৈরিতে প্রাথমিক বিনিয়ােগ বেশি।
    • ডিমে রক্তজমা সৃষ্টির হার বেশি।
    • পায়ের নিচে খাঁচার ঘর্ষণে কড়া পড়ে। একে ‘বাম্বল ফুট’ বলে।
    • খাঁচায় পালিত মুরগির হাড় অত্যন্ত ভঙ্গুর হয় এবং বাতিল মুরগির দাম কম পাওয়া যায়।
    • মুরগির ভিটামিন বি গ্রুপের অভাব বেশি হয়।

    এছাড়াও আরো বেশ কিছু মুরগি পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।

    পরিশেষঃ

    যদি মুরগি পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে তবে সার্বিক ব্যবস্থাপনা, স্থায়ী খরচ ও স্বাস্থ্যসম্মত দিক বিবেচনায় তুলনামূলকভাবে মাচা ও খাঁচা পদ্ধতিতে ডিমপাড়া মুরগি পালন অধিক লাভজনক।

  • লেয়ার মুরগির লাইটিং (আলোক ব্যবস্থাপনা)

    লেয়ার মুরগির লাইটিং (আলোক ব্যবস্থাপনা)

    লেয়ার মুরগির লাইটিং বা আলোক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিমের প্রডাকশন হার লাইটিং উপর নির্ভর করে। সঠিক নিয়মে লাইট প্রদান না করলে কাংক্ষিত ওজন আসে না। ফলে সঠিক সময়ে ডিমে আসেনা।

    লেয়ার মুরগির লাইটিং শিডিউল

    অঞ্চল ও মুরগির জাত অনুসারে লাইটিং শিডিউল ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সাধারন ভাবে আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত চার্টটি অনুসরন করা যেতে পারে।

    বয়স (সপ্তাহ)আলোকপ্রদান (সময়)
    ১ সপ্তাহইন্টিমেন্ট প্রোগ্রাম
    ২ সপ্তাহ২২ ঘন্টা
    ৩ সপ্তাহ২০ ঘন্টা
    ৪ সপ্তাহ১৮.৫ ঘন্টা
    ৫ সপ্তাহ১৭ ঘন্টা
    ৬ সপ্তাহ১৫.৫ ঘন্টা
    ৭ সপ্তাহ১৪ ঘন্টা
    ৮ সপ্তাহ১৩.৫ ঘন্টা
    ৯ সপ্তাহ১৩ ঘন্টা
    লেয়ার মুরগির লাইটিং
    বয়স (সপ্তাহ) আলোকপ্রদান (সময়)
    ১০-১১ সপ্তাহ১২ ঘন্টা
    ১২ – ১৭ সপ্তাহশুধুমাত্র দিনের আলো
    ১৮ সপ্তাহ১২.৩০ ঘন্টা
    ১৯ সপ্তাহ১৩ ঘন্টা
    ২০ সপ্তাহ১৩.৩০ ঘন্টা
    ২১ সপ্তাহ১৪ ঘন্টা
    ২২ সপ্তাহ১৪.৫ ঘন্টা
    ২৩ সপ্তাহ১৫ ঘন্টা
    ২৪-৮০ সপ্তাহ১৬ ঘন্টা
    লেয়ার মুরগির লাইটিং

    লেয়ার মুরগির ইন্টমেন্ট লাইটিং প্রোগ্রাম :

    ব্রুডিং এর সময় প্রথম সপ্তাহে ইন্টমেন্ট লাইটিংপদ্ধতি উত্তম। অর্থাৎ ৪ ঘন্টা আলো এবং দুই ঘন্টা অন্ধকার। বুঝার সুবিধার্থে নিচের ছবিটি দেখা যেতে পারে।

    ব্রুডিং পিরিয়ডে লাইটিং

    আলোর তীব্রতা

    আলোর তীব্রতা খুব গুরুত্বপূর্ন। তীব্রতা বেশি হলে মুরগীর ঠোকরা-ঠুকরি (ক্যানিবালিজম) বেড়ে যেতে পারে। দ্রুত ডিমে চলে আসতে পারে। প্রলাপ্স বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে কম হলে সঠিকভাবে ওজন বৃদ্ধি পাবেনা।

    বয়স (সপ্তাহ)তীব্রতা (লাক্স)
    ১ সপ্তাহ৩০-৫০ লাক্স
    ২ – ৪ সপ্তাহ২৫ লাক্স
    ৫ – ১৩ সপ্তাহ৫-১৫ লাক্স
    ১৪ – ১৭ সপ্তাহ১৫-২৫ লাক্স
    ১৮ – ৮০ সপ্তাহ৩০ লাক্স
    আলোর তীব্রতা চার্ট

    আলোর তীব্রতা সাধারন খামারীদের বোঝার জন্য একটি সহজ উপায় উপস্থাপন করা যেতে পারে। সাধারণ খবরের কাগজ বা পত্রিকা দিয়ে বিষয়টি সহজে অনুধাবন করা যায়।

    তীব্রতা (লাক্স)বোঝার উপায়
    ৩০-৫০ লাক্সপত্রিকা স্পষ্ট পড়া যাবে। বেশীক্ষন পড়লে চোখে প্রদাহ অনুভব হবে।
    ২৫ লাক্সপত্রিকা সাধারনভাবে পড়া যাবে।
    ৫-১৫ লাক্সপত্রিকা স্পষ্টভাবে পড়া যাবেনা।
    ১৫-২৫ লাক্সপত্রিকা খেয়াল করে পড়া যাবে।
    ৩০ লাক্সপত্রিকা স্পষ্ট পড়া যাবে।
    আলোর তীব্রতা চার্ট

    অটোমেটিক বা কন্ট্রোল শেডের জন্য নিচের চার্টটি অনুসরন করা যেতে পারে।

    লেয়ার মুরগির লাইটিং
    লেয়ার মুরগির লাইটিং প্রোগ্রাম ভালো ভাবে অনুধাবন করতে চাইলে হাই-লাইন ইন্টারন্যাশনাল এর ডকুমেন্ট গুলি পড়ে দেখতে পারেন এখানে।