পোল্ট্রি মুরগি ও এর বিভিন্ন জাত

পোল্ট্রি মুরগি আমিষ যোগানের সবথেকে সস্তা মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। সারা বিশ্বে অনেক উৎপাদনশীল পোল্ট্রি মুরগির জাত পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কিছু ডিম উৎপাদনের জন্য খুব বিখ্যাত, আবার কিছু মাংস উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। অন্যদিকে কিছু জাত আছে যেটি মাংস এবং ডিম উভয়ের জন্যই বিখ্যাত এবং জনপ্রিয়। পোল্ট্রি জাত উৎপাদনশীলতার ভিত্তিতে তিন ধরনের হয়। আমরা নীচে কিছু উৎপাদনশীল পোল্ট্রি জাতের নাম এবং বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছি ।

ডিম উৎপাদনশীল পোল্ট্রি জাতঃ লেয়ার

ডিম উৎপাদনের জন্য উত্থাপিত মুরগি লেয়ার মুরগি হিসাবে পরিচিত। প্রায় সব ধরনের বাণিজ্যিক লেয়ার পাঁচ থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে ডিম উৎপাদন শুরু করে এবং একটানা প্রায় 275 থেকে 300 টা ডিম পাড়ে। এদের মধ্যে কিছু স্ট্রেন বছরে প্রায় 330 টা ডিম পাড়ে। কিছু ডিম উৎপাদনশীল জাত হল, লেগহর্ন, মিনোর্কা, এঙ্কোনা, ফাওমি ইত্যাদি। এসকল স্ট্রেইন হতেই বানিজ্যিক লেয়ার বা হাইব্রিড জাত ডেভেলপ করা হয়েছে।

বর্তমানে বানিজ্যিক লেয়ার ফার্ম বলতে হাইব্রিড এসব জাতকেই পালন করা বুঝায়। আমাদের দেশে জনপ্রিয় হাইব্রিড লেয়ার মুরগির মধ্যে, হাই-লাইন (জার্মানি), হেনড্রিক্স জেনেটিক্স (আমেরিকা), নভজেন (ফ্রান্স) ইত্যাদি কোম্পানির ডেভেলপ করা লেয়ার মুরগির জাত।

জাতের আচার ও ডিমের রঙের ভিত্তিতে লেয়ার মুরগি সাধারনত দুই ধরনের। লাল ও সাদা লেয়ার। অবশ্য বর্তমানে আমদের উপমহাদেশে হালকা ক্রীম কালারের ডিমের চাহিদার প্রেক্ষিতে আরো একধরনের ডিমের লেয়ার ডেভেলপ করেছে বেশ কিছু কোম্পানি।

layer-chiken

লেয়ারের সাধারণ বৈশিষ্টগুলি হলো

  • অন্যান্য পোল্ট্রি প্রজাতির তুলনায় তুলনামূলকভাবে ওজন কম হয়।
  • আগে যৌন পরিপক্কতা লাভ।
  • ডিমে তা দেয়ার প্রবণতা কম।
  • পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ডিম উৎপাদন শুরু হয়।
  • খাদ্য থেকে ডিম রূপান্তর দক্ষতা খুব বেশি
  • তাদের শরীরের মধ্যে কম চর্বি থাকে।
  • ডিম উৎপাদন ক্ষমতা খুব বেশী।
  • ডিম  বড় আকারের হয়।

মাংস উৎপাদনশীল পোল্ট্রি জাতঃ ব্রয়লার

এই ধরনের পোল্ট্রি শুধুমাত্র মাংস উৎপাদন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। তাদের মাংস খুব নরম এবং সুস্বাদু হয়ে থাকে। তারা 7 থেকে 8 সপ্তাহের মধ্যে ২ থেকে 2.5 কেজি হয় এবং  প্রায় 4 কেজি খাদ্য গ্রহণ করে। তারা আট সপ্তাহের মধ্যেই মার্কেটিং এর জন্য উপযুক্ত হয়ে। ব্রয়লার পোল্ট্রির বিশ্বের জনপ্রিয় প্রজাতি গুলি হলো, স্টারব্রো, প্লেমাউথ-রক, কর্ণিশ, সাসেক্স, ব্রহ্মা বা ব্রাহামা, হাই-লাইন, আসিল, কোচিন ইত্যাদি।

পোল্ট্রি মুরগি

ব্রয়লার মুরগির সাধারণ বৈশিষ্টগুলি হলো

  • অন্যান্য পোল্ট্রি মুরগির তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি ওজন।
  • ডিমে তা দেয় না।
  • মাংস রূপান্তর দক্ষতা অত্যন্ত বেশি।
  • খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  • তাদের শরীরের মধ্যে অনেক চর্বি ধারণ করে।
  • ডিম উৎপাদন ক্ষমতা খুব কম।
  • আকারে বড় হয়।
  • মাংস নরম ও সুস্বাদু।

‘দ্বৈত-উদ্দেশ্য’ পোল্ট্রি জাতঃ

পোল্ট্রি মুরগির মধ্যে কিছু জাত রয়েছে যেগুলি একই সাথে মাংস ও ডিম ঊভয় উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। আমাদের দেশের সোনালী মুরগির জাতটি এর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে অনেক কোম্পানি এরই মধ্যে বানিজ্যিক ‘ডুয়াল পারপাজ’ মুরগি ডেভেলপ করছে। মাংস ও ডিম উভয় উৎপাদনের জন্য জনপ্রিয় ‘দ্বৈত-উদ্দেশ্য’ জাতগুলি হলো, সোনালী, ক্রয়লার, অস্ট্রলপ, রোড আইল্যান্ড রেড (RIR), বনরাজা ইত্যাদি।

‘দ্বৈত-উদ্দেশ্য’ পোল্ট্রি জাত

এই ধরনের পোল্ট্রির সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হলো

  • এই ধরনের পোল্ট্রি জাত মাঝারি আকারের হয়।
  • চাঞ্চল্যতা দেখা যায়।দ্রুত ডিমে আসতে পারে।
  • ডিমে তা দেয়ার প্রবনতা থাকতে পারে।
  • তুলনায় কম ডিম উৎপাদনশীল জাত।
  • খুব ভাল বৃদ্ধি পায়।
  • এফ সি আর (FCR) কম হয়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী।

আরো পড়তে পারেন..

কাদাখনাথ মুরগি

বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশী মুরগি ও তার বৈশিষ্ট্য

ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

সিল্কি মুরগির বৈশিষ্ট্য এবং সমস্ত তথ্য

রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

1 thought on “পোল্ট্রি মুরগি ও এর বিভিন্ন জাত”

Leave a Comment