Category: সোনালি মুরগি

  • সোনালি মুরগির ঔষধের তলিকা ও ভ্যাকসিন শিডিউল।

    সোনালি মুরগি পালন আমাদের দেশে দিন দিন জনপ্রিয়তা হয়ে উঠছে। সাধারনত কম রোগ-বালাই ও ভালো বাজারদর থাকার জন্য খামারীরাও সোনালী মুরগীর প্রতি আগ্রহী হয়ে ঊঠছে। আমাদের দেশের অধিকাংশ খামারী সাধারনত নির্দিষ্ট তালিকা ধরে খামার পরিচালনা করে থাকেন। সোনালির খামার পরিচালনার জন্য আমরা এখানে একটি সোনালি মুরগির ঔষধের তলিকা দেয়ার চেষ্টা করেছি।

    মনে রাখা প্রয়োজন, একেক পরামর্শক একেকভাবে সোনালি মুরগি পালনের ঔষধের তালিকা দিতে পারেন। তবে যেকোন একটিকেই ভালোভাবে অনুসরন করা দরকার। আমরা এখানে আমাদের পাঠকের সুবিধার্তে বহুল প্রচলিত একটি শিডিউল দিয়েছি।

    বয়স দিন ঔষধের নাম
    ১ থেকে ৩ দিন টানাএমক্সাসিলিন*
    ৩ থেকে ৫ দিনের ভিতর আইবি+এনডি লাইভ ভ্যাক্সিন (রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিস)
    ৭ থেকে ১০ দিনের ভিতর ঠোট স্যাকা যদি প্রয়োজন হয়।
    ১০ থেকে ১২ দিনের ভিতরগামবোরো লাইভ ভ্যাক্সিন
    ১২ থেকে ১৪ দিন এম্প্রোলিয়াম + সিপ্রো*
    ১৮ থেকে ২২ দিনের ভিতরগামবোরো লাইভ ভ্যাক্সিন
    ২৪ থেকে ২৬ দিনের ভিতরএনডি লাইভ ভ্যাক্সিন (রানীক্ষেত)
    ২৪ থেকে ২৬ দিন এম্প্রোলিয়াম + এমক্সাসিলিন*
    ৩৫ তম দিন ছোট-বড় মুরগি আলাদা করা + কৃমিনাষক
    ৪৪ তম দিনরানীক্ষেত লাইভ ভ্যাক্সিন* (প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলে)
    ৪৬ থেকে ৪৮ দিন সিপ্রোফ্লক্সাসিন+নিউমাইসিন*
    ৫০ থেকে বিক্র্য় পর্যন্ত প্রোবায়োটিক
    সোনালি মুরগির ঔষধের তলিকা

    খেয়াল রাখবেন…

    *যেকোন এন্টিবায়োটিক ব্যাবহারের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

    *এখানে একটি বহুল প্রচলিত সোনালি মুরগি পালনের ঔষধের তালিকা দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও অনেক শিডিউল রয়েছে। ব্যবহারের সময় যেকোন একটি অনুসরন করা উচিত; একাধিক নয়।

    *স্থান-কাল ভেদে এই শিডিউল পরিবর্তন, পরিমার্জন হতে পারে।

    আরো পড়ুনঃ সোনালী মুরগি পালন পদ্ধতি

    সোনালি মুরগির সাপ্তাহিক ঔষধের তালিকা

    ঔষধের নাম সাপ্তাহিক প্রয়োগমাত্রা
    এডি৩ই সপ্তাহে দুইদিন পরপর সকালের পানিতে ১ লিটার পানিতে ১ মিলি।
    লিভার টনিক সপ্তাহে একদিন সকালের পানিতে ২ লিটার পানিতে ১ মিলি।
    ই-সেল সপ্তাহে একদিন সকালের পানিতে ২ লিটার পানিতে ১ মিলি।
    জিংক সপ্তাহে দুইদিন পরপর সকালের পানিতে ১ লিটার পানিতে ১ মিলি।
    ক্যালসিয়ামসপ্তাহে একদিন বিকেলের পানিতে১ লিটার পানিতে ১ মিলি।
    সোনালি মুরগির ঔষধ তালিকা

    খামারে রোগ দেখা দেয়ার আগেই রোগ প্রতিরোধের ব্যাবস্থা নিতে হবে। সঠিকভাবে সোনালি মুরগিকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। অসুস্থ বার্ড আলাদা রাখতে হবে। খামরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আশা করি প্রদত্ত সোনালি মুরগির ঔষধের তালিকা আপনাকে সাহায্য করবে।

  • সোনালী মুরগী পালন পদ্ধতি ।। যেভাবে শুরু করবেন সোনালী মুরগীর খামার

    সোনালী মুরগী পালন পদ্ধতি ।। যেভাবে শুরু করবেন সোনালী মুরগীর খামার

    সোনালী মুরগী পালন দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে আমাদের দেশে। এর অন্যতম কারণ সোনালি মুরগির রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং এর বাজার চাহিদা। নতুন করে যারা খামার করতে চান, তাদের অনেকেই প্রথমে সোনালি মুরগি দিয়ে খামার শুরু করার কথা চিন্তা করেন। আবার এমন অনেকে আছেন যারা ব্রয়লার বা লেয়ার খামার করে লছ করে নতুনভাবে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছেন।

    আমাদের এই লেখাটি মূলত নতুন খামারিদের উদ্দেশ্যে। তবে অভিজ্ঞ খামারী হলেও আপনি লেখাটি পড়ে উপকৃত হতে পারেন।

    কেন সোনালি মুরগী পালন করবেন

    সোনালি মুরগির জাত বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী। অন্যদিকে এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই ভালো। অন্যান্য হাইব্রিড জাতের তুলনায় সোনালি মুরগির রোগ-বালাই বেশ কম। সাধারন আবহাওয়া পরিবর্তনের তেমন প্রভাব এর উপর পড়েনা।

    নিয়মিত টীকা প্রদান ও জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে খামারে রোগ-বালাই আনুপাতিক হারে কম দেখা যায়।

    অপরদিকে ব্রয়লার মুরগির মাংসের প্রতি অনেকের অনীহা থাকলেও সোনালি মুরগির মাংসের চাহিদা ব্যাপক। বাজার দর বেশ ভালো থাকায় এর বানিজ্যিক গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    সোনালী মুরগির বাচ্চা নির্বাচন

    সোনালি একটি স্বতন্ত্র মুরগির জাত হলেও বর্তমানে এর কিছু ভ্যারিয়েশন বাজারে বিদ্যমান রয়েছে। সোনালি, সোনালি ক্লাসিক ও হাইব্রিড সোনালি নামে বাচ্চার বাজারজাত করন হয়ে থাকে।

    সত্যিকার সোনালি অর্থাৎ আর-আই-আর ও ফাউমি মুরগির সংকরায়নে সোনালী মুরগির জাত উদ্ভাবিত হলেও ইনব্রিডিং ও বিভিন্ন কারনে এর মূল জাতের বৈশিষ্ট্য লোপ পেয়েছে। ফলে জাত উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন হ্যাচারি অন্যান্য ভারি জাতের মুরগির সাথে ক্রসব্রিড করে সোনালির জাত উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এজন্যই বাজারে সোনালী মুরগীর বিভিন্ন ভ্যারিয়ান্ট বিদ্যমান।

    এক্ষেত্রে নিচের টেবিল থেকে আপনি আপনার সোনালী মুরগির জাত পছন্দ করতে পারেন।

    বাচ্চার নামসংকরায়ন৬০ দিনে ওজনডিমের হার (%)বাজার দর
    সাধারণ সোনালিইনব্রিড- সোনালি থেকে সোনালী৭০০-৮০০ গ্রাম৬৫-৭০%খুব বেশি (প্রায় দেশি মুরগির কাছাকাছি)
    ক্লাসিক সোনালীআর-আই-আর মোরগ X ফাউমি মুরগি৮৫০-৯৫০ গ্রাম৭০-৭৫%সাধারণ
    ক্লাসিক সোনালী আর-আই-আর মুরগি X ফাউমি মোরগ৮০০-৯০০ গ্রাম৭২-৮০%বেশি
    সোনালি হাইব্রিড সোনালি মুরগি X ক্রয়লার মোরগ ১০%৯৫০-১১০০ গ্রাম ৫৫-৬৫%কম
    সোনালি মুরগির জাত

    সোনালী মুরগীর বৈশিষ্ট ও এর জাত সম্পর্কে জানতে আমাদের নিচের লেখাটি পড়তে পারেন।

    সোনালি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    যেভাবে সোনালী মুরগির ঘর প্রস্তুত করবেন

    সোনালী মুরগী পালনে ঘর হবে পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা। প্রস্থ সাধারনত ২০ থেকে ২৫ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট বা চাহিদা অনুযায়ী করা যেতে পারে।

    মেঝে হবে মাটি থেকে কমপক্ষে এক ফুট উচুতে। এবং চারপাশ ভালোভাবে নেট দিয়ে ঘেরা দিতে হবে। খেয়াল রাখা প্রয়োজন, যেন বাহির হতে কোন কিছু শেডে প্রবেশ করতে না পারে।

    মার্কেট বা রেডি সোনালি (৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি) পালনে প্রতিটি মুরগির জন্য ০.৮৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন। অর্থাৎ, ১০০০ সোনালি মুরগির জন্য ৮৫০ বর্গফুট জায়গা দিতে হবে।

    ডিমের জন্য পালন করলে প্রতিটি মুরগির জন্য ১.৫ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন।

    কম জায়গায় পালন করলে মুরগির বেশ কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন, গাম্বুরো, রক্ত আমাশয় ইত্যাদি। আবার বেশি যায়গা দিলে মুরগির খাদ্য অপচয় ও গ্রোথ কম হতে পারে।

    লিটার ব্যবস্থাপনা

    সোনালি মুরগির লিটার হিসেবে ধানের তুষ ব্যাবহার করা শ্রেয়। তবে কাঠের গুড়াও ব্যবাহার করা যায়। লিটার হিসেবে বালির উপরও সোনালি পালন করা যেতে পারে। খেয়াল রাখা প্রয়োজন যেন ঠান্ডা না লাগে।

    লিটার এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত পুরু করে দিতে হবে। প্রয়োজন অনুসারে লিটার নাড়িয়ে দিতে হবে। গ্যাস জমতে দেয়া যাবেনা।

    ব্রুডার ঘর ব্যবস্থাপনা

    বাচ্চা আসার তিন ঘন্টা থেকে আসার পর প্রথম ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত করনীয় ব্রুডারের সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন লিটার পেপার, চিকগার্ড, পানি, হোভার, খাবারের পাত্র সব তিন ঘন্টা আগেই বসিয়ে নিতে হবে যথাযথ জায়গায়।

    হোভারের লাইট দুই-তিন ঘন্টা আগেই জ্বালিয়ে রাখতে হবে এবং একঘন্টা পর থার্মোমিটারের রিডিং পরীক্ষা করতে হবে।

    বাচ্চা আসার ১০ মিনিট আগেই পানির পাত্র এবং খাবার পাত্র যথাযথ জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে।
    যদি দুর্বল বাচ্চা থাকে তবে এদের পৃথক করে গ্লুকোজের পানি ফোটায় ফোটায় খাইয়ে দিতে হবে।

    সবল থাকলে প্রথম দুই ঘন্টা শুধুমাত্র জীবানুমুক্ত সাদা পানি দিতে হবে। দুর্বল থাকলে গ্লুকোজের পানি দিতে হবে।

    ব্রুডারে ছাড়ার ১০ মিনিট পর খাবার দিতে হবে। এক্ষেত্র শুধুমাত্র প্রথমবার পেপারে ছিটিয়ে দিয়ে পরে অবশ্যই ট্রেতে খাবার দিতে হবে।

    বাচ্চার অবস্থা ৩ ঘন্টা পরপর পর্যবেক্ষণ করতে হবে দেখতে হবে তাপ বেশী হচ্ছে কিনা। কোন সমস্যা থাকলে সমাধান করতে হবে এবং বাচ্চা মৃত থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। খাবার পানি শেষ হলে খাবার পানি দিতে হবে। পেপার ভিজে গেলে পাল্টে দিতে হবে। ২৪ ঘন্টা পর পেপার সম্পূর্ন ভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে।

    পুলেট সোনালী ব্যবস্থাপনা

    রেডি মুরগি পালনে পুলেট ব্যাবস্থাপনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পুলেটের ইউনিফরমিটি ঠিক না থাকলে সঠিক বাজার মূল্য পাওয়া যায় না। আর বাড়ন্ত সোনালির ইউনিফরমিটি ধরে রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং। নিয়মিত ভাবে গ্রেডিং করে আলাদাভাবে খাদ্য প্রদান করলে ভাল বাজার মূল্য পাওয়া যায়।

    খাদ্য ব্যবস্থাপনা

    ব্রয়লার মুরগির মতো সোনালি খাদ্য চাহিদা নেই। যত খাবে তত দ্রুত বাড়বে ধারনাটি সোনালী মুরগী পালন এর বেলায় প্রযেয্য নয়। সোনালির গ্রোথ রেট কম। বিধায় এর খাদ্যে প্রোটিন এনার্জি মান ব্রয়লারের তুলনায় কম থাকে।

    আরো জানতে পড়ুনঃ সোনালি মুরগির খাবার তৈরি

    পুলেট সোনালি মুরগিকে তিন বেলা খাবার দেয়া যেতে পারে। সকালে মোট খাবারের ৪০% দুপুরে ২০% ও বিকালে ৪০% হারে খাবার দেয়া যেতে পারে।

    খাবার পাত্র দিতে হবে বুক বরাবর এবং লক্ষ রাখতে হবে খাবার যেন অপচয় না হয়।

    পানি ব্যবস্থাপনা

    মুরগিকে কমপক্ষে তিনবার পরিস্কার পানি দিতে হবে। শীতকালে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে যেন, ঠান্ডা পানি পাত্রে জমে না থাকে। যদি থেকে যায়, পাত্রের পানি ফেলে দিয়ে পুনরায় নতুন পানি দিতে হবে।

    পানির পাত্র দিতে হবে চোখ বরাবর। তাহলে পাত্রে ময়লা কম পড়বে। ফলে পানি বাহিত রোগ কম হবে। প্রতিদিন পানির পাত্র পরিস্কার করতে হবে।

    মনে রাখা প্রয়োজন, মুরগির অধিকাংশ রোগ পানির মাধ্যমে আসে।

    সোনালি মুরগির রোগ সমূহ

    সোনালি মুরগির সাধারন রোগ সমূহের মধ্যে রয়েছে, রানিক্ষেত, গাম্বুরো, কক্সিডিওসিস, করাইজা, কলেরা সহ বেশ কিছু ঠান্ডা জনিত রোগ। তবে নিয়মিত টীকা বা ভ্যাকসিন প্রদান করলে এবং খামারে সঠিক জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে অধিকাংশ রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

    সোনালী মুরগীর রোগ ও এর প্রতিকার নিয়ে আমাদের একটি লেখা রয়েছে।

    সোনালি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

    সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন শিডিউল

    নিচে সোনালি মুরগি পালনের একটি ভ্যাকসিন শিডিউল দেয়া হলো।

    বয়স (দিন)রোগের নাম ভ্যাক্সিনের নাম প্রয়োগের স্থান
    ৩-৫রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিসআইবি+এনডিএক চোখে এক ফোঁটা
    ১০-১২গামবোরোআই বি ডিমুখে এক ফোঁটা
    ১৮-২২গামবোরোআই বি ডিখাবার পানিতে
    ২৪-২৬রানীক্ষেতএন ডিএক চোখে এক ফোঁটা
    ৪৪-৪৮রানীক্ষেত* (প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলে)এন ডিখাবার পানিতে
    সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    যদি ডিম বা প্যারেন্টস স্টক তৈরীর উদ্দ্যশে সোনালী মুরগী পালন করা হয় তবে লেয়ার মুরগির ভ্যাকসিন শিডিউল অনুসরন করতে হবে।

    লেয়ার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    সোনালি মুরগি কতদিনে ডিম পাড়ে

    সোনালী মুরগী পালনে ব্যাবসায়ীক হিসাব

    এককালীন খরচ

    খরচের খাতমূল্য টাকায় (আনূমানিক)
    ঘর তৈরি (টিনের সেমি পাকা) ১,১০,০০০৳
    খাদ্য ও পানির পাত্র ৬,০০০৳
    ব্রুডার সরঞ্জামদি ও পর্দা ২,০০০৳
    মোট১,১৮,০০০৳
    এককালীন খরচ

    ১০০০ সোনালি মুরগি পালনে খরচের হিসাব

    খরচের খাত মূল্য টাকায় (আনূমানিক)
    একদিনের বাচ্চা (১০০০ পিছ * ২২৳)২২,০০০৳
    মোট খাদ্য (৫০ কেজি *৪০ বস্তা * ৪০৳)৮০,০০০৳
    মেডিসিন৫,০০০-৭,০০০৳
    ভ্যাকসিন ১৬০০৳
    লিটার ৩২০০৳
    বৈদ্যুতিক বিল১২০০-১৫০০৳
    কর্মচারী / শ্রমিক৮,০০০-১০,০০০৳
    মোট ১,২১,০০০ – ১,২৬,৫০০
    ১০০০ সোনালি মুরগি পালনে খরচের হিসাব

    বিঃদ্রঃ এখানে রেডি সোনালি অর্থাৎ ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের সোনালী মুরগী পালন এর হিসেব দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য বাচ্চা, খাদ্য সহ অন্যান্য খরচের খাত সমূহের দাম পরিবর্তনশীল। এখানে শুধুমাত্র ধারনা দেয়া হয়েছে।

    সোনালি মুরগি পালনে আয়ের পরিমান (সম্ভাব্য)

    ১ হাজার সোনালি ৯০০ কেজি (±৫০) * ১৮০৳ = ১,৬২,০০০৳ (± ১০,০০০৳)

    অর্থাৎ লাভের পরিমান প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। মনে রাখা প্রয়োজন, এই লাভের পরিমান বাজার দরের পরিবর্তনে কমবেশি হতে পারে।

    লাভজনক খামার ব্যাবস্থাপনা

    আপনার খামারকে লাভজনক প্রথিষ্ঠানে পরিনত করতে চাইলে অনেকগুলি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী। যেমন, মৃত্যুহার শুন্যের কোটায় রাখা, সঠিক ওজন নিয়ে আসা, মার্কেট বুঝে বাচ্চা উঠানো ইত্যাদি রয়েছে।

    খামারকে রোগমুক্ত রাখার জন্য বায়োসিকিউরিটি মান্য করা জরুরি। সঠিক সময়ে ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভালোমানের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

    খামার ও তার আশেপাশের পরিবেশ সর্বদা পরিস্কার ও জীবানু মুক্ত রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা লাভজনক খামার ব্যবস্থাপনার অন্যতম শর্ত।

    এধরনের তথ্যনির্ভর লেখা নিয়মিত পেতে আমাদের উৎসাহিত করুন। যেকোন একটি বিজ্ঞাপনে ক্লিক করুন এবং আপনার মতামত আমাদেরকে জানান।

  • সোনালি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    সোনালি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    সোনালি মুরগি বাংলাদেশের ডেভেলপকৃত নিজস্ব জাতের মুরগি। ২০১৭ সালে গনপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার জি আই স্বত্বের জন্য সোনালি মুরগিকে নির্বাচিত করে। ১৯৮৭ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল জলিল সোনালী জাতের মুরগী উদ্ভাবন করেছিলেন। পরবর্তিতে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শাহ জামাল স্যারের তত্বাবধনে জাতটির উন্নয়ন করানো হয়।

    ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলায় সোনালি মুরগির বিকাশ ঘটে। এরপর দ্রুতই এর আশে পাশের জেলা সমূহ ও পরবর্তিতে সারা বাংলাদেশেই এটি ছড়িয়ে পড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মাংস ও ডিমের স্বাদের কারনে সোনালি মুরগি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।

    মূলত আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী মুরগির জাত উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে সোনালি মুরগি ডেভেলপ করা হয়। দেশি মুরগির সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে উন্নত জাতের ডিমের মুরগি তৈরি করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। ভালো বাজার দরের কারনে বর্তমানে সোনালি মুরগিকে বানিজ্যিকভাবে পালন করা হয়।

    সোনালি মুরগির জাত উন্নয়ন

    আর আই আর ও ফাউমি জাতের মুরগির ক্রসে সোনালি মুরগি ডেভেলপ করা হয়। এজন্য সোনালিকে ক্রসব্রিড মুরগি বলা হয়। সোনালির প্যারেন্ট সিলেকশন, এই দুই জাতের মুরগির উন্নত লাইনের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে। বানিজ্যিকভাবে, মাংসের জন্য সাধারনভাবে আর-আই-আর এর মোরগ ও ফাউমি জাতের মুরগি ব্যাবহার করা হয়। আর ডিমের জন্য এর রিভার্স অর্থাৎ ফাউমির মোরগ ও আর-আই-আর এর মুরগি নেয়া হয়।

    ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

    বর্তমানে অনেক ব্রিডার খামারি সোনালি মুরগির সাথে ভারী জাতের মোরগ-মুরগি ক্রস করে থাকেন। বাজারে এটি হাইব্রিড সোনালি নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে সোনালি মুরগির স্বকীয়তা ও ডিম উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

    sonali-chicken

    সোনালি মুরগি পালনের উদ্দ্যেশ্য

    বানিজ্যিকভাবে সোনালি মুরগি প্রধানত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের সোনালি মুরগির বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। সোনালির মাংস ও ডিম বেশ সুস্বাদু। দেশি মুরগির ন্যায় ডিমের স্বাদ ও চাহিদার কারনে ডিমের জন্যও অনেক খামারি সোনালি পালন করে থাকেন।

    একদিন বয়সি বাচ্চার চাহিদা থাকায় অনেকেই সোনালি মুরগির ব্রিডার ফার্ম করে থাকেন। এছাড়াও এদের জাত সহনশীলতা ও উন্নত ডিম উৎপাদনশীলতার কারনে গ্রাম-গঞ্জের অনেক বাড়িতে দেশী মুরগির ন্যায় সোনালি মুরগী পালন করা হয়।

    সোনালি পালনের বিস্তারিত জানতে আমাদের নিচের লেখাটি পড়তে পারেন।

    সোনালী মুরগী পালন পদ্ধতি

    সোনালি মুরগির বৈশিষ্ট্য

    এদের নামকরন এদের গায়ের রঙের কারনে দেয়া হয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুরগির পালকের রং গাঢ় বাদামি বা সোনালি বর্ণ ধারণ করে। সোনালির পায়ের রং হলুদ। আর আই আর মুরগির সাথে এদের পার্থক্য করা যায় এদের পায়ের রং দেখেই।

    সোনালি জাতের মোরগের ওজন প্রায় ৩.২ কেজি এবং মুরগীর ওজন প্রায় ২.২ কেজি হয়ে থাকে। তবে উন্নত খাদ্য ও ব্যাবস্থাপনায় ওজন আরো বেশি হতে পারে। লালচে ঝুঁটি ও সোনালি পালকবিশিষ্ট এই জাতের মুরগি অন্যান্য দেশি মুরগির মতোই ১৬ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে।

    সোনালি জাতের মুরগীর আচরণ

    সাধারণত সোনালি মুরগি বেশ চঞ্চল। আবদ্ধ পরিবেশে পালন করা গেলেও এরা আবদ্ধ থাকা পছন্দ করেনা। দেশি মুরগির স্বভাব লক্ষনীয়। চড়ে খেতে পছন্দ করে। সোনালি মোরগ বেশ কর্তৃত্বপরায়ন। সোনালি মোরগ কিঞ্চিৎ আক্রমনাত্বক হতে পারে। সাধারণত এরা অপরিচিত বিশেষ আগমন পছন্দ করেনা।

    নীচে সোনালি মুরগির সম্পূর্ণ জাতের তথ্য একনজরে দেয়া হলো।

    সোনালি মুরগি >> জাতের তথ্যঃ

    জাতের নামসোনালি মুরগি (Sonali Chicken)
    অন্য নামপাকিস্তানি, দেশি কক।
    পালনের উদ্দ্যেশ্যমাংস ও ডিম উভয়।
    জাতের আচরণসামান্য আগ্রাসি, সহজে পালন।
    আকারমাঝারী। মুরগি ১.৫-২.৫ কেজি ও মোরগ ২.২-৩.৫ কেজি
    তা দেয়ার প্রবণতাসাধারন।
    ঝুঁটিছোট গোলাপি।
    জলবায়ু সহনশীলতাসকল জলবায়ু।
    ডিমর রঙবাদামী ক্রীম।
    ডিমের আকারমাঝারি।
    ডিম উৎপাদনশীলতাভালো (১৮০-২০০ ডিম/বছর) প্রায় ৭৫%
    বৈচিত্র্যবিভিন্ন রঙের।
    উৎপত্তিস্থলবাংলাদেশ প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর।

    আরো পড়তে পারেন..

    মুরগির বিভিন্ন জাত পরিচিতি ও সাধারণ বৈশিষ্ট

    কাদাখনাথ মুরগি

    সিল্কি মুরগির বৈশিষ্ট্য এবং সমস্ত তথ্য

    বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশী মুরগি ও তার বৈশিষ্ট্য

    ক্রয়লার বা কয়লার মুরগি সম্পর্কিত তথ্

  • সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা । যেভাবে তৈরি করবেন সোনালি মুরগির খাবার

    সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা । যেভাবে তৈরি করবেন সোনালি মুরগির খাবার

    সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা করতে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। যেমন বয়স, পালনের উদ্দেশ্য, আবহাওয়া, পুষ্টিমান ইত্যাদি। সাধারণত এক মাস বয়স পর্যন্ত স্টার্টার, বাড়ন্ত সময়ে গ্রোয়ার ও ডিম পাড়ার সময়ে লেয়ার ফিড সরবরাহ করা হয়ে থাকে। যথাযথ পুষ্টিমান জেনে আপনি সহজেই সোনালি মুরগির খাদ্য তৈরী করতে পারেন।

    বয়স অনুসারে সোনালি মুরগির জন্য সাধারণত ৩-৫ ধরণের খাবার দেয়া হয়।

    খাবারের নামবয়স (সপ্তাহ)
    স্টার্টার০-৬ সপ্তাহ
    গ্রোয়ার৭-১২ সপ্তাহ
    প্রিলেয়ার১৩-১৭ সপ্তাহ
    লেয়ার ১১৮-৪৫ সপ্তাহ
    লেয়ার ২৪৬-৯৫ সপ্তাহ

    সোনালি মুরগি খাদ্য পুষ্টিমান চাহিদা

    বয়স অনুযায়ী খাবারে পুস্টিগুণের চাহিদা পরিবর্তন হয়। শীত গরম অনুযায়ী এনার্জি কম বেশি হয়। সোনালি মুরগির খাদ্য তৈরিতে নিম্নলিখিত চার্টটি বিবেচনায় রাখতে হবে।

    পুষ্টি উপাদানস্টার্টারগ্রোয়ারপ্রিলেয়ারলেয়ার ১লেয়ার ২
    মেটাবলিক এনার্জি (kcal/kg)২৮৫০-৩০৫০২৮০০-৩০০০২৭৫০-২৯৫০২৭৮০-২৯৮০২৭৫০-২৯৯০
    ক্রুড প্রোটিন (g/day)২০-২২১৮-২০১৫.৫-১৭.৫১৬.৫-১৮.৫১৬-১৬.৫
    লাইসিন (mg/day)৯৫০-১১১০৮২০-৮৯০৭২০-৭৫০৭২০-৭৮০৬৭০-৭৪০
    মিথিওনিন (mg/day)৪৫০-৪৯০৩৯০-৪৩০২৮০-৩০০৩৫০-৩৮০৩৪০-৩৭০
    ক্যালসিয়াম (g/day)০.৯০২.৬০২.৮০-৩.৯০
    সোডিয়াম ও ক্লোরাইড (mg/day)২০০১৮০১৭০১৮০১৮০
    থিওনিন (mg/day)৬৫০-৭৮০৫৫০-৬৪০৪৩০-৫১০৫৫০-৫৮০৫০০-৫৬০

    সোনালি মুরগির খাদ্য তালিকা

    সোনালি মুরগির জন্য ১০০ কেজি খাবার তৈরির একটি তালিকা দেয়া হলো।

    উপাদানস্টার্টারগ্রোয়ারপ্রিলেয়ারলেয়ার ১লেয়ার ২
    ভূট্টা৫১ কেজি৫২.৫ কেজি৫৪ কেজি৫৫ কেজি৫৬ কেজি
    সয়াবিন মিল২৬ কেজি২৫ কেজি২২.৫ কেজি২৩ কেজি২২ কেজি
    রাইচ পালিশ১০ কেজি১০ কেজি১২ কেজি৮ কেজি৭.৫ কেজি
    প্রোটিন ৬০%৮ কেজি৭ কেজি৫.৫ কেজি৪ কেজি৩ কেজি
    লাইমস্টোন / ঝিনুক চূর্ণ২ কেজি২.৫ কেজি৩ কেজি৮ কেজি১০ কেজি
    লবণ৩০০ গ্রাম২৮০ গ্রাম২৫০ গ্রাম২৮০ গ্রাম২৮০ গ্রাম
    ডিসিপি৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম৫০০ গ্রাম৫০০ গ্রাম
    সালমোনেলা কিলার৩০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম২৫০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩২০ গ্রাম
    প্রিমিক্স২০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম২০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম
    ডিএল- মিথিওনিন১৫০ গ্রাম১৩৫ গ্রাম১২০ গ্রাম১৩০ গ্রাম১২৫ গ্রাম
    এল-লাইসিন১০০ গ্রাম৯০ গ্রাম৭০ গ্রাম৮০ গ্রাম৬০ গ্রাম
    কোলিন ক্লোরাইড৬০ গ্রাম৫০ গ্রাম৪০ গ্রাম৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম
    টক্সিন বাইন্ডার১২৫ গ্রাম১৩৫ গ্রাম১৫০ গ্রাম১৫০ গ্রাম১৫০ গ্রাম
    সোডা ৫০ গ্রাম৭৫ গ্রাম
    সয়াবিন তেল২০০ গ্রাম১৫০ গ্রাম১০০ গ্রাম
    মোটঃ১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি
    সোনালি মুরগির খাবার

    বিশেষ নোটঃ উল্লেখিত তালিকাতে সয়াবিন তেল ওজন ধরা হয়নি। এবং টক্সিন বাইন্ডার, সালমোনেলা কিলার, ভিটামিন-মিনারেলস প্রিমিক্স প্রয়োজন অনুযায়ী স্ব-স্ব কোম্পানীর নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে।

    ফিড এডিটিভস সমূহঃ

    উপাদানস্টার্টারগ্রোয়ারপ্রিলেয়ারলেয়ার ১লেয়ার ২
    এনজাইম৬০ গ্রাম৫০ গ্রাম৮০ গ্রাম৭৫ গ্রাম
    প্রোবায়োটিক৬০ গ্রাম৫০ গ্রাম৪৫ গ্রাম৪৫ গ্রাম৪৫ গ্রাম
    ককসিডিওস্ট্যাট৩০ গ্রাম৩৫ গ্রাম
    ফাইটেজ০.৭৫ গ্রাম০.৭৫ গ্রাম
    থিওনিন৬০ গ্রাম৫০ গ্রাম৩৫ গ্রাম৪৫ গ্রাম৪০গ্রাম

    বিশেষ নোটঃ খামারের মুরগির স্বাস্থ, উৎপাদন, খাদ্য উপাদানের গুণগত মান ও আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এ খাদ্য তালিকাটিতে পরিবর্তন করা যেতে পারে।

    উল্লেখ্য যে, খাদ্য তালিকায় উল্লেখিত ফিড এডিটিভস সমূহে প্রয়োজন অনুযায়ী স্ব-স্ব কোম্পানীর নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে অথবা অভিজ্ঞ ভেটেরিনারিয়ান কর্তৃক পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা যেতে পারে।

    এধরনের তথ্যনির্ভর লেখা নিয়মিত পেতে আমাদের উৎসাহিত করুন। যেকোন একটি বিজ্ঞাপনে ক্লিক করুন এবং আপনার মতামত আমাদেরকে জানান।

    আরো পড়ুন..

    সোনালী মুরগী পালন পদ্ধতি

    লেয়ার মুরগির খাদ্য তালিকা

    সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

  • সোনালি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

    সোনালি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

    যেকোন রোগই অনাকাংক্ষিত বিষয়। সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত রোগ সমুহ হতে পারে। বেশির ভাগ মারাত্নক রোগের জন্য টিকা বা ভ্যাকসিন আবিস্কার হয়েছে। তবে যথাযথ ব্যাবস্থা ও জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে প্রায় সকল রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। সোনালি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা এর বিষয় নিচে আলোকপাত করা হলো।

    মুরগির রোগ প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথাঃ

    • ভাইরাস জনিত
    • প্রোটোজোয়া জনিত
    • ও ব্যাক্টেরিয়া জনিত

    নিচে এই তিন প্রকারের সংক্রামন সম্পর্কে সোনালি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা বনর্না করা হলো।

    সোনালি মুরগির ভাইরাস জনিত রোগ

    মুরগির ভাইরাস জনিত রোগের জন্য ভ্যাক্সিন বা টিকা প্রাদান করাই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রদান করলে মুরগির ভাইরাস জনিত রগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

    রানিক্ষেত রোগ

    রানিক্ষেত একটি ভাইরাস জনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। যা মূলত, ‘নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস‘ (এনডিভি) দ্বারা সংক্রমিত হয়। এটি প্রাথমিকভাবে তীব্র শ্বাসযন্ত্রের রোগ হিসাবে দেখা দেয়। তবে ঝিমানো, দুর্বলতা বা স্নায়বিক প্রকাশ এবং ডায়রিয়ার মত লক্ষনসমূহ দেখা যেতে পারে।

    রানীক্ষেত রোগে শতভাগ প্রর্যন্ত মারা যেতে পারে। সোনালি মুরগির যে কোন বয়সেই এই রোগ হতে পারে। তবে ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব।

    মুরগির রানীক্ষেত রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আরো জানতে আমাদের এই লেখাটি পড়ুন।

    সোনালি মুরগি

    গামবোরো রোগ

    গামবোরো একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এটি মুরগির লসিকা গ্রন্থি বারসাকে আক্রান্ত করে। একে ‘ইনফেকসাস বারসাল ডিজিজ’ বলা হয়। গামবোরো হলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আক্রান্ত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৩০%। সাধারণত ১০-৫০ দিন বয়স পর্যন্ত এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী থাকে।

    ভাইরাসজনিত রোগ বিধায় এর জন্য ভ্যাকসিন বা টিকা প্রয়োগ করতে হবে। ভাইরাসজনিত রোগের জন্য সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল মেনে চলতে হবে।

    সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল এর জন্য আমাদের এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন।

    ফাউল পক্স

    ফাউল পক্স ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক রোগ। সোনালি মুরগির যে কোন বয়সেই ফাউল পক্স হতে পারে কিন্তু বাচ্চা মুরগিতে আক্রান্ত হলে বেশি মারা যায়। সাধারণত শরীরের পালক বিহীন জায়গায় সাধারণত শক্ত গোটা উঠে এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে। এই রোগে মুরগির শরীরে তীব্র জ্বর থাকে।

    যথাসময়ে ফাউল-পক্স এর টিকা প্রদান করতে হবে।

    মারেক্স রোগ

    এটি একপ্রকার ভাইরাস সৃষ্ট রোগ। এ রোগকে ফাউল প্যারালাইসিসও বলা হয়ে থাকে। সব বয়সের মুরগিতেই এ রোগ হতে পারে তবে সাধারনত ২-৫ মাসের বাড়ন্ত মুরগি এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। আক্রান্ত মুরগির বহিরাভাগের স্নায়ু এবং অনেক সময় গোনাড, বিভিন্ন ভিসেরাল অঙ্গ, ত্বক, চোখ, মাংস ইত্যাদিতে ও রোগের সৃষ্টি হয়।

    মারেক্স রোগ প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন প্রদানই সর্বাপেক্ষা কার্যকর ব্যবস্থা।

    সোনালি মুরগির প্রোটোজোইয়া জনিত রোগ

    রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস

    এটি একটি প্রোটোজোয়া জনিত রোগ। ২ মাস পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী। সারা বছরই এ রোগটি দেখা গেলেও তবে বর্ষাকালে এর প্রার্দুভাব বেশি দেখা যায়। রক্ত আমাশয় হলে সোনালি মুরগির ওজন সঠিক মাত্রায় আসে না। যা খামারিকে ব্যাপক লসের মুখে ফেলে দেয়।

    টল্টাজুরিল বা এমপ্রোলিয়াম জাতীয় ওষুধ দিয়ে এই রোগ নিয়ন্ত্রন সম্ভব।

    কৃমির সংক্রামন

    সোনালি মুরগিতে কৃমির আক্রমন ঘটে। কৃমি হলে খাদ্যে অরুচী আসে এবং খাদ্য গ্রহন কমিয়ে দেয়। ফলে মুরগির ওজন কাংক্ষিত মাত্রায় আসে না। কৃমি হলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

    সোনালি মুরগিকে অবশ্যই নিয়মিতভাবে কৃমির ওষুধ দেয়া উচিত।

    সোনালি মুরগির ব্যাক্টেরিয়া জনিত রোগ

    সালমোনেলোসিস বা পুলোরাম

    সালমোনেলোসিস পোল্ট্রির ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি রোগ। এটি পুলোরাম এবং ফাউল টাইফয়েড নামে পরিচিত। সালমোনেলা গ্যালিনেরাম ব্যাকটেরিয়ার কারনে এটি হয়ে থাকে। পুলোরাম রোগ বাচ্চা মুরগিতে এবং ফাউল টাইফয়েড পরিণত বয়সে দেখা দেয়।

    খাদ্যে নিয়মিত সালমোনেলা কিলার বা নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় এন্টিবায়োটিক দেয়া যেতে পারে। তবে এর ভ্যাকসিন বা টিকা রয়েছে।

    মাইকোপ্লাজমোসিস

    মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস বা ক্রনিক রেসপাইরেটরী ডিজিজ (সি আর ডি) একটি সংক্রামক রোগ। এটি শ্বাসতন্ত্রের একটি জটিল রোগ । সাধারণত শীত কালে এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়।

    রোগটি মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপ্টিকাম (Mycoplasma gallisepticum) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে। সব বয়সের মুরগীর হতে পারে, তবে ৪-১০ সপ্তাহের মুরগির এই রোগ বেশি হয়।

    এই রোগ হলেঅভিজ্ঞ ভেটেনারি ডাক্তারের পরামর্শক্রমে সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে।

    ফাউল কলেরা

    ফাউল কলেরা মুরগির একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত পানিবাহিত রোগ। এই রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৩০-৫০% পর্যন্ত হতে পারে। ফাউল কলেরা (Pasteurella matocida) নামক ব্যাক্টেরিয়ার কারনে হয়ে থাকে।

    অতিরিক্ত গরম পড়লে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী হয়। এছাড়া পরিবেশে আদ্রতা বেশি থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

    যেহেতু ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগ তাই যে কোন একটি ভালো এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। তবে কলেরার ভ্যাকসিন বা টিকা রয়েছে।

    ইনফেকশাস করাইজা

    ইনফেকশাস করাইজা মুরগির শ্বাসতন্ত্রের একটি মারাত্মক রোগ। নাসারন্ধ্র প্রদাহ ও সাইনাস প্রদাহ ঘটিত উপসর্গ এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রদাহের ফলে নাসিকা থেকে পানির ন্যায় তরল পদার্থ নি:সৃত হয়।

    এ রোগে আক্রান্তের হার বেশি কিন্তু মৃত্যুর হার কম। হেমোফিলাস গ্যালেনেরাম নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকশাস করাইজা সংক্রমিত হয়।

    এই রোগের টিকা রয়েছে। সঠিক সময়ে টিকা প্রয়োগ করলে নিয়ন্ত্রন সম্ভব। এই রোগ হলে সিপ্রোফ্লক্সাসিন জাতীয় ওষুধ দেয়া যেতে পারে।

    এছাড়াও সোনালি মুরগির ক্ষেত্রে নীচের রোগ গুলিও দেখা যেতে পারে। ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস, ইনফেকশাস ল্যারিংগোট্রাকিয়াটিস, ফ্যাটি লিভার সিনড্রম, ই-কলাই, লিভার লিউকোসিস।

    সোনালি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে আপনার মতামত আমাদের জানাতে পারেন।

    আরো পড়তে পারেনঃ

    ব্রয়লার মুরগির জাত

    দেশি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    হাঁসের ভ্যাকসিন সিডিউল

  • সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    আমাদের দেশে দিন দিন সোনালী মুরগি পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে রেডি মুরগি পালনে ব্রয়লার এর পরই সোনালির অবস্থান। সোনালী মুরগি পালনে ভ্যাকসিন সিডিউল অত্যন্ত গূরুত্বপূর্ন। তবে রেডি সোনালি মুরগি তথা ৮০০-৯৫০ গ্রামের ও ব্রিডার সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল ভিন্ন হয়।

    সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    নিচে রেডি সোনালি পালনের একটি আদর্শ ভ্যাকসিন সিডিউল দেয়া হলো।

    বয়স (দিন)রোগের নাম ভ্যাক্সিনের নাম প্রয়োগের স্থান
    ৩-৫রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিসআইবি+এনডিএক চোখে এক ফোঁটা
    ১০-১২গামবোরোআই বি ডিমুখে এক ফোঁটা
    ১৮-২২গামবোরোআই বি ডিখাবার পানিতে
    ২৪-২৬রানীক্ষেতএনডিএক চোখে এক ফোঁটা
    ৪৪-৪৮রানীক্ষেত* (প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলে)এনডিখাবার পানিতে
    সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    ভ্যাকসিনের আগে পরে এন্টিবায়োটিক ব্যাবহার না করাই উত্তম। তবে ভ্যাকসিনের পরে ভিটামিন সি দেয়া ভালো। ৩৫ দিন বয়সে সোনালি মুরগির কৃমিনাষক ঔষধ দেয়া দরকার। কৃমি হলে সাধারণত ভ্যাক্সিন বা ঔষধের কার্যকারিতা কমে যায়।

    সোনালি মুরগিকে ডিমের জন্য পালন অথাবা ব্রিডার ফার্ম করতে চাইলে বানিজ্যিক লেয়ার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল অনুসরন করতে হয়। তবে সোনালি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকার কারনে বানিজ্যিক লেয়ার মুরগির ভ্যাক্সিন সিডিউলে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে।

    নোটঃ অবশ্যই স্থান ভেদে ভ্যাকসিন সিডিউল পরিবর্তন করা যেতে পারে।

    ব্রিডার সোনালি মুরগির প্রস্তাবিত টিকাদান কর্মসূচি

    বয়সরোগের নামভ্যাকসিনের নামপ্রকৃতিপ্রয়োগ পদ্ধতি
    ১-৩ দিনম্যারেক্স
    রাণীক্ষেত+ ব্রংকাইটিস
    ম্যারেক্স,
    আইবি+ এনডি
    লাইভঘাড়ের চামড়ার নিচে ইনজেকশন
    চোখে ফোঁটা
    ৭-৯ দিনগামবোরোআই বি ডিলাইভফুখে ফোঁটা
    ১৬-১৭ দিনরাণীক্ষেতল্যাসোটালাইভচোখে ড্রপ
    ১৮-২০ দিনগামবোরোআই বি ডিলাইভখাবার পানিতে
    ২৪-২৮ দিনএভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা
    (বার্ড ফ্লু)
    এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (H5N1)কিল্ডচামড়ার নিচে ইনজেকশন
    ৩০-৩৫ দিনফাউল পক্সফাউল পক্সডি এন এ লাইভডানায়সূচ ফুটানো
    ৬-৭ সপ্তাহরাণীক্ষেতএনডিকিল্ডঘাড়ের চামড়ার নিচে ইনজেকশন
    ৮ সপ্তাহফাউল কলেরাফাউল কলেরাকিল্ডনির্দেশনা মোতাবেক
    ৯ সপ্তাহইনফেকশাস করাইজা, সালমোনেলাকরাইজা + সালমোনেলাকিল্ড
    লাইভ
    নির্দেশনা মোতাবেক
    ১০ সপ্তাহব্রংকাইটিস (ভ্যারিয়ান্ট)আইবি ভ্যারিয়ান্টলাইভখাবার পানিতে
    ১২ সপ্তাহফাউল কলেরাফাউল কলেরাকিল্ডনির্দেশনা মোতাবেক
    ১৫-১৬ সপ্তাহএভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা
    (বার্ড ফ্লু)
    এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (H5N1)কিল্ডচামড়ার নিচে ইনজেকশন
    ১৬ সপ্তাহকরাইজা, সালমোনেলা, রাণীক্ষেত, ব্রংকাইটিসজি + এনডি +আইবি কিল্ডনির্দেশনা মোতাবেক
    সোনালি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    প্রতি ৬ মাস অন্তর রানীক্ষেত কিল্ড ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভ্যাকসিন টাইটার কমে গেলে লাইভ ভ্যাকসিন করা যেতে পারে। সালমোনেলা রোগের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পূর্বে মুরগি সালমোনেলা মুক্ত কিনা পরীক্ষা করে নিলে ভ্যাকসিন কার্যকর হয়ে থাকে।

    মুরগির রানীক্ষেত রোগ ও চিকিৎসা

    উল্লেখ্য বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন নামে ভ্যাকসিন বাজারজাত করে থাকে। এক্ষেত্রে রোগের নাম অনুযায়ী ভ্যাকসিন নির্বাচন করতে হবে।

    এলাকা আবাহাওয়া, মুরগির স্বাস্থ ইত্যাদি বিবেচনায় উল্লেখিত ভ্যাকসিন সিডিউলে পরিবর্তন করা যেতে পারে।

    আরো পড়তে পারেনঃ

    মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল যেসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে

    সোনালি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

    দেশি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

    হাঁসের ভ্যাকসিন সিডিউল

    ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল