Category: মুরগি

  • লেয়ার মুরগি পালন

    বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প দ্রুত বর্ধনশীল একটি সেক্টর। আমাদের দেশের প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৩৮ ভাগ আসে মুরগির মাংস ও ডিম থেকে। লেয়ার ডিম উৎপাদনকারী একটি মুরগির বিশেষ জাত যা পোল্ট্রি শিল্পের একটি উল্লেখযােগ্য অংশ। সঠিকভাবে লেয়ার মুরগি পালন করলে মূলধন লগ্নিকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাভবান হতে পারে।

    লেয়ার মুরগি পালনে অধিক জায়গার প্রয়ােজন হয় না। তাই লেয়ার মুরগি পালন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা। এটি জীবিকা নির্বাহের একটি উপায় হিসেবে দেশে বেকার যুবক ও নারীদের কর্মসংস্থান ও আয়ের উৎসের পাশাপাশি তাদের পরিবারে প্রাণিজ আমিষের অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই লেয়ার পালন শুরুর আগে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত লেয়ার পালনের মূল বিষয়গুলাে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    লেয়ার মুরগি কী ?

    ডিম উৎপাদনের জন্য যেসব মুরগি পালন করা হয় সেগুলােকে ডিম পাড়া মুরগি বা লেয়ার বলে। অধিক ডিম উৎপাদনশীল বিশুদ্ধ জাতের মােরগ-মােরগির মধ্যে বংশপরম্পরায় প্রজননের মাধ্যমে হাইব্রিড লেয়ার মুরগি তৈরি করা হয়, যা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ডিম উৎপাদানের জন্য পালন করা হয়।

    ডিমের খােসার রঙের উপর ভিত্তি করে লেয়ারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় :

    ১) সাদা ডিম উৎপাদনকারী জাত : পালকের রং সাদা।

    ২) লাল ডিম উৎপাদনকারী জাত : পালকের রং বাদামি।

    বাংলাদেশে প্রাপ্ত হাইব্রিড লেয়ার ও এদের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম :

    বাংলাদেশে সরকারীভাবে নতুন হাইব্রিড লেয়ার জাত স্বর্ণা ও শুভ্রা আনুষ্ঠানিক উদ্বােধন করা হয়েছে। তবে তা এখনাে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায়নি। বিদেশ থেকে প্যারেন্ট স্টকের একদিনের বাচ্চা এনে বড় করে তাদের পাড়া ডিম ফুটিয়ে বিভিন্ন স্ট্রেইনের লেয়ার হাইব্রিড বাচ্চা উৎপাদন করা হয় এবং খামারিদের মাঝে বিক্রি করা হয়। এই প্যারেন্ট স্টকের মুরগি ডিমপাড়া শেষে বাতিল হয় এবং নতুন করে আবার প্যারেন্ট স্টক এর একদিনের বাচ্চা আনতে হয়।

    তবে বর্তমানে কিছু হ্যাচারি বা ব্রিডার ফার্ম গ্রান্ড প্যারেন্ট স্টক বাইরে থেকে নিয়ে এসে এদেশে পালন করায় প্যারেন্ট স্টকের একদিনের বাচ্চা কমমূল্যে তাদের কাছ থেকে অন্যান্য যাচারি কিনতে পারছে।

    লেয়ার মুরগির সাধারণ বৈশিষ্ট্য

    • ডিম উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে বছরে ২৮০-৩২০টি।
    • ১৮-২০ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সবগুলাে মুরগি একই সাথে ডিম উৎপাদন করে।
    • এদের ডিমের ওজন দেশি মুরগির চেয়ে ১০-১৫ গ্রাম বেশি (৫০-৬০ গ্রাম)
    • কুচে হওয়ার প্রবনতা কম থাকে।
    • ডিম উৎপাদনের সময়কালে পালক ছাড়ে না।

    লেয়ার মুরগির খামার স্থাপন

    লেয়ার খামারের স্থান নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয় :

    • খামার তৈরির নির্বাচিত স্থান লােকালয় বা আবাসিক ঘনবসতি এলাকা থেকে দূরে শুষ্ক, উঁচু ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা বিদ্যমান এমন থেকে হবে।
    • যাতায়াতের সুবিধা থাকতে হবে।
    • অন্য মুরগির খামার বা প্রাণীর ঘর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে হবে।
    • পর্যাপ্ত আলাে ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
    • আশপাশে পচা ডােবা ও নর্দমামুক্ত থেকে হবে।
    • পানি ও বিদ্যুতের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
    • ডিম উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট কাঁচামালের সহজলভ্যতা থাকতে হবে
    • ডিম বাজারজাতকরণের সুবিধা থাকতে হবে।
    • ভবিষ্যতে খামারটি সম্প্রসারণ করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে জমি নির্বাচন ও ক্রয় করতে হবে।
    • বন্য জন্তু বা অবাঞ্ছিত লােকজন দ্বারা আমার ক্ষগ্রিস্ত হবে না এমন স্থান হবে।
    • বিষ্ঠা ও লিটার সরিয়ে ফেলার সুযােগ থাকতে হবে।
    • খামার ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়ার সুবিধা থাকতে হবে।

    খামারের অবকাঠামাে নির্মাণ

    মুরগির ঘর নির্মাণে কোনাে ভুল বা ক্রটি করা চলবে না। মুরগিকে আরামদায়ক পরিবেশ নিরাপদ ও রােগমুক্ত রাখার জন্য ঘরের প্রয়ােজন। খােলামেলা উঁচু জায়গায় প্রচুর আলাে ও বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় তৈরি করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে দুই ধরনের ঘরে মুরগি পালা হয়। যথা :

    1. খােলামেলা ঘর। (ওপেন শেড)
    2. আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত ঘর। (কন্ট্রোল শেড)

    লেয়ার খামারের খােলামেলা ঘর তৈরির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলাে বিবেচনা করতে হবে:

    ১. ঘরের অবস্থান ও প্রকৃতি :

    এই ঘর দক্ষিণে খােলা থাকে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘরের খােলামেলা স্থানে পর্দা দ্বারা ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা। ঘরের মধ্যে মুরগি আবদ্ধ রাখার জন্য খােলা স্থান জাল দ্বারা ঘিরে দেওয়া হয়। ঘরে লিটার ধরে রাখার জন্য খােলা স্থানের নিচের অংশ ১-১.৫ ফুট দেয়াল দ্বারা ঘিরে দেওয়া থাকে। নিরাপত্তার জন্য সম্পূর্ণ অংশ তারের জাল দ্বারা ঘেরা থাকে।

    ২. ঘরের প্রশস্ততা :

    সাধারণত ছােট খামার ঘরের প্রশস্ততা খাঁচার আকার অনুসারে করতে হয়। লিটার পদ্ধতিতে ঘরের প্রশস্ততা সর্বনিম্ন ১০ ফুট এবং উর্ধ্বে ২৫ ফুট করা যায়।

  • সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগি? ডিম উৎপাদনে শীর্ষ মুরগির জাত

    মুরগি পালন একটি লাভজনক পেশা, বিশেষ করে যদি আপনি এমন মুরগি পালন করেন যা বেশি ডিম দেয়। তবে সব মুরগির ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা একই রকম নয়। মুরগি পালনে সঠিক জাত নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি আপনি বাণিজ্যিকভাবে ডিম বা মাংস উৎপাদনের লক্ষ্য রাখেন। কিছু মুরগির জাত আছে যেগুলো অন্যান্য জাতের তুলনায় অনেক বেশি ডিম দেয়। এই ব্লগে আমরা সবচেয়ে বেশি ডিম দেওয়া মুরগির জাত, তাদের বৈশিষ্ট্য এবং ডিম উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করব।


    1. বাণিজ্যিক সাদা লেয়ার (Commercial White Layer)

    • ডিম উৎপাদন: বছরে 320-360 টি ডিম।
    • ডিমের রং: সাদা।
    • বৈশিষ্ট্য:
      • হোয়াইট লেগহর্ন জাতের উপর ভিত্তি করে উন্নত।
      • খুব সক্রিয় এবং কম খাদ্যে বেশি ডিম দেয়।
      • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।
    • উপযোগিতা: বাণিজ্যিক ডিম উৎপাদনের জন্য আদর্শ।

    2. বাণিজ্যিক লাল লেয়ার (Commercial Brown Layer)

    • ডিম উৎপাদন: বছরে 320-350 টি ডিম।
    • ডিমের রং: বাদামি।
    • বৈশিষ্ট্য:
      • আইএসএ ব্রাউন বা রোড আইল্যান্ড রেড জাতের উপর ভিত্তি করে উন্নত।
      • শান্ত এবং সহজে পালনযোগ্য।
      • ডিমের আকার বড় এবং পুষ্টিগুণ বেশি।
    • উপযোগিতা: বাণিজ্যিক ডিম উৎপাদনের জন্য ভালো।

    3. রোড আইল্যান্ড রেড (Rhode Island Red – RIR)

    • ডিম উৎপাদন: বছরে 250-300 টি ডিম।
    • ডিমের রং: বাদামি।
    • বৈশিষ্ট্য:
      • শক্তিশালী এবং সহনশীল।
      • বিভিন্ন আবহাওয়ায় খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
      • ডিম এবং মাংস উভয়ের জন্যই ভালো।
    • উপযোগিতা: ছোট এবং বড় উভয় ধরনের খামারের জন্য উপযুক্ত।

    4. ফাউমি (Fayoumi)

    • ডিম উৎপাদন: বছরে 250-280 টি ডিম।
    • ডিমের রং: সাদা বা হালকা ক্রিম।
    • বৈশিষ্ট্য:
      • মিশরীয় জাতের মুরগি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব ভালো।
      • কম খাদ্যে বেশি উৎপাদনশীল।
      • গরম আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত।
    • উপযোগিতা: গ্রামীণ এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে পালনের জন্য আদর্শ।

    5. সোনালি মুরগি (Sonali)

    • ডিম উৎপাদন: বছরে 260-290 টি ডিম।
    • ডিমের রং: বাদামি।
    • বৈশিষ্ট্য:
      • বাংলাদেশে উন্নত একটি দ্বৈত-উদ্দেশ্য (ডিম ও মাংস) জাত।
      • শান্ত এবং সহজে পালনযোগ্য।
      • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।
    • উপযোগিতা: ছোট এবং মাঝারি খামারের জন্য ভালো।

    6. টাইগার মুরগি (Tiger Chicken)

    • ডিম উৎপাদন: বছরে ২০০-২৫০টি ডিম।
    • ডিমের রং: বাদামি।
    • বৈশিষ্ট্য:
      • ডোরাকাটা পালকের জন্য টাইগার নামে পরিচিত।
      • ডিম এবং মাংস উভয়ের জন্যই ভালো।
      • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো।
    • উপযোগিতা: বাড়ির পিছনে বা ছোট খামারের জন্য উপযুক্ত।

    7. অন্যান্য জনপ্রিয় বিদেশি মুরগির জাত

    1. প্লাইমাউথ রক (Plymouth Rock)

    • ডিম উৎপাদন: বছরে ২০০-২৮০টি ডিম।
    • ডিমের রং: বাদামি।
    • বৈশিষ্ট্য: শান্ত এবং সহজে পালনযোগ্য।

    2. সাসেক্স (Sussex)

    • ডিম উৎপাদন: বছরে ২৫০-২৭৫টি ডিম।
    • ডিমের রং: হালকা বাদামি।
    • বৈশিষ্ট্য: বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ভালো।

    3. অরপিংটন (Orpington)

    • ডিম উৎপাদন: বছরে ২০০-২৫০টি ডিম।
    • ডিমের রং: বাদামি।
    • বৈশিষ্ট্য: মাংস এবং ডিম উভয়ের জন্যই ভালো।

    উপসংহার

    বাণিজ্যিক সাদা লেয়ার এবং লাল লেয়ার মুরগি সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। রোড আইল্যান্ড রেড, ফাউমি, সোনালি এবং টাইগার মুরগি ডিম ও মাংস উভয়ের জন্যই ভালো। আপনার খামারের লক্ষ্য এবং পরিবেশ অনুযায়ী সঠিক জাত নির্বাচন করুন এবং সঠিক যত্ন নিশ্চিত করুন।

    মনে রাখবেন, সঠিক জাত নির্বাচন এবং যত্নই মুরগি পালনে সফলতার চাবিকাঠি!

  • দেশি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা ও টিকা দেওয়ার নিয়ম: একটি সম্পূর্ণ গাইড

    দেশি মুরগি পালন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি লাভজনক ও জনপ্রিয় পেশা। তবে মুরগির রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে এবং তাদের উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে নিয়মিত ভ্যাকসিন দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভ্যাকসিনেশন শুধু মুরগির স্বাস্থ্য সুরক্ষাই নয়, এটি খামারির আর্থিক ক্ষতি রোধেও সাহায্য করে। এই ব্লগে দেশি মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের তালিকা, টিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম, এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস শেয়ার করা হবে।


    দেশি মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের তালিকা

    দেশি মুরগির জন্য বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে, যা নির্দিষ্ট রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিচে প্রধান ভ্যাকসিনগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:

    1. মarek’s Disease Vaccine (এমডি)

    • রোগের বিবরণ: ম্যারেক্স রোগ একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মুরগির স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং টিউমার সৃষ্টি করে।
    • টিকা দেওয়ার সময়: ১ দিন বয়সে (হ্যাচারিতে)।
    • প্রয়োগ পদ্ধতি: চামড়ার নিচে ইনজেকশন বা ইন্ট্রামাসকুলার।

    2. Newcastle Disease Vaccine (এনডি)

    • রোগের বিবরণ: নিউক্যাসল রোগ একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা শ্বাসতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে।
    • টিকা দেওয়ার সময়:
      • প্রথম ডোজ: ৫-৭ দিন বয়সে।
      • বুস্টার ডোজ: ২১-২৮ দিন বয়সে।
    • প্রয়োগ পদ্ধতি: পানির মাধ্যমে বা চোখে ড্রপ।

    3. Infectious Bursal Disease Vaccine (আইবিডি বা গাম্বোরো)

    • রোগের বিবরণ: গাম্বোরো রোগ মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যা অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
    • টিকা দেওয়ার সময়:
      • প্রথম ডোজ: ১৪-১৬ দিন বয়সে।
      • বুস্টার ডোজ: ২৮-৩০ দিন বয়সে।
    • প্রয়োগ পদ্ধতি: পানির মাধ্যমে।

    4. Fowl Pox Vaccine (ফাউল পক্স)

    • রোগের বিবরণ: ফাউল পক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মুরগির চামড়া এবং শ্বাসতন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি করে।
    • টিকা দেওয়ার সময়: ৬-৮ সপ্তাহ বয়সে।
    • প্রয়োগ পদ্ধতি: ডানার নিচের চামড়ায় স্ক্র্যাচ করে।

    5. Avian Influenza Vaccine (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা)

    • রোগের বিবরণ: এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা মুরগির শ্বাসতন্ত্র এবং অন্যান্য অঙ্গকে আক্রমণ করে।
    • টিকা দেওয়ার সময়: ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নির্দিষ্ট বয়সে (সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী)।
    • প্রয়োগ পদ্ধতি: ইনজেকশন।

    6. Infectious Coryza Vaccine (ইনফেকশিয়াস কোরাইজা)

    • রোগের বিবরণ: ইনফেকশিয়াস কোরাইজা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা মুরগির শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ সৃষ্টি করে।
    • টিকা দেওয়ার সময়: ৮-১০ সপ্তাহ বয়সে।
    • প্রয়োগ পদ্ধতি: ইনজেকশন।

    7. Salmonella Vaccine (সালমোনেলা)

    • রোগের বিবরণ: সালমোনেলা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, যা মুরগির পরিপাকতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।
    • টিকা দেওয়ার সময়: ১ দিন বয়সে বা নির্দিষ্ট বয়সে।
    • প্রয়োগ পদ্ধতি: পানির মাধ্যমে বা ইনজেকশন।

    টিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম

    ভ্যাকসিনেশন সফল করতে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:

    1. ভ্যাকসিনের সঠিক সংরক্ষণ

    • লাইভ ভ্যাকসিন সাধারণত ফ্রিজে (২-৮°C) সংরক্ষণ করতে হয়।
    • ভ্যাকসিন ব্যবহারের আগে এবং পরে ঠান্ডা চেইন বজায় রাখুন।

    2. সঠিক সময়ে টিকা দেওয়া

    • প্রতিটি ভ্যাকসিনের জন্য নির্দিষ্ট বয়স এবং সময়সূচী মেনে চলুন।
    • সময়মতো বুস্টার ডোজ দেওয়া নিশ্চিত করুন।

    3. প্রয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ করুন

    • ভ্যাকসিনের ধরন অনুযায়ী সঠিক পদ্ধতি (পানির মাধ্যমে, ইনজেকশন, ড্রপ ইত্যাদি) অনুসরণ করুন।
    • ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ নিন।

    4. মুরগির স্বাস্থ্য পরীক্ষা

    • টিকা দেওয়ার আগে মুরগির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। অসুস্থ মুরগিকে টিকা দেওয়া উচিত নয়।

    5. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

    • টিকা দেওয়ার সরঞ্জাম (সিরিঞ্জ, সূচ ইত্যাদি) পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করুন।
    • ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় পরিষ্কার জায়গা ব্যবহার করুন।

    6. রেকর্ড রাখা

    • কোন ভ্যাকসিন কখন দেওয়া হয়েছে তার রেকর্ড রাখুন। এটি ভবিষ্যতে টিকা দেওয়ার সময়সূচী নির্ধারণে সাহায্য করবে।

    ভ্যাকসিন দেওয়ার পর করণীয়

    মুরগির অবস্থা পর্যবেক্ষণ:

      • ভ্যাকসিন দেওয়ার পর মুরগির মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া (যেমন: দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট) দেখা দিলে দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

      পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা:

        • মুরগির ঘর এবং আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন।

        সুষম খাদ্য প্রদান:

          • ভ্যাকসিন দেওয়ার পর মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সুষম খাদ্য প্রদান করুন।

          ভ্যাকসিনেশনের গুরুত্ব

          রোগ প্রতিরোধ:

            • ভ্যাকসিনেশন মুরগিকে মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করে।

            উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি:

              • সুস্থ মুরগি বেশি ডিম ও মাংস উৎপাদন করে।

              আর্থিক সুরক্ষা:

                • রোগের কারণে মুরগির মৃত্যু বা চিকিৎসা ব্যয় কমায়।

                সতর্কতা:

                • ভ্যাকসিন দেওয়ার পর মুরগির মধ্যে কোনো অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া (যেমন: দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট) দেখা দিলে দ্রুত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
                • ভ্যাকসিনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ব্যবহার করবেন না।

                উপসংহার

                দেশি মুরগির ভ্যাকসিনেশন একটি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া, যা মুরগির স্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে অপরিহার্য। সঠিক সময়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার খামারের লাভজনকতা বাড়াতে পারেন। স্থানীয় পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে একটি সঠিক ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম তৈরি করুন এবং মুরগির যত্ন নিন।

                মনে রাখবেন, একটি সুস্থ মুরগিই একটি লাভজনক খামারের চাবিকাঠি!

              1. এগ পেরিটোনাইটিস (Egg Peritonitis) বা মুরগির পেটে ডিম পঁচে যাওয়া – বিস্তারিত জানুন

                মুরগির পেটের মধ্যেই ডিম পচে যাওয়া বা এগ পেরিটোনাইটিস একটি সাধারণ মারাত্মক সমস্যা যা লেয়ার মুরগির মধ্যে বেশি দেখা যায়। এটি মূলত তখন ঘটে যখন ডিম্বাণু (yolk) পেটের ভেতরে পড়ে গিয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এটি মুরগির ডিম উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

                এগ পেরিটোনাইটিস রোগের কারণ:

                এগ পেরিটোনাইটিস (Egg Peritonitis) মূলত মুরগি ও অন্যান্য পোলট্রির একটি সাধারণ রোগ, যা ডিম্বাশয় ও ডিম্বনালীতে সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:

                • ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু সঠিকভাবে ওভিডাক্টে (ডিম্বনালী) না যাওয়া – এতে ডিম্বাণু পেটের গহ্বরে গিয়ে সংক্রমণ তৈরি করে।
                • ইনফেকশন (ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ) – বিশেষ করে Escherichia coli (E. coli) ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই সমস্যা বেশি হয়।
                • হরমোনজনিত সমস্যা – অস্বাভাবিক ডিম্বস্ফোটন হলে ডিম্বাণু ওভিডাক্টে না গিয়ে পেটে জমে যায়।
                • ডিম্বাণু (ovum) ডিম্বনালীতে না গিয়ে পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে (পেটের অভ্যন্তরীণ পর্দা) পড়ে গেলে সংক্রমণ হতে পারে।
                • জিনগত সমস্যা বা বংশগত কারণ – কিছু মুরগির জাতের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
                • স্ট্রেস ও পরিবেশগত কারণ – খাদ্যে পুষ্টির ঘাটতি, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা, এবং খাঁচায় অতিরিক্ত গাদাগাদি থাকলে এই সমস্যা বাড়তে পারে।
                • ক্যালসিয়াম, ভিটামিন D3, প্রোটিন ও মিনারেলের ঘাটতি এগ পেরিটোনাইটিসের একটি কারণ।
                • ডিমের আকার বড় বা ডিমে খোসার সমস্যা – ডিম বেশি বড় হলে বা নরম খোলস হলে এটি সহজেই ওভিডাক্ট থেকে বের হতে না পেরে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

                এগ পেরিটোনাইটিস রোগের: লক্ষণ

                ✔️ অবসাদ ও দুর্বলতা – মুরগি দুর্বল হয়ে পড়ে, খাবার কম খায় ও নড়াচড়া কমায়।
                ✔️ পেট ফোলা – পেটের নিচের অংশ ফুলে যায় এবং চাপ দিলে নরম অনুভূত হয়।
                ✔️ উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর) – সংক্রমণের ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
                ✔️ ডিম পারার হার কমে যাওয়া বা সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়া।
                ✔️ হলুদ বা সবুজ পাতলা বিষ্ঠা – ডিম্বাণু জমে গিয়ে সংক্রমণ হলে বিষ্ঠার রঙ পরিবর্তিত হয়।
                ✔️ শ্বাসকষ্ট – পেট ফুলে গেলে ফুসফুসে চাপ পড়ে, ফলে মুরগি হাঁপাতে শুরু করে।

                এগ পেরিটোনাইটিস রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা:

                ১. প্রাথমিক প্রতিকার:

                পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা – খাঁচা, খাদ্য ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা।
                সুষম খাদ্য সরবরাহ – ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিনযুক্ত খাবার নিশ্চিত করা।
                স্ট্রেস কমানো – অতিরিক্ত গরমে ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত জায়গার নিশ্চয়তা।
                ভিটামিন ও মিনারেল সম্পূরক প্রদান – বিশেষ করে ভিটামিন A, D3 ও E, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।

                ২. ওষুধ প্রয়োগ:

                ➡️ অ্যান্টিবায়োটিক – সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে (প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)।
                ➡️ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ – প্রদাহ কমানোর জন্য (চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী)।
                ➡️ ডিটক্সিফায়ার ও লিভার টনিক – সংক্রমণজনিত বিষক্রিয়া কমাতে লিভার টনিক ও ভিটামিন E + Selenium
                ➡️ ফ্লুইড থেরাপি – গুরুতর অবস্থায় ORS বা গ্লুকোজযুক্ত পানি সরবরাহ করা।

                প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

                ✔️ গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য – পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ ফিড নিশ্চিত করা।
                ✔️ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ – অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা প্রদান।
                ✔️ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা – মুরগির যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।
                ✔️ উন্নত প্রজনন ব্যবস্থাপনা – শুধুমাত্র অধিক ডিম উৎপাদনকারী জাত নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত নির্বাচন করা।

                সঠিক ব্যবস্থাপনা ও যত্নের মাধ্যমে এগ পেরিটোনাইটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

                উপসংহার:

                এগ পেরিটোনাইটিস একটি গুরুতর সমস্যা হলেও সময়মতো প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করা গেলে মুরগির মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। সঠিক খাদ্য, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করলে এই সমস্যার প্রভাব কমানো যায়।

              2. ব্রয়লার মুরগির ঔষধের তালিকা

                ব্রয়লার মুরগির ঔষধের তালিকা

                ব্রয়লার মুরগির ঔষধের তালিকা।ব্রয়লার মুরগির দ্রুত বৃদ্ধির ঔষধের তালিকা ও কৌশলঃ

                পোল্ট্রি খামার করার জন্য সবথেকে জনপ্রিয় হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি পালন। তবে নতুন খামারিদের মধ্যে প্রথম থেকেই যে ভয়টি কাজ করে তা হল, সঠিক নিয়মে ব্রয়লার মুরগি পালন করা। এক্ষেত্রে ব্রয়লার মুরগির ঔষধের তালিকা থাকলে পালন পদ্ধতি সহজ হয়। আমরা এখানে ব্রয়লার মুরগির প্রথম দিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত একটি ঔষধের তালিকা দেয়ার চেষ্টা করেছি।

                ব্রয়লার হচ্ছে উন্নতমানের একটি হাইব্রিড মুরগির জাত। ফলে স্বভাবতই এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেশি মুরগির তুলনায় কম। সঠিক নিয়ম ও যত্নের সাথে পালন করা হলে ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাবে।

                বয়স সকালদুপুরবিকাল/রাত
                ১ম দিনগ্লুকোজ/ইলেকট্রোলাইটইলেকট্রোলাইটডক্সিসাইক্লিন*
                ২য় দিনডক্সিসাইক্লিন*ইলেকট্রোলাইটডক্সিসাইক্লিন*
                ৩য় দিনডক্সিসাইক্লিন*ভিটামিন সিডক্সিসাইক্লিন*
                ৪র্থ দিনভিটামিন বি কমপ্লেক্সভিটামিন বি কমপ্লেক্স
                ৫ম দিনএ ডি৩ ই
                ৬ষ্ঠ দিনজিংক ই-সেল
                ৭ম দিনজিংকই-সেল
                ৮ম দিনলিভারটনিকক্যালসিয়াম
                ৯ম দিনলিভারটনিক
                ১০ম দিনএ ডি৩ ইএমক্সাসিলিন*
                ১১তম দিনএমক্সাসিলিন*ইলেকট্রোলাইট/ভিটা সিএমক্সাসিলিন*
                ১২তম দিনএমক্সাসিলিন*ইলেকট্রোলাইট/ভিটা সিএমক্সাসিলিন*
                ১৩তম দিনএমক্সাসিলিন*ইলেকট্রোলাইট/ভিটা সিএমক্সাসিলিন*
                ১৪তম দিনজিংকক্যালসিয়াম
                ১৫তম দিনলিভারটনিক
                ১৬তম দিনলিভারটনিকএমাইনো এসিড
                ১৭তম দিনএ ডি৩ ই
                ১৮তম দিনক্যালসিয়াম
                ১৯তম দিনজিংক
                ২০তম দিনজিংক
                ২১তম দিনএমাইনো এসিডএ ডি৩ ই
                ২২তম দিনসিপ্রো*ইলেকট্রোলাইট/ভিটা সিসিপ্রো*
                ২৩তম দিনসিপ্রো*ইলেকট্রোলাইট/ভিটা সিসিপ্রো*
                ২৪তম দিনসিপ্রো*ইলেকট্রোলাইট/ভিটা সিসিপ্রো*
                ২৫তম দিনলিভারটনিক
                ২৬তম দিনলিভারটনিকক্যালসিয়াম
                ২৭তম দিনই-সেল
                ২৮তম দিনএমাইনো এসিড
                ২৯তম দিনএমাইনো এসিড
                ৩০তম দিনগ্রোথ প্রোমোটর
                ৩১তম দিনগ্রোথ প্রোমোটর
                ব্রয়লার মুরগির ঔষধের তালিকা

                এখানে উল্লেক্ষিত ব্রয়লার মুরগির ঔষধের তালিকা অনুযায়ি ঔষধ প্রয়োগ করলে খুব সুন্দর গ্রোথ আসবে আশা করি। তদবে নিচের বিষয়গুলি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

                • তারকা চিহ্নিত ঔষধ প্রয়োগের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
                • ঠিকমত ব্রয়লার মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল মেনে চলতে হবে।
                • আবহাওয়া ও স্থানভেদে অভিজ্ঞ ভেটেনারিয়ান এর পরামর্শে এই তালিকা পরিমার্জন করা যেতে পারে।

                ব্রয়লার মুরগিকে পরিষ্কার সাদা-পানি পান করালে ভালো গ্রোথ আসে।মুরগিকে যত বেশি সাদাপানি দিবেন তত বেশি পরিমানে পানি পান করবে এবং ভালো ওজন আসবে।

                আপনি যদি এন্টিবায়োটিক ছাড়া ব্রয়লার মুরগি পালন করতে পারেন তবে ব্রয়লার মুরগি আরো দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাবে।

                ব্রয়লার মুরগির দ্রুত বৃদ্ধির কিছু কৌশলঃ

                • ভালো মানের বাচ্চা খামারে উঠাতে হবে। বাচ্চার ওজন যেন একই রকম থাকে।
                • বাচ্চার ব্রুডারে যথাযথ খাবার, পানির পাত্র লাইট দিতে হবে।
                • পরিবেশ ঠান্ডা বা রাতে বেশি পরিমানে খাদ্য খাওয়াতে হবে।
                • ভিটামিন মিনারেল ও গ্রোথ প্রোমোটর ডাঃ এর পরামর্শে দেয়া যেতে পারে।
                • পানি ও খাবারের পাত্র বাড়াতে হবে।
                • ভালো মানের ফিড দিতে হবে।
                • সবসময় পানি রাখতে হবে।
                • সর্বোপরি মুরগিকে সুস্থ রাখতে হবে

                ব্রয়লার মুরগি পালনে বাচ্চা ছোট-বড় হওয়া সমস্যায় করণীয়ঃ

                প্রায়ই দেখা যায় একই ব্যাচে একই বয়সের ব্রয়লার বাচ্চা কিছু দিন পর ছোট-বড় হয়ে যায়।এজন্যে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। যেমন প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য ও পানির পাত্র থাকা।

                প্রথম সপ্তাহে বিশেষ করে এক-তিন দিন বয়স পর্যন্ত বাচ্চার চলাচল সীমিত থাকে এবং খাদ্য না চেনার কারণে খাদ্য খাওয়ায় তেমন প্রতিযোগিতা থাকে না। তাই এসময়ে যেসব বাচ্চা এক বা দুই দিন ভালোভাবে খাদ্য খেতে পারে না সেগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে পরে খাদ্য খাওয়া প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে ছোট হয়ে যায়।

                আরও পড়ুন..

              3. দেশি মুরগির খাদ্য তালিকা – অল্প খরচে যেভাবে তৈরি করবেন দেশি মুরগির খাবার।

                দেশি মুরগির খাদ্য তালিকা অন্য মুরগির থেকে তুলনামূলক কম খরচে করা যায়। সাধারনত দেশি মুরগিকে ছেড়ে লালন পালন করা হয়। ফলে মুরগি বিভিন্ন খাদ্য উচ্ছিষ্ট খেয়ে থাকে। তবে বানিজ্যিকভাবে বা খামারে দেশি মুরগি পালন করলে যথাযথ মান সম্পন্ন খাবার দিতে হবে।

                এখানে আমরা উন্নতমানের দেশি মুরগির খাবার তালিকা এবং প্রাকৃতিক উপায়ে অল্প খরচে দেশি মুরগির খাদ্য তৈরি পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো।

                দেশি মুরগির খাবার তৈরি: দেশি মুরগির খাবার তৈরি করতে প্রয়োজন গম বা ভুট্টা ভাঙ্গা, সয়াবিন মিল, রাইছ পালিশ বা ধানের কুড়া ইত্যাদি।

                দেশি মুরগি সম্পর্কে আরো জানতে পড়ুনঃ দেশি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য

                বয়স অনুসারে দেশি মুরগিকে সাধারণত ৩ ধরণের খাবার দেয়া যেতে পারে।

                খাবারের নামবয়স (সপ্তাহ)
                স্টার্টার ০-৬ সপ্তাহ
                গ্রোয়ার৭-১৫ সপ্তাহ
                লেয়ার ১৫-৯০ সপ্তাহ

                দেশি মুরগির খাদ্য তালিকা

                দেশি মুরগির জন্য ১০০ কেজি খাবার তৈরির একটি তালিকা দেয়া হলো।

                উপাদানস্টার্টারগ্রোয়ারলেয়ার
                ভূট্টা৪৯ কেজি৫৩কেজি৫৩ কেজি
                গম ৮ কেজি৭ কেজি৬ কেজি
                সয়াবিন মিল২৩ কেজি২২ কেজি২১ কেজি
                রাইচ পালিশ১০ কেজি১০ কেজি৭ কেজি
                প্রোটিন ৬০%৮ কেজি৫ কেজি৩ কেজি
                লাইমস্টোন / ঝিনুক চূর্ণ২ কেজি৩ কেজি১০ কেজি
                মোটঃ১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি

                এছাড়াও উন্নতমানের খাবার তৈরী করতে নিচের উপাদানগুলি খাদ্যে মিশাতে হবে।

                লবণ৩০০ গ্রাম২৮০ গ্রাম২৮০ গ্রাম
                ডিসিপি৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৫০০ গ্রাম
                সালমোনেলা কিলার৩০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম৩২০ গ্রাম
                প্রিমিক্স২০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম৩০০ গ্রাম
                ডিএল- মিথিওনিন১৫০ গ্রাম১৩৫ গ্রাম১২৫ গ্রাম
                এল-লাইসিন১০০ গ্রাম৯০ গ্রাম৬০ গ্রাম
                কোলিন ক্লোরাইড৬০ গ্রাম৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম
                টক্সিন বাইন্ডার১২৫ গ্রাম১৩৫ গ্রাম১৫০ গ্রাম

                বিশেষ নোটঃ  টক্সিন বাইন্ডার, সালমোনেলা কিলার, ভিটামিন-মিনারেলস প্রিমিক্স প্রয়োজন অনুযায়ী স্ব-স্ব কোম্পানীর নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে।

                প্রাকৃতিক ও ঘরোয়াভাবে দেশি মুরগির খাদ্য তৈরি

                প্রাকৃতিক খাদ্য ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন সহজ ও খরচ কম। বাসার উচ্ছিষ্ট খাবার দিয়েও দেশি মুরগি পালন করা যেতে পারে। দেশি মুরগি যেকোনো খাবার, যেমন – ভাত, চাল, গম, শাক-সবজি ইত্যাদি খাবার খায়।

                কাচা সবুজ শাক-সবজি সমূহ

                দেশি মুরগিকে কাচা ঘাস বা বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক যেমন, পুইশাক, কলমি শাক, হেলেঞ্চা ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। এছাড়াও যেকোনো সবজি কাটার পর অবশিষ্ট অংশ টুকরো টুকরো করে কেটে দেয়া যেতে পারে।এতে দেশি মুরগির খাদ্য তৈরি খরচ কমে আসবে।

                এছাড়াও সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন ধরনের উপাদান রয়েছে। যা দেশি মুরগির দেহের ভিটামিন ও ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন ঘাটতি পূরণে সহসয়তা করে।

                বিশেষ নোটঃ খামারের মুরগির স্বাস্থ, উৎপাদন, খাদ্য উপাদানের গুণগত মান ও আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এ খাদ্য তালিকাটিতে পরিবর্তন করা যেতে পারে।

                আরো পড়ুনঃ যেভাবে তৈরি করবেন সোনালি মুরগির খাবার

              4. ফাউমি মুরগির ঔষধের তালিকা – রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

                ফাউমি মুরগি পালন অন্যান্য মুরগির তুলনায় সহজ। সাধারন ব্যবস্থাপনায় ফাউমি মুরগি লাভজনকভাবে পালন করা সম্ভব। প্রাকৃতিকভাবে এরা ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও কিছু কমন রোগ ফাউমি মুরগিতে দেখা যায়। এই লেখাতে আমরা ফাউমি মুরগির ঔষধের তালিকা রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

                সাধারনত বাচ্চা বয়সে ফাউমি মুরগির মৃত্যুহার অধিক এবং অপুষ্টিজনিত কারনে সঠিকভাবে বেড়ে উঠেনা। ফলে ডিম ও মাংস উৎপাদন সঠিকমাত্রায় আসেনা। বাচ্চা বয়সে সঠিকভাবে যত্ন নিলে দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে।

                ফাউমি মুরগির ঔষধের তালিকা

                বয়স দিনঔষধের নাম
                প্রথম দিনলাইসোভিট বা গ্লুকোজ
                ২ থেকে ৪ দিন টানাএমক্সাসিলিন*
                ৩ থেকে ৫ দিনের ভিতরআইবি+এনডি লাইভ ভ্যাক্সিন (রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিস)
                ১০ থেকে ১২ দিনের ভিতরগামবোরো লাইভ ভ্যাক্সিন
                ১২ থেকে ১৪ দিনলিভারটনিক ও ভিটামিন
                ১৮ থেকে ২২ দিনের ভিতরগামবোরো লাইভ ভ্যাক্সিন
                ২৪ থেকে ২৬ দিনের ভিতরএনডি লাইভ ভ্যাক্সিন (রানীক্ষেত)
                ২৪ থেকে ২৬ দিনএম্প্রোলিয়াম + সিপ্রো*
                ৩০ তম দিনফাউলপক্স ভ্যাক্সিন।
                ৩৫ তম দিনকৃমিনাষক ঔষধ।
                ৪৫ থেকে ৪৮ দিনের ভিতররানীক্ষেত লাইভ ভ্যাক্সিন* (প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলে)
                ৫০ থেকে নিয়মিতপ্রোবায়োটিক + ভিটামিন + লিভারটনিক

                *যেকোন এন্টিবায়োটিক ব্যাবহারের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

                অবশ্যই ফাউমি মুরগিকে টিকা প্রাদান করতে হবে। ফাউমি মুরগির ভ্যাক্সিন সিডিউল নিয়ে জানতে আমাদের লেখাটি পড়তে পারেন।

                আরো পড়ুন >> ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

                নিয়মিত ভাবে ফাউমি মুরগিকে বেশ কিছু ভিটামিন দেয়া যেতে পারে। এতে মুরগির ডিম উৎপাদন ভালো থাকবে।

                ঔষধের নামসাপ্তাহিকপ্রয়োগমাত্রা
                এডি৩ইসপ্তাহে দুইদিন সকালের পানিতে২ লিটার পানিতে ১ মিলি।
                লিভার টনিকসপ্তাহে একদিন সকালের পানিতে৩ লিটার পানিতে ১ মিলি।
                ই-সেলএক সপ্তাহ অন্তর পরপর দুইদিন২ লিটার পানিতে ১ মিলি।
                জিংকসপ্তাহে একদিন সকালের পানিতে১ লিটার পানিতে ১ মিলি।
                ক্যালসিয়ামসপ্তাহে একদিন বিকেলের পানিতে১ লিটার পানিতে ১ মিলি।

                ফাউমি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

                ফাউমি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলেও বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারনত এ রোগগুলি কমন কিছু উপোসর্গ এর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেমন, মুরগির ঝিমিয়ে থাকা, সাদা পাতলা পায়খানা করা, মাথার ঝুটি শুকিয়ে যাওয়া, দূর্বল বা নিস্তেজ হয়ে পরা ইত্যাদি লক্ষন দেখা যায়।

                নিচে ফাউমি মুরগির কিছু রোগ ও এর চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

                রানিক্ষেত রোগ

                রানিক্ষেত একটি ভাইরাস জনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। যা মূলত, ‘নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস‘ (এনডিভি) দ্বারা সংক্রমিত হয়। এটি প্রাথমিকভাবে তীব্র শ্বাসযন্ত্রের রোগ হিসাবে দেখা দেয়। তবে ঝিমানো, দুর্বলতা বা স্নায়বিক প্রকাশ এবং ডায়রিয়ার মত লক্ষনসমূহ দেখা যেতে পারে।

                রানীক্ষেত রোগে শতভাগ প্রর্যন্ত মারা যেতে পারে। ফাউমি মুরগির যে কোন বয়সেই এই রোগ হতে পারে। তবে ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ করা যায়।

                চিকিৎসাঃ রানীক্ষেত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।

                মুরগির রানীক্ষেত রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আরো জানতে আমাদের এই লেখাটি পড়ুন।

                গামবোরো রোগ

                গামবোরো একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এটি মুরগির লসিকা গ্রন্থি বারসাকে আক্রান্ত করে। একে ‘ইনফেকসাস বারসাল ডিজিজ’ বলা হয়। গামবোরো হলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আক্রান্ত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৩০%। সাধারণত ১০-৫০ দিন বয়স পর্যন্ত এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী থাকে।

                চিকিৎসাঃ ভাইরাসজনিত রোগ বিধায় এর জন্য ভ্যাকসিন বা টিকা প্রয়োগ করতে হবে। ভাইরাসজনিত রোগের জন্য দেশি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল মেনে চলতে হবে।

                ফাউল পক্স

                ফাউল পক্স ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক রোগ। দেশি মুরগির যে কোন বয়সেই ফাউল পক্স হতে পারে কিন্তু বাচ্চা মুরগিতে আক্রান্ত হলে বেশি মারা যায়। সাধারণত শরীরের পালক বিহীন জায়গায় সাধারণত শক্ত গোটা উঠে এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে। এই রোগে মুরগির শরীরে তীব্র জ্বর থাকে।

                চিকিৎসাঃ যথাসময়ে ফাউল-পক্স এর টিকা প্রদান করতে হবে।

                রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস

                এটি একটি প্রোটোজোয়া জনিত রোগ। ২ মাস পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী। সারা বছরই এ রোগটি দেখা গেলেও তবে বর্ষাকালে এর প্রার্দুভাব বেশি দেখা যায়। রক্ত আমাশয় হলে মুরগির ওজন সঠিক মাত্রায় আসে না। যা খামারিকে ব্যাপক লসের মুখে ফেলে দেয়।

                চিকিৎসাঃ টল্টাজুরিল বা এমপ্রোলিয়াম জাতীয় ওষুধ দিয়ে এই রোগ নিয়ন্ত্রন সম্ভব।

                কৃমির সংক্রামন

                ফাউমি মুরগিতেও কৃমির আক্রমন ঘটে। কৃমি হলে খাদ্যে অরুচী আসে এবং খাদ্য গ্রহন কমিয়ে দেয়। ফলে মুরগির ওজন কাংক্ষিত মাত্রায় আসে না। কৃমি হলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

                চিকিৎসাঃ ফাউমি মুরগিকে অবশ্যই নিয়মিতভাবে কৃমির ওষুধ দিতে হবে।

                ফাউল কলেরা

                ফাউল কলেরা মুরগির একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত পানিবাহিত রোগ। এই রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৩০-৫০% পর্যন্ত হতে পারে। ফাউল কলেরা (Pasteurella matocida) নামক ব্যাক্টেরিয়ার কারনে হয়ে থাকে।

                অতিরিক্ত গরম পড়লে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী হয়। এছাড়া পরিবেশে আদ্রতা বেশি থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

                চিকিৎসাঃ যেহেতু ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগ তাই যে কোন একটি ভালো এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। তবে কলেরা রোগের সরকারি ভ্যাকসিন বা টিকা রয়েছে।

              5. কালারবার্ড মুরগীর রোগ-বালাই ও চিকিৎসা পদ্ধতি

                গতপর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম কালারবার্ড মুরগীর খামার ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আজকে আমরা আলোচনা করবো ‘কালারবার্ড মুরগীর রোগা-বালাই’ সম্পর্কে। গত পর্বে আমরা জেনেছিলাম যে, অন্যান্য মুরগীর তুলনায় কালারবার্ড মুরগীর রোগ-বালাই অনেকাংশে কম হয়। কথা সত্য, কিন্তু  তারপরেও কিছু সাধারণ রোগ-বালাই তো আছেই, যা সকল মোরগ-মুরগীর ক্ষেত্রেই হয়। কালারবার্ড মুরগীরও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই আজকের ব্লগ থেকে আমরা কালারবার্ড মুরগীর রোগ-বালাই সম্পর্কে নিন্মলিখিত বিষয়গুলো জানবো।

                কালারবার্ড মুরগীর রোগগুলোকে মোটাদাগে আমরা দুইভাগে ভাগ করতে পারি।

                1. সচারচর হয়ে থাকে এমন রোগ।
                2. সচারচর হয় না এমন রোগ।
                3. সচারচর হয় এমন রোগ:

                কালারবার্ড মুরগী পালন করতে গিয়ে খেয়াল করলাম, কিছু রোগ আছে যা প্রতিবারই হয়।

                ঠাণ্ডা এদের মধ্যে প্রথম ও প্রধান। তাছাড়াও কালারবার্ড মুরগীর নিম্মলিখিত রোগসমূহ হয়ে থাকে।

                • এন্টারাইটিস
                • আমাশয় বা রক্ত আমাশয়।
                • সচারচর হয় না এমন রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
                • রাণিক্ষেত
                • গাম্বুরো।
                • ব্রঙ্কাইটিস

                এখন আমরা এসকল রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

                কালারবার্ড মুরগীর ভ্যাকসিনের নাম ও তালিকা:

                প্রথমেই আসি রাণিক্ষেত আর গাম্বুরো রোগের বিষয়ে। এই দুইটি রোগ ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। আর এজন্য এদের প্রতিকার ব্যবস্থা এখনো আবিষ্কৃত হয় হয়নি। এই দুই রোগে আক্রান্ত হলে ব্যাপক হারে মুরগী মারা যেতে পারে। ফলে খামারিদের লাভ কম হয়। অনেক ক্ষেত্রে লসও গুণতে হয়।

                যেহেতু এই রোগগুলোর চিকিৎসা তথা ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয় নি, তাই প্রতিরোই একমাত্র কার্যকর ব্যবস্থা। কীভাবে প্রতিরোধ করবো? ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে। কখন কোন ভ্যাক্সিন কীভাবে দিবেন? একদম সহজ। নিচে কালারবার্ড মুরগীর ভ্যাকসিনের তালিকা ও দিন উল্লেখ করা হলো।

                কালারবার্ড মুরগীর ভ্যাকসিনের তালিকা:

                রোগের নামবয়স (দিন)মাত্রাপ্রয়োগের স্থান
                রাণিক্ষেত-ব্রঙ্কাইটিস ৫-৬১ ফোঁটাচোখে অথবা খাবার পানিতে
                গাম্বুরো১১-১২১ ফোঁটাচোখে অথবা খাবার পানিতে
                গাম্বুরো১৭-১৮১ ফোঁটাচোখে অথবা খাবার পানিতে
                রাণিক্ষেত২৩-২৪১ ফোঁটাচোখে অথবা খাবার পানিতে
                কালারবার্ড মুরগীর ভ্যাকসিনের তালিকা

                পানিতে মিশিয়ে ভ্যাকসিন খাওনোর ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা:

                তবে হাঁ, পানিতে মিশিয়ে ভ্যাকসিন খাওনোর আগে আপনাকে কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। তাহলে ভ্যাকসিন মুরগীর দেহে ভালোভাবে কাজ করবে। যেমন-

                • ভ্যাকসিন মিশ্রিত পানি খাওয়ানোর আগে মুরগীকে সাদা পানি খাওয়াতে হবে।
                • ভ্যাকসিন সাধারণত সকালে কিংবা বিকেলে, তুলনামূলক ঠাণ্ডা পরিবেশে (আবহওয়ায়) দিতে হয়।ভ্যাকসিনের পানি এমন পরিমাণে দিতে হবে যেন দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে খেয়ে শেষ করতে পারে। কারণ ভ্যাকসিনের পানি বেশিক্ষণ থাকলে এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ভ্যাকসিন-মিশ্রিত পানি দেয়ার কমপক্ষে দেড় থেকে দুই ঘন্টা আগে খামার থেকে সব পানির পাত্র তুলে নিতে হবে। যাতে করে মুরগীগুলো একটু পিপাসার্ত বা তৃষার্ত হয়। এবং ভ্যাকসিন দেয়ার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে খেয়ে ফেলে।
                • ভ্যাকসিনের পানি দেয়ার পর আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যেন সকল মুরগী তা খায়। এজন্য দরকার হলে মুরগীকে ধাওয়া করে খাওয়াবেন। দেখবেন প্রথম সুযোগে মুরগীগুলো বেশ প্রতিযোগিতা তথা কাড়াকাড়ি করে খাচ্ছে। প্রথম সুযোগে সব মুরগী খেতে পারবে না। ফলে অনেক মুরগী ভ্যাকসিনের পানি না খেয়েই বসে থাকবে। তখন আপনাকে ধাওয়া করে অর্থাৎ হাত তালি দিয়ে কিংবা মুখে বিশেষ শব্দ করে তাড়িয়ে তাড়িয়ে খাওয়াতে হবে।
                • ভ্যাকসিনের পানি খাওয়ানোর পর পুনরায় সাদা পানি দিতে হবে

                উপর্যুক্ত নিয়ম প্রতিবার ভ্যাকসিন দেয়ার সময় অনুসরণ করতে হবে। এভাবে আমরা ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে রাণিক্ষেত ও গাম্বুরো রোগ প্রতিরোধ করতে পারি ইনশাআল্লাহ।

                কালারবার্ড মুরগীর ঠাণ্ডা সমস্যা ও সমাধান:

                এবার আমরা আলোচনা করবো কালারবার্ড মুরগীর ঠাণ্ডা সমস্যা নিয়ে। ঠাণ্ডা কোন সময়টাতে বেশি হয় এবং হলে কী করণীয় তা নিয়ে।

                মুরগীর কখন ঠাণ্ডা লাগে?

                কালারবার্ড মুরগীর একটি প্রধান সমস্যা হলো ঠাণ্ডা লাগা। এটা যে কোনো বয়সে হতে পারে। তবে সাধারণত ১০-১৪ দিন এবং ২০-২৪ দিন বয়সের বাচ্চাদের বেশি হতে দেখা যায়।

                ঠাণ্ডা লাগার লক্ষণসমূহ:

                • মুরগী বিশেষ শব্দ করবে।
                • নাক ঝারবে। অনেক সময় নাক দিয়ে পানি বের হয়।
                • হাঁচি, কাঁশি দিবে।
                • ঠাণ্ডার প্রকোপ (তীব্রতা) কম হলে বাচ্চা ধরে কানের কাছে নিয়ে গেলে গড়গড় শব্দ শোনা যাবে।
                • আর ঠাণ্ডার প্রকোপ (তীব্রতা) বেশি হলে, এমনিতে গড়গড় শব্দ শোনা যাবে।
                • খাবার ও পানি কম খাবে।
                • মুরগীর ফুরফুরা ভাব চলে যাবে।
                • ওজন হ্রাস পাবে।
                • পাতলা পায়খানা হয়।

                ঠাণ্ডার চিকিৎসা:

                ডাক্তারের পরামর্শে ঠাণ্ডার চিকিৎসায় আমরা নিচের ওষুধগুলো খাইয়েছি।

                • জিরো সিআরডি: প্রতি ৪ লিটার পানিতে ১ মি.লি.।
                • লিভোব্যাক: প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ মি.লি.।
                • তুঁতে: প্রতি ৫ লিটার পানিতে ১ মি.লি.।
                • ডাইজেস্টিভ পি: প্রতি ১ লিটার পানিতে ১ মি.লি.।

                প্রথম ৩টি ওষুধ ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে কাজ করে। আর নিচের ওষুধটি মুরগীর রুচি বৃদ্ধি করে। এটি খাওয়ানোর ফলে ঠাণ্ডা জনিত কারণে মুরগীর যে অরুচি দেখা দেয়, তা দূর হয়। ফলে মুরগীর খাবারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় এবং খাবার ও পানি খাওয়া বৃদ্ধি করে।

                কালারবার্ড মুরগীর আমাশয় ও রক্ত আমাশয় সমস্যা ও সমাধান:

                যত্ন সহকারে কালারবার্ড মুরগী পালন করলে আমাশয় কিংবা রক্ত আমাশয় রোগ হয় না বলেই চলে। কিন্তু অযত্ন ও অসচেতনার কারণে অনেক সময় আমাশয় রোগ সৃষ্টি হয়।

                কখন আমাশয় রোগ হয়?

                যে কোনো বয়সে আমাশয় রোগ হতে পারে। আমাদের এক ব্যাচে ১৫ দিনের মাথায় আমাশয় রোগ দেখা দিয়েছিলো। সাধারণত, রেনামাইসিন খাওয়ালেই সেরে যায়। আমরাও তাই করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ সেরে গিয়েছিলো।

                রক্ত আমাশয় কখন হয়?

                এটিও যে কোনো বয়সের মুরগীর ক্ষেত্রে হতে পারে। আমাদের এক ব্যাচে ১৫ দিন বয়সের বাচ্চার মাঝে এই রোগ দেখা দিয়ছিলো। আবার অন্য এক ব্যাচে দেখা দিয়েছিলো ২৬ দিন বয়সের মুরগীর।

                রক্ত আমাশয় রোগের প্রধান লক্ষণ:

                এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলো হলো,

                • মুরগী রক্তের মতো রঙের পায়খানা দিবে। অনেক সময় গাড় খয়েরি রঙের পায়খানা দেয়।
                • পালক উসখো-খুসকো দেখায়;
                • খাদ্য ও পানি গ্রহণ কমিয়ে দেয়;
                • ওজন হ্রাস পায়;
                • মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমায়;
                • অনেক সময় যেখানে সেখানে ঠোকরা-ঠুকরি করে।

                রক্ত আমাশয় রোগের চিকিৎসা:

                এই রোগের চিকিৎসায় আমার নিচের ওষুধ দুটি খাইয়েছি।

                1. ডিকলাসল
                2. সিপ্রোসল

                আল্লাহর রহমতে এতেই এই রোগ দূর হয়েছে।

                কালারবার্ড মুরগীর এন্টারাইটিস রোগ; সমস্যা ও সমাধান:

                এন্টারাইটিস রোগটিও সচারচর কালারবার্ড মুরগীর মাঝে দেখা যায়। আমাদের খামারে মুরগীর মাঝে অনেকগুলো রোগের সাথে এটাও ধরা পড়ে।

                এন্টারাইটিস রোগের লক্ষণ:

                1. খাবার গ্রহণ ব্যাপক হারে হৃাস পায়;
                2. মুরগী ফুলে বসে থাকে;
                3. ওজন হ্রাস পায়;
                4. পালক এলোমেলো তথা উসকো-খুসকো হয়ে যায়;
                5. এ রোগে আক্রান্ত হলে মুরগী হঠাৎ  মারা যেতে পারে।

                এন্টারাইটিস রোগের চিকিৎসা:

                রোগে আক্রান্ত মুরগী নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি আমাদের ‘এনট্রিট প্লাস’ নামক এক ওষুধের কথা লিখে দেন। এটি মূলত পাউডার জাতীয়। খুবই মিহি। মুরগীর ফিডের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হয়। যাই হোক ডাক্তারের দেয়া নির্দেশনা মতে ওষুধ খাওয়াই। আলহামদুলিল্লাহ এতে রোগ মুক্ত হয়। এছাড়াও নিচের ওষুধগুলো ডাক্তার পরামর্শ দেন।

                • অ্যামোক্সিসিলিন
                • কট্রা-ভেট পাউডার
                • ইলেকট্রোমিন পাউডার

                বিশেষ সতর্কতা:

                1. মুরগীর ওষুধ মিশ্রিত পানির পাত্র হোবারের নিচে রাখা যাবে না। এতে করে ওষুধের কার্যকরিতা হ্রাস পেতে পারে।
                2. খামারে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।
                3. খামারে প্রবেশ করার পূর্বে অবশ্যই জীবাণুনাশক স্প্রে করে প্রবেশ করতে হবে।
                4. খামারের চারিদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
                5. মাঝে মাঝে খামারে চারিদিকে ভালো জীবাণুনশাক ছিটিয়ে (স্প্রে) দিতে হবে।
                6. সময় মত লিটার পাল্টাতে হবে।
                7. লিটার পাল্টানোর সয় একদম নতুন লিটার দেওয়ার পরিবর্তে পুরনো লিটার মিশিয়ে দেওয়া।
                8. প্রতিদিন লিটার পা দিয়ে ওলট-পালট করে দিতে হবে।
                9. খামারে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
                10. বর্ষারকালে বৃষ্টির সময় যথাসময়ে পর্দা ফেলতে হবে। আবার বৃষ্টি শেষে ওঠিয়ে দিতে হবে।

                বিশেষ দ্রষ্টব্য:

                খামারে মুরগী রোগাক্রান্ত হলে অবশ্যই পশু চিকিৎসকের শরণাপ্ন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ খাওয়াতে হবে। নিজ থেকে কিংবা ওয়েবসাইট থেকে দেখে কখনোই ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

                সবশেষ সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

                কালারবার্ড মুরগী সম্পর্কে কারো কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন।

              6. কালারবার্ড মুরগি পালন পদ্ধতি || কৌশল ও খামার ব্যবস্থাপনা।

                কালারবার্ড মুরগি পালন পদ্ধতি || কৌশল ও খামার ব্যবস্থাপনা।

                কালারবার্ড মুরগি অনেকের কাছেই অপরিচিত একটা নাম। কিন্তু এই মুরগি পালন যেমন সহজ, তেমনই লাভজনক। আর এর স্বাদ অনেকেটা দেশী মুরগির মতো। তাই দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অনেক খামারি ভাইয়েরা কালারবার্ড মুরগি পালনের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু ইচ্ছে সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবে তারা সাহস করতে পারছেন না।

                আমাদের আজকের লেখাটি তাদের জন্য, যারা চান কালারবার্ড মুরগি পালন করতে, কিন্তু জানেন না কীভাবে শুরু করবেন। আশা করি বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটি পড়ে আপনি কালারবার্ড মুরগির পালন পদ্ধতি, কৌশল ও খামার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে খুঁটিনাটি সব তথ্য জানতে পারবেন।

                বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধটি ২ টি পর্বে বিভক্ত। আমরা আজকের পর্বের মাধ্যমে উপর্যুক্ত ৭টি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

                আশা করি (বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে লিখিত) এই প্রবন্ধ থেকে সকল খামারি ভাইয়েরা বেশ উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।

                প্রিয় পাঠক, এই লেখাটির পড়ার আগে আপনাকে কিছু শব্দের সাথে পরিচিত হতে হবে। তাহলে পুরো লেখাটি বোঝতে সহজ হবে। যেমন-

                • হোবার : বাচ্চাদের তাপ দেয়ার জন্য গোল ঢাকনার মতো যে জিনিসটায় বাতি লাগানো থাকে, সেটিকেই হোবার বলে। এটি সাধারণত টিনের তৈরি এবং এটি উপর থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
                • লিটার: মুরগির থাকার জন্য খামারে ধানের যে তুষ বা কাঠের গুঁড়া দেয়া হয় তাকে লিটার বলে।
                • চিকগার্ড/বর্ডার: সোজা বাংলা বেড়া। এটি সাধারণত প্লেনশিট (টিন) দিয়ে তৈরি। তবে কাগজের কার্টুন, মোটা কাপড় বা চট দিয়েও তৈরি করা যায়। এটি দিয়ে মুরগির বাচ্চাদের ঘেরাও করে রাখা হয়। একটি আদর্শ চিকগার্ডের উচ্চতা হচ্ছে ১৮ ইঞ্চি

                কালারবার্ড মুরগি পরিচিতি:

                ইংরেজি ‘কালার’ শব্দের অর্থ ‘রং’ এবং ‘বার্ড’ শব্দের অর্থ ‘পাখি’। শাব্দিক অর্থে ‘কালারবার্ড’ মানে ‘রঙিন পাখি’। মূলত কালারবার্ড হলো বিভিন্ন রঙের বা বর্ণের মুরগি । দেখতে দেশি মুরগির মতোই অনেকটা। তবে আদতে দেশি মুরগি না। চেক রিপাবলিকান জাতের মুরগির সংকরায়নের মাধ্যমে এই মুরগির জাত উৎপন্ন করা হয়েছে

                প্রথম দেখায় অনেকেই এদের সোনালী মুরগি মনে করে ভুল করতে পারেন। কেননা সোনালী মুরগি আর কালারবার্ড দেখতে প্রায় একই রকম। তবে পার্থক্য তো অবশ্যই আছে। যেমন অতি অল্প দিনেই কালারবার্ডের ওজন এক কেজি হয়ে যায়, যা সোনালী মুরগির ক্ষেত্রে হয় না। এ নিয়ে পরে আলোচনা করা যাবে। সুতরাং বলা যায়, কালারবার্ড হলো এক ধরনের মুরগি, যা দেখতে অবিকল দেশি মুরগির মতোই (বিভিন্ন বর্ণের)। এদের বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়।

                কালারবার্ড মুরগির বৈশিষ্ট্য:

                ‘কালারবার্ড মুরগির বৈশিষ্ট্য’ লিখে অনলাইনে সার্চ দিলে ভূরিভূরি তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সব তথ্যই একেবারে সত্য নয়। কালারবার্ড পালন করে আমি যে-ই বৈশিষ্ট্যগুলো খোঁজে পেয়েঠি তা-ই নিচে উল্লেখ করা হলো।

                • প্রথমত, এই জাতের মুরগির বৈশিষ্ট্য আমাদের দেশী মুরগির মতই। ফলে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় পালনে অধিক উপযোগী।
                • দ্বিতীয়ত, এই মুরগির মৃত্যুরহার অনেক কম। বাচ্চা অবস্থায় ১-২%। তবে কোম্পানি ভেদে এই মান কম-বেশি হতে পারে।
                • তৃতীয়ত, খাবার খায় কম, ওজন আসে বেশি। যেমন, ৪৫ দিনে ২ কেজির থেকে কম খাবার খেয়ে গড়ে ১ কেজি বা তারচেয়ে বেশি ওজন আসে।

                তাছাড়াও এই মুরগির –

                • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
                • তুলনামূলক ওষুধ কম লাগে।
                • অন্যান্য মুরগির তুলনায় অধিক তাপ সহনশীল। ফলে হিটস্ট্রোক হয় না। গরমের দিনে ফ্যানও কম লাগে।
                • অল্প জায়গায় অধিক পালন করা যায়। আমরা ১১৪০ বর্গফুট জায়গায় ১৩০০ মুরগি অনায়াসেই পালন করতে পারি।
                • কালার বার্ডের মাংসের স্বাদ অনেকটাই দেশী মুরগির মতো।

                কালারবার্ড পালনের উপযুক্ত সময়:

                বছরের প্রায় সব সময়ই এই মুরগি পালন করা যায়। তবে শীতকালে বৃদ্ধি একটু কম হয়। তীব্র গরমে যদিও তেমন সমস্যা হয় না। তবে সবচে’ উপযুক্ত সময় হলো ফেব্রুআরির শুরুর দিক থেকে-জুন এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

                খামারে কালারবার্ড বাচ্চা তোলার আগে করণীয়:

                এই ক্ষেত্রে অন্য মুরগি পালনের মতোই খামার প্রস্তুত করতে হয়। যেমন-

                1. মাকড়শার জালসহ আটকা পড়া সব ময়লা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়।
                2. খামার পাকা হলে জীবাণুনাশক দিয়ে ধুতে হয়।
                3. কাঁচা হলে, কাদা দিয়ে লেপে (প্রলেপ) দিতে হয়।
                4. তারপর জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হয়।
                5. তারপর চুন মিশ্রিত পানি ছিটাতে হয়।
                6. অতঃপর কয়েকদিন রেখে দিতে হয়।

                বাচ্চা তোলার আগের দিন করণীয়:

                বাচ্চা তোলার আগের দিন খামারের পর্দা নামিয়ে দিতে হবে। ব্রুডার প্রস্তুত করে কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে। এতে করে ব্রুডারের তাপ সঠিক মাত্রায় উপনীত হয়। তখন বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার সাথে সাথে আরামবোধ করে। তা না হলে হিট পেতে সময় লাগে। অবশ্য গরমের দিনে এতো আগে বাতি না জ্বালালেও সমস্যা হয় না। ২ কি ৩ ঘণ্টা আগে বাতি জ্বালিয়ে হলেও চলে।

                কালারবার্ড মুরগির ব্রুডার ব্যবস্থাপনা:

                এই জাতের মুরগি ব্রয়লারের মতো এতো দুর্বল নয়। তাই ব্রুডার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এতো দুঃচিন্তার কারণ নেই। আপনি একটি হোবারের সাহায্যে ৩০০ থেকে ৩৫০ বাচ্চাকে অনায়াসেই হিট দিতে পারবেন। তবে শীতকালে এক হোবারের নিচে ৪০০ হলেও সমস্যা নেই। আমরা ৪৩০ পর্যন্ত রেখেছি। সমস্যা হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। তবে হাঁ, শীতকালে বাচ্চাদের ২০ দিনেরও বেশি তাপ দিতে হয়েছে। যদিও এবার শীতের প্রকোপ ছিলো বেশি। কিন্তু সব সময় তো এমন শীত থাকবে না। শীত কম থাকলে বাচ্চার হিটও কম লাগে। গ্রীষ্মকালে তো বাচ্চার হিট লাগে না বললেই চলে। এটি কালারবার্ড মুরগির পালনের একটা মজার দিক।

                কালারবার্ড মুরগির লিটার ব্যবস্থপনা:

                লিটার হিসেবে ধানের তুষ দিবেন। কাঠের গুঁড়াও দেয়া যায়। তবে তুষই ভালো এবং সহজলভ্য। লিটার কত ইঞ্চি দিবেন? আমরা গরমের দিনে ২ ইঞ্চি দিয়েছি। বেশি হলে সমস্যা নেই। খুব বেশি গরম পড়লে অবশ্য ১.৫ ইঞ্চি দিলেও চলবে। সমস্যা হয় না। তবে তুষের উপরের পেপার বিছিয়ে দিতেই হবে। এটি না করলে সমস্যা। কত দিন রাখবেন পেপার? ২ থেকে ৩ দিন। মাঝে মাঝে মুরগির বিষ্ঠায় ভিজে যাবে পেপার। তখন আবার নতুন পেপার বিছিয়ে দিবেন। এতে বাচ্চাগুলো ভালো থাকবে। ফলে ভালো থাকবে আপনার মনটাও।

                কালারবার্ড মুরগীর বাচ্চা
                কালারবার্ড মুরগীর বাচ্চা

                বাচ্চা কিছুটা বড় হলে লিটার পা দিয়ে নেড়ে দিতে হবে। মুরগির বিষ্ঠা অনেক বেশি হয়ে গেলে চালনী দিয়ে চেলে দিতে হবে।

                খামারে বাচ্চা তোলার পর করণীয়:

                খামারে বাচ্চা তোলার পর ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত গ্লুকোজের পানি খাওয়াতে হয়। সাথে ভিটামিন সি দিলে ভালো। এতে বাচ্চা তৎক্ষণিক শক্তি পায়। ধকল দূর হয়। কেননা বাচ্চা পরিবহন করার ফলে তাদের উপর প্রচুর ধকল যায়। তা দূর করার জন্যই এই আপ্যায়ন!

                বাজারে অবশ্য গ্লুকোজ এবং ভিটামিন-সি এর প্রি-মিক্স পাওয়া যায়। এটি খাওয়ানো যেতে পারে। আবার অনেককে দেখেছি পানিতে চিনি মিশিয়ে খাওয়াতে। সাথে লেবুর রস। দোকানে গ্লুকোজ পাওনা না গেলে বিকল্প হিসেবে এটি খাওয়ানো যেতে পারে। কী আর করার! ধকল দূর করতে হবে তো!

                গ্লুকোজের পানির সাথে অল্প অল্প করে খাবারও দিতে হবে। প্রথম কয়েকদিন পেপারের উপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হয়। তারপর ট্রে মধ্যে দিতে হয়। খাবারে পাশাপাশি চলে সাদা পানি। অনেকে পানির সাথে লাইসোভিট মিশিয়ে দেন। এটি ভালো। এতে বাচ্চাগুলো ফুরফুরা থাকে। ঘণ্টা তিনেক পর পর বাচ্চাগুলো খেয়াল নিতে হয়, দেখতে হয় বাচ্চাগুলো সঠিক তাপ পাচ্ছে কি না।

                কীভাবে বুঝবেন বাচ্চাগুলো সঠিক তাপ পাচ্ছে?

                ব্রুডারে বাচ্চাদের তাপ দেয়ার দেয়ার সময় তিন ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-

                1. বাচ্চাগুলো হয়ত প্রয়োজনের চেয়ে কম তাপ পায়। কিংবা
                2. বাচ্চাগুলো হয়ত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তাপ পায়। অথবা
                3. বাচ্চাগুলো সঠিক তাপ পায়।

                প্রয়োজনের চেয়ে কম কিংবা বেশি; উভয় তাপই বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। তাই বর্ডারে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

                প্রশ্ন হলো কীভাবে বোঝবো বাচ্চাগুলো সঠিক তাপ পাচ্ছে কিংবা পাচ্ছে না?

                বিষয়টা একদমই সহজ। যখন দেখবেন-

                1. বাচ্চাগুলো জড়সড় হয়ে হোবারের নিচে বসে আছে, তখনই বোঝতে হবে, বাচ্চাগুলো পর্যাপ্ত তাপ পাচ্ছে না।
                2. বাচ্চাগুলো হোবার তথা বাতির নিচ থেকে সরে গিয়ে চিকগার্ড তথা বর্ডারের গা ঘেঁষে বসে থাকছে, তখন বুঝবেন হিট বেশি হচ্ছে।
                3. বাচ্চাগুলো খাবার খাচ্ছে, এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে, সুষমভাবে ছড়িয়ে আছে তখন বুঝবেন বাচ্চাগুলো সঠিক তাপই পাচ্ছে।

                তাপ কম হলে কী করবেন?

                1. হোবারটি নিচে নামিয়ে দিবেন। তাতে যদি কাজ না হয়,
                2. বেশি পাওয়ারের বাতি লাগাবেন। তাতেও কাজ না হলে,
                3. বাতির পরিমাণ বাড়াবেন।

                বাচ্চাগুলো বেশি তাপ পেলে কী করবেন?

                একদম সহজ। এই ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত বিপরীত কাজগুলো করবেন। যেমন

                1. হোবারটি আরেকটু উপরে উঠিয়ে দিবেন। তাতে কাজ না হলে,
                2. কম পাওয়ারের বাতি দিবেন। কিংবা,
                3. বাতির সংখ্যা কমিয়ে দিবেন।

                মূলত, হোবারটি উপরে ওঠিয়ে দিলেই হয়। তারপর পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন, বাচ্চাগুলো ব্রুডারে সুষমভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কি না। ছোটাছুটি করছে কি না।

                আজকের পর্ব এইটুকুই। পববর্তী পর্বে আমরা বাকি বিষয়গুলো যেমন কালারবার্ড মুরগির রোগ-বালাই ও ওষুধপাতির ব্যবহারবিধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আপনার দুআয় আমাদের ভুলবেন না। ফি-আমানিল্লাহ।

                -মো: কাউছার হামিদ

              7. ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট ও খাদ্য গ্রহনের তালিকা

                লাভজনকভাবে ব্রয়লার পালনের জন্য নিয়মিত মুরগির ওজন বৃদ্ধি ও খাদ্য গ্রহনের চার্ট লক্ষ রাখা জরুরী। নিচে ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট ও খাদ্য গ্রহনের তালিকা দেয়া হল।

                বয়স (দিন)ওজন (গ্রাম) খাদ্য গ্রহন (গ্রাম)দৈনিক বৃদ্ধি (গ্রাম)মোট খাদ্য গ্রহন (গ্রাম)
                ৪০-৪৪
                ৬২১৮১৩
                ৮০১৭১৮২৯
                ১০১২০২১৫০
                ১২৪২৪২৩৭৩
                ১৫০২৭২৬১০১
                ১৭৯৩১২৯১৩২
                ২১১৩৫৩২১৬৭
                ২৪৭৩৯৩৫২০৫
                ২৮৬৪৩৩৯২৪৮
                ১০৩২৮৪৭৪২২৯৬
                ১১৩৭৩৫২৪৬৩৪৭
                ১২৪২২৫৭৪৯৪০৪
                ১৩৪৭৫৬১৫২৪৬৫
                ১৪৫৩১৬৭৫৬৫৩২
                ১৫৫৯০৭২৫৯৬০৪
                ১৬৬৫২৭৭৬২৬৮১
                ১৭৭১৮৮৩৬৬৭৬৪
                ১৮৭৮৬৮৯৬৯৮৫২
                ১৯৮৫৮৯৪৭২৯৪৭
                ২০৯৩৩১০০৭৫১০৪৭
                ২১১০১০১০৬৭৭১১৫৩
                ২২১০৯০১১২৮০১২৬৫
                ২৩১১৭২১১৮৮২১৩৮৩
                ২৪১২৫৭১২৪৮৫১৫০৬
                ২৫১৩৪৪১৩০৮৭১৬৩৬
                ২৬১৪৩৩১৩৬৮৯১৭৭২
                ২৭১৫২৪১৪১৯১১৯১৩
                ২৮১৬১৬১৪৭৯২২০৬০
                ২৯১৭১০১৫৩৯৪২২১৩
                ৩০১৮০৫১৫৮৯৫২৩৭১
                ৩১১৯০১১৬৩৯৬২৫৩৪
                ৩২১৯৯১৬৯৯৭২৭০৩
                ৩৩২০৯৭১৭৪৯৮২৮৭৬
                ৩৪২১৯৬১৭৯৯৯৩০৫৫
                ৩৫২২৯৫১৮৩১০০৩২৩৮
                ৩৬২৩৯৫১৮৮১০০৩৪২৯
                ৩৭২৪৯৫১৯২১০০৩৬১৮
                ৩৮২৫৯৫১৯৬১০০৩৮১৪
                ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট ও খাদ্য গ্রহনের তালিকা

                বিঃদ্রঃ উপরোক্ত চার্ট টি বিভিন্ন বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানির ম্যানুয়াল এবং ফিল্ড থেকে সংগৃহীত ডাটার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বাচ্চার জাত, বাচ্চার কোয়ালিটি, ফিডের কোয়ালিটি, ফার্মের ম্যানেজমেন্ট, বায়োসিকিউরিটি, পরিবেশ এবং সর্বোপরি রোগ-বালাইয়ের কারনে চার্টে উল্লেখিত ডাটার মান বয়স অনুযায়ী কম-বেশি হতে পারে।

                উপরের টেবিল থেকে কয়েকটি বিষয় লক্ষ করা যেতে পারে। যেমন ৩৫ দিনের পর থেকে খাদ্য গ্রহন বাড়তে থাকলেও ওজন বৃদ্ধির হার কিন্তু বাড়েনা। ফলে ৩৫ দিন পর্যন্ত ব্রয়লার মুরগি পালন লাভজনক

                আরো পড়ুনঃ ব্রয়লার মুরগির খাবার তালিকা

                ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়

                ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় হলো সঠিক পরিচর্যা করে ব্রয়লার মুরগি পালন করা। এর জন্য প্রথমত ভালোমানের খাদ্য দেয়া জরুরী। এছাড়াও  ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির ঔষধ হিসেবে বিভিন্ন ভিটামিন গ্রোথ প্রোমোটার খাওয়ানো যেতে পারে।বাজারে বিভিন্ন ব্রয়লার মুরগির গ্রোথ প্রোমোটার পাওয়া যায়। যেগুলি মূলত বিভিন্ন মাল্টি ভিটামিন।ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় বা সঠিক পরিচর্যা নীচে আলোচনা করা হলো।

                সঠিক ভাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্রয়লার মুরগির দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় গুলো ধাপে ধাপে দেওয়া হলো।

                • প্রথমে খামার পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে।
                • খামারে বাচ্চা আনার পূর্বে খামার জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার পরিছন্ন করতে হবে।
                • খামারটি আলো-বাতাস এর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে।
                • মুরগির বাচ্চা ব্রুডারে আনার আগে প্রোবাইটিক স্প্রে করা যেতে পারে।
                • বাচ্চা আনার সাথে সাথে পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
                • সুস্থ সবল ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা খামারে আনতে হবে। একটি ভালো মানের বাচ্চার ওজন ৩৫ গ্রাম হতে হবে।
                • খামারে লিটার শুকনা রাখতে হবে।
                • লিটার ভেজা ভাব হলে তা পরিবর্তন করতে হবে।
                • ব্রয়লার মুরগির ব্রুডিং এ তাপমাত্রা সঠিক রাখতে হবে।
                • ব্রয়লার মুরগির ২ ব্যাচের মাঝে সর্বনিম্ন ১৫ দিন গ্যাপ রাখতে হবে।
                • খামারের মুরগি গুলোকে সময় মত ভ্যাকসিন করতে হবে।

                এই সকল বিষয় গুলো খেয়াল রাখলে ব্রয়লার মুরগির ভালো ওজন পাওয়া যাবে। মুরগির রোগ না হওয়ার ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারলে, ব্রয়লার মুরগির ভালো ওজন পাওয়া যাবে।