Category: কোয়েল

  • কোয়েল পাখির মাংস উৎপাদনকারী জাতঃ বব হোয়াইট কোয়েল

    কোয়েল পাখির মাংস উৎপাদনকারী জাতঃ বব হোয়াইট কোয়েল

    নর্দান ববহোয়াইট কোয়েল বা ববহোয়াইট কোয়েল হল একটি আমেরিকান জাতের কোয়েল যা মূলত মাংস উতপাদনের জন্য পালন করা হয়ে থাকে। একে ভার্জিনিয়া কোয়েল বা সহজভাবে ববহোয়াইট কোয়েলনামেও ডাকা হয়। এটি ক্যারিবিয়ান, মেক্সিকো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় একটি জাত।

    এই পাখিগুলিকে প্রাথমিকভাবে তিতির পরিবারে গন্য করা হয়েছিল, তবে এরা তিতির পরিবারে সম্পর্কিত নয়।এদেরকে সারা বছর কৃষিক্ষেত্র, তৃণভূমি, রাস্তার ধারে, কাঠের কিনারা এবং খোলা বনভূমি এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়।

    ববহোয়াইট কোয়েলের প্রায় ২২ টি উপজাত রয়েছে। এদের মধ্যে কোনকোনটি মাংস উতপাদনের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়।

    ববহোয়াইট কোয়েলের বৈশিষ্ট্য

    নর্দার্ন ববহোয়াইট কোয়েল মাঝারি আকারের একটি খুব সুন্দর পাখি।এই পাখির বিল ছোট, বাঁকা এবং সাধারণত বাদামী-কালো রঙের হয়। পুরুষ এবং মহিলা কোয়েল একে অপরের থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। পুরুষদের একটি সাদা গলা এবং ভ্রু ডোরা কালো সীমানাযুক্ত।প্রাপ্ত বয়স্ক হলে গলায় লালচে কেশর দেখা যায়। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই লেজ ধূসর এবং ফ্যাকাশে পা থাকে। স্ত্রীরা একই রকম তবে সামগ্রিকভাবে নিস্তেজ এবং খয়েরী পালক, বাফ গলা বিশিষ্ট।

    নর্দার্ন ববহোয়াইট বা ববহোয়াইট কোয়েলের দৈর্ঘ্য 24 থেকে 28 সেমি পর্যন্ত হতে পারে যার গড় ডানা 33 থেকে 38 সেমি। ববহোয়াইট কোয়েলের ওজন ১৩০-২৫০ গ্রাম, যেখানে উত্তরে তাদের গড় 170-173 গ্রাম এবং বড় পুরুষরা 255 গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। উইকিপিডিয়া থেকে ছবি এবং তথ্য।

    বব হোয়াইট কোয়েল || জাতের তথ্য

    জাতের নামবব হোয়াইট  (Northern Bobwhite )
    অন্য নামভার্জিনিয়া কোয়েল, ববহোয়াইট কোয়েল
    পালনের উদ্দ্যেশ্য: সৌখিন এবং ডিম- মাংস।
    জাতের আচরণসক্রিয় পাখি, সাধারণত এটি চড়ে বেড়ানো পাখির একটি জাত। সাধারণত গাছপালা এবং বীজ খায়, স্থানীয় পরিবেশে ভাল করে।
    আকার: সাধারণত ১৩০ থেকে ২৫০গ্রাম, কিন্তু বাণিজ্যিক লাইনগুলির ওজন ৩৫০-৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে
    ডিমের আকার: ছোট।
    ডিম উৎপাদনশীলতা: ভাল বছরে প্রায় ২৫০ ডিম।
    ডিম রঙ: সাদা ও বাদামী কালারের ছোট ছোপ ছোপ দাগযুক্ত।
    জলবায়ু সহনশীলতা: সব জলবায়ু (খুব শক্তসমর্থ)।
    মূল দেশ: আমেরিকা।
  • কোয়েল পাখির খাবার তৈরি

    কোয়েল পাখির খাবার তৈরি

    কোয়েল পাখিকে সাধারণত ৩ ধরনের খাবার প্রদান করা হয়। স্টার্টার, গ্রোয়ার ও লেয়ার। আকারে ছোট হলেও এদের প্রোটিন চাহিদা তুলনামূলক বেশি। কোয়েল পাখির খাবার তৈরি করতে হলে এর প্রোটিন ও এনার্জি মান বিবেচনায় রাখতে হবে।

    একটি গবেষনায় দেখা গেছে, ডিম পারা কোয়েলের প্রায় ২২% প্রোটিন সরবরাহ করা প্রয়োজন। যেখানে মুরগির জন্য ১৮% দিলেই হয়। কোয়েল সাইজে ছোট হলেও এর ডিমের আকার তুলানামূলক বড়। তাই ক্যালসিয়াম ও জিঙ্কের ও মিনারেল চাহিদাও বেশি।

    ছবিঃ উইকিপিডিয়া

    কোয়েল পাখির খাদ্য তালিকা

    নিচে কোয়েল পাখির খাবার তৈরির একটি আদর্শ তালিকা দেয়া হলো।

    খাদ্য উপাদানস্টার্টারগ্রোয়ারলেয়ার
    ভূট্টা৫২ কেজি৫৬ কেজি৫৬ কেজি
    সয়াবিন মিল২৫ কেজি২২ কেজি১৮ কেজি
    রাইচ পালিশ১০ কেজি১১.২ কেজি১০ কেজি
    প্রোটিন ৬০%৮ কেজি৬ কেজি৫ কেজি
    লাইমস্টোন / ঝিনুক চূর্ণ২ কেজি১.৮ কেজি১০ কেজি
    লবণ৩০০ গ্রাম২৮০ গ্রাম২৮০ গ্রাম
    ডিসিপি৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম
    *সালমোনেলা কিলার২০০ গ্রাম২৫০ গ্রাম২৫০ গ্রাম
    *প্রিমিক্স৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম৩০০ গ্রাম
    ডিএল- মিথিওনিন১২০ গ্রাম১১৫ গ্রাম১৩০ গ্রাম
    এল-লাইসিন৯০ গ্রাম৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম
    সোডা১০০ গ্রাম১২৫ গ্রাম১৫০ গ্রাম
    কোলিন ক্লোরাইড৭০ গ্রাম৭০ গ্রাম৬০ গ্রাম
    *টক্সিন বাইন্ডার১২৫ গ্রাম১৩৫ গ্রাম১৫০ গ্রাম
    *সয়াবিন তেল৫০০ গ্রাম২০০ গ্রাম
    মোটঃ১০০ কেজি১০০ কেজি১০০ কেজি

    উল্লেখ্য আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত জাপানীজ কোয়েল পাখির জন্য উক্ত খাদ্য তালিকাটি প্রযোজ্য। বব হোয়াইট কোয়েল বা অন্যান্য ব্রয়লার কোয়েল পাখির জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।

    বয়স অনুসারে কোয়েল পাখির খাবার

    খাবারের নামবয়স (দিন)
    স্টার্টার০-২২ দিন
    গ্রোয়ার২৩- ৫৬ দিন
    লেয়ার৫৭ – বিক্রি পর্যন্ত

    আরো পড়ুন..

    সোনালি মুরগির খাবার তৈরি

    জাপানীজ কোয়েল (Japanese Quail) সম্পর্কে জানুন

    লেয়ার মুরগির খাদ্য তালিকা

    ব্রয়লার মুরগির খাদ্য তালিকা

  • কোয়েল পাখির রোগ ও তার প্রতিকার :

    কোয়েল এমন এক প্রজাতির পাখি যার কোন রোগবালাই নেই বললেই চলে। সাধারণত কোনো ভ্যাকসিন অথবা কৃমিনাশক ঔষধ দেয়ার প্রয়োজনও পড়ে না। তবে বাচ্চা ফুটার প্রথম 2 সপ্তাহ বেশ ঝুকিপূর্ণ। এ সময় বাচ্চার একটু বেশি যত্ন নিতে হয়। আর তাই জন্মের পরই বাচ্চার তাপ দেওয়া খুবই জরুরী। অন্যথায় অযত্নের ফলে অনেক সময় বাচ্চা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।  সাধারণত কোয়েলের তেমন কোনো রোগ বালা হয় না বলেই অন্যান্য প্রাণির তুলনায় এর পালন ও লাভজনক হয়ে থাকে।

    কোয়েলের মাংস এবং ডিম গুণগতভাবে অন্যান্য পোল্ট্রির তুলনায় শ্রেষ্ঠ। কোয়েলের ডিমে কোলেস্টরলেন পরিমাণ কম এবং আমিষ বেশি। একটি মুরগির পরিবর্তে 8 টি কোয়েল পালন করা যায়।

         কোয়েলের যদিও তেমন কোন রোগ বালাই হয়না তবুও এর রোগ বালাই সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। যাতে রোগ বালাই হলে আমরা খুব সহজেই এর প্রতিকার করতে পারি।

    কোয়েলের রোগ সমূহ :

    1. কোয়েল ডিজিজ (
    2. কলিসেপ্টিসেমিয়া।
    3. ক্লোমনালী প্রদাহ।
    4. রাণীক্ষেত।
    5. অ্যাসপারজিলোসিস বা বরুডার নিউমোনিয়া।
    6. রক্ত আমাশয়/ কক্সিডিউসিস।
    7. কোয়েল পক্স।
    8. এভিয়ান কলেরা।
    9. কৃমির আক্রমণ।
    10. কার্ল টো প্যারালাইসিস।
    11. ডিম আটকে যাওয়া।
    12. মারেক্স রোগ।
    13. ঠোকরা-ঠুকরি বা ক্যানিবালিজম।
    14. লিম্ফয়েড লিউকোসিস।
    15. কোয়েল ব্রংকাইটিস।
    16. ব্লাকহেড/ হিস্টোমোনিয়াসিস।

    1. কোয়েল ডিজিজ :

    এটি কোয়ের পাখির সবথেকে মারাত্মক ও ভয়ানক রোগ। এর আরেক নাম আলসারেটিভ এন্ট্রাইটিস। মুরগি, টার্কি এবং অন্যান্য পাখিরা কোয়েল রোগের সংক্রমণ করতে পারে। “আলসারেটিভ এন্ট্রাইটিস” অন্যান্য পাখি থেকে বিচ্ছুরণের মাধ্যমে পাখির সিস্টেমে প্রবেশকারী ব্যাকটিরিয়ার করণে হয়। এটি অন্যান্য অসুস্থ পাখির সংস্পর্শে আসা মাছিগুলির দ্বারাও সংক্রমিত হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত কোয়েলের 100% ও মারা যেতে পারে।

    কোয়েল ডিজিজের লক্ষণসমূহ :

    • এটি এতই মারাত্মক রোগ যে, আক্রান্ত কোয়েল অনেক সময় কোন লক্ষণ ছাড়াই মারা যেতে পারে।
    • এই রোগের ফলে পাখির শরীরে ক্লান্তি ভাব দেখা দিতে পারে।
    • রক্তসহ পাতলা পায়খানা হয়।
    • ঝিমুনি ভাব দেখা দেয়।
    • অনেক ক্ষেত্রে পাখি দীর্ঘদিন রোগে ভুগে দুর্বল হয়ে মারা যায়।
    • অন্ত্র ও সিকান্ত্রে বোতাম আকৃতির মারাত্মক ক্ষত বা আলসার দেখা যায়।
    • খিচুনি হয়।
    • ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।

    কোয়েল ডিজিজের চিকিৎসা :

    যদি আপনার পাখি কোয়েল রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে যতদ্রুত সম্ভব নিকটস্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। বেশিরভাগ কোয়েল এই রোগ থেকে বাঁচতে পারে না। তবে দ্রুত ধরা পড়লে প্রথিমিক পর্যায়ে এর চিকিৎসা এবং রোধ করা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দেশিত মাত্রায় ক্লোরোমাইসেটিন, ব্যাসিট্র্যাসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন বা টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • কেন আপনি কোয়েল পালন করবেন ।। কোয়েল পালনের সুবিধাঃ

    কেন আপনি কোয়েল পালন করবেন ।। কোয়েল পালনের সুবিধাঃ

    অনেক সুবিধা থাকার কারনে, কোয়েল পালন দিন দিন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কোয়েলের খামার বাড়তি আয়ের একটি সহজ মাধ্যম হতে পারে। কম খরছে উচ্চ মুনাফার জন্য কোয়েলর খামার একটি আদর্শ ব্যবসা। অন্য যে কোন পাখির তুলনায় কোয়েল পাখি পালনে, জায়গা এবং খরচ অনেকাংশেই কম প্রয়োজন। এমনকি বাসার উঠোন, বাগান, কিংবা ছাদের উপরেও কোয়েলের খামার করা সম্ভব। প্রায় সকল ধরনের আবহাওয়ায় কোয়েল পালন করা যায়। বাজারে কোয়েলজাত পন্যের উচ্চচাহিদা রয়েছে, সুতরাং পণ্য মার্কেটিং নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। যাইহোক, এখানে আমরা কোয়েল পাখি পালনের শীর্ষকিছু সুবিধার কথা বর্ণনা করব।

    কোয়েলের-ডিম
    কোয়েলের ডিম

    সহজ ব্যবস্থাপনাঃ

    কোয়েল ছোট আকারের পাখি, তাই কোয়েল অল্প জায়গায় পালন করা যেতে পারে। কোয়েল পালন করা খুবই সহজ। সামান্য যত্ন ও ব্যবস্থাপনায় কোয়েল পালন করা যায়। কোয়েল পালনের জন্য তেমন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। তাই অল্প কিছু ধারনা নিয়ে, আপনিও কোয়েল পালন শুরু করতে পারেন।

    আত্ননির্ভরশীল ব্যবসাঃ

    কোয়েলের খামার একটি আত্ননির্ভরশীল ব্যবসা। এটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হচ্ছে ডিম এবং বাচ্চা। কোয়েল সাধারণত ৬ সপ্তাহের মধ্যেই ডিম দেয়া শুরু করে। সুতরাং আপনি ডিম বিক্রি করেই আপনার প্রাথমিক বিনিয়োগ দ্রুত ফেরত পেতে পারেন। অন্যান্য খামারের তুলনায় কোয়েল পাখির খামার থেকে দ্রুত বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া যায়।

    এছাড়াও খামার থেকে আপনি হ্যাচিং এর জন্য কিছু উর্বর ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে আপনি আপনার খামারের কোয়েল পাখির সংখ্যা দ্বিগুন বা তিনগুন করতে পারেন।

    কম খরচে রক্ষণাবেক্ষণঃ

    কোয়েল পাখির জন্য উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন হয় না। আকারে ছোট এজন্য এদের খুব বেশি স্থান প্রয়োজন হয় না। নিয়মিত ও সঠিক পরিচর্যা কোয়েল পাখি ব্যবসার সাফল্যের চাবি।

    স্বল্প খাদ্য খরচঃ

    অন্যান্য পোল্ট্রির তুলনায় কোয়েলের অনেক কম খাদ্যের প্রয়োজন। কোয়েলের খাদ্য তৈরীতে বেশী খরচ প্রয়োজন হয় না। সাধারণ ভুট্রা,গম ইত্যাদির মিশ্রাণে উন্নতমানের খাদ্য তৈরী করা যায়। বাণিজ্যিক পোল্ট্রির ফিড দিয়ে কোয়েল পাখি পালন করা যায়। এ ছাড়াও কোয়েল অন্যান্য শস্য, লতাপাতা এবং ছোট ছোট পোকামাকড় খেতে ভালোবাসে।

    কোয়েল
    কোয়েল পাখি

    শক্ত এবং রোগ প্রতিরোধী পাখিঃ

    কোয়েল খুব কঠোর পাখি। কোয়েল পাখি সহজে অসুস্থ হয় না এবং এদের খুব বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয় না। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো। তারপরেও আপনি সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ নিশ্চিত করবেন।

    উচ্চ বাজার চাহিদাঃ

    কোয়েলের মাংস ও ডিমের চাহিদা বাজারে ব্যাপক। তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় অনেকেই ক্রয় করে থাকেন। কোয়েলের ডিম ও মাংস খুব কম চর্বি এবং উচ্চ প্রোটিন সম্পন্ন। এসকল কারনে কোয়েলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা ধারনা করা হয় যে, কোয়েল জাত পন্য লিভার, উচ্চরক্তচাপ, ত্বক ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় সাহায্যে করতে পারে।

    কোয়েলজাত পণ্য স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদুঃ

    কোয়েলের ডিম এবং মাংস দুটোই উচ্চ মানের, পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। কোয়েলের মাংস এবং ডিম গুণগতভাবে অন্যান্য পোল্ট্রির তুলনায় শ্রেষ্ঠ। কোয়েলের ডিমে কোলেস্টরলেন পরিমাণ কম এবং আমিষ বেশি। একটি মুরগির পরিবর্তে 8 টি কোয়েল পালন করা যায়। কোয়েলের মাংস ও ডিম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং ভিটামিন সরবারহ করে, এজন্য খুব দ্রুত তা জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।

    কোয়েল-জাত-পণ্য
    কোয়েল জাত পণ্য

    সৌখিনতাও বটেঃ

    সৌখিন মানুষজন সাধারনত পাখি পুষতে পছন্দ করে। কোয়েল পাখি একাধারে সৌখিনতাও পূর্ণ করে, অন্যদিকে কিছু টাকা আয়ের পথও তৈরি করে। কোয়েল পালন একটি বিনোদোন মূলক কাজও বটে। আপনি আপনার কোয়েল পাখির সঙ্গে কিছু ভালো সময় কাটাতে পারেন।

    এগুলো কোয়েল পালনের শীর্ষ কিছু সুবিধা। আপনি যদি কোয়েলের খামার শুরু করার পরিকল্পনা করেন, তাহলে এই লেখাটি আপনাকে সাহায্য করবে বলে আশা রাখি।

  • জাপানীজ কোয়েল (Japanese Quail) সম্পর্কে জানুন

    জাপানীজ কোয়েল (Japanese Quail) সম্পর্কে জানুন

    জাপানীজ কোয়েল প্রধানত পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া প্রজাতির কোয়েল। এটিকে সাধারণ কোয়েলের উপ-জাত হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল, কিন্তু এটিকে 1983 সালে স্বতন্ত্র জাত হিসাবে স্বীকৃত দেওয়া হয়। দ্বাদশ শতাব্দীর পর থেকেই জাপানী কোয়েল মানুষ পালন করে আসছে। এটি এখনও প্রোল্ট্রি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান ভূমিকা পালন করে। সাধারণত যেখানে এরা বংশবৃদ্ধি করে সেখানে এদেরকে প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়।

    কোয়েল-পাখি
    জাপানী কোয়েল

    জাপানী কোয়েল আসলে সাধারণ কোয়েল পাখির পোষা মানা রুপ। দ্বাদশ শতাব্দীতে জাপানের সবথেকে বেশি পোষা পাখির রেকর্ড ছিলো এই জাতের কোয়েল। যদিও এর প্রমাণ আছে যে, এই জাতের কোয়েল একাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকেও পোষা হতো। অদ্ভুত শোনালেও সত্য পূর্বে এদেরকে গানের পাখি (songbirds ) হিসাবে পালন করা হতো।

    জাপানি কোয়েলের জাত ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই পাখিগুলিকে বাছাই করা শুরু হয়। এবং 1940 সাল নাগাদ কোয়েল প্রোল্ট্রি শিল্প হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানে কোয়েল পাখি পালন সম্পূর্ণ ধংস হয়ে যায় । পাশাপাশি ডিম উতপাদনশীল জাত সহ প্রায় সবগুলি জাতেরই ব্যাপক ক্ষতি হয়। যুদ্ধের পরে পুনরায় কয়েকটি জাত নিয়ে কোয়েল শিল্পকে পুনর্নির্মাণের জন্য কাজ করা হয়। বর্তমানে প্রাপ্ত প্রায় সবগুলি বাণিজ্যিক কোয়েল পাখির জাতই এই পরীক্ষাগার লাইন থেকে ডেভেলপ করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।

    আমাদের দেশে প্রধানত জাপানি কোয়েলই দেখা যায়। জাপানি কোয়েল প্রধানত রাশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহে (চীন, ভারত, জাপান এবং কোরিয়া সহ) পাওয়া যায়। এছাড়াও কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনাম সহ অন্যান্য বেশ কিছু এশিয়ান দেশে এদেরকে বানিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। এদেরকে কেনিয়া, মাদাগাস্কার, নামিবিয়া, মালাউই এবং তানজানিয়া মতো কিছু আফ্রিকান দেশেও দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে এই পাখি কয়েকটি প্রকৃত প্রজনন (mutations) আছে। জাতগুলি হল: হোয়াইট, ইটালিয়ান, গোল্ডেন রেঞ্জ, গোল্ডেন টক্সেডো, মঞ্চুরিয়ান, তিব্বতি, টেক্সাস এ্যান্ড এম, রেড রেঞ্জ, রোজেটা, রউক্স ডিলুট এবং স্কারলেট। যাইহোক, নীচে এই জাপানি কোয়েলর সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য দেয়া হলো।

    জাপানি কোয়েলের বৈশিষ্ট্যঃ

    জাপানীজ কোয়েল একটি অনন্য সুন্দর পাখি। এই পাখির দেহঅবায়ব এদের জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ে উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হয়। পুরুষ এবং মহিলা কোয়েল একই ধরনের পালক এবং রঙ প্রদর্শন করে। এদের মাথা ও ঠোটের রঙ পিঙ্গল বর্নের। এদের মাথার উপরের অংশ থেকে সারা পিঠ জুড়ে ছোট কালো কালো ছোপ বা বাদামি দাগ রয়েছে। বুকের দিকটা সাধারনত সাদা থাকে।এদের পিঠের দৈর্ঘ্য বরাবর চার রঙের বাদামী ফালা আছে।

    জাপানী কোয়েল

    প্রাপ্তবয়স্ক জাপানি কোয়েলকে, পালকের উপর নির্ভর করে মায়া-মদ্দা পৃথক করা হয়। সাধারনত মায়া ও মদ্দা উভয় পাখিরই বাদামি পালক থাকে। এজন্য গলা এবং বুকের উপরে বাদামি দাগের চিহ্ন দেখে পুরুষ কোয়েল আলাদা করা হয়ে থাকে। পুরুষ পাখির বুকের পালকগুলি গাঢ় লালচে-বাদামি রঙের প্রদর্শন করে যাদিও কখোনো গাঢ় দাগহীন । মায়া পাখির গালের পালকগুলি বেশি ক্রিম রঙের, কিন্তু পুরুষের গালের পালকগুলি লাল-বাদামি। কখনও কখনও, কিছু পুরুষ একটি সাদা রঙের গঠনও প্রদর্শন করে, কিন্তু এটি কোন মায়া জাপানি কোয়েলের মধ্যে দেখা যায়না।

    জাপানি কোয়েলের মদ্দা পাখি, মায়া পাখির থেকেও আকারে ছোট হতে পারে। পোষা কোয়েল পাখি সাধারণত 100 এবং 120 গ্রামের মধ্যে হয়ে থাকে (সাধারণ পাখিগুলি বাণিজ্যিক পাখির তুলনায় কম ওজন এবং তা 90 থেকে 100 গ্রামের মধ্যে)। যদিও, বিভিন্ন জাতের লাইনের(Strain) জন্য ওজন পরিবর্তিত হতে পারে এবং বাণিজ্যিক লাইন যা মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় সেগুলি 300 গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।

    এদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল হচ্ছে, নদীতীর, ঘাসক্ষেত্র এবং কৃষি জমির আশেপাশে। ফসলি জমির আশপাশে এরা তুলনামূলকভাবে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। সাধারণত এরা দিনের শুরু এবং শেষ বেলায় খাদ্য খায়। যদিও বাণিজ্যিক পাখির খামারগুলিতে সারা দিন খেতে পারে। গ্রীষ্মকাল এই পাখিদের জন্য আর্দশ প্রজনন ঋতু। শীতকালে ডিম উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। এদেরকে লিটার ও খাচা উভয় সিস্টেমে পালন করা যায়।

    জাপানীজ কোয়েল পালনের উদ্দেশ্যঃ

    জাপানীজ কোয়েল সাধারণত  ‘দ্বৈত উদ্দেশ্য’ (dual-purpose breed) পালন করা হয়ে থাকে। এটা ডিম এবং মাংস উভয় উত্পাদনের জন্যই ভালো। জাপানী কোয়েল পালন করা খুব সহজ। জাপানী কোয়েল 6 থেকে 7 সপ্তাহের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে এবং একাধারে  ডিম দিতে থাকে। এরা বছরে প্রায় 300 ডিম দিতে পারে। এরপর ডিম উত্পাদন ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। কোয়েল পাখির মাংস খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। এদের মাংসে খুব কম ফ্যাট থাকে । এজন্য কোয়েলের মাংস উচ্চরক্তচাপ রোগীদের জন্য খুবই ভালো। অন্যান্য হাঁস-মুরগির তুলনায় কোয়েলের মাংস ও ডিম ভোজনের জন্য খুব ভাল বলে মনে করা হয়।

    কোয়েল পাখি

    নিম্নোক্ত চার্টে জাপানী কোয়েলের পূর্ণ প্রজাতির প্রোফাইল পর্যালোচনা করা হলো।

    জাপানি কোয়েল || জাতের তথ্য

    জাতের নাম: জাপানীজ কোয়েল (Japanese Quail )
    অন্য নাম: Tuxedo
    পালনের উদ্দ্যেশ্য: মাংস এবং ডিম উভয় বা দ্বৈত-উদ্দেশ্য(Dual-Purpose)।
    জাতের আচরণ: অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সক্রিয় পাখি, সাধারণত এটি চড়ে বেড়ানো পাখির একটি জাত।
    আকার: সাধারণত 100 থেকে120 গ্রাম, কিন্তু বাণিজ্যিক লাইনগুলির ওজন 300 গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে
    ডিমের আকার: ছোট।
    ডিম উৎপাদনশীলতা: খুব ভাল (প্রায় ৩০০ ডিম/বছর)
    ডিম রঙ : নীল ও বাদামী কালারের ছোট ছোপ ছোপ দাগযুক্ত।
    বৈচিত্র্য: সাদাও হতে পারে।
    জলবায়ু সহনশীলতা: সব জলবায়ু (খুব শক্তসমর্থ)।
    মূল দেশ: পুর্ব এশিয়ার দেশগুলি।
    জাপানি কোয়েলের প্রোফাইল
  • কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসা

    কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসা

    কোয়েল পালনের অন্যতম সুবিধা হল কোয়েল মুরগী বা অন্যান্য পোল্ট্রির তুলনায় রোগব্যাধিতে কম আক্রান্ত হয়৷ তাই বলে কোয়েল পাখির রোগ যে একেবারেই হয় না তা কিন্তু নয়৷ কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসা সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, মাইকোপ্লাজমা, অপুষ্টি ও ব্যবস্থাপনাজনিত ত্রুটির কারণে হতে পারে৷

    কোয়েলের রোগব্যাধি কম বলে এগুলোকে টিকা দিতে হয়না বা কৃমির ঔষধও খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে না ধারনাটি সঠিক নয়।

    মুরগীর প্রায় সবগুলো সাধারণ রোগই কোয়েলকে আক্রান্ত করতে পারে৷ কোয়েল পাখি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, মাইকোপ্লাজমা, পরজীবী, অপুষ্টি, ব্যবস্থাপনা ত্রুটি ও প্রজনন সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷ এখানে কোয়েলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রোগ, কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হল৷

    কোয়েলে পাখির সাধারণ রোগ সমূহঃ

    1. ক্ষত সৃষ্টিকারী অস্ত্রপ্রদাহ
    2. ক্লোমনালী প্রদাহ
    3. অ্যাসপারজিলোসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া
    4. কলিসেপ্টিসেমিয়া
    5. রক্ত আমাশয়
    6. স্পর্শজনিত চর্মপ্রদাহ
    7. মারেক্স রোগ
    8. লিম্ফয়েড লিউকোসিস
    9. কৃমির আক্রমণ
    10. কার্ল টো প্যারালাইসিস
    11. ঠোকরা-ঠুকরি বা ক্যানিবালিজম
    12. ডিম আটকে যাওয়া৷  

    কোয়েলের ক্ষত সৃষ্টিকারী অন্ত্রপ্রদাহঃ (Ulcerative enteritis)

    ক্ষতসৃষ্টিকারী অন্ত্রপ্রদাহ রোগটি ‘কোয়েল ডিজিস‘ (Quail disease) নামেও পরিচিত৷ কোয়েলের রোগব্যাধির মধ্যে এটিই সবচেয়ে মারাত্মক৷ আক্রান্ত কোয়েলের শতভাগই মারা যেতে পারে৷ সাধারণত লিটারে পালিত কোয়েলে এ রোগ বেশী দেখা যায়৷

    রোগের কারণঃ এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্ত্রের রোগ৷

    রোগের বিস্তারঃ সাধারণত দূষিত খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চা কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হয়৷ আক্রান্ত ঝাঁক থেকে সুস্থ ঝাঁকে কীটপতঙ্গের মাধ্যমে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম৷

    কোয়েল ডিজিস রোগের লক্ষণঃ তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী দু’ধরণের রোগই হতে পারে৷ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কোয়েল অনেক সময় কোন লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই মারা যেতে পারে৷

    • মৃদুভাবে আক্রান্ত কোয়েলে অবসাদ দেখা যায়৷
    • চোখ আংশিকভাবে বন্ধ করে রাখে এবং পাখা ঝুলে পড়ে৷
    • রক্তসহ পাতলা পায়খানা হয় ৷
    • রক্তশুন্যতা দেখা যায়। এবং মুখে শ্বেস্মা নিয়ে পাখির মৃত্যু ঘটে।
    • অন্ত্র ও সিকালে (Caeca) গোলাকৃতির ক্ষত বা আলসার দেখা যায়৷
    • অন্ত্রে রক্তক্ষরণ দেখা যায়।

    কোয়েল ডিজিস রোগের চিকিৎসাঃ

    চিকিৎসার জন্য ভেটেনারি সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দেশিত মাত্রায় ব্যাসিট্র্যাসিন (Bacitracin), স্ট্রেপটোমাইসিন (Streptomycin), ক্লোরোমাইসেটিন (Chloromycetin) বা এগুলোর পরিবর্তে টেট্রাসাইক্লিন (Tetracycline) অথবা ফুরাজোলিডন (furazolidone) ব্যবহার করা যায়৷ সাথে আমক্সিসিলিন (Amoxycillin) ও মাল্টিভিটামিন দেয়া যেতে পারে।

    প্রতিরোধঃ

    গবেষণায় দেখা গেছে, ৪.৫ লিটার খাবার পানিতে ২ গ্রাম মাত্রায় স্ট্রেপটোমাইসিন মিশিয়ে একাধারে২৫ দিন অথবা স্ট্রেপটোমাইসিন সালফেট মিশিয়ে একাধারে ১০ দিন পান করালে ও রোগ পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায়৷

    ক্লোমনালী প্রদাহ (Bronchitis) 

    কোয়েলের ক্লোমনালী প্রদাহ একটি তীব্র প্রকৃতির প্রদাহজনিত রোগ৷ রোগটি তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে৷ সব বয়সের কোয়েল এতে আক্রান্ত হলেও বাচ্চা কোয়েলের ক্ষেত্রে ৮০% পর্যন্ত মৃত্যু ঘটতে পারে৷

    কারণঃ এক ধরণের ভাইরাসের আক্রমণে কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হয়৷

    লক্ষণঃ কোয়েল পাখির রোগ সাধারনত বিভিন্ন লক্ষনের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে হবে।

    • আক্রান্ত কোয়েলে হাঁচি, কাশি ও অস্বাভাবিক শ্বাসের শব্দ লক্ষ্য করা যায়৷
    • কোন কোন সময় চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং কনজাংটিভাইটিসও (Conjunctivitis) দেখা যায়৷
    • স্নায়বিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে৷

    চিকিৎসাঃ ভাইরাসঘটিত রোগ বিধায় এর কোন চিকিত্সা নেই৷ রোগাক্রান্ত কোয়েল পাখি চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে বাকিগুলোর কাছ থেকে পৃথক করে সরিয়ে ফেলতে হবে৷ ব্যাকটেরিয়াজনিত মাধ্যমিক সংক্রমণ (Secondary infection) থেকে এদের রক্ষার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন- টেট্রাসোইক্লিন) ব্যবহার করা যেতে পারে৷

    প্রতিরোধঃ পাখির ঝাঁকে (Flock) গাদাগাদি অবস্থা পরিহার করে সেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল এবং খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা করতে হবে৷

    অ্যামপারজিলোসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া (Brooder pneumonia) 

    এতে প্রধাণত ব্রুডিং পর্বের বাচ্চা কোয়েল আক্রান্ত হয়৷ তাই এই রোগকে ব্রুডার নিউমোনিয়া বলা হয়৷

    কারণঃ বাচ্চা মুরগীতে ব্রুডার নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ”অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস (Aspergillus fumigtus) নামক ছত্রাকের স্পোর এই রোগের কারন৷

    রোগের বিস্তারঃ স্পোর দিয়ে দূষিত খাদ্য বা লিটার সামগ্রীর সংস্পর্শে অথবা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে স্পোর গ্রহণে বাচ্চা কোয়েল এই রোগে আক্রান্ত হয়৷

    লক্ষণঃ

    • তীব্র প্রকৃতির রোগে ক্ষুধামন্দা, পিপাসা বৃদ্ধি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়৷
    • বাচ্চা শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে৷
    • শ্বাসকষ্টের কারনে বাচ্চা মুখ হা করে ঘাড় ও মাথা উপরের দিকে টান করে শ্বাস গ্রহণ করে৷
    • শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় ঘড়ঘড় শব্দ হয়৷
    • আক্রান্ত বাচ্চার চোখের পাতা ফুলে যায়৷ বয়স্ক বাচ্চার কর্ণিয়া (Cornea) -তে আলসার বা ঘা দেখা দিতে পারে৷
    • অতি তীব্র প্রকৃতির রোগের ক্ষেত্রে অনেক সময় কোনো বৈশিষ্টপূর্ণ উপসর্গ ছাড়াই বাচ্চা মারা যেতে পারে৷

    চিকিৎসাঃ রোগাক্রান্ত পাখিকে ভেটরিনারি সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য বা পানির সাথে ছত্রাকনাশক ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোর যায়, কপার সালফেট ১ঃ২০০০ মাত্রায় খাবার পানিতে মিশিয়ে পান করালে বাচ্চা তাড়াতাড়ি সেরে উঠে৷

    প্রতিরোধঃ ঘরের আর্দ্রতা কমিয়ে ও প্রতি কেজি খাদ্যে দুই গ্রাম মাত্রায় ক্যালসিয়াম প্রোপিওনেট (Calcium Propionate) মিশিয়ে খেতে দেয়া যেতে পারে৷ তাছাড়া ঘরের লিটার সবসময় শুকনো রাখতে হবে এবং ব্রুডার এলাকার লিটার নির্দিষ্ট সময় পরপর উল্টেপাল্টে দিতে হবে৷ জমাট বাঁধা, ভিজা ও ছত্রাকযুক্ত লিটার ফেলে দিতে হবে৷

    কলিসেপ্টিসেমিয়া (Colisepticemia)

    কোয়েল পাখির অন্যতম রোগ কলিসেপ্টিসেমিয়া। মারাত্মক এই রোগে সব বয়সের পাখিই আক্রান্ত হতে পারে৷ এতে প্রধানত শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হয়৷ তবে অন্যান্য তন্ত্রও আত্রান্ত হতে পারে৷

    কারণঃ ‘ইসকোরিশিয়া কলাই’ (Escherichia coli) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে কোয়েল এই রোগে আক্রান্ত হয়৷

    লক্ষণঃ

    • সাধারণত রোগের লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই পাখির মৃত্যু ঘটে৷
    • হঠাত্ পাখির মৃত্যুহার বেড়ে যায়৷
    • শ্বাসতন্ত্রের উপসর্গ, যেমন-মুখ হা করে থাকে, নাকে-মুখে ফেনা ওঠে৷
    • চোখ দিয়ে পানি পড়ে৷

    চিকিৎসাঃ প্রতি ৫-১০ কেজি খাদ্যে ৫০০ মি.গ্রা. মাত্রার একটি টেট্রাসাইক্লিন (যেমন রেনামাইসিন) ট্যাবলেট মিশিয়ে আক্রান্ত পাখিবে ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে৷ এছাড়া পানির মাধ্যমেও উক্ত ঔষধ পান করানো যায়৷  

    কোয়েল পাখির রক্ত আমাশয় (Coccidiosis)

    রক্ত আমাশয় বা ককসিভিওসিস রোগ মুরগীতে যতটা মারাত্মক আকারে দেখা দেয় কোয়েলের ক্ষেত্রে ততটা নয়৷ সাধারণত বাচ্চা কোয়েল পাখি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে৷

    কারণঃ ‘আইমেরিয়া ব্যটেরি’ (Eimeria bateri), ‘আইমেরিয়া উজুরা”(Eimeria Uzura) ও ‘আইমেরিয়া সুনোডাই’ (Eimeria tsunodai) নামক ককসিডিয়ার জিবানু দ্বারা বাচ্চা কোয়েল আক্রান্ত হতে পারে৷

    লক্ষণঃ আক্রান্ত বাচ্চা ঝিমাতে থাকে, রক্ত পায়খানা করে ও দূর্বল হয়ে পড়ে৷ অবশেষে রক্তশূন্যতার কারণে মারা যায়৷

    চিকিৎসাঃ প্রতি কুইন্টাল খাদ্যে ১২৫ গ্রাম মাত্রায় অ্যাম্প্রোলিয়াম (Amproluum) মিশিয়ে পরপর তিন দিন আক্রান্ত বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে৷

    প্রতিরোধঃ ককসিডিওসিস রোগ প্রতিরোধ করতে হলে-

    (ক) খামারে স্বাস্থ্যসম্মত ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে৷

    (খ) জন্মের দিন থেকে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি কুইন্টাল খাদ্যে ৬২.৫ গ্রাম মাত্রায় অ্যাম্প্রোলিয়াম খাওয়াতে হবে৷

    কোয়েল পাখির মারেক্স রোগ (Marek’s disease)

    মারেক্স রোগ স্নায়ুতন্ত্রের টিউমার সৃষ্টিকারী মারাত্মক ধরণের সংক্রামক রোগ৷ এতে প্রধানত প্রান্তীয় স্নায়ু (যেমন- সায়াটিক ও ব্রাকিয়াল স্নায়ু) আক্রান্ত হয়৷ এমনকি একদিন বয়সের বাচ্চাও আক্রান্ত হতে পারে৷

    কারণঃ এক ধরণের হায়পেস ভাইরাস কোয়েলে এই রোগ সৃষ্টি করে৷

    রোগের বিস্তারঃ আক্রান্ত পাখির লালা নাকের শ্লেন্মা, মল ও পাখার ফলিকলের (Follicle) মাধ্যমে এই রোগ সুস্থ পাখিকে ছড়ায়৷

    লক্ষণঃ

    • সায়াটিক ও ব্রাকিয়াল স্নায়ু মারাত্মক ভাবে ফুলে ওঠে এবং পক্ষাঘাতের সৃষ্টি করে৷
    • দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে পাখির ওজন হ্রাস পায় এবং ফ্যাকাসে হয়ে যায়৷
    • আক্রান্ত চোখ সাদা হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে একটি বা উভয় চোখই নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷
    • ক্ষুধামান্দ্য ও ডায়রিয়া দেখা দেয়৷ ফলে অনাহার ও পানিশূন্যতায় ভুগে পাখি মারা যায়৷

    চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ

    এই রোগের কোন চিকিত্সা নেই৷ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও পাখিকে টিকা প্রদান করা উচিত৷ তবে কয়েল যেহেতু কদাচিত্ এই রোগে আক্রান্ত হয় তাই টিকার ব্যবহার প্রচলিত নয়৷

    লিম্ফয়েড লিউকোসিস (Lymphoid Leucosis)

    লিম্ফয়েড লিউকোসিস এক ধরনের ক্যানসার৷ এটি সাধারণত বয়স্ক কোয়েলকে আক্রান্ত করে৷ আক্রান্ত কোয়েলের ডিম থেকে ফোটানো বাচ্চা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷

    কারণঃ এটি অ্যাভিয়ান লিউকোসিস নামক ভাইরাসের কারণে হয়৷

    লক্ষণঃ

    • আক্রান্ত পাখি দুর্বল ও কৃশ হয়ে পড়ে৷
    • টিউমার হওয়ার কারণে উদরস্ফীত হয়৷
    • রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ও পাখি মারা যায়৷

    চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ এই রোগের কোন ফলপ্রসূ চিকিত্সা ব্যবস্থা নেই৷ কার্যকরী টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি৷ এটি দূর করার জন্য আক্রান্ত পুরো ঝাঁককে মেরে ফেলা উচিত৷

    কৃমির আক্রমণঃ 

    খাঁচায় পালিত কোয়েলে কৃমির আক্রমণ ঘটে না৷ তবে, লিটারে পালিত কোয়েল কখনো কখনো গোল কৃমি ও ফিতা কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে৷ কোয়েল সাধারণত শীতকালেই বেশী আক্রান্ত হয়৷ তবে, কৃমি কোয়েলের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনা৷

    কারণঃ পাঁচ প্রজাতির গোল কৃমি বাচ্চা কোয়েল এবং এক প্রজাতির ফিতাকৃমি বয়ষ্ক কোয়েলকে আক্রমণ করতে পারে৷

    লক্ষণঃ

    • আক্রান্ত পাখি পাতলা পায়খানা করে৷
    • পালক উস্কো খুস্কো হয়ে যায়৷
    • ধীরে ধীরে শরীর শুকিয়ে যায়৷
    • উত্পাদন হ্রাস পায়৷

    চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ আক্রান্ত পাখিকে কৃমিনাশক ঔষধ, যেমন -থায়াবেনডাজল খাওয়ানো যেতে পারে৷ কোয়েল পাখির রোগ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে৷ তাছাড়া লিটারে পালিত ব্রিডিং ফ্লককে প্রতিরোধক মাত্রায় কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো উচিত৷  

    কার্লড টো প্যারালাইসিস (Curled toe paralysis)

    সাধারণত ভিটামিনের অভাবজনিত কারণে কখনো কখনো বাচ্চা কোয়েলে কার্লড টো প্যারালাইসিস রোগ হতে দেখা যায়৷ এতে বাচ্চার পায়ের নখ বা আঙুল অবশঙ্গতার জন্য বাঁকা হয়ে যায়৷

    কারণঃ ভিটামিন বি২ বা রাইবোফ্লাভিনের অভাবে এ রোগ হয়৷

    লক্ষণঃ

    • পাখি প্রথম দিকে খুঁড়িয়ে হাঁটে এবং এ সময় এর নখ বাঁকা দেখা যায়৷
    • গিরার উপর ভর দিয়ে হাঁটে এবং দাঁড়িয়ে থাকে৷
    • ৮ – ১০ দিনের মধ্যেই ক্ষুধামান্দ্য, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি দেখা যায়৷

    চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ ভিটামিন বি২-যুক্ত প্রাকৃতিক খাদ্য, যেমন প্রাণীর যকৃত্, সবুজ কচি ঘাস, প্রাণীর কিডনি বা মাছের গুঁড়া ইত্যাদি অথবা ভিটামিন -মিনায়েল প্রিমিক্স নির্ধারিত পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে৷

    ঠোকরা-ঠুকরি বা ক্যানিবালিজম (Cannibalism)

    ক্যানিবালিজম আসলে কোয়েল পাখির রোগ নয় বরং এক ধরনের বদভ্যাস৷ এটি এমনই এক ধরনের বদভ্যাস যাতে একটি কোয়েল অন্য একটি কোয়েলের পালকবিহীন বা কম পালকযুক্ত অংশে ঠোকরাতে থাকে৷ এবং রক্ত বের করে ফেলে৷ সাধারণত ব্যাটারি বা খাঁচা পদ্ধতিতেই ঠোকরা-ঠুকরি বেশি দেখা যায়৷

    কারণঃ ক্যানিবালিজমের বহু কারণ রয়েছে৷ যেমন-

    • ধারালো ও চোখা ঠোঁথ৷
    • খামারে গাদাগাদি অবস্থা৷
    • আরজিনিন নামক অ্যামাইনো এসিডের অভাব৷
    • অত্যাধিক আলো৷
    • অত্যাধিক তাপ৷
    • স্ট্রেস বা পীড়ন৷
    • আহত পাখিকে সুস্থ পাখি থেকে পৃথক না করা৷
    • বিভিন্ন বয়সের কোয়েল একই খাঁচায় বা ঘরে রাখা৷
    • খাদ্যে আমিষ ও লবণের অভাব৷
    • অপর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা৷
    • অন্যন্য রোগে আক্রান্ত হওয়া, অলসতা ইত্যাদি৷

    চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ যেসব কারণে ঠোকরা-ঠুকরি দেখা দেয় তা দূর করতে হবে৷ তবে আগে থেকেই এদিকটায় নজর দিলে ঠোকরা-ঠুকরি দেখা দেবে না৷ তাছাড়া এটি প্রতিরোধের জন্য সঠিকভাবে ঠোঁট ফাটা বা ডিবিকিং করা একটি উত্তম ব্যবস্থা৷  

    কোয়েল পাখির ডিম আটকে যাওয়াঃ

    ডিম পাড়ার সময় অনেক কোয়েলের ডিম ডিম্বনালীতে আটকে যায়, বাইরে বের হতে পারে না৷ যেহেতু কোয়েল প্রায় প্রতিদিনই ডিম পাড়ে তাই অধিক উত্পাদনশীল এসব কোয়েলে কখনো কখনো এমনটি ঘটতে দেখা যায়৷

    ডিম আটকে যাওয়ার কারণঃ

    সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে ডিম আটকে যেতে পারে৷ যেমন-

    • ডিমের আকার অনেক বড় হলে৷
    • ডিমের খোসা খসখসে হলে৷
    • ডিম পাড়ার সময় এক ধরনের পিচ্ছিল পদার্থের নিঃসরণ কম হলে বা না হলে৷
    • ডিম্বাশয়ে প্রদাহ বা অন্য কোন রোগ হলে৷
    • ডিমপাড়া কোয়েলের অত্যাধিক চর্বি হলে৷
    • ডিম পাড়ার সময় কোয়েলকে বিরক্ত করলে৷

    ডিম আটকে যাওয়ার লক্ষণঃ

    নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহ দেখা দিতে পারে৷ যেমন-

    • কোয়েল সবসময় ছটফট করে৷
    • ডিম পাড়ার জন্য বারবার যায় কিন্তু ডিম না পেড়ে চলে আসে৷
    • ঘনঘন কোঁথ দেয়৷
    • পায়ুপথ দিয়ে রক্ত বের হতে পারে৷
    • পেটে ডিম ভেঙ্গে গেলে কোয়েল মারা যায়৷

    চিকিৎসাঃ গরম পানিতে এক টুকরা কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে কোয়েলের পায়ুপথের চারদিকটায় হালকাভাবে বুলিয়ে দিতে হবে৷ এরপর আঙুলের সাহায্যে ভেসিলিন জাতীয় পিচ্ছিল পদার্থ পায়ুপথের ভিতর দিয়ে ডিম্বনালীর চারপাশে লাগালে তা পিচ্ছিল হয়, ফলে ডিম বের হয়ে আসে৷

    বিশেষ পরামর্শঃ

    কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসায় অনেক খামারি সাধারন কিছু ব্যাবস্থা নিয়ে থাকেন। যেমন, জন্মের প্রথম সপ্তাহে প্রতি লিটার খাবার পানিতে এক গ্রাম মাত্রায় টেট্রাসাইক্লিন মিশিয়ে পান করালে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগ হতে বাচ্চা কোয়েলকে রক্ষা করা সম্ভব হয়৷তবে এন্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ প্রয়োগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

    কোয়েল নিয়ে আরো জানতে আমাদের পোস্টগুলি পড়তে পারেন।

    জাপানীজ কোয়েল (Japanese Quail) সম্পর্কে জানুন

    কোয়েল পাখির খাবার তৈরি

  • বানিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখি পালন ।। যে বিষয়গুলি জানা আবশ্যক ।

    বানিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখি পালন ।। যে বিষয়গুলি জানা আবশ্যক ।

    বানিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখি পালন করতে হলে, প্রথমে জানা দরকার লাভজনক ‘কোয়েল পাখির খামার’ বলতে আসলে কি বুঝায়। প্রকৃতপক্ষে কোয়েল খামার মানে হল, লাভজনক উপায়ে ডিম ও মাংস উৎপাদনের উদ্দেশ্যে কোয়েল পাখি পালন করা। আমাদের অভিজ্ঞতা হতে, কোয়েল পাখি পালন করা সাধারণভাবে সহজ, সৌখিনতা, লাভজনক একটি ব্যাবসা।

    জাপানীরাই সর্বপ্রথম বন্য কোয়েল পাখিকে ঘরোয়া পাখি হিসাবে পালন করার উপায় বের করেছিল। জাপানে এখনো ব্যাপকভাবে কোয়েল পাখির বাণিজ্যিক খামার রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মানুষ মাংস ও ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখির ব্যবসা করছে।

    সাধারণত কোয়েল পাখির খামার পরিচালনা করা বেশ সহজ। কারণ, প্রোল্ট্রির যত জাত আছে, তার মধ্যে কোয়েল পাখি ক্ষুদ্রতম। প্রায় সব ধরণের আবহাওয়া কোয়েল পাখি পালনের উপযুক্ত।

    কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস বেশ সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। কোয়েল পাখির ডিম সাইজে ছোট হলেও,তুলনামূলকভাবে বেশি প্রোটিন, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন এ, B1 এবং B2 ধারণ করে।

    কোয়েল পাখি

    কোয়েল পাখির সাধারণ বৈশিষ্টঃ

    • কোয়েল খুব ছোট আকারের পাখি।
    • একটি প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েল 150 থেকে 200 গ্রাম ও একটি ডিমের ওজন প্রায় 7 থেকে 15 গ্রাম হয়ে থাকে।
    • কোয়েল পাখি 6 থেকে 7 সপ্তাহের মধ্যে ডিম দেয় এবং একাধারে  ডিম দিতে থাকে ।
    • এরা প্রথম বছরে প্রায় 300 ডিম দেয় ।এরপর তারা দ্বিতীয় বছরে প্রায় 150 থেকে 175 ডিম উৎপাদন করে। এবং তা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।
    • কোয়েলের ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপযুক্ত। এতে মুরগির ডিমের তুলনায় 2.47% কম চর্বি রয়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে ‘কোয়েলের ডিম রক্তচাপ, ডায়াবেটিক, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।’
    • কোয়েল পাখির মাংস খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। এদের মাংসে খুব কম ফ্যাট থাকে । সুতরাং কোয়েলের মাংস উচ্চরক্তচাপ রোগীদের জন্য খুবই উপযুক্ত।
    • এদের ডিমে একাধিক রঙ, সঙ্গে দেখতে খুব সুন্দর।
    • কোয়েল পাখি ডিমে তা দেয় না। সুতরাং কোয়েলের ডিম ফুটানোর জন্য ইনকুবেটর বা ব্রুডার মুরগি ব্যবহার করতে হবে।

    কোয়েল পাখি পালনের সুবিধাঃ কেন কোয়েল পালন করবেন?

    খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য কোয়েল পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কোয়েল পালনের জন্য স্বল্প পুঁজি ও সামান্য শ্রম প্রয়োজন। মাংস বা ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে অন্যান্য প্রোল্ট্রির সাথেই কোয়েল পাখি পালন করা যেতে পারে

    কোয়েলের খামার করার প্রধান কয়েকটি সুবিধা নীচে উল্লেখ করা হল।

    • এরা ছোট আকারের পাখি, তাই কোয়েল সামান্য যায়গায় পালন করা যেতে পারে।
    • কোয়েল খাদ্য খরচ তুলনামূলকভাবে মুরগি বা অন্যান্য পোল্ট্রি খামারের চেয়ে কম।
    • কোয়েলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী।
    • কোয়েল খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অন্য কোন পোল্ট্রি পাখির চেয়ে  দ্রুত বড় হয়।
    • এরা মাত্র 6 থেকে 7 সপ্তাহ বয়সে ডিম দেয় শুরু করে।
    • কোয়েলের ডিম ফুটানোর জন্য মাত্র 16 থেকে 18 দিন সময় লাগে।
    • কোয়েলের মাংস এবং ডিম খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। সুতরাং এটি পুষ্টিকর খাদ্যের একটি অন্যতম উৎস।
    • কোয়েল পালনের জন্য অল্প মূলধন প্রয়োজন এবং শ্রম খরচ খুব কম।
    • বাণিজ্যিকভাবে সফল কোয়েল পালন করা যেতে পারে।
    • কোয়েল খুব শক্তিশালী পাখি এবং রোগ বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা কম। তাই এই ব্যবসার ঝুঁকিও কম।
    • কোয়েলের মাংস কম চর্বি ধারণ করে। সুতরাং, এটি উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য উপযুক্ত।
    • মাংস বা ডিম উত্পাদনে তাদের খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা (FCR) সন্তোষজনক। তারা তিন কেজি খাদ্য গ্রহণ করে এক কেজি মাংস বা ডিম উত্পাদন করতে পারে।
    • একটি মুরগির জন্য একই সমান জায়গায় 6 থেকে 7 টি কোয়েল পালন করা যায়।
    • কোয়েলের ডিম আকারে ছোট, তাই অন্যান্য পাখির ডিম থেকেও কমদাম । ফলস্বরূপ, সব ধরনের মানুষ কোয়েলর ডিম কিনতে পারে এবং আপনি সহজেই ডিম বিক্রি করতে পারেন।
    • প্রাথমিক খরচ কম, তাই আপনি খুব অল্প বিনিয়োগের সাথে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
    • 0.91 বর্গমিটার জায়গায় আপনি প্রায় 6 থেকে 8 টি কোয়েল পালতে পারেন।
    • এটি একটি লাভজনক ব্যবসা উদ্যোগ, তাই কোয়েলের বাণিজ্যিক খামার বেকার শিক্ষিত মানুষের আয় এবং কর্মসংস্থানের একটি ভালো উৎস হতে পারে। এমনকি, আপনি আপনার বর্তমান পেশায় থেকেও কোয়েল পাখির খামার করতে পারেন।

    কোয়েল পাখির জীবনাবৃত্তঃ

    কোয়েল সাধারণত 3 থেকে 4 বছর বেঁচে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক একটি কোয়েল 150 থেকে 200 গ্রাম এবং একটি ডিমের ওজন প্রায় 7 থেকে 15 গ্রাম হয়ে থাকে। কোয়েলের বয়স 6 থেকে 7 সপ্তাহের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে।

    কোয়েল পাখি বছরে প্রায় 300 এর বেশি ডিম দিতে পারে। এদের ডিম খুব সুন্দর। এরা সাধারণত বিকালবেলা ডিম পারে।

    সাধারণত কোয়েল পাখি ডিমে তা দেয় না। সফল প্রজননের উদ্দেশ্যে প্রতি তিনটি কোয়েলের সাথে এক পুরুষ কোয়েল রাখা প্রয়োজন। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য প্রায় 16 থেকে 18 দিন সময় লাগে।

    একদিন বয়সি বাচ্চা কোয়েলের ওজন 6 থেকে 7 গ্রাম হয়ে থাকে। বাচ্চা কোয়েল খুব সংবেদনশীল এবং যথেষ্ট শক্তিশালী হতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে।

    যেভাবে কোয়েল পাখির খামার শুরু করবেন।

    কোয়েল পালন পদ্ধতি টার্কি বা হাঁস পালন ব্যবসার মতোই লাভজনক এবং কোয়েল পাখির খামার  করা খুব সহজ। কারণ প্রোল্ট্রি প্রজাতির যত পাখি আছে তার মধ্যে কোয়েল পাখি ক্ষুদ্রতম।

    খামার  শুরু করার আগে একটি সঠিক ব্যবসা পরিকল্পনা করুন। একটি সঠিক ব্যবসায়িক পরিকল্পনাগুলিতে কোয়েলের জাত নির্বাচন, বাসস্থান, খাদ্য পরিকল্পনা, যত্ন ও বিপণন কৌশল অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। এখানে আমরা শীঘ্রই প্রতিটি পদক্ষেপ বর্ণনা করার চেষ্টা করবো।

    কোয়েল-পাখি
    কোয়েল পাখি

    সঠিকভাবে কোয়েলের জাত নির্বাচন করুনঃ

    বর্তমানে প্রায় 18 টি প্রজাতির কোয়েল পাওয়া যায়। যার প্রায় প্রতিটিই লাভজনক ও ব্যবসায়ের জন্য খুব উপযুক্ত।কিছু জাত ডিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এবং কিছু মাংস উৎপাদন জন্য জনপ্রিয়।উৎপাদনের ভিত্তিতে, কোয়েলর জাত দুটি ধরণের ব্রয়লার ও লেয়ার । এখানে আমরা কিছু জনপ্রিয় ব্রয়লার এবং লেয়ার কোয়েলর জাত প্রজাতির বর্ণনা করার চেষ্টা করবো।

    লেয়ার বা ডিম উৎপাদনের কোয়েলের জাতঃ

    • Tuxedo ( জাপানিজ কোয়েল )
    • Pharaoh (ফারাও)
    • British Range (ব্রিটিশ রেঞ্জ)
    • English White ( ইংরেজি হোয়াইট)
    • Manchurian Golden (মানচুরিয়ান গোল্ডেন)

    ব্রয়লার বা মাংস উৎপাদনের কোয়েলের জাতঃ

    • Bobwhite (আমেরিকান)
    • White Breasted (ভারতীয়)

    বাসস্থান কোয়েল পাখি পালনের ঘর নির্মাণঃ

    কোয়েল পালনের জন্য বাসস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোয়েলের জন্য ঘর বা খাঁচা তৈরি করার সময় নিচের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।

    • লিটার এবং খাঁচা উভয় পদ্ধতিতেই কোয়েল পালন করা যেতে পারে। কিন্তু খাঁচা পদ্ধতিতে কোয়েল পালন, লিটার পদ্ধতির তুলনায় বেশি উপযুক্ত। খাঁচা পদ্ধতিতে, ব্যবস্থাপনা সহজ এবং রোগ বা অন্যান্য সমস্যা কম।
    • একটি সঠিক বায়ুচলাচল সিস্টেম তৈরি করুন এবং যাতে কোয়েলের ঘরে যথেষ্ঠ আলো এবং বায়ু প্রবাহ নিশ্চিত করে।
    • আপনি 120 সেমি দৈর্ঘ্য, 60 সেমি প্রশস্ত এবং 25 সেমি উচ্চতা পরিমাপ একটি খাঁচার মধ্যে 50 টি কোয়েল পালন করতে পারেন।
    • কোয়েলর খাঁচা তৈরীর জন্য তারের নেট ব্যবহার করুন।
    • প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েলর জন্য নেটের ছিদ্রের পরিমাপ 5 মিমি x 5 মিমি হবে ।
    • প্লাস্টিকের খাঁচা কোয়েল পালনের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক।
    • ঘর অবশ্যই বন্য প্রাণীদের নাগালের বাইরে থাকতে হবে। এছাড়াও  সব ধরনের শিকারী প্রাণীদের নাগালের বাইরে থাকতে হবে।
    • ইঁদুর ও বিড়াল হতে বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

    খাদ্য ব্যাবস্থাপনাঃ

    আপনার কোয়েল স্বাস্থ্যকর, সঠিক ক্রমবর্ধমান এবং অত্যন্ত উত্পাদনশীল রাখার জন্য, নিয়মিত ভাবে তাদের সুষম ফিড প্রদান করতে হবে । একটি প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েল প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাবার খায়।বাচ্চা কোয়েলের খাদ্যে 27% এবং প্রাপ্তবয়স্ক কোয়েলের খাদ্যে  22-24% প্রোটিন থাকা উচিত। কোয়েলের জন্য একটি সুষম খাদ্য চার্ট নিচে দেখানো হলো।

    আরো জানতে পড়ুনঃ কোয়েল পাখির খাদ্য তৈরি

    কোয়েল পাখির ডিম উৎপাদনঃ

    সঠিক ডিম উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যাবস্থাপনা অত্যন্ত সুপারিশ করা হয়। আপনি বৈদ্যুতিক বাল্ব বা হিটার ব্যবহার করে কৃত্রিম আলো এবং তাপ প্রদান করতে পারেন। এক্ষেত্রে 40 থেকে 100 ওয়াট বাল্ব ব্যবহার করতে পারেন। আলো এবং তাপের  চাহিদা ঋতু উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।

    আপনি সফলভাবে কোয়েলের বাচ্চা ফুটাতে চান, তাহলে প্রতি তিন থেকে পাঁচটি মায়া কোয়েলের  সঙ্গে একটি মদ্যা কোয়েল রাখবেন। ভাল ডিম উৎপাদনের জন্য, ভাল জাতের কোয়েল নির্বাচন করুন এবং সর্বদা কোয়েলের ঘর শুষ্ক এবং পরিষ্কার রাখুন।

    ডিম উত্পাদন এছাড়াও তাপমাত্রা, খাদ্য,পানি, যত্ন এবং ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে। আপনার কোয়েল থেকে পছন্দসই ডিম উত্পাদন পেতে হলে, আলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লাইট বা আলোর ব্যবস্থাপনা একটি চার্টের মাধ্যমে নিচে দেখানো হলো।

    বয়সতাপমাত্রা (সেলসিয়াস)আলো (ঘন্টা/দিন)
    ১ সপ্তাহ৩৫২৪
    ২ সপ্তাহ৩০২৪
    ৩ সপ্তাহ২৫১২
    ৪ সপ্তাহ২১-২২১২
    ৫ সপ্তাহ২১১২
    ৬ সপ্তাহ২১১৩
    ৭ সপ্তাহ২১১৪
    ৮ সপ্তাহ২১১৫
    অন্য সবসময়২১১৬
    কোয়েলের আলোক কর্মসূচি চার্ট

    **এই চার্টটি ব্রয়লার কোয়েলের জন্য প্রজেয্য নয় শুধুমাত্র লেয়ার কোয়েলের জন্য।

    বাচ্চা কোয়েলের পরিচর্যাঃ

    কোয়েল তাদের ডিম তা দেয়না। সুতরাং, আপনি মুরগি বা  ইনকুবেটর ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে কোয়েলের ডিম ফুটাতে পারেন। কৃত্রিমভাবে ডিম ফুটানোর জন্য 16 থেকে 18 দিন সময় লাগে।সর্বোচ্চ ডিম উৎপাদনের জন্য,প্রতিদিন 16 ঘন্টা আলো প্রয়োজন। বাচ্চা পাখির জন্য আপনাকে ব্রুডার তৈরী করতে হবে।

    কোয়েলের বাচ্চা
    কোয়েলের বাচ্চা

    বাচ্চা পাখির জন্য ২-৩ সপ্তাহ কৃত্রিম তাপ এবং আলোর ব্যবস্থাপনা দরকার। কোয়েলের বাচ্চা খুব সংবেদনশীল হয়ে থাকে ।কোয়েলর বাচ্চা ব্রুডার করার সময় নিচের বিষয়গুলি মনে রাখুন।

    • পর্যাপ্ত তাপমাত্রা।
    • যথেষ্ট আলো।
    • সঠিকভাবে বায়ু চলাচল।
    • কোয়েলের ঘনত।
    • সঠিকভাবে খাদ্য এবং জল সরবরাহ।
    • স্বাস্থ্যকর নিয়ম পালন।

    কোয়েল পাখির সাধারন রোগ সমূহঃ

    অন্যান্য প্রোল্টির তুলনায় কোয়েলের রোগ কম। তবে এজন্য আপনাকে ভালভাবে খামারের যত্ন নিতে হবে এবং সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। যাতে তারা সব ধরণের রোগ বা অসুস্থতা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। ভাল যত্ন এবং ব্যবস্থাপনা লাভজনক কোয়েল ব্যবসার জন্য আবশ্যক। সাধারণত কোয়েলের কোনো রোগপ্রতিরোধক টিকা প্রদান করা হয় না।

    কোয়েল পাখি সাধারণত হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন এবং আবহাওয়া পরিবর্তন সহ্য করতে পারে না । তাই হঠাৎ তাপমাত্রা বা আবহাওয়া পরিবর্তনে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে ।এই সময়ে খুব সতর্ক থাকুন। নিম্নলিখিত রোগের কোয়েলের জন্য খুব ক্ষতিকারক।

       কক্সিওডিওসিস (Coccidiosis):

    যদি কোয়েলের  coccidiosis রোগ হয়, তবে ‘Cocitol’ (বা এ জাতীয় ঔষধ) দুই গ্রাম- প্রতি লিটার পানিতে মিশ্রিত করে সমান্তরালে তিন দিন  পরিবেশন করুন । অন্যথায় পশুচিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবেশন করুন।

        ক্ষত সৃষ্টিকারী অন্ত্রপ্রদাহ (Ulcerative Enteritis):

    এক গ্রামের স্ট্রিপ্টোমাইসিন(streptomycin) এক কাপ পানি দিয়ে মেশান এবং তিন দিনের জন্য এটি পরিবেশন করুন। এটি ক্ষতিকারক Enteritis রোগ থেকে মুক্তি দিবে।

    আরো জানতে পড়ুনঃ কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসা

    ভ্যাকসিন প্রদানঃ

    যদিও কোয়েলের  টিকা প্রদানের জন্য আবেদনকৃত কোন শিডিউল নেই, তারপরেও কোন কোন খামারে গামবোরো এবং বার্ডফ্লু দেখা গিয়েছে। এজন্য এই দুটি রোগের ভ্যাকসিন দেয়ার পরামর্শ রইলো (শুধুমাত্র লেয়ার বা প্যারেন্ট স্টকের জন্য)।  

    স্বাস্থ্যকর কোয়েল পালনের জন্য কিছু পরামর্শঃ

    আপনার কোয়েল স্বাস্থ্যকর এবং উত্পাদনশীল রাখতে, নিচের বিষয়গুলি অনুসরণ করুন।

    • সর্বদা কোয়েলের ঘর শুষ্ক এবং পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করুন।
    • শেডের মধ্যে পর্যাপ্ত আলো এবং সঠিক বায়ু চলাচল নিশ্চিত করুন।
    • বিভিন্ন বয়স্ক কোয়েল একে অপরের থেকে পৃথক রাখুন।
    • সুস্থ রোগ থেকে আক্রান্ত রোগীদের আলাদা করুন।
    • মৃত পাখি পুড়িয়ে বা মাটিতে প্যতে ফেলুন।
    • অন্যান্য পাখি, প্রাণী বা অজানা ব্যক্তিদের আপনার কোয়েলের খামারে প্রবেশ করতে দেবেন না।
    • স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করুন।
    • চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিষ্কার জল সরবরাহ করুন।

    মার্কেটিং বা কোয়েলের বাজারঃ

    কোয়েলের মাংস ও ডিম খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টি উপাদান অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তাই ইতিমধ্যেই আমাদের দেশে কোয়েল পাখির জন্য প্রতিষ্ঠিত বাজার আছে। কোয়েল পাখি এবং তাদের ডিমগুলি আকারের আকারে ছোট, তাই এটি সস্তা মূল্যের এবং সমস্ত ধরণের লোকজন ক্রয় করতে পারে। সুতরাং আপনার কোয়েল পাখির মার্কেট নিয়ে বেশি চিন্তা করতে হবে না। আপনি সহজে আপনার স্থানীয় বাজারে ডিম এবং মাংস বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি এই ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার বিপণন কৌশল নির্ধারণ করেন তবে এটি আরও ভাল হবে। কারণ সারা দেশের সব জায়গায় একই বিপণন সুবিধা নেই। কোয়েল কিন্তু থাইল্যান্ড, জাপান,হংকং  ইত্যাদি দেশেও রপ্তানিযোগ্য ।

    কোয়েলের বাচ্চা
    কোয়েলের বাচ্চা

    এককথায়, পরিবারের দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে এবং জীবিকা অর্জনের জন্য কোয়েল পাখি পালন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পালন কর্মসংস্থানের একটি ভালো উৎস হতে পারে। অন্যদিকে আপনি আপনার বর্তমান পেশায় থেকেও কোয়েল পাখির খামার করতে পারেন। কোয়েল পাখি পালন বেশ মজার এবং এটি খুব সহজ। আপনি যদি এই ব্যবসার উদ্যোগ নিতে চান তবে আমাদের পরামর্শ রইলো, প্রথমত আপনার এলাকায় কিছু খামার পরিদর্শন করার চেষ্টা করুন। তারপর শুরু করুন।

    আল্লাহ্ আপনার মঙ্গল করুক!

  • কোয়েল পালন

    কোয়েল পালন এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

    বিভিন্ন গৃহপালিত পাখির মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্রজাতি। কোয়েল পালনে কবুতরের মতো নির্দিষ্ট ঘর যেমন প্রয়োজন হয় না আবার মুরগির মতো ব্যাপক আকারের খামারেরও প্রয়োজন নেই। তাই কোয়েল পালন আজকাল অনেক ব্যাপক হয়ে উঠেছে।

    কোয়েলের আদি জন্মস্থান জাপানে। সর্বপ্রথম জাপানী বিজ্ঞানীরা কোয়েলকে গৃহপালিত পাখি হিসেবে পোষ মানানোর উপায় উদ্ভাবন করেছেন। পরবর্তীতে জাপান সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোয়েলকে একটি লাভজনক পোলট্টি উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কোয়েল পালন করার জন্য অতিরিক্ত বা বাহুল্য কোন খরচ হয় না। কোয়েলকে সহজেই পোষ মানানো যায়। বাড়ির যেকোন কোণ বা আঙিনা অথবা বাড়ির ছাদ ইত্যাদি জায়গাতেও কোয়েল পালন করা যায়। এই কারণে, শহরে কী গ্রামে অনেক স্থানেই কোয়েল পালন ব্যাপক ও সহজতর হয়েছে। গৃহপালিত পাখির মধ্যে অতি ক্ষুদ্র এই পাখির আয়তন খুব বেশি নয়। একটি মুরগি পালনের স্থানে মোটামুটিভাবে ১০টি কোয়েল পালন করা যায়।

    বিষেজ্ঞদের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের জন্য সর্বাধিক উপযোগি। এই কারণে, বিভিন্ন হাস মুরগির খামারেও ইদানিং কোয়েল পালন ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। দেশের পুষ্টি মিটিয়ে ইদানিং কোয়েলের মাংস বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে।

    কোয়েলের মাংস ও ডিম খুবই সুস্বাদু। এদের মাংস ও ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আমিষ, প্রোটিন ও স্নেজাতীয় পদার্থ বিদ্যমান। বিশেষ করে কোয়েলের একটি ক্ষুদ্র ডিমে যে পরিমাণ প্রেটিন রয়েছে একটি বড়ো আকারের মুরগির ডিমেও প্রায় সেই পরিমাণ প্রোটিন বিদ্যান । অথচ, দামের দিক থেকে একটি মুরগির ডিমের বিনিময়ে চারটি কোয়েলের ডিম পাওয়া যায়। এই কারণে, আমাদের মতো গরীব দেশের নিজস্ব পুষ্টির চাহিদা মেটাতে কোয়েল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
    আমাদের বাংলাদেশে কোয়েল পাখি এখনও নবাগত সম্প্রদায়ের তালিকায় পড়ে। তাই এই পাখি সম্পর্কে একটা অন্যরকম ধারনা আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। আমরা অনেকেই কোয়েলের ডিম এবং মাংসের পুষ্টিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানি না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা কালোর ফুটকি দেয়া ডিম এবং একই রঙ্গের পাখি সম্পর্কে আমাদের অনেক ভূল ধারণা রয়েছে। অনেকে ছোট ডিম বলে এগুলোকে কচ্ছপের ডিমের সাথে তুলনা করে থাকেন। ফলে এগুলো খেতে তাদের রুচি হয় না। কিন্তু বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। পার্থক্যগত দিক বিবেচনা করলে একটি কোয়েলের ডিমে সমপরিমাণ একটি মুরগির ডিমের মতো পুষ্টিমান বিদ্যামন। তবে আশার কথা, আমাদের দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে ইদানিং কোয়েল পালনে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন অনেকেই। ঢাকা শহরের বঙ্গবাজার এলাকার পোল্ট্রি মার্কেটে কোয়েলের ডিম, বাচ্চা এবং পরিণত বয়সের কোয়েল কিনতে পাওয়া যায়। এখান থেকে এগুলো সংগ্রহ করে ভাড়া বাসায় স্বল্প পরিসরেও কোয়েল পালন করা সম্ভব।

    ইদানিং আমাদের দেশের বিভিন্ অঞ্চলে হাঁস মুরগির খামারের পাশাপাশি কোয়েলের খামার তৈরী হয়েছে এবং প্রতিদিন হচ্ছে। অনেকে হাস মুরগির খামার না করেও শুধু কোয়েলের খামার করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এর মাংস এবং ডিম বিদেশে রপ্তানী করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

    কোয়েল পালনের বিভিন্ন সুবিধা সমূহ কোয়েল পালন করলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধার পরিমাণ বেশি। পরবর্তীতে কোয়েল পালনের বিভিন্ন সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো।

    (১) সাধারণত একটি ভাল জাতের কোয়েল বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম প্রদানে সক্ষম হয়ে থাকে। এই ডিমগুলোর প্রায় প্রতিটি থেকেই বাচ্চা পাওয়া যায়। এই বাচ্চা পরবর্তীর ৬ থেকে ৭ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয়। পাশাপাশি এই বয়সে তারা ডিম দেয়া শুরু করতে পারে।

    (২) অত্যন্ত কম পুজি নিয়ে কোয়েলের খামার তৈরি করা যায়। কোয়েল পালন করতে বিশেষ কোন জায়গা বা বিশেষ কোন থাকার স্থান নির্বাচন করতে হয় না।

    (৩) কোয়েলের আকার ক্ষুদ্র বলে এদের লালন পালনের জন্য বিস্তৃত জায়গা প্রয়োজন হয় না। ছোট আকারের একটি খাচাতেই কোয়েল পালন করা যায়। একটি প্রমাণ সাইজের মুরগির জন্য যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন হয়। সেই একই জায়গা কমপক্ষে ১২টি কোয়েল পালন করা যায়।

    (৪) রোগ ব্যাধির দিকে থেকে কোয়েল খুবই লাভজনক বিনিয়োগ। কারণ, কোয়েলের রোগ ব্যাধি প্রায় হয় না বললেই চলে। যেহেতু কোয়েলের রোগ ব্যাধি কম হয় সুতরাং এদের জন্য বাড়তি চিকিৎসা ব্যবস্থার তেমন প্রয়োজন হয় না।

    (৫) খুবই অল্প সময়ের মধ্যে একটি বাচ্চা কোয়েল ডিম দিয়ে থাকে। সাধারণত ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সেই একটি কোয়েল ডিম প্রদান করে থাকে। এদের ডিম খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। পুষ্টিমানের দিক থেকে মুরগির ডিমের সাথে তা তুলনীয়।

    (৬) কোয়েলের জন্য বিশেষ কোন খাবার সরবরাহ করতে হয় না। এদের খাদ্য চাহিদা কম অথচ, শারীরিক বাড় খুব বেশি। এরা খুব দ্রুত বাড়তে পারে। দিনে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম খাবার দিলেই এরা এদের শারীরিক ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারে।

    (৭) একটি পরিণত বয়সের কোয়েল বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম প্রদান করতে পারে। সেই হিসেবে একটি কোয়েলের পেছনে যে টাকা বিনিয়োগ করা হয় সেই টাকা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই লাভসহ ফেরত পাওয়া যায়।

    (৮) কোয়েলের ডিম থেকে সর্বোচ্চ ২০ দিনের মধ্যেই বাচ্চা ফুটে বের হয়। এই বাচ্চা পরিণত কোয়েলে রূপান্তরিত হতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ।

    (৯) কোযেলের মাংসে চর্বির পরিমাণ খুব কম বলে যে কোন রোগীর পথ্য হিসেবে কোয়েলের মাংস ব্যবহৃত হতে পারে। কোয়েলের ডিম পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদাও মেটাতে পারে। এই কারনে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোয়েল পালন অত্যন্ত লাভজনক পদ্বতি।

    কোয়েলের জাত বা বংশ কোয়েলের জাত হিসেবে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় জাপানি কোয়েলকে। কারণ, জাপানেই কোয়েলক সর্বপ্রথম গৃহপালিত করা হয়েচে। জাপানের হিসেবে অনুযায়ী কোয়েলের কয়েকটি জাত এবং উপাজত রয়েছে, সেগুলো নিম্নরূপ-

    লেয়ার কোয়েলঃ মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যেও লেয়ার জাত বিদ্যমান। এই জাতের উল্লেখযোগ্য গোষ্টি হলো-ফারাও, ইংলিশ হোয়াই, ম্যানচিরিয়াল গোল্ডেন, ব্রিটিশ রেঞ্জ ইত্যাদি। এই জাতের কোয়েলকে শুধু ডিম প্রদানের জন্য পালন করা হয়ে থাকে।

    ব্রয়লার কোয়েলঃ মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যে ব্রয়লার জাত বিদ্যমান এই জাতের উল্লেখযোগ্য গোষ্টি হলো আমেরিকান বব হোয়াইট কোয়েলে ইন্ডিয়ান হোয়াইট ব্রেস্টেড কোয়েল ইদ্যাদি। এই জাতের কায়েলকে শুধু মাংসের জন্য পালন করা হয়ে থাকে।

    একটি পূর্ণবয়স্ক কোয়েল সর্বোচ্চ ৪ বছর বেচে থাকে। এই বয়সের মধ্যে সে অন্ততপক্ষে ৮০০ থেকে ১২০০ ডিম প্রদান করে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ কোয়েলের ওজন ১৫০ থেকে ২৫০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। ডিমের ওজন হয়ে থাকে ৮ থেকে ১২ গ্রাম। কোয়েলের ডিম দেখতে খুব সুন্দর কারুকার্যখচিত বলে মনে হয়। এরেদ ডিমের খোসার ওপর নীল, বেগুনী, খয়েরি এবং কালো রঙ্গের ছোট ছোট পোটা বা ছিট ছিট দাগ থাকে। অনেকে এই দাগের জন্য এই ডিমগুলো খাওয়ার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে থাকেন। কোয়েলের প্রতিটি ডিমই আসলে ভবিষ্যতের পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা। অর্থাৎ প্রতিটি ডিম থেকেই একটি বাচ্চা ফুটতে পারে। তবে বাচ্চাপ ফোটার জন্য ডিম তৈরি করতে হলে একটি পুরষ কোয়েলের সাথে তিনটি স্ত্রী কোয়েলকে কিছুদিন একসাথে রাখতে হবে। কোয়েলের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর ব্যবহার কা হয়। তবে যাদের ইনকিউবেটরন নেই তারা সাধালনত কুচ্ছে মুরগির পেটের তলে দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে থাকেন। কারণ কার্যত কোয়েল পাখি কখনও কুঁচ্চে হয় না। ফলে কোয়েলের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে কুঁচ্চে মুরগির কিংবা ইনকিউবেটরের সহায়তা নিতে হয়।

    ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৭ থেকে ১৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে বাচ্চা ফোটার পরই সেগুলো পরিবেশের সাথে সরাসরি মানিয়ে নিতে পারে না। কারণ, কোয়েলের বাচ্চা খবই সংবেদনশীল। এরা পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় নেয়। এই সময়টাতে বাচ্চার প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হয়। এইসময় বাচ্চাকে কোয়েলের সাধারণ খাচা থেকে সরিয়ে ব্রুডিং ঘরে নিয়ে যাওয়া ভাল। কারণ, সেই সময় বাহ্যিক উত্তাপ প্রয়োজন হয় বাচ্চার। ব্রুডিং পদ্ধতিতে বাচ্চার শরীর সেই সময় গরম করতে হয়।

    কোয়েলের থাকার জায়গা বা বাসস্থান কোয়েলের থাকার জন্য হাঁস মুরগির মতো বিশেষ কোন ব্যবস্থা নিতে হয় না। তবে অন্য সব গৃহপালিত পশু পাখির মতো তাদের বাস্থান যাতে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের মধ্যে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা বিশেষ প্রয়োজন।

    লিটার বা খাঁচায় কোয়েল পালন করা সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। একটি খাঁচার ওপর আরেকটি খাচা এভাবে মোটামুটিভাবে অল্প জায়গাতে অনেকগুলো খাচা স্থাপন করে কোয়েল পালন করা যায়। মোটামুটিভাবে ১৩০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৬০ থেকে ১০০ সিন্টিমিটার প্রস্থ এবং ২৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার উচ্চতা বিশিষ্ট একটি খাচায় কমপক্ষে ৬০ থেকে ১০০টি কোয়েল পালন করা যায়। তবে কোয়েলের খাচায় ব্যবহৃত জালের ফাকগুলো একটু ঘন হতে হবে। যাতে করে কোয়েলের মুখ বা গলা সেই ফাক দিয়ে বাইরে বেরিয়ে না আসে। সর্বোপরি বাচ্চা রাখার খাচাসহ পরিনত বয়সের কোয়েলের খাঁচাগুলোতে যেন ইদুর, ছুচো ইত্যাদি না ঢুকতে পারে-সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাঁচার ফাঁক তৈরি করতে হবে।
    কোয়েলের জন্য খাবার এবং পানির সুব্যবস্থা তার খাঁচাতেই রাখতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে-পানি খাবার বা রাখার পাত্র উল্টে যেন কোয়েলের গা ভিজে না যায়।

    ঘরের যেখানে পর্যাপ্ত আরো বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে-সেখানে কোয়েলের খাঁচা রাখা যেতে পারে । তবে লক্ষ্য রাখতে হবে-বৃষ্টির পানি বা অন্য কোন তরলপদার্থ দ্বারা কোয়েলের খাঁচা ভিজে না যায়। ভেজা স্থান কোয়েলের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্নক হুমকিস্বরূপ । খাবার পাত্র এবং পানি রাখার পাত্রগুলো মুরগির খামারের মতোই হবে-তবে সেগুলো আকারে ছোট হলেও অসুবিধা নেই।

    কোয়েলের বাচ্চা পালনের সময় একটি অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। এই সময় বাচ্চাকে ব্রুডিং এর ব্যবস্থা করতে হয়। বাচ্চার বয়স ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত কৃত্রিম উত্তাপের মাধ্যমে এই ব্রুডিং এর ব্যবস্থা করতে হয়। কারণ, ডিম থেকে ফোটার পর বাচ্চা উক্ত সময় পর্যন্ত খুবই স্পর্শকাতর এবং দুর্বল থাকে। এই সময় তাদেরকে প্রয়োজনীয় ক্যালোরিযুক্ত খাবারও প্রদান করতে হয়। তা না হলে সদ্যজাত বাচ্চা ক্যালোরির অভাবে শরীর ঠান্ডা হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে পারে।

    সাধারণভাবে বাচ্চা ফুটলে সেগুলোকে আলাদা খাঁচায় স্থানান্তর করা উচিত। কারণ, তাহেল বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় ব্রুডিং এর ব্যবস্থা করা সম্ভবপর হয়ে থাকে। মুরগির বাচ্চার মতো একই পদ্ধতিতে কোয়েলের বাচ্চাকে ব্রুডিং বা কৃত্রিম তাপ প্রদান করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। বড়ো আকারের কোয়েলের খামারে বাচ্চা রাখার জন্য আলাদা ব্রুডার খাঁচা তৈরি করা হয়ে থাকে। যাতে করে বাচ্চা ডিম ফুটে বের হবার প্রায় সাথে সাথে সেই খাঁচায় বাচ্চা স্থানান্তর করা যায়।

    মোটামুটিভাবে কোয়েল পালনের জন্য এই ধরণের বাড়তি যত্ন আর বাসস্থান প্রয়োজন হয়। তবে হিসেব করে দেখা গেছে ১০০টি মুরগির জন্য যে ধরনের ব্যাপক বাসস্থানের প্রয়োজন হয়-সেই ধরনের জায়গায় কমপক্ষে ১০০০ থেকে ১২০০ কোয়েল পালন করা সম্ভবপর হয়ে থাকে।

    কোয়েলের খাদ্য বা খাবার ব্যবস্থা কোয়েল পালনে তেমন খরচ নেই এই কারণেই বলা হয়ে থাকে যে, কোয়েলের জন্য আলাদা তেমন কোন সুষম খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। শুধুমাত্র ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হবার পর কিছুটা বিশেষ যত্ন প্রয়োজন হয়। এইসময় কোয়েলের বাচ্চাকে সুষম খাদ্য প্রদান করতে হয়।

    সাধারণভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ বয়সের কোয়েল দিনে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করতে পারে। এদের খাদ্যে আমিষ ও ক্যালোরির পরিমাণ নিম্নোক্ত হওয়া উচিত। সাধারণভাবে প্রতি কেজি খাদ্য অনুপাতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আমিষ এবং ২৫০০ থেকে ৩০০০ কিলোক্যালোরি বিপাকীয় শক্তি বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন। সাধারণভাবে হাস মুরগির যে খাবার সরবরাহ করা হয়ে থাকে তার মধ্যেই এই ধরনের আমিষ এবং ক্যালোরি বিদ্যমান। সুতরাং হাস মুরগির জন্য যে খাবার আনা হয় তার থেকেও খাবার প্রদান করে কোয়েল পালন করা যায়।

    মুরগির খামারে ব্যবহৃত আকারে একটু ছোট হলে ভাল হয়। তবে কোয়েল খুব ঘন ঘন পানি পান করে। তাই কোয়েলের খাচায় কয়েকটি স্থানে পানির ব্যবস্তা খাকতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পানির পাত্রগুলো যেন খাঁচার সাথে শক্ত করে আটকানো থাকে। যাতে পানির পাত্র উপচে বা উল্টে পড়ে কোয়েলের গা ভিজে না যায়।

    কোয়েলের স্বাস্থ্য রক্ষা ককুতরের মতো কোয়েলেরও তেমন কোন রোগ ব্যাধি নেই বললেই চলে। তবে মাঝে মাঝে কোয়েলকে রোগক্রান্ত হতে ধেখা যায়। কোয়েল রোগাক্রান্ত হলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

    কোন কোয়েল অসুস্থ হলে সাথে সাথে তাকে সুস্থ কোয়েলের খাঁচা থেকে সরিয়ে নিতে হবে। অসুস্থ্য কোয়েলের সংস্পর্শে থাকলে বাকি সুস্থ কোয়েলও আক্রান্ত হতে পারে।

    খাঁচায় কোন কোয়েল মারা গেলে সাথে সাথে তার কারণ অসুসন্ধান করতে হবে। মরা কোয়েল পুড়িয়ে বা পুতে পেলতে হবে।

    কোয়েলের বিভিন্ন রোগ ব্যাধির মধ্যে আমাশয় উল্লেখ্যযোগ্য। এই রোগ হলে কোয়েলের ঘন ঘন পায়খানা হয়, খাবার গ্রহনে অনীহা দেখা দেয় পাশাপাশি কোয়েলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। এই অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এম্বাজিন জাতীয় ঔষধ খাওয়ানো যেতে পারে।

    তবে সবচেয়ে বড়ো কথা, সুষ্ঠুভাবে কোয়েল পালন করতে হলে তাদের থাকার জায়গা বা বাসস্থান, খাবার জায়গা ইত্যাদি স্থানগুলো শুকনা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পর্যাপ্তআরৌ বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেই সাথে প্রয়োজনীয় সুষমত খাদ্যের সরবরাহ রাখতে হবে। তবেই কোয়েল পালন করে তার মাংস ও ডিম উৎপাদনে সঠিক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
    লেখক: আবদুল্লাহ আল মামুন, উপ-পরিচালক, বংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট।
    পুনরুৎপাদন কোয়েলের বয়স ১০-২০ সপ্তাহ হলেই তারা বছরের প্রায় সকল ঋতুতেই পুনরুৎপাদন করে থাকে। স্ত্রী কোয়েল যেন একটি মেশিন, প্রতি ১৬ থেকে ২৪ ঘন্টায় ১টা করে ডিম পাড়ে এবং ৮-১২ মাস পর্যন্ত ডিম পাড়া অব্যাহত থাকে। শুধুমাত্র ডিম ফুটাতে চাইলে স্ত্রী কোয়েল প্রতিপালন অধিক লাভজনক। ডিমের উর্বরতা আশানুরূপ পেতে হলে ২:১, ৫:২ বা ৩:১ অনুপাতে স্ত্রী এবং পুরুষ কোয়েল একত্রে রাখতে হবে। তবে অর্থনৈতিক দিক দিক বিবেচনা করে ৩:১ অনুপাত অপেক্ষাকৃত ভাল । স্ত্রী কোয়েলের সাথে পুরুষ কোয়েল রাখায় ৪ দিন পর থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ডিম সংগ্রহ করা উচিত এবং স্ত্রী কোয়েল থেকে পুরুষ কোয়েল আলাদা/পৃথক করার পর তৃতীয় দিন পর্যন্ত ফুটানোর ডিম সংগ্রহ করা যেতে পারে।
    স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের আবহাওয়ায় কোয়েল ৬-৭ সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। ৮-১০ সপ্তাহ বয়সে ৫০% ডিম পাড়ে এবং ১২ সপ্তাহের পর থেকে ৮০% ডিম পাড়ে। উপযুক্ত পরিবেশে প্রথম বছর গড়ে ২০০-২৫০টি ডিম পাড়ে। দ্বিতীয় বছরে ডিমের উৎপাদন প্রথম বছরের উৎপাদনের শতকরা ৪৮ ভাগ হয়। কোয়েলের ডিমের উর্বরতা স্বাভাবিক অবস্থায় শতকরা ৮২-৮৭ ভাগ। তবে কোয়েলের ডিমের ফার্টিলিটি এবং হ্যাচ্যাবিলিটি পরিবর্তনশীল অথার্ৎ ফার্টিলিটি এবং হ্যাচিবিলিটি কম বেশি হতে পারে। ডিমপাড়া শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহের ডিম ফোটানো উচিত নয়। ৫০ সপ্তাহের অধিক বয়সের কোয়েলের ডিমের উর্বরতা এবং ফোটার হার কম। কোয়েলের ডিমের গড় ওজন ১০-১২ গ্রাম এবং গড়ে সারা বছর শতকরা ৬০ ভাগ ডিম দেয়। ডিমের ওজন স্ত্রী কোয়েলের দৈহিক ওজনের ৮%। কোয়েল এক বাণিজ্যিক বছরের অধিককাল পালন করা উচিত নয় কারণ তখন ডিম উৎপাদন খুবই কমে যায়। আন্তঃপ্রজনন যাতে না হয় সেজন্য নিকট সমপর্কযুক্ত কোয়েলের মধ্যে প্রজনন করানো যাবে না।

    ডিমের রং, আকার ও আকৃতি শুধুমাত্র কিছু প্রজাতির কোয়েল সাদা রংয়ের ডিম পাড়ে। তাছাড়া বেশির ভাগ কোয়েলের ডিম বাদামী এবং গায়ে ফোঁটা ফোঁটা দাগ আছে।

    ইনকিউবেটরে বসানোর পূর্বে ডিমের যত্ন দিনে অন্তত দু’বার ফোটানোর ডিম সংগ্রহ করতে হবে এবং ১৫.৫০ সে তাপমাত্রায় ৮০% আর্দ্রতায় ৭-১০ দিন সংরক্ষণের জন্য ২০ মিনিট ফরমালডিহাইড গ্যাসে রাখতে হবে। কোয়েলের ডিমের খোসা ভাঙ্গার প্রবণতা বেশি থাকায় ডিম অত্যন্ত সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হয়। ডিম দূষিত হওয়ার প্রধান উৎস এবং রোগ বিস্তারের মুখ্য কারণ হচ্ছে ময়লাযুক্ত ইনকিউবেটর অথবা হ্যাচারী এলাকা প্রতিবার ব্যবহারের পর প্রতিটি হ্যাচিং ইউনিট ভালভাবে ধৌত করে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। বাজারে যে সমস্ত উন্নতমানের জীবাণুনাশক পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে। ময়লাযুক্ত ডিম রোগ ও জীবাণুর প্রধান উৎস। কাজেই সর্বদা পরিষ্কার-পরিচছন্ন ডিম বসাতে হবে। বাচ্চা ফুটানোর ডিম কখনও ধোয়া উচিত নয়। ডিম সংগ্রহ করার পর ডিম ফিউমিগেশন করা উচিত অথবা বিকল্প ইনকিউবেটরে ডিম বসানোর ১২ ঘন্টার মধ্যে ফিউমিগেশন করা উচিত।

    কোয়েলের বাচ্চা ফোটানো স্বাভাবিক নিয়মে ১৭-১৮ দিনে উপযুক্ত পরিবেশে ডিম হতে বাচ্চা ফুটে। অবশ্য তা প্রজাতি বা ইনকিউবেশন পদ্ধতির উপরও নির্ভর করে। বাণিজ্যিক কোয়েল ডিমে তা দেয় না। ফলে এদের দিয়ে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব নয়। কোয়েলের ডিম সাধারণত কৃত্রিম উপায়ে ইনকুবেটর দিয়ে ফোটানো হয়। সফলভাবে বাচ্চা ফোটানোর হার বেশি পেতে হলে ইনকিউবেটর নির্মাতার নির্দেশ সতর্কতার সাথে পালন করতে হবে। ইনকুবেটরের কিছু কিছু মডেল শুধুমাত্র কোয়েলের ডিম বসানোর জন্যই ডিজাইন করা হয়। জাপানীজ কোয়েলের ডিম মুরগীর ডিম ফোটানোর জন্য ব্যবহৃত ইনকুবেটরে ফোটানো যেতে পারে তবে ডিম বসানোর ট্রেগুলোতে কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার। ডিমের মোটা অংশ সেটিং ট্রেতে বসানো উচিত। নিয়মমাফিক কোয়েলের ডিম প্রথম ১৫ দিন সেটিং ট্রেতে এবং পরবর্তী ৩ দিন হ্যাচিং ট্রেতে দিতে হবে। তাপমাত্রা ৯৮-১০১০ ফা এবং প্রথম ১৫ দিন ৫০-৬০% আর্দ্রতা এবং পরবর্তীতে ৬০-৭০% আর্দ্রতা রাখা বাঞ্ছনীয় (ইনকুবেটর নির্মাতার নির্দেশ অনুসারে)। প্রতি ২ থেকে ৪ ঘন্টা অন্তর ডিম ঘুরিয়ে (টার্নিং) দিতে হবে যাতে ভ্রূণ খোসার সাথে লেগে না যায়। ১৫তম দিনে ডিম সেটিং ট্রে থেকে হ্যাচিং ট্রেতে স্থানান্তর করতে হবে এবং ডিম ঘুরানো বন্ধ করতে হবে। ডিম থেকে বের হওয়া বাচ্চা ২৪-২৮ ঘন্টার মধ্যে ব্রুডার ঘরে স্থানান্তর করতে হবে।

    কোয়েলের বাচ্চার ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা এবং যত্ন
    সদ্য ফুটন্ত কোয়েলের বাচ্চা খুবই ছোট থাকে। এক দিন বয়সের কোয়েলের বাচ্চার ওজন মাত্র ৫-৭ গ্রাম থাকে। তাই ঠান্ডা বা গরম কোনটাই তারা সহ্য করতে পারে না। এমতাবস্থায় কাঙ্খিত তাপমাত্রা এবং খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বজায় রাখতে হবে। এ সময় কোন রকম ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা বা কোন রকম ধকল হলে এর বিরূপ প্রভাব দৈহিক বৃদ্ধি, ডিম উৎপাদন এবং জীবনি শক্তির থাকার উপর পড়ে। বাচ্চাকে তাপ দেয়া বা ব্রুডিং সাধারণত দুই পদ্ধতিতে করা যায়। যেমনঃ খাঁচায় বা কেইজে ব্রুডিং এবং মেঝেতে ব্রুডিং। যে পদ্ধতিতেই তাপ দেয়া হোক না কেন তাপমাত্রার প্রয়োজনীয়তা একই রকম। প্রথম সপ্তাহে সাধারণত ৩৫০সে তাপমাত্রা দিয়ে ব্রুডিং আরম্ভ করা হয় এবং এই তাপমাত্রা প্রতি সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে ৩.৫০সে কমিয়ে নিম্নলিখিত মাত্রায় আনতে হবে।

    উপরে যে তাপের উল্লেখ করা হলো তা হলো ব্রুডারের তাপমাত্রা। থার্মোমিটারের সাহায্যে সরাসরি এই তাপমাত্রা নিরূপণ করা যায়। তবে থার্মোমিটার ছাড়াও ব্রুডারের তাপ সঠিক হয়েছে কি না তা ব্রুডারের বাচ্চার অবস্থান দেখে বুঝা যায়। বাচ্চারা যদি বাল্বের কাছে জড়োসড়ো অবস্থায় থাকে তবে বুঝতে হবে তাপমাত্রা কম হয়েছে। আর যদি বাল্ব থেকে দূরে গিয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে তাপমাত্রা অধিক। অন্যদিকে বাচ্চাগুলো যদি চারিদিকে সমভাবে ছড়িয়ে থাকে এবং স্বাভাবিক ঘুরাফেরাসহ খাদ্য পানি গ্রহণ করতে থাকে তবে বুঝতে হবে পরিমিত তাপমাত্রা আছে। বাংলাদেশে গরমের সময় দুই সপ্তাহ এবং শীতের সময় তিন চার সপ্তাহ কৃত্রিম উপায়ে তাপ দিতে হয়। গবেষণা থেকে জানা যায় যে, দুই সপ্তাহ কেজে ব্রুডিং করে পরবর্তীতে মেঝেতে পালন করলে মৃত্যু হার অনেক কম হয় এবং বাচ্চার ওজন অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। কোয়েলের মৃত্যুহার নির্ভর করে এদের উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার উপর। ব্রুডিংকালীন পর্যাপ্ত তাপ প্রদান করতে না পারলে বাচ্চার মৃত্যুহার নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। কাজেই এ সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর বয়স্ক কোয়েলের মৃতু্যহার তুলনামূলকভাবে খুব কম।
    ইনকুবেটরে বাচ্চা ফোটার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ব্রুডিং ঘরে এনে প্রথমে গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি এবং পরে খাদ্য দিতে হবে। খাদ্যের সাথে সাথে পর পর তিনদিন গ্লুকোজ পানি পান করতে দেয়া ভাল। তারপর এমবাভিট ডবি্লও এস পানির সঙ্গে তিন দিন সরবরাহ করতে হবে। প্রথম সপ্তাহ খবরের কাগজ বিছিয়ে তার উপর খাবার ছিটিয়ে দিতে হবে এবং প্রতিদিন খবরের কাগজ পরিবর্তন করতে হবে। এক সপ্তাহ পর ছোট খাবার পাত্র বা ফ্লাট ট্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। পানির পাত্রে বাচ্চা যাতে পড়ে না যায় সেজন্য মার্বেল অথবা কয়েক টুকরা পাথর খন্ড পানির পাত্রে রাখতে হবে। সর্বদাই পরিষ্কার-পরিচছন্ন পানি সরবরাহ করতে হবে।
    অন্যান্য পোল্ট্রির মত কোয়েলের জীবন চক্রকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমনঃ বাচ্চা, বাড়ন্ত এবং বয়স্ক। অনেকে আবার কোয়েলের জীবনচক্র সংক্ষিপ্ত বিধায় তাকে শুধু বাচ্চা এবং বয়স্ক এই দুইভাগে ভাগ করেন। স্বাভাবিকভাবে ১-৩ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চা বলা হয়। ৩-৫ সপ্তাহ বয়সের কোয়েলকে বাড়ন্ত এবং ৫ সপ্তাহের অধিক বয়সের কোয়েলকে বয়স্ক বলে। অধিকতর সহজ ব্যবস্থাপনার জন্য এই অধ্যায়ের কোয়েলের জীবন চক্রকে দুই ভাগে যেমনঃ ১-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চা এবং তিন সপ্তাহের বেশি বয়েসের কোয়েলকে বয়স্ক কোয়েল বলে অভিহিত করা হয়েছে।

    খাবার পাত্র বাচ্চা অবস্থায় ফ্লাট ট্রে বা ছোট খাবার পাত্র দিতে হবে যেন খাবার খেতে কোনো রকম অসুবিধা না হয়। স্বাভাবিকভাবে প্রতি ২৮টি বাচ্চার জন্য একটি খাবার পাত্র (যার দৈর্ঘ্য ৫০৩ সেমি, প্রস্থ ৮ সেমি এবং উচ্চতা ৩ সেমি) এবং প্রতি ৩৪ টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য একটি খাবার পাত্র (যার দৈর্ঘ্য ৫৭ সেমি প্রস্থ ১০ সেমি এবং উচ্চতা ৪ সেমি) ব্যবহার করা যেতে পারে। দিনে দুইবার বিশেষ করে সকালে এবং বিকালে খাবার পাত্র ভাল করে পরিষ্কার করে মাথা পিছু দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম খাবার দিতে হবে। উল্লেখ্য প্রথম সপ্তাহ থেকে ৫ গ্রাম দিয়ে শুরু করে প্রতি সপ্তাহে ৫ গ্রাম করে বাড়িয়ে ২০-২৫ গ্রাম পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১.২৫ থেকে ২.৫ সেমি (১/২ থেকে ১ ইঞ্চি) খাবার পাত্রের জায়গা দিতে হবে।

    পানির পাত্র সর্বদাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পানি সরবরাহ করতে হবে। প্রতিটি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ০.৬ সেমি (১/৪ ইঞ্চি) পানির পাত্রের জায়গা দিতে হবে। অটোমেটিক বা স্বাভাবিক যে কোনো রকম পানির পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতি ৫০টি কোয়েলের জন্য একটি পানির পাত্র দেয়া উচিত। নিপল ড্রিংকার বা কাপ ড্রিংকারও ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতি ৫টি বয়স্ক কোয়েলের জন্য ১টি নিপল বা কাপ ড্রিংকার ব্যবহার করা যেতে পারে।

    আলোক ব্যবস্থাপনা কাঙ্খিত ডিম উৎপাদন এবং ডিমের উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য দৈনিক ১৪-১৮ ঘন্টা আলো প্রদান করা প্রয়োজন।