কোয়েল পালনের অন্যতম সুবিধা হল কোয়েল মুরগী বা অন্যান্য পোল্ট্রির তুলনায় রোগব্যাধিতে কম আক্রান্ত হয়৷ তাই বলে কোয়েল পাখির রোগ যে একেবারেই হয় না তা কিন্তু নয়৷ কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসা সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, মাইকোপ্লাজমা, অপুষ্টি ও ব্যবস্থাপনাজনিত ত্রুটির কারণে হতে পারে৷
কোয়েলের রোগব্যাধি কম বলে এগুলোকে টিকা দিতে হয়না বা কৃমির ঔষধও খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে না ধারনাটি সঠিক নয়।
মুরগীর প্রায় সবগুলো সাধারণ রোগই কোয়েলকে আক্রান্ত করতে পারে৷ কোয়েল পাখি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, মাইকোপ্লাজমা, পরজীবী, অপুষ্টি, ব্যবস্থাপনা ত্রুটি ও প্রজনন সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷ এখানে কোয়েলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রোগ, কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হল৷
কোয়েলে পাখির সাধারণ রোগ সমূহঃ
- ক্ষত সৃষ্টিকারী অস্ত্রপ্রদাহ
- ক্লোমনালী প্রদাহ
- অ্যাসপারজিলোসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া
- কলিসেপ্টিসেমিয়া
- রক্ত আমাশয়
- স্পর্শজনিত চর্মপ্রদাহ
- মারেক্স রোগ
- লিম্ফয়েড লিউকোসিস
- কৃমির আক্রমণ
- কার্ল টো প্যারালাইসিস
- ঠোকরা-ঠুকরি বা ক্যানিবালিজম
- ডিম আটকে যাওয়া৷
কোয়েলের ক্ষত সৃষ্টিকারী অন্ত্রপ্রদাহঃ (Ulcerative enteritis)
ক্ষতসৃষ্টিকারী অন্ত্রপ্রদাহ রোগটি ‘কোয়েল ডিজিস‘ (Quail disease) নামেও পরিচিত৷ কোয়েলের রোগব্যাধির মধ্যে এটিই সবচেয়ে মারাত্মক৷ আক্রান্ত কোয়েলের শতভাগই মারা যেতে পারে৷ সাধারণত লিটারে পালিত কোয়েলে এ রোগ বেশী দেখা যায়৷
রোগের কারণঃ এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্ত্রের রোগ৷
রোগের বিস্তারঃ সাধারণত দূষিত খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চা কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হয়৷ আক্রান্ত ঝাঁক থেকে সুস্থ ঝাঁকে কীটপতঙ্গের মাধ্যমে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম৷
কোয়েল ডিজিস রোগের লক্ষণঃ তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী দু’ধরণের রোগই হতে পারে৷ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কোয়েল অনেক সময় কোন লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই মারা যেতে পারে৷
- মৃদুভাবে আক্রান্ত কোয়েলে অবসাদ দেখা যায়৷
- চোখ আংশিকভাবে বন্ধ করে রাখে এবং পাখা ঝুলে পড়ে৷
- রক্তসহ পাতলা পায়খানা হয় ৷
- রক্তশুন্যতা দেখা যায়। এবং মুখে শ্বেস্মা নিয়ে পাখির মৃত্যু ঘটে।
- অন্ত্র ও সিকালে (Caeca) গোলাকৃতির ক্ষত বা আলসার দেখা যায়৷
- অন্ত্রে রক্তক্ষরণ দেখা যায়।
কোয়েল ডিজিস রোগের চিকিৎসাঃ
চিকিৎসার জন্য ভেটেনারি সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দেশিত মাত্রায় ব্যাসিট্র্যাসিন (Bacitracin), স্ট্রেপটোমাইসিন (Streptomycin), ক্লোরোমাইসেটিন (Chloromycetin) বা এগুলোর পরিবর্তে টেট্রাসাইক্লিন (Tetracycline) অথবা ফুরাজোলিডন (furazolidone) ব্যবহার করা যায়৷ সাথে আমক্সিসিলিন (Amoxycillin) ও মাল্টিভিটামিন দেয়া যেতে পারে।
প্রতিরোধঃ
গবেষণায় দেখা গেছে, ৪.৫ লিটার খাবার পানিতে ২ গ্রাম মাত্রায় স্ট্রেপটোমাইসিন মিশিয়ে একাধারে২৫ দিন অথবা স্ট্রেপটোমাইসিন সালফেট মিশিয়ে একাধারে ১০ দিন পান করালে ও রোগ পুরোপুরি প্রতিরোধ করা যায়৷
ক্লোমনালী প্রদাহ (Bronchitis)
কোয়েলের ক্লোমনালী প্রদাহ একটি তীব্র প্রকৃতির প্রদাহজনিত রোগ৷ রোগটি তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে৷ সব বয়সের কোয়েল এতে আক্রান্ত হলেও বাচ্চা কোয়েলের ক্ষেত্রে ৮০% পর্যন্ত মৃত্যু ঘটতে পারে৷
কারণঃ এক ধরণের ভাইরাসের আক্রমণে কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হয়৷
লক্ষণঃ কোয়েল পাখির রোগ সাধারনত বিভিন্ন লক্ষনের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে হবে।
- আক্রান্ত কোয়েলে হাঁচি, কাশি ও অস্বাভাবিক শ্বাসের শব্দ লক্ষ্য করা যায়৷
- কোন কোন সময় চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং কনজাংটিভাইটিসও (Conjunctivitis) দেখা যায়৷
- স্নায়বিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে৷
চিকিৎসাঃ ভাইরাসঘটিত রোগ বিধায় এর কোন চিকিত্সা নেই৷ রোগাক্রান্ত কোয়েল পাখি চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে বাকিগুলোর কাছ থেকে পৃথক করে সরিয়ে ফেলতে হবে৷ ব্যাকটেরিয়াজনিত মাধ্যমিক সংক্রমণ (Secondary infection) থেকে এদের রক্ষার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন- টেট্রাসোইক্লিন) ব্যবহার করা যেতে পারে৷
প্রতিরোধঃ পাখির ঝাঁকে (Flock) গাদাগাদি অবস্থা পরিহার করে সেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল এবং খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা করতে হবে৷
অ্যামপারজিলোসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া (Brooder pneumonia)
এতে প্রধাণত ব্রুডিং পর্বের বাচ্চা কোয়েল আক্রান্ত হয়৷ তাই এই রোগকে ব্রুডার নিউমোনিয়া বলা হয়৷
কারণঃ বাচ্চা মুরগীতে ব্রুডার নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ”অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস (Aspergillus fumigtus) নামক ছত্রাকের স্পোর এই রোগের কারন৷
রোগের বিস্তারঃ স্পোর দিয়ে দূষিত খাদ্য বা লিটার সামগ্রীর সংস্পর্শে অথবা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে স্পোর গ্রহণে বাচ্চা কোয়েল এই রোগে আক্রান্ত হয়৷
লক্ষণঃ
- তীব্র প্রকৃতির রোগে ক্ষুধামন্দা, পিপাসা বৃদ্ধি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়৷
- বাচ্চা শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে৷
- শ্বাসকষ্টের কারনে বাচ্চা মুখ হা করে ঘাড় ও মাথা উপরের দিকে টান করে শ্বাস গ্রহণ করে৷
- শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় ঘড়ঘড় শব্দ হয়৷
- আক্রান্ত বাচ্চার চোখের পাতা ফুলে যায়৷ বয়স্ক বাচ্চার কর্ণিয়া (Cornea) -তে আলসার বা ঘা দেখা দিতে পারে৷
- অতি তীব্র প্রকৃতির রোগের ক্ষেত্রে অনেক সময় কোনো বৈশিষ্টপূর্ণ উপসর্গ ছাড়াই বাচ্চা মারা যেতে পারে৷
চিকিৎসাঃ রোগাক্রান্ত পাখিকে ভেটরিনারি সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য বা পানির সাথে ছত্রাকনাশক ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোর যায়, কপার সালফেট ১ঃ২০০০ মাত্রায় খাবার পানিতে মিশিয়ে পান করালে বাচ্চা তাড়াতাড়ি সেরে উঠে৷
প্রতিরোধঃ ঘরের আর্দ্রতা কমিয়ে ও প্রতি কেজি খাদ্যে দুই গ্রাম মাত্রায় ক্যালসিয়াম প্রোপিওনেট (Calcium Propionate) মিশিয়ে খেতে দেয়া যেতে পারে৷ তাছাড়া ঘরের লিটার সবসময় শুকনো রাখতে হবে এবং ব্রুডার এলাকার লিটার নির্দিষ্ট সময় পরপর উল্টেপাল্টে দিতে হবে৷ জমাট বাঁধা, ভিজা ও ছত্রাকযুক্ত লিটার ফেলে দিতে হবে৷
কলিসেপ্টিসেমিয়া (Colisepticemia)
কোয়েল পাখির অন্যতম রোগ কলিসেপ্টিসেমিয়া। মারাত্মক এই রোগে সব বয়সের পাখিই আক্রান্ত হতে পারে৷ এতে প্রধানত শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হয়৷ তবে অন্যান্য তন্ত্রও আত্রান্ত হতে পারে৷
কারণঃ ‘ইসকোরিশিয়া কলাই’ (Escherichia coli) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে কোয়েল এই রোগে আক্রান্ত হয়৷
লক্ষণঃ
- সাধারণত রোগের লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই পাখির মৃত্যু ঘটে৷
- হঠাত্ পাখির মৃত্যুহার বেড়ে যায়৷
- শ্বাসতন্ত্রের উপসর্গ, যেমন-মুখ হা করে থাকে, নাকে-মুখে ফেনা ওঠে৷
- চোখ দিয়ে পানি পড়ে৷
চিকিৎসাঃ প্রতি ৫-১০ কেজি খাদ্যে ৫০০ মি.গ্রা. মাত্রার একটি টেট্রাসাইক্লিন (যেমন রেনামাইসিন) ট্যাবলেট মিশিয়ে আক্রান্ত পাখিবে ৩-৫ দিন খাওয়াতে হবে৷ এছাড়া পানির মাধ্যমেও উক্ত ঔষধ পান করানো যায়৷
কোয়েল পাখির রক্ত আমাশয় (Coccidiosis)
রক্ত আমাশয় বা ককসিভিওসিস রোগ মুরগীতে যতটা মারাত্মক আকারে দেখা দেয় কোয়েলের ক্ষেত্রে ততটা নয়৷ সাধারণত বাচ্চা কোয়েল পাখি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে৷
কারণঃ ‘আইমেরিয়া ব্যটেরি’ (Eimeria bateri), ‘আইমেরিয়া উজুরা”(Eimeria Uzura) ও ‘আইমেরিয়া সুনোডাই’ (Eimeria tsunodai) নামক ককসিডিয়ার জিবানু দ্বারা বাচ্চা কোয়েল আক্রান্ত হতে পারে৷
লক্ষণঃ আক্রান্ত বাচ্চা ঝিমাতে থাকে, রক্ত পায়খানা করে ও দূর্বল হয়ে পড়ে৷ অবশেষে রক্তশূন্যতার কারণে মারা যায়৷
চিকিৎসাঃ প্রতি কুইন্টাল খাদ্যে ১২৫ গ্রাম মাত্রায় অ্যাম্প্রোলিয়াম (Amproluum) মিশিয়ে পরপর তিন দিন আক্রান্ত বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে৷
প্রতিরোধঃ ককসিডিওসিস রোগ প্রতিরোধ করতে হলে-
(ক) খামারে স্বাস্থ্যসম্মত ও জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে৷
(খ) জন্মের দিন থেকে দু’সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি কুইন্টাল খাদ্যে ৬২.৫ গ্রাম মাত্রায় অ্যাম্প্রোলিয়াম খাওয়াতে হবে৷
কোয়েল পাখির মারেক্স রোগ (Marek’s disease)
মারেক্স রোগ স্নায়ুতন্ত্রের টিউমার সৃষ্টিকারী মারাত্মক ধরণের সংক্রামক রোগ৷ এতে প্রধানত প্রান্তীয় স্নায়ু (যেমন- সায়াটিক ও ব্রাকিয়াল স্নায়ু) আক্রান্ত হয়৷ এমনকি একদিন বয়সের বাচ্চাও আক্রান্ত হতে পারে৷
কারণঃ এক ধরণের হায়পেস ভাইরাস কোয়েলে এই রোগ সৃষ্টি করে৷
রোগের বিস্তারঃ আক্রান্ত পাখির লালা নাকের শ্লেন্মা, মল ও পাখার ফলিকলের (Follicle) মাধ্যমে এই রোগ সুস্থ পাখিকে ছড়ায়৷
লক্ষণঃ
- সায়াটিক ও ব্রাকিয়াল স্নায়ু মারাত্মক ভাবে ফুলে ওঠে এবং পক্ষাঘাতের সৃষ্টি করে৷
- দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে পাখির ওজন হ্রাস পায় এবং ফ্যাকাসে হয়ে যায়৷
- আক্রান্ত চোখ সাদা হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে একটি বা উভয় চোখই নষ্ট হয়ে যেতে পারে৷
- ক্ষুধামান্দ্য ও ডায়রিয়া দেখা দেয়৷ ফলে অনাহার ও পানিশূন্যতায় ভুগে পাখি মারা যায়৷
চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ
এই রোগের কোন চিকিত্সা নেই৷ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও পাখিকে টিকা প্রদান করা উচিত৷ তবে কয়েল যেহেতু কদাচিত্ এই রোগে আক্রান্ত হয় তাই টিকার ব্যবহার প্রচলিত নয়৷
লিম্ফয়েড লিউকোসিস (Lymphoid Leucosis)
লিম্ফয়েড লিউকোসিস এক ধরনের ক্যানসার৷ এটি সাধারণত বয়স্ক কোয়েলকে আক্রান্ত করে৷ আক্রান্ত কোয়েলের ডিম থেকে ফোটানো বাচ্চা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷
কারণঃ এটি অ্যাভিয়ান লিউকোসিস নামক ভাইরাসের কারণে হয়৷
লক্ষণঃ
- আক্রান্ত পাখি দুর্বল ও কৃশ হয়ে পড়ে৷
- টিউমার হওয়ার কারণে উদরস্ফীত হয়৷
- রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ও পাখি মারা যায়৷
চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ এই রোগের কোন ফলপ্রসূ চিকিত্সা ব্যবস্থা নেই৷ কার্যকরী টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি৷ এটি দূর করার জন্য আক্রান্ত পুরো ঝাঁককে মেরে ফেলা উচিত৷
কৃমির আক্রমণঃ
খাঁচায় পালিত কোয়েলে কৃমির আক্রমণ ঘটে না৷ তবে, লিটারে পালিত কোয়েল কখনো কখনো গোল কৃমি ও ফিতা কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে৷ কোয়েল সাধারণত শীতকালেই বেশী আক্রান্ত হয়৷ তবে, কৃমি কোয়েলের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনা৷
কারণঃ পাঁচ প্রজাতির গোল কৃমি বাচ্চা কোয়েল এবং এক প্রজাতির ফিতাকৃমি বয়ষ্ক কোয়েলকে আক্রমণ করতে পারে৷
লক্ষণঃ
- আক্রান্ত পাখি পাতলা পায়খানা করে৷
- পালক উস্কো খুস্কো হয়ে যায়৷
- ধীরে ধীরে শরীর শুকিয়ে যায়৷
- উত্পাদন হ্রাস পায়৷
চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ আক্রান্ত পাখিকে কৃমিনাশক ঔষধ, যেমন -থায়াবেনডাজল খাওয়ানো যেতে পারে৷ কোয়েল পাখির রোগ প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে৷ তাছাড়া লিটারে পালিত ব্রিডিং ফ্লককে প্রতিরোধক মাত্রায় কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়ানো উচিত৷
কার্লড টো প্যারালাইসিস (Curled toe paralysis)
সাধারণত ভিটামিনের অভাবজনিত কারণে কখনো কখনো বাচ্চা কোয়েলে কার্লড টো প্যারালাইসিস রোগ হতে দেখা যায়৷ এতে বাচ্চার পায়ের নখ বা আঙুল অবশঙ্গতার জন্য বাঁকা হয়ে যায়৷
কারণঃ ভিটামিন বি২ বা রাইবোফ্লাভিনের অভাবে এ রোগ হয়৷
লক্ষণঃ
- পাখি প্রথম দিকে খুঁড়িয়ে হাঁটে এবং এ সময় এর নখ বাঁকা দেখা যায়৷
- গিরার উপর ভর দিয়ে হাঁটে এবং দাঁড়িয়ে থাকে৷
- ৮ – ১০ দিনের মধ্যেই ক্ষুধামান্দ্য, ডায়রিয়া, দুর্বলতা, ওজন হ্রাস ইত্যাদি দেখা যায়৷
চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ ভিটামিন বি২-যুক্ত প্রাকৃতিক খাদ্য, যেমন প্রাণীর যকৃত্, সবুজ কচি ঘাস, প্রাণীর কিডনি বা মাছের গুঁড়া ইত্যাদি অথবা ভিটামিন -মিনায়েল প্রিমিক্স নির্ধারিত পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে৷
ঠোকরা-ঠুকরি বা ক্যানিবালিজম (Cannibalism)
ক্যানিবালিজম আসলে কোয়েল পাখির রোগ নয় বরং এক ধরনের বদভ্যাস৷ এটি এমনই এক ধরনের বদভ্যাস যাতে একটি কোয়েল অন্য একটি কোয়েলের পালকবিহীন বা কম পালকযুক্ত অংশে ঠোকরাতে থাকে৷ এবং রক্ত বের করে ফেলে৷ সাধারণত ব্যাটারি বা খাঁচা পদ্ধতিতেই ঠোকরা-ঠুকরি বেশি দেখা যায়৷
কারণঃ ক্যানিবালিজমের বহু কারণ রয়েছে৷ যেমন-
- ধারালো ও চোখা ঠোঁথ৷
- খামারে গাদাগাদি অবস্থা৷
- আরজিনিন নামক অ্যামাইনো এসিডের অভাব৷
- অত্যাধিক আলো৷
- অত্যাধিক তাপ৷
- স্ট্রেস বা পীড়ন৷
- আহত পাখিকে সুস্থ পাখি থেকে পৃথক না করা৷
- বিভিন্ন বয়সের কোয়েল একই খাঁচায় বা ঘরে রাখা৷
- খাদ্যে আমিষ ও লবণের অভাব৷
- অপর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা৷
- অন্যন্য রোগে আক্রান্ত হওয়া, অলসতা ইত্যাদি৷
চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ যেসব কারণে ঠোকরা-ঠুকরি দেখা দেয় তা দূর করতে হবে৷ তবে আগে থেকেই এদিকটায় নজর দিলে ঠোকরা-ঠুকরি দেখা দেবে না৷ তাছাড়া এটি প্রতিরোধের জন্য সঠিকভাবে ঠোঁট ফাটা বা ডিবিকিং করা একটি উত্তম ব্যবস্থা৷
কোয়েল পাখির ডিম আটকে যাওয়াঃ
ডিম পাড়ার সময় অনেক কোয়েলের ডিম ডিম্বনালীতে আটকে যায়, বাইরে বের হতে পারে না৷ যেহেতু কোয়েল প্রায় প্রতিদিনই ডিম পাড়ে তাই অধিক উত্পাদনশীল এসব কোয়েলে কখনো কখনো এমনটি ঘটতে দেখা যায়৷
ডিম আটকে যাওয়ার কারণঃ
সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে ডিম আটকে যেতে পারে৷ যেমন-
- ডিমের আকার অনেক বড় হলে৷
- ডিমের খোসা খসখসে হলে৷
- ডিম পাড়ার সময় এক ধরনের পিচ্ছিল পদার্থের নিঃসরণ কম হলে বা না হলে৷
- ডিম্বাশয়ে প্রদাহ বা অন্য কোন রোগ হলে৷
- ডিমপাড়া কোয়েলের অত্যাধিক চর্বি হলে৷
- ডিম পাড়ার সময় কোয়েলকে বিরক্ত করলে৷
ডিম আটকে যাওয়ার লক্ষণঃ
নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহ দেখা দিতে পারে৷ যেমন-
- কোয়েল সবসময় ছটফট করে৷
- ডিম পাড়ার জন্য বারবার যায় কিন্তু ডিম না পেড়ে চলে আসে৷
- ঘনঘন কোঁথ দেয়৷
- পায়ুপথ দিয়ে রক্ত বের হতে পারে৷
- পেটে ডিম ভেঙ্গে গেলে কোয়েল মারা যায়৷
চিকিৎসাঃ গরম পানিতে এক টুকরা কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে কোয়েলের পায়ুপথের চারদিকটায় হালকাভাবে বুলিয়ে দিতে হবে৷ এরপর আঙুলের সাহায্যে ভেসিলিন জাতীয় পিচ্ছিল পদার্থ পায়ুপথের ভিতর দিয়ে ডিম্বনালীর চারপাশে লাগালে তা পিচ্ছিল হয়, ফলে ডিম বের হয়ে আসে৷
বিশেষ পরামর্শঃ
কোয়েল পাখির রোগ ও চিকিৎসায় অনেক খামারি সাধারন কিছু ব্যাবস্থা নিয়ে থাকেন। যেমন, জন্মের প্রথম সপ্তাহে প্রতি লিটার খাবার পানিতে এক গ্রাম মাত্রায় টেট্রাসাইক্লিন মিশিয়ে পান করালে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগ হতে বাচ্চা কোয়েলকে রক্ষা করা সম্ভব হয়৷তবে এন্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ প্রয়োগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।