Category: Duck Farming

হাঁস পালন পদ্ধতি ও হাঁস পালন সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন তথ্য।

  • হাঁসের বাচ্চার মারাত্মক রোগ: ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস


    ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস হাঁসের ছানার একটি মারাত্মক সংক্রামক ভাইরাস জনিত রোগ। যকৃত প্রদাহ এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য।

    লক্ষণঃ
    সাধরণতঃ তিন সপ্তাহের কম বয়সী হাঁস আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত হাঁসের ছানা চলাফেরা বন্ধ করে দেয় এবং একপার্শ্বে কাত হয়ে পড়ে থাকে। আংশিকভাবে চোখ বন্ধ করে থাকে। কিছু কিছু ছানা ঈষৎ সবুজ বর্ণের পাতলা পায়খানা করে। খিঁচুনী হয় এবং ঘাড় পিছনে বেঁকে যায়। ১ সপ্তাহ কম বয়সী ছানার মৃত্যুহার প্রায় ৯৫%।

    প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রনঃ
    তিন সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চাকে বয়স্ক হাঁস থেকে পৃথক ভবে পালন করতে হবে। আক্রান্ত ছানাকে সুস্থ্য ছানা থেকে আলাদা করে চিকিৎসা দিতে হবে। বাসস্থান ও খামার সরঞ্জাম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হাঁসের বাচ্চাকে টিকা প্রদান করতে হবে।

    চিকিৎসাঃ
    এ রোগের কার্যকরী কোন চিকিৎসা নাই। তবে ইমিউন ডাক থেকে (রোগ থেকে সেরে ওঠা) এন্টিসিরা ইনজেকশন .৫ এমএল করে ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়

    হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়

    হাঁস পালন একটি লাভজনক পেশা। হাঁস পালনে লাভবান হতে চাইলে অধিক ডিম উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই।হাঁস পালনে খামারিদের চিন্তার কারণ ঠিকমতো হাসের ডিম না পাড়া। মূলত সঠিক নিয়মে খাদ্য ও পরিচর্যা না করার কারনেই হাঁস ঠিকমতো ডিম পাড়েনা। এখানে আমারা হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি।

    হাঁস ডিম না পাড়ার কারণ কি

    প্রথমত আমরা হাঁসের ডিম না পাড়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করতে চাই।

    • হাঁস অসুস্থ কিনা। ঠিকমতো খাদ্য খাচ্ছে কিনা?
    • হাঁসের বয়স কতদিন? হাঁসের ডিম পাড়ার বয়স হয়েছে কিনা? নাকি বেশি বয়স হয়ে গিয়েছে।
    • হাঁস পানিতে, পুকুরে বা অন্যকোথাও ডিম পাড়ছে কিনা। বা অন্য কোনভাবে নষ্ট হচ্ছে কিনা
    • হাসের অতিমাত্রায় চর্বি বা ফ্যাট হয়েছে কিনা।
    • হাঁস পশম ছাড়ছে কিনা।

    হাঁস ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয় কেন

    বিভিন্ন স্ট্রেস এর কারনে হাস ডিম দেয়া বন্ধ করে দিতে পারে। স্ট্রেস অনেক কিছু থেকেই হতে পারে, যেমন উচ্চ শব্দ, হাস কে তাড়ানো হলে, বাসস্থান বা তাদের পরিবেশের পরিবর্তন ঘটালে ইত্যাদি। এমনকি খাদ্য পরিবর্তন, ব্যক্তি বা শিকারী প্রাণী দ্বারাও স্ট্রেস আসতে পারে।

    যেভাবে হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি করবেন

    • সঠিক নিয়মে খাদ্য প্রদান করবেন। হাঁসের খাদ্য তালিকা নিয়ে আমাদের লেখাটি পড়তে পারেন।
     হাঁসের খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জানুন বিস্তারিত 

    • হাঁসের খাদ্যে প্রোটিন মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে শামুক খাওয়ানো যেতে পারে। শামুকে প্রোটিন উপাদান বেশি থাকে। ডিম উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রোটিন গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে।
    • হাঁসের বাসস্থান নির্জন রাখার চেষ্টা করতে হবে। রাতে কোনোভাবেই হাঁসকে ডিস্টার্ব করা যাবেনা। মনে রাখতে হবে, হাঁসের স্ট্রেস ডিম উৎপাদন ব্যাহত করে।
    • রাতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত লাইটিংবা আলো দেয়া যেতে পারে।
    • খাদ্যের পরিমান বাড়াতে পারেন। অবশ্যই খাদ্য মান ভালো হতে হবে।
    • নিয়মিত ভ্যাক্সিন বা টিকা দিতে হবে। ডিম উৎপাদনের জন্য হাঁসের রোগ বালাই দমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাঁসকে অবশ্যই সুস্থ রাখতে হবে। হাঁস পালন করার ক্ষেত্রে হাঁসের বেশকিছু রোগ বালাই দেখা যায়। হাঁসের দুটি মারাত্নক রোগ ডাক-প্লেগ ও ডাক-কলেরা। এই দুটি রোগের ব্যাপারে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। তবে যদি কোন হাঁস অসুস্থ্য হলে সেই হাঁসকে দ্রুত অন্যান্য হাঁস থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
    • হাঁসকে প্রচুর পরিমানে পরিস্কার সাদা পানি দিতে হবে। ময়লা পানি থেকে দূরে রাখতে হবে।
    • বছরে একবার মল্টিং বা পশম ঝড়িয়ে দিলে হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
    • হাঁসের খামারে অপরিচিত মানুষ বা অন্য কোন প্রাণী ঢুকতে দেয়া যাবেনা। হাঁস প্রচুর ভয় পায়। হাসের খামার নির্জন নিরিবিলি রাখলে হাসের ডিম উৎপাদন বাড়ে।

    হাঁসের ডিম বৃদ্ধির ঔষধ

    সঠিকভাবে যত্ন-পরিচর্যা করা ও নিয়মিত কিছু ভিটামিন ও মিনারেল হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যেমন, এডি৩ই, ই-সেল, জিংক, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। উল্লেখিত ঔষধগুলি কিছুদিন অন্তর নিয়মিতভাবে হাঁসকে দেয়া যেতে পারে।

    উল্লেখিত বিষয়গুলি মেনে চললে ইনশাআল্লাহ অবশ্যই হাঁসের ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

  • বাণিজ্যিকভাবে চীনা হাঁস পালন পদ্ধতি

    বাণিজ্যিকভাবে চীনা হাঁস পালন পদ্ধতি

    বাণিজ্যিক মাসকোভি বা চীনা হাঁস পালনের ব্যবসা শুরু করা সহজ। কারণ চীনা হাঁস তুলনামূলকভাবে শক্ত প্রকৃতির এবং তুলনামূলকভাবে কম যত্নে পালন করা যায়। অন্যান্য হাঁসের তুলনায় এরা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।বাণিজ্যিকভাবে চীনা হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসায়ের ধারণা হতে পারে। এখানে আমরা চীনা হাঁসের বাচ্চা থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সকল পদ্ধতি ও পরিচালনা সম্পর্কে বিস্বতারিত বর্ণনা করার চেষ্টা করছি।

    চীনা হাঁসের সাধারণ বৈশিষ্ট্যঃ

    ভারী জাত হিসাবে মাসকোভি বা চীনা হাঁসকে তালিকাভুক্ত করা হয়। এদের প্রশস্ত পা ও সমান লেজ বিদ্যমান। নখর বেশ বড় ও বাকানো। শরীরের পালক কালচে পীত কালারের। এদের ডানায় সাদা পালকের সাথে সবুজাভ-কালো পালক থাকে। মুখের উপর লালচে গিট বিদ্যমান। যেটি বাচ্চা অবস্থায় না থাকলেও বয়স হলে দৃশ্যমান হয়। মুখের ত্বক কালচে। পা কালো ও চোখ বাদামি।

    চিনা মদ্দা বা হাঁসা গুলি মায়া হাঁসের প্রায় দ্বিগুণ। সাধারণত, মদ্দা হাঁসের দৈর্ঘ্য প্রায় 34 ইঞ্চি (86 সেমি) এবং গড় ওজন প্রায় ৪.৬ থেকে ৬.৮ কেজি। মায়া হাঁসের পালক ও গঠনও একইরকম হয় তবে এটি আকারে আরও ছোট। মায়া হাঁসের ওজন ২.৬ থেকে ৩.৬ কেজি পর্যন্ত হয়।

    এরা শান্ত স্বভাবের পাখি। তবে অপরিচিত কাউকে দেখলে তেড়ে যেতে পারে। হিস-হিস শ্বব্দ করে চলাফেরা করে। অন্য জাতের হাঁসের সাথে এরা মিলে থাকতে পারে।

    চীনা হাঁস ভাল উড়তে পারে এবং উড়ে অনেকদূর পর্যন্ত যেতে পারে। তাই এদের ডানা-ক্লিপ করা প্রয়োজন। মাসকোভি হাঁস পালনের জন্য বেশী পানির প্রয়োজন নেই। সাধারণত অন্যান্য হাঁসের মতো এরা সাঁতার কাটে না।

    কেন চীনা হাঁস পালন করবেন

    • মাসকোভি বা চীনা হাঁস অনেকবছর ধরে ডিম এবং মাংসের জন্য পালন করা যায়।
    • যেকোনো হাঁসের তুলনায় সর্বাধিক মাংস উৎপাদনকারি হাঁস ।
    • ফ্যাট, চর্বিহীন উন্নত মানের মাংস।
    • রোগবালাই কম। অনেক বছর বেচে থাকে।
    • শান্ত স্বভাবের। অন্য যেকোন হাসের সাথে পালন করা যায়।
    • পুকুর জলাশয় বা অধিক পানির প্রয়জোন নেই।
    • লাভজনকভাবে দীর্ঘদিন পালনকরে ব্যাবসা করা যায়।

    চীনা হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ

    হাঁসের বাসস্থানঃ

    চীনা হাঁসের খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনাঃ

    চীনা হাঁসের প্রজননঃ

    বাজারজাতকরণঃ

  • হাঁসের ডাক প্লেগ রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

    হাঁসের ডাক প্লেগ রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

    হাঁসের অন্যতম একটি মারাত্বক রোগ হচ্ছে ডাক প্লেগ। ৯০ থেকে ১০০% পর্যন্ত মারা যেতে পারে এই ডাক প্লেগ রোগে। এ রোগের অপর নাম ডাক ভাইরাস এন্টারাইটিস। ডাক প্লেগ হারপেস (Herpes) গ্রুপের এক প্রকার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।

    আমাদের দেশে সবথেকে বেশি দেখা যায় এই ডাক প্লেগ রোগ। তবে সরকারিভাবে এটির টিকা রয়েছে।

    লক্ষণসমূহ

    • হঠাত আক্রান্ত হয় (একিউট) এবং অনেক মারা যায় যেতে থাকে।
    • খাদ্য কম ও কিন্তু পানি বেশি খায়।
    • পালক এলোমেলো ও পাখনার উপর ভর করে ঝিমাতে থাকে।
    • চোখের পাতা ফুলে যায়,পানি পড়ে ও ময়লা জমে।
    • ঘাড় পাশে বা পিছনের দিকে বেকে যায় ও মারা যায়।
    • মাথা ঘাড় ঘুরতে থাকে ও মারা যায়।
    • ময়নাতদন্ত করলে হাঁসের হৃদপিণ্ড, কলিজা এবং ডিম্বথলিতে জমাটবাঁধা রক্ত পাওয়া যায়।

    চিকিৎসা

    রেনামাইসিন বা ইএস বি ৩ দেয়া যেতে পারে।

    নিয়মিত টিকা প্রাদান করতে হবে। ১ম বার ২১-২৮দিনে, ২য় বার ৩৬-৪৩ দিনে বুকের মাংসে।পরবর্তিতে   ৪-৫ মাস পর পর।

    সরকারী টিকা ১০০ ডোজ, ১০০ মিলি পরিষ্কার পানির সাথে মিশিয়ে বুকের মাংসে 1ml করে ইনজেকশন দিতে হবে।

    প্রতিরোধ ও সতর্কতা

    সঠিকভাবে হাসের ভ্যাক্সিন সিডিউল মেনে চলতে হবে। হাঁসকে ভালোমানের খাদ্য দিতে হবে।অসুস্থ হাঁসকে আলাদা করে চিকিৎসা দিতে হবে। 

  • হাঁসের কলেরা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

    হাঁসের কলেরা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

    ডাক কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। এটি হাঁস-মুরগি উভয়েরই হয়ে থাকে। সাধারণ দুই মাস বা এর বেশি বয়সী হাঁস বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পানি বা খাবার থেকেই এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। এটি পাস্টোরেলা মাল্টোসিডা নামক ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে হয়।মৃত্যহার ৫০% বা তারও বেশি হতে পারে।

    লক্ষণসমূহ

    • এ ক্ষেত্রেও হাঁসপাতলা সবুজ পায়খানা করে। 
    • আক্রান্ত হাঁসর হাঁটু ও মাথা ফুলে যায়।
    • পা প্যারালাইসিস হয় এবং সবুজ পায়খানা হয়।
    • শ্বাসকষ্ট হওয়ায় মুখ হা করে নিশ্বাস নেয়। পিপাসা বেড়ে যায়।
    • চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও নাক, মুখ, দিয়ে লালা ঝরে।
    • হাঁস দুর্বল হয়ে পড়ে ও ডিম পাড়ে না।

    ডাক প্লেগ রোগ হলে পাতলা মলের সাথে সামান্য রক্ত দেখা যায় আর কলেরা হলে মলের সাথে রক্ত মোটেই থাকেনা।

    চিকিৎসা

    জেন্টামাইসিন এবং পটেনশিয়াল সালফোনেমাইড (মাইকোনিড, কসুমিক্স ) ভাল কাজ করে।১ম বার ৪৫-৬০ দিনে ,২য় বার বুস্টার ডোজ ১৫ দিন পর ৬০-৭৫ দিন পর, বুকের চামড়ার নিচে।পরবর্তিতে ৪-৫ মাস পর পর।

    প্রতিরোধ ও সতর্কতা

    হাঁসের খামার সব সময় পরিস্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। কোন সময় যদি খামারে এ রোগ দেখা দেয় রোগাক্রান্ত হাঁস আলাদা স্থানে রাখতে হবে। যে পাত্রে হাঁসের খাবার দেওয়া হয় খাওয়া হয়ে গেলে সাথে সাথে পরিস্কার করতে হবে। কলেরা রোগ নাহয় সে জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া খামারের সকল হাঁসকে কলেরা রোগের টিকা দিতে হবে। 

  • হাঁসের বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

    হাঁসের বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

    হাঁসের রোগ সাধারণত মুরগির চেয়ে কম হয়ে থাকে। সারাবিশ্বে কোটি কোটি হাঁস পালন করা হয়। এসব হাঁস অনেকাংশে পরিণত বয়সের আগেই মারা যায়। বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণে হাঁসের মৃত্যু হয়ে থাকে। 

    ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস

    হাঁসের বাচ্চার সবথেকে মারাত্বক রোগ। যা একদিন বয়স থেকে ৫ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত হতে পারে। মারাত্মক  সংক্রামক রোগটি picorna virus দিয়ে হয়। মার্টালিটি ১০০% পর্যন্ত হতে পারে।

    লক্ষণসমূহ

    • ঘাড় বাকা ও কাত হয়ে একদিকে ঘুরতে থাকে
    • খাদ্য গ্রহন কমিয়ে দেয়।
    • দ্রুত বিস্তার লাভ করে ও সবুজ পায়খানা করে।
    • লিভার ও কিডনি স্প্লিন বড় হয়।

    চিকিৎসা

    চিকিৎসায় তেমন ভাল রেজাল্ট পাওয়া যায়না। টিকা প্রদান করতে হবে। ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস এর টিকা রয়েছে।

    প্রতিরোধ ও সতর্কতা

    ব্রিডারে টিকা দিতে হবে যাতে বাচ্চাতে না আসে। ভালো মানের বিডার থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে।মূলত বাতাসের সাহায্যে এ রোগ ছড়ায় তাই খামারের আশে পাশে পর্দা রাখতে হবে।রোগ প্রতিরোধে হাসকে বাইরের পরিবেশ হতে যথাসম্ভব আলাদা রাখতে হবে। আক্রান্ত মৃত হাঁসকে পুতে ফেলতে হবে ও খামারকে ব্লিচিং পাউডার বা জীবণুনাশক দিয়ে খুব ভালভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে।

    ডাক প্লেগ

    হাঁসের অন্যতম একটি মারাত্বক রোগ হচ্ছে ডাক প্লেগ। ৯০ থেকে ১০০% পর্যন্ত মারা যেতে পারে এই ডাক প্লেগ রোগে। এ রোগের অপর নাম ডাক ভাইরাস এন্টারাইটিস। ডাক প্লেগ হারপেস (Herpes) গ্রুপের এক প্রকার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।

    আমাদের দেশে সবথেকে বেশি দেখা যায় এই ডাক প্লেগ রোগ। তবে সরকারিভাবে এটির টিকা রয়েছে।

    লক্ষণসমূহ

    • হঠাত আক্রান্ত হয় (একিউট) এবং অনেক মারা যায় যেতে থাকে।
    • খাদ্য কম ও কিন্তু পানি বেশি খায়
    • চোখের পাতা ফুলে যায়,পানি পড়ে ও ময়লা জমে।
    • ঘাড় পাশে বা পিছনের দিকে বেকে যায় ও মারা যায়
    • মাথা ঘাড় ঘুরতে থাকে ও মারা যায়।

    চিকিৎসা

    নিয়মিত টিকা প্রাদান করতে হবে। ১ম বার ২১-২৮দিনে, ২য় বার ৩৬-৪৩ দিনে বুকের মাংসে।পরবর্তিতে   ৪-৫ মাস পর পর।

    সরকারী টিকা ১০০ ডোজ, ১০০ মিলি পরিষ্কার পানির সাথে মিশিয়ে বুকের মাংসে 1ml করে ইনজেকশন দিতে হবে।

    প্রতিরোধ ও সতর্কতা

    সঠিকভাবে হাসের ভ্যাক্সিন সিডিউল মেনে চলতে হবে। হাঁসকে ভালোমানের খাদ্য দিতে হবে।

    ডাক কলেরা

    ডাক কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। এটি হাঁস-মুরগি উভয়েরই হয়ে থাকে। সাধারণ দুই মাস এর বেশি বয়সী হাঁস-মুরগি বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পানি বা খাবার হতেই এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। এটি পাস্টোরেলা মাল্টোসিডা নামক ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে হয়।মৃত্যহার ৫০%।

    লক্ষণসমূহ

    • এ ক্ষেত্রেও হাঁসপাতলা সবুজ পায়খানা করে। 
    • আক্রান্ত হাঁসর হাঁটু ও মাথা ফুলে যায়।
    • পা প্যারালাইসিস হয় এবং সবুজ পায়খানা হয়।
    • শ্বাসকষ্ট হওয়ায় মুখ হা করে নিশ্বাস নেয়। পিপাসা বেড়ে যায়।
    • চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও নাক, মুখ, দিয়ে লালা ঝরে।
    • হাঁস দুর্বল হয়ে পড়ে ও ডিম পাড়ে না।

    ডাক প্লেগ রোগ হলে পাতলা মলের সাথে সামান্য রক্ত দেখা যায় আর কলেরা হলে মলের সাথে রক্ত মোটেই থাকেনা।

    চিকিৎসা

    জেন্টামাইসিন এবং পটেনশিয়াল সালফোনেমাইড (মাইকোনিড, কসুমিক্স ) ভাল কাজ করে।১ম বার ৪৫-৬০ দিনে ,২য় বার বুস্টার ডোজ ১৫ দিন পর ৬০-৭৫ দিন পর, বুকের চামড়ার নিচে।পরবর্তিতে ৪-৫ মাস পর পর।

    প্রতিরোধ ও সতর্কতা

    হাঁসের খামার সব সময় পরিস্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। কোন সময় যদি খামারে এ রোগ দেখা দেয় রোগাক্রান্ত হাঁস আলাদা স্থানে রাখতে হবে। যে পাত্রে হাঁসের খাবার দেওয়া হয় খাওয়া হয়ে গেলে সাথে সাথে পরিস্কার করতে হবে। কলেরা রোগ নাহয় সে জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া খামারের সকল হাঁসকে কলেরা রোগের টিকা দিতে হবে। 

    মাইকোটক্সিকোসিস ও বটুলিজম

    পচা,নষ্ট খাবার থেকে হয়ে থাকে। হাঁস যেহেতু বিভিন্ন নোংরা পানিতে গুগলি খেয়ে থাকে তাই প্রায়শই এই রোগ দুটি দেখা যায়। ক্লোস্টিডিয়াম বটুলিয়াম নামক জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয়।

    এটি একধরনের বিষক্রিয়া অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগও বটে। যা আপনার খামারে মহামারী আকার ধারন করতে পারে।

    লক্ষণসমূহ

    • হঠাৎ করেই অনেক গুলো হাঁস মারা যেতে পারে
    • নিস্তেজ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
    • ঘাড়, পা ও পাখা প্যারালাইসিস হতে পারে।
    • বটুলিজমে পিছন দিক বের হয়ে আসে।
    • গন্ধ যুক্ত পায়খানা করে।

    চিকিৎসা

    আক্রান্ত হাঁসকে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করাতে হবে। এতে শরীরের টক্সিন বের হয়ে যাবে। প্রয়োজনে লেক্সেটিভ দেওয়া যাবে পানির সাথে।

    যেহেতু রোগটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সেহেতু সময় অপচয় না করে যত দ্রুত সম্ভব একটি ভালো মানের এন্টিবায়োটিক দেয়া যেতে পারে। আক্রান্ত হাঁসের জন্য চিকিৎসা মাত্রায় এবং ভালো হাঁসের জন্য প্রতিরোধক মাত্রায় ৫-৭ দিন।

    বটুলিজম এন্টি-টক্সিন ০.৫-১ মিঃ লিঃ (Botulism Antitoxin 0.5-1 ml) ইন্ট্রাপেরিটোনিয়েল (Intra Peritoneal) ইনজেক্ট করে দিতে হবে।

    প্রতিরোধ ও সতর্কতা

    পঁচা বা বাসি খাবার থেকে বিরত রাখতে হবে। খাদ্যে ভালো মানের টক্সিন বাইণ্ডার ব্যাবহার করতে হবে।আক্রান্ত হাঁসকে আলাদা করতে হবে।

    আমাশয়

    সাধারনত বাচ্চা হাঁসে আমাশয় রোগ হয়।আমাশয়ের কারণেই হাঁসের ওজন কমে যায়। টাইজেরিয়া পারনিসিয়া নামক প্রোটোজোয়া এ রোগের কারন।

    লক্ষণসমূহ

    • হাসের বাচ্চার ওজন কমে যায়।
    • খাদ্য কম খায়, দূর্বল হয়ে পড়ে।
    • প্রথমে সাদাটে ,পরে রক্ত মিশ্রিত পায়খানা করে।
    • দূর্বল হয়ে মারা যায়।

    চিকিৎসা

    ই এস বি৩ বা কসুমিক্স প্লাস দেয়া যেতে পারে ।

    প্রতিরোধ ও সতর্কতা

    হাঁসের খামার সব সময় পরিস্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। সঠিক ভাবে হাসের বাচ্চার যত্ন নিতে হবে। যে পাত্রে হাঁসের খাবার দেওয়া হয় খাওয়া হয়ে গেলে সাথে সাথে পরিস্কার করতে হবে। কলেরা রোগ নাহয় সে জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

  • কোন জাতের হাঁস পালন লাভজনক

    কোন জাতের হাঁস পালন লাভজনক

    বেইজিং জাতের হাঁস পালন অন্যান্য হাঁস থেকে অধিক লাভজনক। বাংলাদেশে এই জাতের হাঁসটি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বেইজিং জাতের হাঁস পালন করে অধিক লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।

    কোন জাতের হাঁস পালন লাভজনক এটি নির্ভ্র করছে আপনি কি উদ্দ্যেশ্যে হাস পালন করতে চান তার উপর। মাংসের জন্য পালন করলে মাংসের জন্য সবথেকে লাভজনক বেইজিং হাস আর ডিমের জন্য খাকি ক্যাম্পবেল হাস।

    বেইজিং হাঁসের তথ্য

    বেইজিং হাঁস একটি জনপ্রিয় প্রাচীন হাঁসের জাত। এটি প্রথম চীনে ডেভেলপ হয়েছিল। বর্তমানে এটি অন্যতম বাণিজ্যিক হাঁসের জাত। বেইজিং হাঁস আরও কিছু নামে পরিচিত, যেমন পেকিন হাঁস, বেলজিয়াম হাঁস ইত্যাদি।

    বেইজিং হাঁস ভালো মানের মাংস উৎপাদন ও পাশাপাশি ডিম উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। বছরে এরা প্রায় ২৫০ টি ডিম দিতে পারে।

    বেইজিং হাঁস পালনের সুবিধাঃ

    • এরা খুব দ্রুত বাড়ে।
    • এদের বুকের মাংসের সাইজ বড়।
    • এসের ডিম বেশ বড় ও সুস্বাদু।
    • ২-৩ বছর বয়স পর্যন্ত ডিম দেয়।
    • ডিম উৎপাদন কমে গেলে ২ বছর পর হাঁসগুলো মাংস হিসেবে বাজারে বিক্রি করা যায়।
    • খুব দ্রুত এডাল্ট হয়। মাত্র সাড়ে তিন মাসেই ডিমে আসতে পারে।
    • অন্য জাতের হাঁসের সাথে একত্রেই পালন করা যায়।

    বেইজিং হাসের রোগ বালাই

    বেইজিং হাঁসের সাধারণত রোগ বালাই বলতে ডাকপ্লেগ এবং ডাক কলেরা রোগ হয়। ২৫ দিন ও ৪০ দিন বয়সে ডাকপ্লেগ এবং৭০ দিন ও ৯০ দিন বয়সে ডাক কলেরা ভ্যাকসিন বা টিকা দিতে হয়।

    প্রাথমিকভাবে কিছু অ্যান্টিবায়েটিক এবং ভিটামিন বি জাতীয় ঔষধ খাওয়ালে বেইজিং হাঁসের রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং সেক্ষেত্রে হাঁসের মৃত্যুহার হবে খুবই কম।

    বেইজিং হাঁস পালনে লাভ ক্ষতির হিসাব

    বেইজিং হাস মূলত ৭০ থেকে ৮০ দিন পালন করা হয়। এরপর মাংসের জন্য বাজারে বিক্রয় করা হয়। এখানে বেইজিং হাস পালনের লাভ-ক্ষতির হিসেব দেখানো হয়েছে।

    খাতখরচ
    বাচ্চা ক্রয়ঃ ১০০ বাচ্চা * ৭৫৳ দরে৭৫০০৳
    খাদ্য খরচঃ ৭০০ কেজি * ৪০৳ ২৮,০০০৳
    টিকা ডাক প্লেগ ভ্যাক্সিন১০০৳
    মেডিসিন ও ভিটামিন ৪০০৳
    অন্যান্য২০০০৳
    মোট =৩৮,০০০৳
    বিক্রয়ঃ ২.৫ কেজি *১০০ হাস * ২৫০৳ দরে = ৬২,৫০০৳
    নীট লাভঃ ৬২,৫০০ – ৩৮,০০০ =২৪,৫০০৳
  • হাঁসের ঔষধ তালিকা

    হাঁসের ঔষধ তালিকা

    হাঁস পালনে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন হাঁসের ঔষধ তালিকা নিয়ে। হাঁস পালনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ন হল বাচ্চাকে সঠিক পরিচর্যা করা। হাঁসের বাচ্চা যদি ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সঠিকভাবে বড় করা যায়, তবে হাঁস পালনে লাভবান হওয়া যায়। নিচে আমরা ৩ মাস পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চার ঔষধ তালিকা দিয়েছি।

    হাঁসের বাচ্চা পালনে ঔষধ তালিকা

    • ১ থেকে ৩ দিন – কসুমিক্স প্লাস দুইবেলার পানিতে।
    • ৭ থেকে ১২ দিন – থায়াবিন প্লাস। সকালে একবেলা পানিতে।
    • ২০ তম দিন- ডাক প্লেগ ভ্যাক্সিন। ১ মিলি বুকের চামড়ার নিচে।
    • ২২ থেকে ২৫ দিন – জিংকভেট, বিকালের পানিতেপানিতে খাবারের সাথে মিশিয়ে।
    • ৩৫ থেকে ৩৮ দিন – ই সেল, একবেলার পানিতে খাবারের সাথে মিশিয়ে।
    • ৪০ তম দিন- ডাক প্লেগ ভ্যাক্সিন। ১ মিলি বুকের চামড়ার নিচে। (বুস্টার ডোজ)
    • ৪৩ থেকে ৪৭ দিন – রেনামাইসিন, দুইবেলা। খাবারের সাথে মিশিয়ে।
    • ৭০ তম দিন- ডাক কলেরা ভ্যাক্সিন। ১ মিলি বুকের চামড়ার নিচে।
    • ৯০ তম দিন- ডাক কলেরা ভ্যাক্সিন। ১ মিলি বুকের চামড়ার নিচে। (বুস্টার ডোজ)

    হাঁসের টিকা নিয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ হাঁসের ভ্যাকসিন সিডিউল

    হাঁসের বাচ্চা

    নিচের ঔষধ গুলি নিয়মিত হাসকে খাওয়ালে হাঁস সুস্থ থাকে।

    ঔষধ মাত্রাপ্রদানের সময়
    ডব্লিউ এস (WS) ৩ লিটার পা্নিতে ১ গ্রামসপ্তাহে ২-৩ দিন ৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত।
    ভিটামিন এডি৩ই (AD3E)৩ লিটার পা্নিতে ১ গ্রামসপ্তাহে ১-২ দিন, বিশেষ করে ডিম পাড়ার সময়ে।
    ই-সেল (E-Sel)৩ লিটার পা্নিতে ১ গ্রামসপ্তাহে ১-২ দিন, বিশেষ করে ডিম পাড়ার সময়ে।
    জিংকভেট ২ লিটার পা্নিতে ১ গ্রামসপ্তাহে ১-২ দিন নিয়মিত।
    রেনামাইসিন২ কেজি খাদ্যে ১ গ্রাম ১ থেকে ২ মাস অন্তর ৩ থেকে ৫ দিন।
    হাঁসের ঔষধ তালিকা

    রোগের উপর ভিত্তি করেই হাঁসের বাচ্চার ঔষধ তালিকা করতে হবে। মনে রাখা দরকার চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাই উত্তম। এজন্য খামারে যাতে রোগের আক্রমন দেখা না দিতে পারে তার জন্য যথাযত টিকা প্রদান করতে হবে।

    নিয়মিত বিরিতিতে মাল্টি-ভিটামিন দেয়া ভালো। জৈব নিরাপত্তা মেনে চলতে হবে। অসুস্থ হলে ভেটেনারিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।

  • হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতি || একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা ব্যবস্থাপনা।

    হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতি || একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা ব্যবস্থাপনা।

    আমাদের মধ্যে একটি ধারনা কাজ করে যে, হাঁসের বাচ্চা জন্মের পরপরই ছেড়ে দিলে ভাল হয়। কিন্ত বৈজ্ঞানিক ভাবে এই ধারানার কোন ভিত্তি নেই। বরং একদিন বয়সি হাঁসের বাচ্চা জন্মের পর পরই পানিতে ছেড়ে দিলে বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা নিচে তুলে ধরা হলো।

    হাঁসের বাচ্চার ব্রুডার ঘরঃ

    হাঁসের বাচ্চা পালন করতে হলে বাচ্চার কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। হাঁসের বাচ্চাকে গরমকালে ২১ দিন এবং শীতকালে ২৮ দিন ব্রুডার ঘরে রাখতে হবে।

    বাচ্চার প্রাথমিক অবস্থায় ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত কৃত্তিম উপায় যে ঘরে তাপ সরবরাহ করা হয় তাকে ব্রুডার ঘর বলে।

    ব্রুডার ঘর সাধারনত দক্ষিনমুখি হওয়া বঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও বাতাস থেকে ঘরকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য কাপড় বা চটের পর্দা লাগিয়ে সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে হবে।

    যেভাবে ব্রুডার ঘর রেডি করবেনঃ

    ব্রুডার ঘর পরিস্কার ও জীবানুমুক্ত করার পর প্রয়জনীয় যন্ত্রপাতি ঘরে স্থাপন করতে হবে। যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে..

    হাঁসের বাচ্চা পালন
    ছবিঃ হাসের বাচ্চা

    ১) হিটিং ডিভাইজ /রুম গরম করা যন্ত্রপাতিঃ

    প্রথমত হোভার স্থাপন করতে হবে। হোভার হচ্ছে টিনের ছাতার মত যা উপরে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং তাপ প্রদান করা হয়। হোভার বৈদ্যুতিক লাইট বা অন্য কোন উপায়ে তাপ সরবরাহ করে।

    হোভার ঘিরে চিকগার্ড, হার্ডবোর্ড বা চাটাই গোলাকার করে রাখতে হয়। এর ভিতরেই হাসের বাচ্চা পালন করতে হয়।

    হোভার ও বাচ্চা ব্রুডিং

    ২) লিটারঃ

    মেঝেতে ২-৩ ইঞ্চি পুরু ধানের তুষ বা কাঠের গুড়া বাচ্চার মল-মূত্রের জলীয় অংশ শুষেনিতে সাহায্য করে। এর উপর চটের ব্যাবস্থা করতে হবে। নিয়মিত চট পালটিয়ে দিতে হবে।

    ৩) খাবার ও পানির পাত্রঃ

    বাচ্চার খাদ্যের জন্য বিভিন্ন সাইজের খাবারের পাত্র ও পানির পাত্র বাজারে পাওয়া যায়। ২৫ টি বাচ্চার জন্য একটি খাবারের পাত্র ও ৫০ টি বাচ্চার জন্য একটি পানির পাত্র দেয়া যেতে পারে।

    হাসের বাচ্চা পানির সংস্পর্শে বেশি থাকতে চায়। তাই লক্ষ রাখতে হবে যেন বাচ্চা পানির পাত্রের ভিতর নেমে ভিজে না যায়। এক্ষেত্রে পানি খাওয়া শেষে পানির পাত্র তুলে রাখা যেতে পারে। অথবা নিপল ড্রিংকারও ব্যাবহার করা যেতে পারে।

    প্রয়োজনীয় তাপ প্রাদানঃ

    বয়স (দিন)তাপমাত্রা* (ফারেনহাইট)তাপমাত্রা* (সেলসিয়াস)
    ১-৭৯০-৮৮৩২
    ৮-১৪৮৫৩০
    ১৫-২১৮০২৭
    ২২-২৮৭৫ / স্বাভাবিক২৪ / স্বাভাবিক

    আর্দ্রতাঃ

    ব্রুডার ঘরে বাতাসের আর্দ্রতা হবে ৭৫-৮০% । অর্থাৎ ঘর বেশী ভিজা বা একেবারে শুকনা হবে না। আর্দ্রতা বেশী হলে ধরে বিষাক্ত গ্যাস জমা হয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

    হাঁসের বাচ্চা
    ছবিঃ হাঁসের বাচ্চা

    বায়ুচলাচলঃ

    বায়ু চলাচলের আদর্শ হচ্ছে ০.৭ ঘনমিটার / সেমিঃ / বাচ্চা। বা স্বাভাবিক বাতাস চলাচল করবে। অতিরিক্ত বাতাস অবশ্যই রোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে ব্রুডার ঘরে অক্সিজেনের যেন ঘাটতি না পড়ে এবং ব্রুডারে অ্যামোনীয়া গ্যাসের সৃষ্টি না হয়। এজন্য মাঝে মাঝে ঘরের পর্দা তুলে দিয়ে গ্যাস বের করে দিতে হবে।

    প্রয়োজনীয় আলোঃ

    হাঁসের বাচ্চা পালনের জন্য আলোক কর্মসূচি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্রুডিং সময়ে প্রাথমিক অবস্থায় ২৪ ঘন্টাই আলোর ব্যাবস্থা করতে হবে। এতে করে বাচ্চা সহজেই খাদ্য ও পানির পাত্র চিনতে পারে এবং খাদ্য গ্রহনে উত্সাহিত হয়।

    পরবর্তিতে একঘন্টা করে আলো দেয়া কমিয়ে আনতে হবে। দুই মাস বয়স থেকে ডিমে আসা পর্যন্ত কোন প্রকার কৃত্রিম আলোর দরকার নেই। ডিম পারা শুরু হলে কৃত্রিম আলোর ব্যাবস্থা করতে হবে।

    খাবার ও পানিঃ

    হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতিতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ন হলো খাদ্য ও পানি ব্যাবস্থাপনা। হাঁসের বাচ্চার বয়স অনুসারে তিন প্রকার খাবার দিতে হয়। যথা, ডাক স্টার্টার, ডাক গ্রোয়ার ও ডাক ব্রিডার।

    বাচ্চা হতে প্রায় একমাস পর্যন্ত (অনেক সময় দেড় মাস পর্যন্ত) ডাক স্টার্টার খাদ্য প্রদান করতে হয়। ডাক স্টার্টার খাদ্যে কমপক্ষে ২০% প্রোটিন ও ২৮৫০ কিলোক্যালরি বিপাকীয় শক্তি থাকতে হবে।

    এরপর ৩ থেকে ৩.৫ মাস পর্যন্ত ডাক গ্রোয়ার খাদ্য প্রদান করতে হবে। ডিম পারা শুরু করলে ৫% ডিমে আসা পর্যন্ত প্রিলেয়ার খাদ্য দেয়া যেতে পারে।

    অতঃপর ডিম পারা শুরু করলে ডাক ব্রিডার/লেয়ার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। হাঁসের খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য তৈরি করা নিয়ে আমাদের নিচের লেখাটি অনুসরন করতে পারেন।

    আরো পড়ুনঃ বয়স অনুসারে হাঁসের খাদ্য ব্যবস্থাপনা

    হাঁসের বাচ্চা
    ছবিঃ হাঁসের বাচ্চা

    প্রাথমিক অবস্থায় বিশেষ নোটঃ

    বাচ্চা নিয়ে ব্রুডারে ছেড়ে দেয়ার পর প্রথমিকভাবে পানিতে গ্লুকোজ দেয়া যেতে পারে। প্রথম তিনদিন পানিতে যেকোন একটি এন্টিবায়োটিক প্রদান করলে বাচ্চার মৃত্যুহার কম হয়।

    হাঁসের বাচ্চার ব্রূডার সবসময় শুকনো রাখতে হবে। এজন্য কিছু সময় পানির পাত্র সরিয়ে রাখা যেতে পারে। তবে খাদ্য দেয়ার পূর্বেই পানির ব্যাবস্থা করতে হবে।

    হাঁসের বাচ্চার ঔষধ প্রদানঃ

    রোগের উপর ভিত্তি করেই চিকিৎসা করতে হবে। মনে রাখা দরকার রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করাই উত্তম। এজন্য খামারে যাতে রোগের আক্রমন দেখা না দিতে পারে তার জন্য যথাযত টিকা প্রদান করতে হবে।

    নিয়মিত মাল্টি ভিটামিন দেয়া ভালো। জৈব নিরাপত্তা মেনে চলতে হবে। অসুস্থ হলে ভেটেনারিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।

    আরো পড়ুনঃ হাঁসের টিকা প্রদান কর্মসূচি

    হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতি সম্পর্কিত বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরলে ইমেইল করতে পারেন।

    ইমেইলঃ admin@poultrygaints.com