মুরগির পেটের মধ্যেই ডিম পচে যাওয়া বা এগ পেরিটোনাইটিস একটি সাধারণ মারাত্মক সমস্যা যা লেয়ার মুরগির মধ্যে বেশি দেখা যায়। এটি মূলত তখন ঘটে যখন ডিম্বাণু (yolk) পেটের ভেতরে পড়ে গিয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এটি মুরগির ডিম উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এগ পেরিটোনাইটিস রোগের কারণ:
এগ পেরিটোনাইটিস (Egg Peritonitis) মূলত মুরগি ও অন্যান্য পোলট্রির একটি সাধারণ রোগ, যা ডিম্বাশয় ও ডিম্বনালীতে সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
- ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু সঠিকভাবে ওভিডাক্টে (ডিম্বনালী) না যাওয়া – এতে ডিম্বাণু পেটের গহ্বরে গিয়ে সংক্রমণ তৈরি করে।
- ইনফেকশন (ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ) – বিশেষ করে Escherichia coli (E. coli) ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই সমস্যা বেশি হয়।
- হরমোনজনিত সমস্যা – অস্বাভাবিক ডিম্বস্ফোটন হলে ডিম্বাণু ওভিডাক্টে না গিয়ে পেটে জমে যায়।
- ডিম্বাণু (ovum) ডিম্বনালীতে না গিয়ে পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটিতে (পেটের অভ্যন্তরীণ পর্দা) পড়ে গেলে সংক্রমণ হতে পারে।
- জিনগত সমস্যা বা বংশগত কারণ – কিছু মুরগির জাতের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
- স্ট্রেস ও পরিবেশগত কারণ – খাদ্যে পুষ্টির ঘাটতি, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা, এবং খাঁচায় অতিরিক্ত গাদাগাদি থাকলে এই সমস্যা বাড়তে পারে।
- ক্যালসিয়াম, ভিটামিন D3, প্রোটিন ও মিনারেলের ঘাটতি এগ পেরিটোনাইটিসের একটি কারণ।
- ডিমের আকার বড় বা ডিমে খোসার সমস্যা – ডিম বেশি বড় হলে বা নরম খোলস হলে এটি সহজেই ওভিডাক্ট থেকে বের হতে না পেরে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এগ পেরিটোনাইটিস রোগের: লক্ষণ
✔️ অবসাদ ও দুর্বলতা – মুরগি দুর্বল হয়ে পড়ে, খাবার কম খায় ও নড়াচড়া কমায়।
✔️ পেট ফোলা – পেটের নিচের অংশ ফুলে যায় এবং চাপ দিলে নরম অনুভূত হয়।
✔️ উচ্চ তাপমাত্রা (জ্বর) – সংক্রমণের ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
✔️ ডিম পারার হার কমে যাওয়া বা সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়া।
✔️ হলুদ বা সবুজ পাতলা বিষ্ঠা – ডিম্বাণু জমে গিয়ে সংক্রমণ হলে বিষ্ঠার রঙ পরিবর্তিত হয়।
✔️ শ্বাসকষ্ট – পেট ফুলে গেলে ফুসফুসে চাপ পড়ে, ফলে মুরগি হাঁপাতে শুরু করে।
এগ পেরিটোনাইটিস রোগের প্রতিকার ও চিকিৎসা:
১. প্রাথমিক প্রতিকার:
✅ পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা – খাঁচা, খাদ্য ও পানির পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা।
✅ সুষম খাদ্য সরবরাহ – ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিনযুক্ত খাবার নিশ্চিত করা।
✅ স্ট্রেস কমানো – অতিরিক্ত গরমে ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত জায়গার নিশ্চয়তা।
✅ ভিটামিন ও মিনারেল সম্পূরক প্রদান – বিশেষ করে ভিটামিন A, D3 ও E, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।
২. ওষুধ প্রয়োগ:
➡️ অ্যান্টিবায়োটিক – সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে (প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)।
➡️ অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ – প্রদাহ কমানোর জন্য (চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী)।
➡️ ডিটক্সিফায়ার ও লিভার টনিক – সংক্রমণজনিত বিষক্রিয়া কমাতে লিভার টনিক ও ভিটামিন E + Selenium।
➡️ ফ্লুইড থেরাপি – গুরুতর অবস্থায় ORS বা গ্লুকোজযুক্ত পানি সরবরাহ করা।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
✔️ গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য – পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ ফিড নিশ্চিত করা।
✔️ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ – অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা প্রদান।
✔️ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা – মুরগির যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া।
✔️ উন্নত প্রজনন ব্যবস্থাপনা – শুধুমাত্র অধিক ডিম উৎপাদনকারী জাত নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত নির্বাচন করা।
সঠিক ব্যবস্থাপনা ও যত্নের মাধ্যমে এগ পেরিটোনাইটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
উপসংহার:
এগ পেরিটোনাইটিস একটি গুরুতর সমস্যা হলেও সময়মতো প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করা গেলে মুরগির মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। সঠিক খাদ্য, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করলে এই সমস্যার প্রভাব কমানো যায়।