বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প দ্রুত বর্ধনশীল একটি সেক্টর। আমাদের দেশের প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৩৮ ভাগ আসে মুরগির মাংস ও ডিম থেকে। লেয়ার ডিম উৎপাদনকারী একটি মুরগির বিশেষ জাত যা পোল্ট্রি শিল্পের একটি উল্লেখযােগ্য অংশ। সঠিকভাবে লেয়ার মুরগি পালন করলে মূলধন লগ্নিকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাভবান হতে পারে।
লেয়ার মুরগি পালনে অধিক জায়গার প্রয়ােজন হয় না। তাই লেয়ার মুরগি পালন বাংলাদেশের ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা। এটি জীবিকা নির্বাহের একটি উপায় হিসেবে দেশে বেকার যুবক ও নারীদের কর্মসংস্থান ও আয়ের উৎসের পাশাপাশি তাদের পরিবারে প্রাণিজ আমিষের অভাব পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই লেয়ার পালন শুরুর আগে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত লেয়ার পালনের মূল বিষয়গুলাে সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লেয়ার মুরগি কী ?
ডিম উৎপাদনের জন্য যেসব মুরগি পালন করা হয় সেগুলােকে ডিম পাড়া মুরগি বা লেয়ার বলে। অধিক ডিম উৎপাদনশীল বিশুদ্ধ জাতের মােরগ-মােরগির মধ্যে বংশপরম্পরায় প্রজননের মাধ্যমে হাইব্রিড লেয়ার মুরগি তৈরি করা হয়, যা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ডিম উৎপাদানের জন্য পালন করা হয়।
ডিমের খােসার রঙের উপর ভিত্তি করে লেয়ারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় :
১) সাদা ডিম উৎপাদনকারী জাত : পালকের রং সাদা।
২) লাল ডিম উৎপাদনকারী জাত : পালকের রং বাদামি।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত হাইব্রিড লেয়ার ও এদের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম :
বাংলাদেশে সরকারীভাবে নতুন হাইব্রিড লেয়ার জাত স্বর্ণা ও শুভ্রা আনুষ্ঠানিক উদ্বােধন করা হয়েছে। তবে তা এখনাে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায়নি। বিদেশ থেকে প্যারেন্ট স্টকের একদিনের বাচ্চা এনে বড় করে তাদের পাড়া ডিম ফুটিয়ে বিভিন্ন স্ট্রেইনের লেয়ার হাইব্রিড বাচ্চা উৎপাদন করা হয় এবং খামারিদের মাঝে বিক্রি করা হয়। এই প্যারেন্ট স্টকের মুরগি ডিমপাড়া শেষে বাতিল হয় এবং নতুন করে আবার প্যারেন্ট স্টক এর একদিনের বাচ্চা আনতে হয়।
তবে বর্তমানে কিছু হ্যাচারি বা ব্রিডার ফার্ম গ্রান্ড প্যারেন্ট স্টক বাইরে থেকে নিয়ে এসে এদেশে পালন করায় প্যারেন্ট স্টকের একদিনের বাচ্চা কমমূল্যে তাদের কাছ থেকে অন্যান্য যাচারি কিনতে পারছে।
লেয়ার মুরগির সাধারণ বৈশিষ্ট্য
- ডিম উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে বছরে ২৮০-৩২০টি।
- ১৮-২০ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় সবগুলাে মুরগি একই সাথে ডিম উৎপাদন করে।
- এদের ডিমের ওজন দেশি মুরগির চেয়ে ১০-১৫ গ্রাম বেশি (৫০-৬০ গ্রাম)
- কুচে হওয়ার প্রবনতা কম থাকে।
- ডিম উৎপাদনের সময়কালে পালক ছাড়ে না।
লেয়ার মুরগির খামার স্থাপন
লেয়ার খামারের স্থান নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয় :
- খামার তৈরির নির্বাচিত স্থান লােকালয় বা আবাসিক ঘনবসতি এলাকা থেকে দূরে শুষ্ক, উঁচু ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা বিদ্যমান এমন থেকে হবে।
- যাতায়াতের সুবিধা থাকতে হবে।
- অন্য মুরগির খামার বা প্রাণীর ঘর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে হবে।
- পর্যাপ্ত আলাে ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- আশপাশে পচা ডােবা ও নর্দমামুক্ত থেকে হবে।
- পানি ও বিদ্যুতের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
- ডিম উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট কাঁচামালের সহজলভ্যতা থাকতে হবে
- ডিম বাজারজাতকরণের সুবিধা থাকতে হবে।
- ভবিষ্যতে খামারটি সম্প্রসারণ করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে জমি নির্বাচন ও ক্রয় করতে হবে।
- বন্য জন্তু বা অবাঞ্ছিত লােকজন দ্বারা আমার ক্ষগ্রিস্ত হবে না এমন স্থান হবে।
- বিষ্ঠা ও লিটার সরিয়ে ফেলার সুযােগ থাকতে হবে।
- খামার ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়ার সুবিধা থাকতে হবে।
খামারের অবকাঠামাে নির্মাণ
মুরগির ঘর নির্মাণে কোনাে ভুল বা ক্রটি করা চলবে না। মুরগিকে আরামদায়ক পরিবেশ নিরাপদ ও রােগমুক্ত রাখার জন্য ঘরের প্রয়ােজন। খােলামেলা উঁচু জায়গায় প্রচুর আলাে ও বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় তৈরি করতে হবে। বর্তমান বিশ্বে দুই ধরনের ঘরে মুরগি পালা হয়। যথা :
- খােলামেলা ঘর। (ওপেন শেড)
- আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত ঘর। (কন্ট্রোল শেড)
লেয়ার খামারের খােলামেলা ঘর তৈরির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলাে বিবেচনা করতে হবে:
১. ঘরের অবস্থান ও প্রকৃতি :
এই ঘর দক্ষিণে খােলা থাকে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘরের খােলামেলা স্থানে পর্দা দ্বারা ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা। ঘরের মধ্যে মুরগি আবদ্ধ রাখার জন্য খােলা স্থান জাল দ্বারা ঘিরে দেওয়া হয়। ঘরে লিটার ধরে রাখার জন্য খােলা স্থানের নিচের অংশ ১-১.৫ ফুট দেয়াল দ্বারা ঘিরে দেওয়া থাকে। নিরাপত্তার জন্য সম্পূর্ণ অংশ তারের জাল দ্বারা ঘেরা থাকে।
২. ঘরের প্রশস্ততা :
সাধারণত ছােট খামার ঘরের প্রশস্ততা খাঁচার আকার অনুসারে করতে হয়। লিটার পদ্ধতিতে ঘরের প্রশস্ততা সর্বনিম্ন ১০ ফুট এবং উর্ধ্বে ২৫ ফুট করা যায়।