ফাউমি মুরগির ঔষধের তালিকা – রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

ফাউমি মুরগি পালন অন্যান্য মুরগির তুলনায় সহজ। সাধারন ব্যবস্থাপনায় ফাউমি মুরগি লাভজনকভাবে পালন করা সম্ভব। প্রাকৃতিকভাবে এরা ভালো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও কিছু কমন রোগ ফাউমি মুরগিতে দেখা যায়। এই লেখাতে আমরা ফাউমি মুরগির ঔষধের তালিকা রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

সাধারনত বাচ্চা বয়সে ফাউমি মুরগির মৃত্যুহার অধিক এবং অপুষ্টিজনিত কারনে সঠিকভাবে বেড়ে উঠেনা। ফলে ডিম ও মাংস উৎপাদন সঠিকমাত্রায় আসেনা। বাচ্চা বয়সে সঠিকভাবে যত্ন নিলে দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে।

ফাউমি মুরগির ঔষধের তালিকা

বয়স দিনঔষধের নাম
প্রথম দিনলাইসোভিট বা গ্লুকোজ
২ থেকে ৪ দিন টানাএমক্সাসিলিন*
৩ থেকে ৫ দিনের ভিতরআইবি+এনডি লাইভ ভ্যাক্সিন (রানীক্ষেত ও ব্রংকাইটিস)
১০ থেকে ১২ দিনের ভিতরগামবোরো লাইভ ভ্যাক্সিন
১২ থেকে ১৪ দিনলিভারটনিক ও ভিটামিন
১৮ থেকে ২২ দিনের ভিতরগামবোরো লাইভ ভ্যাক্সিন
২৪ থেকে ২৬ দিনের ভিতরএনডি লাইভ ভ্যাক্সিন (রানীক্ষেত)
২৪ থেকে ২৬ দিনএম্প্রোলিয়াম + সিপ্রো*
৩০ তম দিনফাউলপক্স ভ্যাক্সিন।
৩৫ তম দিনকৃমিনাষক ঔষধ।
৪৫ থেকে ৪৮ দিনের ভিতররানীক্ষেত লাইভ ভ্যাক্সিন* (প্রাদুর্ভাব বেশি থাকলে)
৫০ থেকে নিয়মিতপ্রোবায়োটিক + ভিটামিন + লিভারটনিক

*যেকোন এন্টিবায়োটিক ব্যাবহারের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

অবশ্যই ফাউমি মুরগিকে টিকা প্রাদান করতে হবে। ফাউমি মুরগির ভ্যাক্সিন সিডিউল নিয়ে জানতে আমাদের লেখাটি পড়তে পারেন।

আরো পড়ুন >> ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল

নিয়মিত ভাবে ফাউমি মুরগিকে বেশ কিছু ভিটামিন দেয়া যেতে পারে। এতে মুরগির ডিম উৎপাদন ভালো থাকবে।

ঔষধের নামসাপ্তাহিকপ্রয়োগমাত্রা
এডি৩ইসপ্তাহে দুইদিন সকালের পানিতে২ লিটার পানিতে ১ মিলি।
লিভার টনিকসপ্তাহে একদিন সকালের পানিতে৩ লিটার পানিতে ১ মিলি।
ই-সেলএক সপ্তাহ অন্তর পরপর দুইদিন২ লিটার পানিতে ১ মিলি।
জিংকসপ্তাহে একদিন সকালের পানিতে১ লিটার পানিতে ১ মিলি।
ক্যালসিয়ামসপ্তাহে একদিন বিকেলের পানিতে১ লিটার পানিতে ১ মিলি।

ফাউমি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা

ফাউমি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলেও বেশ কিছু রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারনত এ রোগগুলি কমন কিছু উপোসর্গ এর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেমন, মুরগির ঝিমিয়ে থাকা, সাদা পাতলা পায়খানা করা, মাথার ঝুটি শুকিয়ে যাওয়া, দূর্বল বা নিস্তেজ হয়ে পরা ইত্যাদি লক্ষন দেখা যায়।

নিচে ফাউমি মুরগির কিছু রোগ ও এর চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

রানিক্ষেত রোগ

রানিক্ষেত একটি ভাইরাস জনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। যা মূলত, ‘নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস‘ (এনডিভি) দ্বারা সংক্রমিত হয়। এটি প্রাথমিকভাবে তীব্র শ্বাসযন্ত্রের রোগ হিসাবে দেখা দেয়। তবে ঝিমানো, দুর্বলতা বা স্নায়বিক প্রকাশ এবং ডায়রিয়ার মত লক্ষনসমূহ দেখা যেতে পারে।

রানীক্ষেত রোগে শতভাগ প্রর্যন্ত মারা যেতে পারে। ফাউমি মুরগির যে কোন বয়সেই এই রোগ হতে পারে। তবে ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে এই রোগের প্রতিরোধ করা যায়।

চিকিৎসাঃ রানীক্ষেত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।

মুরগির রানীক্ষেত রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে আরো জানতে আমাদের এই লেখাটি পড়ুন।

গামবোরো রোগ

গামবোরো একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এটি মুরগির লসিকা গ্রন্থি বারসাকে আক্রান্ত করে। একে ‘ইনফেকসাস বারসাল ডিজিজ’ বলা হয়। গামবোরো হলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আক্রান্ত হয়। এ রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৩০%। সাধারণত ১০-৫০ দিন বয়স পর্যন্ত এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী থাকে।

চিকিৎসাঃ ভাইরাসজনিত রোগ বিধায় এর জন্য ভ্যাকসিন বা টিকা প্রয়োগ করতে হবে। ভাইরাসজনিত রোগের জন্য দেশি মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল মেনে চলতে হবে।

ফাউল পক্স

ফাউল পক্স ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক রোগ। দেশি মুরগির যে কোন বয়সেই ফাউল পক্স হতে পারে কিন্তু বাচ্চা মুরগিতে আক্রান্ত হলে বেশি মারা যায়। সাধারণত শরীরের পালক বিহীন জায়গায় সাধারণত শক্ত গোটা উঠে এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ে। এই রোগে মুরগির শরীরে তীব্র জ্বর থাকে।

চিকিৎসাঃ যথাসময়ে ফাউল-পক্স এর টিকা প্রদান করতে হবে।

রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস

এটি একটি প্রোটোজোয়া জনিত রোগ। ২ মাস পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী। সারা বছরই এ রোগটি দেখা গেলেও তবে বর্ষাকালে এর প্রার্দুভাব বেশি দেখা যায়। রক্ত আমাশয় হলে মুরগির ওজন সঠিক মাত্রায় আসে না। যা খামারিকে ব্যাপক লসের মুখে ফেলে দেয়।

চিকিৎসাঃ টল্টাজুরিল বা এমপ্রোলিয়াম জাতীয় ওষুধ দিয়ে এই রোগ নিয়ন্ত্রন সম্ভব।

কৃমির সংক্রামন

ফাউমি মুরগিতেও কৃমির আক্রমন ঘটে। কৃমি হলে খাদ্যে অরুচী আসে এবং খাদ্য গ্রহন কমিয়ে দেয়। ফলে মুরগির ওজন কাংক্ষিত মাত্রায় আসে না। কৃমি হলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

চিকিৎসাঃ ফাউমি মুরগিকে অবশ্যই নিয়মিতভাবে কৃমির ওষুধ দিতে হবে।

ফাউল কলেরা

ফাউল কলেরা মুরগির একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত পানিবাহিত রোগ। এই রোগে মৃত্যুর হার প্রায় ৩০-৫০% পর্যন্ত হতে পারে। ফাউল কলেরা (Pasteurella matocida) নামক ব্যাক্টেরিয়ার কারনে হয়ে থাকে।

অতিরিক্ত গরম পড়লে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশী হয়। এছাড়া পরিবেশে আদ্রতা বেশি থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

চিকিৎসাঃ যেহেতু ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগ তাই যে কোন একটি ভালো এন্টিবায়োটিক দিতে হবে। তবে কলেরা রোগের সরকারি ভ্যাকসিন বা টিকা রয়েছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *