মাসকোভি হাঁস বা চীনা হাঁস

মাসকোভি হাঁস বা চীনা হাঁস সারা বিশ্বেই দেখতে পাওয়া যায়। চীনা হাঁস গৃহপালিত হাঁসের মধ্যে আকারে সবথেকে বড়। এটিই একমাত্র পোষা হাঁস যা সাধারন হাঁস বা ‘ম্যালার্ড’ থেকে প্রাপ্ত নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি আসলে সত্যিকারের হাঁস নয়। তবে এটি হাঁসের খুব কাছাকাছি একটি জাত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cairina Moschata। এরা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির ওয়াটার ফাউল।

মাসকোভি হাঁস
মাসকোভি হাঁস

উপমহাদেশ ও ইউরোপে অনেক আগে থেকেই মাসকোভি হাঁস স্থানীয় লোকদের দ্বারা গৃহপালিত হয়েছিল। এদেরকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। আমাদের দেশে এটি চীনা হাঁস নামেই বেশী পরিচিত। এদেরকে মাস্কি হাঁস বা বার্বারি হাঁসের মতো আরও কিছু নামে ডাকা হয়। এরা প্রচুর মশা খায় বলে এদেরকে মাসকো হাঁসও বলা হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় মাস্কোভি হাঁসের আরও অনেক নাম রয়েছে। তবে মাস্কোভি হাঁসের নামটির সঠিক উৎস জানা যায়নি। ধারনা করা হয়, ‘মাসকোভি’ শব্দটি রাশিয়ার “মস্কো” থেকে নেয়া হয়েছে। তবে এটি শুধুমাত্র মস্কোর স্থানীয় কোন হাঁস নয়। গৃহপালিত মাংসের হাঁসের মধ্যে এটি পৃথিবীব্যাপী খুব বিখ্যাত।

মাসকোভি হাঁসের শারীরিক বৈশিষ্ট্যঃ

ভারী জাতের হাঁস হিসাবে মাসকোভি হাঁসকে তালিকাভুক্ত করা হয়। এদের প্রশস্ত পা ও সমান লেজ আছে। এদের নখর বেশ বড় ও বাকানো। শরীরের পালক কালচে পীত কালারের। এদের ডানায় সাদা পালকের সাথে সবুজাভ-কালো পালক থাকতে পারে। মুখের উপর লালচে গিট বিদ্যমান। যেটি বাচ্চা অবস্থায় না থাকলেও বয়স হলে দৃশ্যমান হয়। তবে মুখের ত্বক কালচে। পা কালো ও চোখ বাদামি।

এদের মদ্দা বা হাঁসা গুলি মায়া হাঁসের আকারের প্রায় দ্বিগুণ। সাধারণত, মদ্দা হাঁসের দৈর্ঘ্য প্রায় 34 ইঞ্চি (86 সেমি) এবং গড় ওজন প্রায় ৪.৬ থেকে ৬.৮ কেজি। মায়া হাঁসের পালক ও গঠনও একইরকম হয় তবে এটি আকারে আরও ছোট। মায়া হাঁসের ওজন ২.৬ থেকে ৩.৬ কেজি পর্যন্ত হয়।

মাসকোভি বা চীনা হাঁস পালনের উদ্দ্যেশ্যঃ

চীনা বা মাসকোভি হাঁস একটি মাংস উৎপাদনশীল হাঁসের জাত হিসাবে উত্থাপিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদেরকে মাংসের জন্য পালন করা হয়। তবে এদেরকে হাইব্রিড হাঁস উৎপাদনের জন্য পেকিন বা বেইজিং হাঁসের সাথে পালন করা হয়। এদের ক্রসে যে বাচ্চা হয় তা আকরে বেশ বড় হলেও এটি হিজড়া হয়। অর্থাৎ, এদের প্রজনন ক্ষমতা থাকে না।

চিনা হাঁস পোষা হাঁস হিসেবে পৃথিবীব্যাপী সৌখিন হাঁস-খামারিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এদের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও ভাল মানের।

বিশেষ নোটঃ

মাসকোভি হাঁস আসলে হাঁস নয় বরং অনন্য এক পাখি। এরা শান্ত স্বভাবের পাখি। তবে অপরিচিত কাউকে দেখলে তেড়ে যেতে পারে। এরা হিস-হিস শ্বব্দ করে চলাফেরা করে। অন্য জাতের হাঁসের সাথে এরা মিলে থাকতে পারে। যদিও এদের ক্রসে হিজড়া বাচ্চা উৎপাদন হয়। এরা সাধারনত জোড় বাধতে পছন্দ করে। নিজ জাত না পেলে অন্য জাতের হাঁসের সাথেই এরা জোড় বাঁধে।

মাসকোভি হাঁস বেশ ভাল উড়তে পারে এবং একবারে অনেকদূর পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে। তাই এদের ডানা-ক্লিপ করা প্রয়োজন। বিশেষত হাঁসরা দীর্ঘ দূরত্বে উড়তে সক্ষম হয়। মাসকোভি হাঁস পালনের জন্য বেশী পানির প্রয়োজন নেই। এরা সাধারণত অন্যান্য হাঁসের জাতের মতো সাঁতার কাটে না। কারণ এদের তেল গ্রন্থিগুলি বিকাশাধীন।

বুনো মুসকোভি হাঁস লাজুক এবং সাধারণত নীরব। গার্হস্থ্য মাসকোভিহাঁস খুব বুদ্ধিমান, কিন্তু কখনও কখনও আক্রমণাত্মক হতে পারে। কিছু লোক তাদের বুদ্ধি, স্বতন্ত্র চেহারা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিত্বের জন্য জাতকে প্রশংসা করে। অন্যরা তাদের অগোছালোতা, আগ্রাসন এবং ভিন্ন চেহারার জন্য তাদের অপছন্দ করে। এরা অন্য হাঁসের মত একত্রে না চলে সাধারণত ছোট ছোট দলে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত এরা পোকামাকড়, মাছ, পাতা, শিকড়, বীজ, ডালপালা, সরীসৃপ এবং ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী খেয়ে থাকে। এরা তেলাপোকা খুবই পছন্দ করে। এদের কাছে তেলাপোকা অনেকটা চকলেট হিসেবে বিবেচিত।

মাসকোভি হাঁস

মাসকোভি হাঁস দ্রুত বর্ধমানশীল হাঁস নয়। পুরোপুরি পরিণত হতে প্রায় এক বছর সময় নেয়। তবে মাংসের হাঁসের জাত হিসাবে এরা বেশ আগেই জবাইয়ের বয়সে পৌঁছে যায়। মদ্দা হাঁস প্রায়ই মর্যাদার জন্য এবং হাঁসের সাথে বংশবিস্তারের জন্য অন্যান্য মদ্দা হাঁসের সাথে লড়াই করে। এক্ষেত্রে মদ্দা হাঁস খুবই আক্রমণাত্মক হতে পারে।

মায়া হাঁস সাদা কালারের ডিম দেয়। এরা মা হিসেবে খুবই ভালো। সাধারণত একসাথে ৮ থেকে ১৬ টি ডিম দিয়ে তা দিতে বসে। এবং প্রায় 35 দিনের জন্য ডিম পারা বাদ দেয়।

নীচের চার্টে মাসকোভি বা চীনা হাঁসের পূর্ণ বংশের তথ্য দেয়া হলো।

মাসকোভি বা চীনা হাঁসের তথ্য | জাতের তথ্য

জাতের নাম: মাসকোভি। ( cairina moschata)
অন্য নাম: মাস্কো, চীনা, বার্বারী ইত্যাদি সহ আঞ্চলিক আরো অনেক নাম বিদ্যমান।
পালনের উদ্দ্যেশ্য: মাংস ও সৌখিনতার জন্য।
জাতের আচরণ: শান্ত-শিষ্ট,আকর্ষনীয়,শক্ত, ধীরস্থির। মাতৃত্বস্নেহ প্রবন।
আকার: বেশ বড়। হাঁসা প্রায় ৪.৬ থেকে ৬.৮ কেজি ও হাঁসি প্রায় ২.৬ থেকে ৩.৬ কেজি।
তা দেয়ার প্রবনতা: সাধারন।
জলবায়ু সহনশীলতা: সব জলবায়ু ।
ডিম রঙ: সাদা।
ডিমের আকার: বড়। (৬৫ গ্রাম প্রায়)
ডিমউৎপাদনশীলতা: ১০০-১২০ ডিম/বছর
বৈচিত্র্য:কালো,সবুজাভ কালো, নীল, সাদা, চকলেট সহ কয়েকটি রঙ
মূল দেশ:আমেরিকা, ব্রাজিল, ইউরোপ।

Leave a Comment