হাঁসের বিভিন্ন রোগ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

হাঁসের রোগ সাধারণত মুরগির চেয়ে কম হয়ে থাকে। সারাবিশ্বে কোটি কোটি হাঁস পালন করা হয়। এসব হাঁস অনেকাংশে পরিণত বয়সের আগেই মারা যায়। বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণে হাঁসের মৃত্যু হয়ে থাকে। 

ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস

হাঁসের বাচ্চার সবথেকে মারাত্বক রোগ। যা একদিন বয়স থেকে ৫ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত হতে পারে। মারাত্মক  সংক্রামক রোগটি picorna virus দিয়ে হয়। মার্টালিটি ১০০% পর্যন্ত হতে পারে।

লক্ষণসমূহ

  • ঘাড় বাকা ও কাত হয়ে একদিকে ঘুরতে থাকে
  • খাদ্য গ্রহন কমিয়ে দেয়।
  • দ্রুত বিস্তার লাভ করে ও সবুজ পায়খানা করে।
  • লিভার ও কিডনি স্প্লিন বড় হয়।

চিকিৎসা

চিকিৎসায় তেমন ভাল রেজাল্ট পাওয়া যায়না। টিকা প্রদান করতে হবে। ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস এর টিকা রয়েছে।

প্রতিরোধ ও সতর্কতা

ব্রিডারে টিকা দিতে হবে যাতে বাচ্চাতে না আসে। ভালো মানের বিডার থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে।মূলত বাতাসের সাহায্যে এ রোগ ছড়ায় তাই খামারের আশে পাশে পর্দা রাখতে হবে।রোগ প্রতিরোধে হাসকে বাইরের পরিবেশ হতে যথাসম্ভব আলাদা রাখতে হবে। আক্রান্ত মৃত হাঁসকে পুতে ফেলতে হবে ও খামারকে ব্লিচিং পাউডার বা জীবণুনাশক দিয়ে খুব ভালভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে।

ডাক প্লেগ

হাঁসের অন্যতম একটি মারাত্বক রোগ হচ্ছে ডাক প্লেগ। ৯০ থেকে ১০০% পর্যন্ত মারা যেতে পারে এই ডাক প্লেগ রোগে। এ রোগের অপর নাম ডাক ভাইরাস এন্টারাইটিস। ডাক প্লেগ হারপেস (Herpes) গ্রুপের এক প্রকার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।

আমাদের দেশে সবথেকে বেশি দেখা যায় এই ডাক প্লেগ রোগ। তবে সরকারিভাবে এটির টিকা রয়েছে।

লক্ষণসমূহ

  • হঠাত আক্রান্ত হয় (একিউট) এবং অনেক মারা যায় যেতে থাকে।
  • খাদ্য কম ও কিন্তু পানি বেশি খায়
  • চোখের পাতা ফুলে যায়,পানি পড়ে ও ময়লা জমে।
  • ঘাড় পাশে বা পিছনের দিকে বেকে যায় ও মারা যায়
  • মাথা ঘাড় ঘুরতে থাকে ও মারা যায়।

চিকিৎসা

নিয়মিত টিকা প্রাদান করতে হবে। ১ম বার ২১-২৮দিনে, ২য় বার ৩৬-৪৩ দিনে বুকের মাংসে।পরবর্তিতে   ৪-৫ মাস পর পর।

সরকারী টিকা ১০০ ডোজ, ১০০ মিলি পরিষ্কার পানির সাথে মিশিয়ে বুকের মাংসে 1ml করে ইনজেকশন দিতে হবে।

প্রতিরোধ ও সতর্কতা

সঠিকভাবে হাসের ভ্যাক্সিন সিডিউল মেনে চলতে হবে। হাঁসকে ভালোমানের খাদ্য দিতে হবে।

ডাক কলেরা

ডাক কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। এটি হাঁস-মুরগি উভয়েরই হয়ে থাকে। সাধারণ দুই মাস এর বেশি বয়সী হাঁস-মুরগি বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পানি বা খাবার হতেই এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। এটি পাস্টোরেলা মাল্টোসিডা নামক ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে হয়।মৃত্যহার ৫০%।

লক্ষণসমূহ

  • এ ক্ষেত্রেও হাঁসপাতলা সবুজ পায়খানা করে। 
  • আক্রান্ত হাঁসর হাঁটু ও মাথা ফুলে যায়।
  • পা প্যারালাইসিস হয় এবং সবুজ পায়খানা হয়।
  • শ্বাসকষ্ট হওয়ায় মুখ হা করে নিশ্বাস নেয়। পিপাসা বেড়ে যায়।
  • চোখ দিয়ে পানি পড়ে ও নাক, মুখ, দিয়ে লালা ঝরে।
  • হাঁস দুর্বল হয়ে পড়ে ও ডিম পাড়ে না।

ডাক প্লেগ রোগ হলে পাতলা মলের সাথে সামান্য রক্ত দেখা যায় আর কলেরা হলে মলের সাথে রক্ত মোটেই থাকেনা।

চিকিৎসা

জেন্টামাইসিন এবং পটেনশিয়াল সালফোনেমাইড (মাইকোনিড, কসুমিক্স ) ভাল কাজ করে।১ম বার ৪৫-৬০ দিনে ,২য় বার বুস্টার ডোজ ১৫ দিন পর ৬০-৭৫ দিন পর, বুকের চামড়ার নিচে।পরবর্তিতে ৪-৫ মাস পর পর।

প্রতিরোধ ও সতর্কতা

হাঁসের খামার সব সময় পরিস্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। কোন সময় যদি খামারে এ রোগ দেখা দেয় রোগাক্রান্ত হাঁস আলাদা স্থানে রাখতে হবে। যে পাত্রে হাঁসের খাবার দেওয়া হয় খাওয়া হয়ে গেলে সাথে সাথে পরিস্কার করতে হবে। কলেরা রোগ নাহয় সে জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া খামারের সকল হাঁসকে কলেরা রোগের টিকা দিতে হবে। 

মাইকোটক্সিকোসিস ও বটুলিজম

পচা,নষ্ট খাবার থেকে হয়ে থাকে। হাঁস যেহেতু বিভিন্ন নোংরা পানিতে গুগলি খেয়ে থাকে তাই প্রায়শই এই রোগ দুটি দেখা যায়। ক্লোস্টিডিয়াম বটুলিয়াম নামক জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয়।

এটি একধরনের বিষক্রিয়া অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগও বটে। যা আপনার খামারে মহামারী আকার ধারন করতে পারে।

লক্ষণসমূহ

  • হঠাৎ করেই অনেক গুলো হাঁস মারা যেতে পারে
  • নিস্তেজ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • ঘাড়, পা ও পাখা প্যারালাইসিস হতে পারে।
  • বটুলিজমে পিছন দিক বের হয়ে আসে।
  • গন্ধ যুক্ত পায়খানা করে।

চিকিৎসা

আক্রান্ত হাঁসকে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করাতে হবে। এতে শরীরের টক্সিন বের হয়ে যাবে। প্রয়োজনে লেক্সেটিভ দেওয়া যাবে পানির সাথে।

যেহেতু রোগটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সেহেতু সময় অপচয় না করে যত দ্রুত সম্ভব একটি ভালো মানের এন্টিবায়োটিক দেয়া যেতে পারে। আক্রান্ত হাঁসের জন্য চিকিৎসা মাত্রায় এবং ভালো হাঁসের জন্য প্রতিরোধক মাত্রায় ৫-৭ দিন।

বটুলিজম এন্টি-টক্সিন ০.৫-১ মিঃ লিঃ (Botulism Antitoxin 0.5-1 ml) ইন্ট্রাপেরিটোনিয়েল (Intra Peritoneal) ইনজেক্ট করে দিতে হবে।

প্রতিরোধ ও সতর্কতা

পঁচা বা বাসি খাবার থেকে বিরত রাখতে হবে। খাদ্যে ভালো মানের টক্সিন বাইণ্ডার ব্যাবহার করতে হবে।আক্রান্ত হাঁসকে আলাদা করতে হবে।

আমাশয়

সাধারনত বাচ্চা হাঁসে আমাশয় রোগ হয়।আমাশয়ের কারণেই হাঁসের ওজন কমে যায়। টাইজেরিয়া পারনিসিয়া নামক প্রোটোজোয়া এ রোগের কারন।

লক্ষণসমূহ

  • হাসের বাচ্চার ওজন কমে যায়।
  • খাদ্য কম খায়, দূর্বল হয়ে পড়ে।
  • প্রথমে সাদাটে ,পরে রক্ত মিশ্রিত পায়খানা করে।
  • দূর্বল হয়ে মারা যায়।

চিকিৎসা

ই এস বি৩ বা কসুমিক্স প্লাস দেয়া যেতে পারে ।

প্রতিরোধ ও সতর্কতা

হাঁসের খামার সব সময় পরিস্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। সঠিক ভাবে হাসের বাচ্চার যত্ন নিতে হবে। যে পাত্রে হাঁসের খাবার দেওয়া হয় খাওয়া হয়ে গেলে সাথে সাথে পরিস্কার করতে হবে। কলেরা রোগ নাহয় সে জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। 

Leave a Comment