সোনালি মুরগি বাংলাদেশের ডেভেলপকৃত নিজস্ব জাতের মুরগি। ২০১৭ সালে গনপ্রজাতন্ত্রি বাংলাদেশ সরকার জি আই স্বত্বের জন্য সোনালি মুরগিকে নির্বাচিত করে। ১৯৮৭ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল জলিল সোনালী জাতের মুরগী উদ্ভাবন করেছিলেন। পরবর্তিতে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শাহ জামাল স্যারের তত্বাবধনে জাতটির উন্নয়ন করানো হয়।
১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলায় সোনালি মুরগির বিকাশ ঘটে। এরপর দ্রুতই এর আশে পাশের জেলা সমূহ ও পরবর্তিতে সারা বাংলাদেশেই এটি ছড়িয়ে পড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মাংস ও ডিমের স্বাদের কারনে সোনালি মুরগি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে।
মূলত আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী মুরগির জাত উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে সোনালি মুরগি ডেভেলপ করা হয়। দেশি মুরগির সাথে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে উন্নত জাতের ডিমের মুরগি তৈরি করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। ভালো বাজার দরের কারনে বর্তমানে সোনালি মুরগিকে বানিজ্যিকভাবে পালন করা হয়।
সোনালি মুরগির জাত উন্নয়ন
আর আই আর ও ফাউমি জাতের মুরগির ক্রসে সোনালি মুরগি ডেভেলপ করা হয়। এজন্য সোনালিকে ক্রসব্রিড মুরগি বলা হয়। সোনালির প্যারেন্ট সিলেকশন, এই দুই জাতের মুরগির উন্নত লাইনের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে। বানিজ্যিকভাবে, মাংসের জন্য সাধারনভাবে আর-আই-আর এর মোরগ ও ফাউমি জাতের মুরগি ব্যাবহার করা হয়। আর ডিমের জন্য এর রিভার্স অর্থাৎ ফাউমির মোরগ ও আর-আই-আর এর মুরগি নেয়া হয়।
ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য
রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য
বর্তমানে অনেক ব্রিডার খামারি সোনালি মুরগির সাথে ভারী জাতের মোরগ-মুরগি ক্রস করে থাকেন। বাজারে এটি হাইব্রিড সোনালি নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে সোনালি মুরগির স্বকীয়তা ও ডিম উৎপাদনশীলতা কমে যায়।

সোনালি মুরগি পালনের উদ্দ্যেশ্য
বানিজ্যিকভাবে সোনালি মুরগি প্রধানত মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের সোনালি মুরগির বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। সোনালির মাংস ও ডিম বেশ সুস্বাদু। দেশি মুরগির ন্যায় ডিমের স্বাদ ও চাহিদার কারনে ডিমের জন্যও অনেক খামারি সোনালি পালন করে থাকেন।
একদিন বয়সি বাচ্চার চাহিদা থাকায় অনেকেই সোনালি মুরগির ব্রিডার ফার্ম করে থাকেন। এছাড়াও এদের জাত সহনশীলতা ও উন্নত ডিম উৎপাদনশীলতার কারনে গ্রাম-গঞ্জের অনেক বাড়িতে দেশী মুরগির ন্যায় সোনালি মুরগী পালন করা হয়।
সোনালি পালনের বিস্তারিত জানতে আমাদের নিচের লেখাটি পড়তে পারেন।
সোনালি মুরগির বৈশিষ্ট্য
এদের নামকরন এদের গায়ের রঙের কারনে দেয়া হয়েছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুরগির পালকের রং গাঢ় বাদামি বা সোনালি বর্ণ ধারণ করে। সোনালির পায়ের রং হলুদ। আর আই আর মুরগির সাথে এদের পার্থক্য করা যায় এদের পায়ের রং দেখেই।
সোনালি জাতের মোরগের ওজন প্রায় ৩.২ কেজি এবং মুরগীর ওজন প্রায় ২.২ কেজি হয়ে থাকে। তবে উন্নত খাদ্য ও ব্যাবস্থাপনায় ওজন আরো বেশি হতে পারে। লালচে ঝুঁটি ও সোনালি পালকবিশিষ্ট এই জাতের মুরগি অন্যান্য দেশি মুরগির মতোই ১৬ সপ্তাহ বয়স থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে।
সোনালি জাতের মুরগীর আচরণ
সাধারণত সোনালি মুরগি বেশ চঞ্চল। আবদ্ধ পরিবেশে পালন করা গেলেও এরা আবদ্ধ থাকা পছন্দ করেনা। দেশি মুরগির স্বভাব লক্ষনীয়। চড়ে খেতে পছন্দ করে। সোনালি মোরগ বেশ কর্তৃত্বপরায়ন। সোনালি মোরগ কিঞ্চিৎ আক্রমনাত্বক হতে পারে। সাধারণত এরা অপরিচিত বিশেষ আগমন পছন্দ করেনা।
নীচে সোনালি মুরগির সম্পূর্ণ জাতের তথ্য একনজরে দেয়া হলো।
সোনালি মুরগি >> জাতের তথ্যঃ
জাতের নাম | সোনালি মুরগি (Sonali Chicken) |
অন্য নাম | পাকিস্তানি, দেশি কক। |
পালনের উদ্দ্যেশ্য | মাংস ও ডিম উভয়। |
জাতের আচরণ | সামান্য আগ্রাসি, সহজে পালন। |
আকার | মাঝারী। মুরগি ১.৫-২.৫ কেজি ও মোরগ ২.২-৩.৫ কেজি |
তা দেয়ার প্রবণতা | সাধারন। |
ঝুঁটি | ছোট গোলাপি। |
জলবায়ু সহনশীলতা | সকল জলবায়ু। |
ডিমর রঙ | বাদামী ক্রীম। |
ডিমের আকার | মাঝারি। |
ডিম উৎপাদনশীলতা | ভালো (১৮০-২০০ ডিম/বছর) প্রায় ৭৫% |
বৈচিত্র্য | বিভিন্ন রঙের। |
উৎপত্তিস্থল | বাংলাদেশ প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর। |
আরো পড়তে পারেন..
মুরগির বিভিন্ন জাত পরিচিতি ও সাধারণ বৈশিষ্ট
সিল্কি মুরগির বৈশিষ্ট্য এবং সমস্ত তথ্য
সোনালী মুরগীর খাবার কী