রোড আইল্যান্ড রেড বা RIR একটি আমেরিকান ‘দ্বৈত উদ্দেশ্য‘ বা ‘ডুয়াল পারপাজ’ মুরগীর জাত। 1840-এর মাঝামাঝি আমেরিকার “রোড আইল্যান্ড” এবং “ম্যাসাচুসেটস” স্টেটে জাতটি ডেভেলপ করা হয়। ‘রোড-আইল্যান্ড-রেড’ বা ‘আর-আই-আর’ মুরগি ডিমের জন্যই বিখ্যাত তবে এ জাতটি মাংস ও ডিম উভয়ের জন্যই পালন করা যেতে পারে।
আর-আই-আর মুরগি বাড়ির উঠোনে (backyard) পালন করার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় মুরগির জাত। জাতটি প্রধানত এর দৃঢ়তা এবং বেশি পরিমানে ডিম দেয়ার জন্য বেশী জনপ্রিয়। ‘আর-আই-আর’ মুরগি মূলত প্রাচীন মালায়শিয়া হতে আমেরিকা নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। যার ফলে এদের শারিরিক বৈশিষ্টে গভীর রঙ, শক্তিশালী এবং তুলনামূলকভাবে শক্ত পালক পেয়েছে।
প্রথম ‘রোড-আইল্যান্ড-রেড’ মুরগি মূলত অ্যাডামসভিলে জন্ম নেয়। ‘অ্যাডামসভিল’ হচ্ছে লিটল কমপটন এর একটি গ্রাম যা, আমেরিকার ‘রোড আইল্যান্ড’ দ্বীপের একটা অংশ।
ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করা জাত ‘ব্লাক-ব্রেস্টেড’ এবং লাল মালয় মোরগ RIR মুরগির জাতের ভিত্তিপ্রস্তরগুলির একটি। এদের প্রচুর পরিমাণে ডিম দেয়ার সক্ষমতা আছে, তাই জাতটি দ্বারা অনেক আধুনিক সংকর জাত ও হাইব্রিড জাত বানানো হয়েছে।
আমাদের দেশে পাকিস্তান আমলে সরকারিভাবে জাতটি প্রথম আমেরিকা থেকে নিয়ে আসা হয়। এরপর সরকারি খামারে গবেষণার জন্য পালন করা হয়। এদের থেকেই বিখ্যাত সোনালি মুরগি ডেভেলপ করা হয়েছে।
আর-আই-আর মুরগির বৈশিষ্টঃ
‘রোড-আইল্যান্ড-রেড’ বা ‘আর-আই-আর’ মুরগি তুলনামূলকভাবে শক্তপোক্ত ও রাগি। সম্ভবত তারা ‘দ্বৈত-উদ্দেশ্য’ পালনের জন্য সেরা ডিমের মুরগি। বাড়ির উঠান বা ছোট খামারিদের জন্য এরা সবচেয়ে ভাল পছন্দ। এরা অন্যান্য যে কোন জাতের তুলনায় খারাপ অবস্থায়ও ডিম উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে এদেরকে প্রান্তিক খাদ্যেও পালা যায়।
এরা দেখতে কিছুটা আয়তক্ষেত্রাকার, অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ দেহ এবং সাধারণত গাঢ় লাল রঙের হয়ে থাকে। এদের লাল-কমলা চোখ, লাল-বাদামী ঝুটি রয়েছে। এদের পা এবং নখগুলি হলুদ (প্রায়শই পায়ের পায়ের আঙ্গুলের এবং পায়ের পাশে লাল রংয়ের সাথে)। পাখির পালকগুলি মরিচা রঙের,তবে গাঢ় ছায়াগুলি কালো। RIR লাল ইটের রঙের মত। সাধারণত, মোরগের ওজন প্রায় ৩.৫ কেজি এবং মুরগীর ওজন প্রায় ২.৫ কেজি।
জাতের আচরণ বা মেজাজঃ
RIR মুরগি চঞ্চল, নমনিয় কিন্ত শান্ত প্রকৃতির। অন্য জাতের মুরগির সাথে এর বন্ধুত্বপূর্ন আচরণ করে। তবে মাঝে মাঝে মোরগগুলি একটু-আধাটু আক্রমণাত্মক হতে পারে। এই জাতের মুরগি বদ্ধ (ফার্ম) ও খোলা, উভয় পরিবেশেই পালনের উপযুক্ত।
রোড আইল্যান্ড রেড মুরগি | জাতের তথ্য বা প্রোফাইল
জাতের নাম | : রোড আইল্যান্ড রেড। |
অন্য নাম | : RIR, রোড আইল্যান্ড, রেড রোড আইল্যান্ড। |
পালনের উদ্দ্যেশ্য | : মাংস এবং ডিম উভয় দ্বৈত-উদ্দেশ্য। |
জাতের আচরণ | : আগ্রাসী, শান্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ, কৌতুহলী, নয়েজি,সহজে পালন। |
আকার | : ভারী। সাধারণত ২ থেকে ৩ কেজি। |
তা দেয়ার প্রবনতা | : তেমন প্রবণতা নেই। |
ঝুঁটি | : বড়, একক বা গোলাপ ঝুঁটি |
জলবায়ু সহনশীলতা | : সব জলবায়ু (খুব শক্তসমর্থ) |
ডিম রঙ | : বাদামী |
ডিমের আকার | : বড় |
ডিম উৎপাদনশীলতা | : খুব ভাল (প্রায় 280 ডিম/বছর) |
বৈচিত্র্য | : শুধুমাত্র লাল সনাক্ত |
পালনের ভাল দিকঃ
- সুন্দর।
- শান্ত।
- অন্যান্য মুরগির জন্যও ভালো।
- প্রাণবন্ত।
- বড় আকারের ডিম পাড়া।
- ভালো পাখনা।
- বাদামি ডিম পাড়া।
- বলিষ্ঠ পাখি।
- হালকা মেজাজ ।
- উড়াউড়ি করেনা।
পালনের খারাপ দিকঃ
- মোরোগগুলি সামান্য আক্রমনাত্মক হয়
- নেতা সুলভ আচরণ করে।
- মাঝে মাঝে জোরে শব্দ করে।
- ক্ষেতে ঢুকলে চারা গাছ নষ্ট করতে পারে।
‘রোড-আইল্যান্ড-রেড’ মুরগি কি আপনার জন্য উপোযুক্ত?
‘রোড আইল্যান্ড রেড’ মুরগির জন্য আপনার জন্য ভাল যদি আপনি……
- সোনালি মুরগীর প্যারেন্ট করতে চান।
- অনেক ডিম দেয়, এমন জাতের মুরগি পালতে চান।
- বড় বাদামী ডিম উৎপাদন করতে চান।
- শক্ত জাতের মুরগি,এবং ভালো রোগ-প্রতিরোধ সম্পন্য মুরগি পালতে চান।
- আপনার রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে মুরগি পালতে চান।
- কিছু সুন্দর মুরগি পালতে ইচ্ছুক।
- একই সাথে ডিম ও ভালো মাংস হয়, এমন জাতের মুরগি পালতে চান।
- গ্রাম্য পরিবেশে ভালো এমন মুরগি পালতে চান।
- সব জলবায়ুতে বেঁচে থাকতে পারে এমন কিছু শক্ত মুরগি পালতে চান।
- একটি দ্বৈত-উদ্দেশ্য মুরগী বা ডুয়াল পারপাজের মুরগি পালতে চান।
আরো পড়তে পারেন..
বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন দেশী মুরগি ও তার বৈশিষ্ট্য
ফাউমি মুরগি সম্পর্কে দরকারী তথ্য
is this dual purpose hen?
এরা কি ভালো রোগ প্রতিরোধী??
আমাদের দেশের আবহাওয়ায় জাতটি সম্পূর্নরুপে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। ফলে যেকোন বিদেশি মুরগির তুলনায় আর-আই-আর মুরগি ভালো রোগ প্রতিরোধী।
সোনালী মুরগি RIR মুরগী থেকে কোন কোন দিক দিয়ে ভাল?
আকারে ও ডিমের সাইজ সোনালি মুরগি থেকে বড়।
এ জাতের মুরগী কোথায় পাওয়া যাবে?
সরকারি হাস মুরগির খামার গুলিতে পাবেন। তাছাড়া বগুড়া, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন স্থানের লোকাল হ্যাচারীতেও পেতে পারেন।