জাপানীজ কোয়েল (Japanese Quail) সম্পর্কে জানুন

জাপানীজ কোয়েল প্রধানত পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া প্রজাতির কোয়েল। এটিকে সাধারণ কোয়েলের উপ-জাত হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল, কিন্তু এটিকে 1983 সালে স্বতন্ত্র জাত হিসাবে স্বীকৃত দেওয়া হয়। দ্বাদশ শতাব্দীর পর থেকেই জাপানী কোয়েল মানুষ পালন করে আসছে। এটি এখনও প্রোল্ট্রি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান ভূমিকা পালন করে। সাধারণত যেখানে এরা বংশবৃদ্ধি করে সেখানে এদেরকে প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়।

কোয়েল-পাখি
জাপানী কোয়েল

জাপানী কোয়েল আসলে সাধারণ কোয়েল পাখির পোষা মানা রুপ। দ্বাদশ শতাব্দীতে জাপানের সবথেকে বেশি পোষা পাখির রেকর্ড ছিলো এই জাতের কোয়েল। যদিও এর প্রমাণ আছে যে, এই জাতের কোয়েল একাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকেও পোষা হতো। অদ্ভুত শোনালেও সত্য পূর্বে এদেরকে গানের পাখি (songbirds ) হিসাবে পালন করা হতো।

জাপানি কোয়েলের জাত ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই পাখিগুলিকে বাছাই করা শুরু হয়। এবং 1940 সাল নাগাদ কোয়েল প্রোল্ট্রি শিল্প হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানে কোয়েল পাখি পালন সম্পূর্ণ ধংস হয়ে যায় । পাশাপাশি ডিম উতপাদনশীল জাত সহ প্রায় সবগুলি জাতেরই ব্যাপক ক্ষতি হয়। যুদ্ধের পরে পুনরায় কয়েকটি জাত নিয়ে কোয়েল শিল্পকে পুনর্নির্মাণের জন্য কাজ করা হয়। বর্তমানে প্রাপ্ত প্রায় সবগুলি বাণিজ্যিক কোয়েল পাখির জাতই এই পরীক্ষাগার লাইন থেকে ডেভেলপ করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।

আমাদের দেশে প্রধানত জাপানি কোয়েলই দেখা যায়। জাপানি কোয়েল প্রধানত রাশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহে (চীন, ভারত, জাপান এবং কোরিয়া সহ) পাওয়া যায়। এছাড়াও কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনাম সহ অন্যান্য বেশ কিছু এশিয়ান দেশে এদেরকে বানিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। এদেরকে কেনিয়া, মাদাগাস্কার, নামিবিয়া, মালাউই এবং তানজানিয়া মতো কিছু আফ্রিকান দেশেও দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে এই পাখি কয়েকটি প্রকৃত প্রজনন (mutations) আছে। জাতগুলি হল: হোয়াইট, ইটালিয়ান, গোল্ডেন রেঞ্জ, গোল্ডেন টক্সেডো, মঞ্চুরিয়ান, তিব্বতি, টেক্সাস এ্যান্ড এম, রেড রেঞ্জ, রোজেটা, রউক্স ডিলুট এবং স্কারলেট। যাইহোক, নীচে এই জাপানি কোয়েলর সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য দেয়া হলো।

জাপানি কোয়েলের বৈশিষ্ট্যঃ

জাপানীজ কোয়েল একটি অনন্য সুন্দর পাখি। এই পাখির দেহঅবায়ব এদের জীবনের বিভিন্ন অধ্যায়ে উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হয়। পুরুষ এবং মহিলা কোয়েল একই ধরনের পালক এবং রঙ প্রদর্শন করে। এদের মাথা ও ঠোটের রঙ পিঙ্গল বর্নের। এদের মাথার উপরের অংশ থেকে সারা পিঠ জুড়ে ছোট কালো কালো ছোপ বা বাদামি দাগ রয়েছে। বুকের দিকটা সাধারনত সাদা থাকে।এদের পিঠের দৈর্ঘ্য বরাবর চার রঙের বাদামী ফালা আছে।

জাপানী কোয়েল

প্রাপ্তবয়স্ক জাপানি কোয়েলকে, পালকের উপর নির্ভর করে মায়া-মদ্দা পৃথক করা হয়। সাধারনত মায়া ও মদ্দা উভয় পাখিরই বাদামি পালক থাকে। এজন্য গলা এবং বুকের উপরে বাদামি দাগের চিহ্ন দেখে পুরুষ কোয়েল আলাদা করা হয়ে থাকে। পুরুষ পাখির বুকের পালকগুলি গাঢ় লালচে-বাদামি রঙের প্রদর্শন করে যাদিও কখোনো গাঢ় দাগহীন । মায়া পাখির গালের পালকগুলি বেশি ক্রিম রঙের, কিন্তু পুরুষের গালের পালকগুলি লাল-বাদামি। কখনও কখনও, কিছু পুরুষ একটি সাদা রঙের গঠনও প্রদর্শন করে, কিন্তু এটি কোন মায়া জাপানি কোয়েলের মধ্যে দেখা যায়না।

জাপানি কোয়েলের মদ্দা পাখি, মায়া পাখির থেকেও আকারে ছোট হতে পারে। পোষা কোয়েল পাখি সাধারণত 100 এবং 120 গ্রামের মধ্যে হয়ে থাকে (সাধারণ পাখিগুলি বাণিজ্যিক পাখির তুলনায় কম ওজন এবং তা 90 থেকে 100 গ্রামের মধ্যে)। যদিও, বিভিন্ন জাতের লাইনের(Strain) জন্য ওজন পরিবর্তিত হতে পারে এবং বাণিজ্যিক লাইন যা মাংস উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় সেগুলি 300 গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।

এদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল হচ্ছে, নদীতীর, ঘাসক্ষেত্র এবং কৃষি জমির আশেপাশে। ফসলি জমির আশপাশে এরা তুলনামূলকভাবে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। সাধারণত এরা দিনের শুরু এবং শেষ বেলায় খাদ্য খায়। যদিও বাণিজ্যিক পাখির খামারগুলিতে সারা দিন খেতে পারে। গ্রীষ্মকাল এই পাখিদের জন্য আর্দশ প্রজনন ঋতু। শীতকালে ডিম উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। এদেরকে লিটার ও খাচা উভয় সিস্টেমে পালন করা যায়।

জাপানীজ কোয়েল পালনের উদ্দেশ্যঃ

জাপানীজ কোয়েল সাধারণত  ‘দ্বৈত উদ্দেশ্য’ (dual-purpose breed) পালন করা হয়ে থাকে। এটা ডিম এবং মাংস উভয় উত্পাদনের জন্যই ভালো। জাপানী কোয়েল পালন করা খুব সহজ। জাপানী কোয়েল 6 থেকে 7 সপ্তাহের মধ্যে ডিম দেয়া শুরু করে এবং একাধারে  ডিম দিতে থাকে। এরা বছরে প্রায় 300 ডিম দিতে পারে। এরপর ডিম উত্পাদন ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। কোয়েল পাখির মাংস খুব সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। এদের মাংসে খুব কম ফ্যাট থাকে । এজন্য কোয়েলের মাংস উচ্চরক্তচাপ রোগীদের জন্য খুবই ভালো। অন্যান্য হাঁস-মুরগির তুলনায় কোয়েলের মাংস ও ডিম ভোজনের জন্য খুব ভাল বলে মনে করা হয়।

কোয়েল পাখি

নিম্নোক্ত চার্টে জাপানী কোয়েলের পূর্ণ প্রজাতির প্রোফাইল পর্যালোচনা করা হলো।

জাপানি কোয়েল || জাতের তথ্য

জাতের নাম: জাপানীজ কোয়েল (Japanese Quail )
অন্য নাম: Tuxedo
পালনের উদ্দ্যেশ্য: মাংস এবং ডিম উভয় বা দ্বৈত-উদ্দেশ্য(Dual-Purpose)।
জাতের আচরণ: অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সক্রিয় পাখি, সাধারণত এটি চড়ে বেড়ানো পাখির একটি জাত।
আকার: সাধারণত 100 থেকে120 গ্রাম, কিন্তু বাণিজ্যিক লাইনগুলির ওজন 300 গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে
ডিমের আকার: ছোট।
ডিম উৎপাদনশীলতা: খুব ভাল (প্রায় ৩০০ ডিম/বছর)
ডিম রঙ : নীল ও বাদামী কালারের ছোট ছোপ ছোপ দাগযুক্ত।
বৈচিত্র্য: সাদাও হতে পারে।
জলবায়ু সহনশীলতা: সব জলবায়ু (খুব শক্তসমর্থ)।
মূল দেশ: পুর্ব এশিয়ার দেশগুলি।
জাপানি কোয়েলের প্রোফাইল

Leave a Comment