খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস হচ্ছে ডিমের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত ও জনপ্রিয়। এটি প্রাচীন একটি হাঁসের জাত যা ১৮৯৮ সালের দিকে ইংল্যান্ডে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিল। ইংল্যান্ডের গ্লুস্টারস্টারশায়ারে ‘মিসেস অ্যাডেল ক্যাম্পবেল‘ নামক এক মহিলা সর্বপ্রথম খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস ডেভেলপ করেছিলেন বলে জানা যায়।
তিনি মূলত ভালো মানের কিছু ইন্ডিয়ান রানার হাঁস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক কিছু হাঁসের সাথে ক্রস করে জাতটি ডেভেলপ করেছিলেন। তার নামেই মূলত এটির ক্যাম্পবেল নামকরন করা হয়েছে। এভাবেই ইন্ডিয়ান রানার হাঁস, ক্যাম্পবেল হাঁসের উন্নয়ন ভিত্তি গঠন করে।
ব্রিটিশ সেনা ইউনিফর্মের কালার খাকি রঙের, তাই এটির সাথে মিল রেখে মিসেস ক্যাম্পবেল, হাঁসের এই নতুন জাতটিকে ‘খাকি ক্যাম্পবেল’ নাম দিয়েছিলেন। ১৯২৪ সালে যুক্তরাজ্যের পোল্ট্রি ক্লাবের মানদণ্ডে এদেরকে নথিভুক্তকরা হয়। এবং ১৯৪১ সালে আমেরিকান পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পরিপূর্ণতার মানদণ্ডে গৃহিত হয়।
বৃটিশরাই প্রথম জাতটিকে আমাদের উপমহাদেশে নিয়ে আসে। এখানকার পরিবেশে জাতটি ভালোভাবেই খাপ খাইয়ে নেয় এবং দ্রুতই জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই জাতটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিমের জাতগুলির মধ্যে একটি। এদেরকে সারা বিশ্বব্যাপী দেখতে পাওয়া যায়।
একসময় খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস জাতের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখলেও বর্তমানে এটি আমাদের দেশি হাঁসের সাথে মিশে এদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট হারিয়ে ফেলে। হাঁস সাধারনত খোলা মাঠে চড়ে বেড়ায় বলে এর স্বতন্ত্রতা ধরে রাখা বেশ কঠিন। বাংলাদেশের সরকারি হাঁস-খামার গুলিতে জাতটি সংরক্ষনের চেষ্টা চলছে।
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের বৈশিষ্ট্য
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস মাঝারি আকারের। মায়া হাঁসের পালকের রং খাকি, মাথা এবং ঘাড় ব্রোঞ্জ রঙের। পা ও পায়ের পাতার রং কালো। মদ্দা হাঁসের সবুজ পিঠ, সমৃদ্ধ গাঢ় কমলা পা ও গাঢ় বাদামী চোখ আছে।মায়া হাঁসের ঠোটের রং কালো হলেও মদ্দা হাঁসের ঠোটের রং নীলাভ কালো। এদের চোখ গাঢ় বাদামী ও গড় ওজন ১.৫ থেকে ২.২ কেজি।
খাকি ক্যাম্পবেল বেশ শান্ত, সক্রিয় এবং সহনশীল জাতের একটি হাঁস। এরা বেশ চঞ্চল ও চড়ে বেড়ানো জাত হিসেবে সুখ্যাতি আছে। চারণভূমিতে চড়ে খাওয়ার জন্য এদের বেশ জায়গা প্রয়োজন। প্রায় সব ধরনের জলবায়ুতেই এরা ভালভাবেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
এদের অসাধারণ ডিম দেয়ার ক্ষমতা আছে। সাধারণত এরা ৫ বয়স থেকে ডিম দেয়া শুরু করে। এবং গড়ে একটি হাঁস প্রতি বছর প্রায় ৩০০ ডিম দিতে পারে। অবশ্যই পালনের উপর ভিত্তি করে ডিমের পরিমান আরো বাড়তে বা কমতেও পারে। ডিমের রং হালকা সাদা বা সবুজাভ-সাদা এবং সুন্দর গঠন।
পালনের উদ্দ্যেশ্যঃ
বেশিরভাগ খামারী ডিম উৎপাদনের জন্য খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করে থাকে। যদিও এদের মাংসের স্বাদ চমৎকার। তবে ডিমের উৎপাদনের জন্যই এরা সর্বাধিক জনপ্রিয়। বাণিজ্যিকভাবে হাঁসের ডিম উৎপাদনের জন্য জাতটি উপযুক্ত।
এছাড়াও মাংসের জন্য এদেরকে পালন করা হয়। ডিমের উদ্দেশ্যে এ জাতের হাঁস পালন করা হলেও ডিম পাড়ার পর একে মাংসের জন্য ব্যবহার করা যায়।
বিশেষ নোট
খাকি ক্যাম্পবেল বেশ কষ্টসহিষ্ণু জাতের হাঁস। এদের পালন করতে বেশি পানির প্রয়োজন হয় না। কেবল খাবার ও গলা ডোবানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানি পেলেই এরা সহজ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তাই পুকুর ডোবা বা জলাশয় না থাকলেও সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় এদেরকে পালন করা সম্ভব।
নিম্নলিখিত চার্টে খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের সম্পূর্ণ প্রোফাইল বর্নণা করা হলো।
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস | জাতের তথ্য বা প্রোফাইল
জাতের নাম | : খাকি ক্যাম্পবেল । |
পালনের উদ্দ্যেশ্য | : ডিমের জন্য। |
জাতের আচরণ | : শান্ত ,আকর্ষনীয়,শক্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ । |
আকার | : মাঝারি। সাধারণত ১.৪ থেকে ২.২ কেজি। |
তা দেয়ার প্রবনতা | : সাধারন। |
জলবায়ু সহনশীলতা | : সব জলবায়ু । |
ডিম রঙ | : সবুজাভ -সাদা, মিশ্রিত সাদা। |
ডিমের আকার | : বড়। (৭০ গ্রাম প্রায়) |
ডিমউৎপাদনশীলতা | : ভাল (প্রায় ৩০০ ডিম/বছর) |
বৈচিত্র্য | :খাকি রঙের। |
মূল দেশ | : ইংল্যান্ড। |
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালনের সুবিধাঃ
- ২-৩ বছর বয়স পর্যন্ত ডিম দেয়।
- হাঁসের ডিম সুস্বাদু। সবাই খেতে পছন্দ করেন।
- হাঁসের বাচ্চার দাম কম।
- এদের ডিমের সাইজ বড়।
- ডিম উৎপাদন কমে গেলে ৩ বছর পর হাঁসগুলো মাংস হিসেবে বাজারে বিক্রি করা যাবে। হাঁসের মাংস মুরগির চেয়ে সুস্বাদু।
- হাঁস রাতে ডিম পাড়া শেষ করে। ফলে নজরদারির খরচ কম লাগে।
- এরা ১৭-১৮ সপ্তাহ বয়সেই ডিম দেয়।