হাঁস পালনের ক্ষেত্রে সবার মনেই একটা প্রশ্ন থাকে, কোন জাতের হাঁস বেশি ডিম দেয় ? এর উত্তর হচ্ছে সঠিক খাদ্য ব্যাবস্থাপনায় খাকি ক্যাম্পবেল ও জিন্ডিং হাঁস সর্বাধিক ডিম দেয়। এই জাত দুটির হাঁস প্রায় ৮৫% পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। তবে ইন্ডিয়ান রানার হাঁসও বেশ ভালো ডিম পারে।
প্রথমত আমরা জানবো ডিম উৎপাদনকারী হাঁস কোনটি?
যে জাতের হাঁস বেশি পরিমানে ডিম দেয় অর্থাৎ উৎপাদণের জন্য পালন করা হয় তাদের কে ডিম উৎপাদনকারী হাঁস বা ডিম দেওয়া হাস বলে।। ডিম উৎপাদনকারী হাঁসের জাত হলো- খাকি ক্যাম্পবেল, জিনডিং, ইন্ডিয়ান রানার ইত্যাদি।
খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস (khaki Campbell)
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস আমাদের দেশে ডিম উৎপাদনের জন্য সবথেকে জনপ্রিয়। পৃথিবীর অন্যতম বেশি ডিম উৎপাদন ক্ষমতার অধিকারী এই খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস। এই জাতটিকে অনেকে দেশীয় জাত মনে করে ভুল করে।
খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস মাঝারি আকারের। মায়া হাঁসের পালকের রং খাকি, মাথা এবং ঘাড় ব্রোঞ্জ রঙের। পা ও পায়ের পাতার রং কালো। হাঁসার সবুজ পাখা, সমৃদ্ধ গাঢ় কমলা পা ও গাঢ় বাদামী চোখক। ঠোটের রং নীলাভ কালো। এদের চোখ গাঢ় বাদামী ও গড় ওজন ১.৬ থেকে ২.২ কেজি।
ডিম উৎপাদন ক্ষমতা
খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁসের ডিম পাড়ার হার অন্য হাঁসের তুলনায় বেশি। সঠিক ব্যবস্থাপনায় খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। প্রতিটি ডিমের গড় ওজন ৬০-৭০ গ্রাম হয়। এদের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা জাতের ব্লাড পার্সেন্টটেজ ও ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে।
আরো জানতে পড়ুনঃ খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস- জাতের তথ্য ও বিস্তারিত
জিনডিং জাতের হাঁস (jinding duck)
জিনডিং জাতের হাঁস (jinding duck) ডিম উৎপাদনের জন্য উপমহাদেশের প্রায় সকল দেশেই পালন করা হয়। এরা লবনাক্ত পরিবেশ পছন্দ করে। সমূদ্র উপকুলবর্তী এলাকায় এদের দেখতে পাওয়া যায়। এ জাতের হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। সহজে রোগাক্রান্ত হয় না।
জিনডিং হাঁস হালকা থেকে মাঝারি আকারের হয়। মায়া হাঁসের পালক খাকি রঙের। পা ও পায়ের পাতার রং কালো। ঠোটের রং নীলাভ কালো। এদের চোখ গাঢ় বাদামী ও গড় ওজন ১.৫ থেকে ২.২ কেজি।
জিনডিং হাঁস ডিম উৎপাদন ক্ষমতা
জিনডিং হাঁস বছরে ২৬০ থেকে ৩২০ টি ডিম দেয়। প্রতিটি ডিমের গড় ওজন ৬৫ গ্রাম হয়। হাঁসের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা জাতের ব্লাড পার্সেন্টটেজ ও ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে।
ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস (Indian runner duck)
ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস দেখতে কিছুটা পেঙ্গুইনের মত। এরা গলা উঁচু করে পেঙ্গুনের মত সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকে ও চলাচল করে। ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস তুলনামুলক ভালো ডিম দেয়। এদের পালকের রং প্রধানত সাদা হলেও বর্তমানে বিভিন্ন বর্ণের রানার হাঁস দেখতে পাওয়া যায়।
আরো জানতে পড়ুনঃ ইন্ডিয়ান রানার হাঁস – জাতের তথ্য ও বৈশিষ্ট্য
রানার হাঁসের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা
ইন্ডিয়ান রানার হাঁসের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা খাকি ক্যাম্পবেল হাঁসের তুলনায় কম হলেও এরা বছরে ২০০ থেকে ২২০ টিডিম দেয়। ইন্ডিয়ান রানার হাঁস মূলত ডিম উৎপাদনের জন্যই পালন করা হয়।
বেইজিং জাতের হাঁস
পিকিন বা বেইজিং জাতের হাঁস মাংস উৎপাদনকারী হিসেবে ভীষণভাবে সমাদৃত।এদের মাংস খুব সুস্বাদু। পিকিন হাঁস আকারে বড় হলেও এদের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা খারাপ নয়। তবে লম্বা সময় ধরে এরা ভালো ডিম দেয় না।
আরো জানতে পড়ুনঃ বেইজিং হাঁস বা পেকিন হাঁসের তথ্য
ডিম উৎপাদন ক্ষমতা
বেইজিং বা পিকিন হাঁসের ডিম উৎপাদন ক্ষমতা বছরে প্রায় ১৮০-২২০ টি। অন্যান্য মাংস উৎপদনকারী হাঁসের তুলনায় পিকিন বা বেইজিং জাতের হাঁসের ডিম পাড়ার হার বেশি। আর এজন্য এই হাঁস পালনে অধীক লাভবান হওয়া যায়।