আমাদের মধ্যে একটি ধারনা কাজ করে যে, হাঁসের বাচ্চা জন্মের পরপরই ছেড়ে দিলে ভাল হয়। কিন্ত বৈজ্ঞানিক ভাবে এই ধারানার কোন ভিত্তি নেই। বরং একদিন বয়সি হাঁসের বাচ্চা জন্মের পর পরই পানিতে ছেড়ে দিলে বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা নিচে তুলে ধরা হলো।
হাঁসের বাচ্চার ব্রুডার ঘরঃ
হাঁসের বাচ্চা পালন করতে হলে বাচ্চার কয়েকটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। হাঁসের বাচ্চাকে গরমকালে ২১ দিন এবং শীতকালে ২৮ দিন ব্রুডার ঘরে রাখতে হবে।
বাচ্চার প্রাথমিক অবস্থায় ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত কৃত্তিম উপায় যে ঘরে তাপ সরবরাহ করা হয় তাকে ব্রুডার ঘর বলে।
ব্রুডার ঘর সাধারনত দক্ষিনমুখি হওয়া বঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও বাতাস থেকে ঘরকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য কাপড় বা চটের পর্দা লাগিয়ে সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
যেভাবে ব্রুডার ঘর রেডি করবেনঃ
ব্রুডার ঘর পরিস্কার ও জীবানুমুক্ত করার পর প্রয়জনীয় যন্ত্রপাতি ঘরে স্থাপন করতে হবে। যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে..
১) হিটিং ডিভাইজ /রুম গরম করা যন্ত্রপাতিঃ
প্রথমত হোভার স্থাপন করতে হবে। হোভার হচ্ছে টিনের ছাতার মত যা উপরে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং তাপ প্রদান করা হয়। হোভার বৈদ্যুতিক লাইট বা অন্য কোন উপায়ে তাপ সরবরাহ করে।
হোভার ঘিরে চিকগার্ড, হার্ডবোর্ড বা চাটাই গোলাকার করে রাখতে হয়। এর ভিতরেই হাসের বাচ্চা পালন করতে হয়।
২) লিটারঃ
মেঝেতে ২-৩ ইঞ্চি পুরু ধানের তুষ বা কাঠের গুড়া বাচ্চার মল-মূত্রের জলীয় অংশ শুষেনিতে সাহায্য করে। এর উপর চটের ব্যাবস্থা করতে হবে। নিয়মিত চট পালটিয়ে দিতে হবে।
৩) খাবার ও পানির পাত্রঃ
বাচ্চার খাদ্যের জন্য বিভিন্ন সাইজের খাবারের পাত্র ও পানির পাত্র বাজারে পাওয়া যায়। ২৫ টি বাচ্চার জন্য একটি খাবারের পাত্র ও ৫০ টি বাচ্চার জন্য একটি পানির পাত্র দেয়া যেতে পারে।
হাসের বাচ্চা পানির সংস্পর্শে বেশি থাকতে চায়। তাই লক্ষ রাখতে হবে যেন বাচ্চা পানির পাত্রের ভিতর নেমে ভিজে না যায়। এক্ষেত্রে পানি খাওয়া শেষে পানির পাত্র তুলে রাখা যেতে পারে। অথবা নিপল ড্রিংকারও ব্যাবহার করা যেতে পারে।
প্রয়োজনীয় তাপ প্রাদানঃ
বয়স (দিন) | তাপমাত্রা* (ফারেনহাইট) | তাপমাত্রা* (সেলসিয়াস) |
১-৭ | ৯০-৮৮ | ৩২ |
৮-১৪ | ৮৫ | ৩০ |
১৫-২১ | ৮০ | ২৭ |
২২-২৮ | ৭৫ / স্বাভাবিক | ২৪ / স্বাভাবিক |
আর্দ্রতাঃ
ব্রুডার ঘরে বাতাসের আর্দ্রতা হবে ৭৫-৮০% । অর্থাৎ ঘর বেশী ভিজা বা একেবারে শুকনা হবে না। আর্দ্রতা বেশী হলে ধরে বিষাক্ত গ্যাস জমা হয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
বায়ুচলাচলঃ
বায়ু চলাচলের আদর্শ হচ্ছে ০.৭ ঘনমিটার / সেমিঃ / বাচ্চা। বা স্বাভাবিক বাতাস চলাচল করবে। অতিরিক্ত বাতাস অবশ্যই রোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে ব্রুডার ঘরে অক্সিজেনের যেন ঘাটতি না পড়ে এবং ব্রুডারে অ্যামোনীয়া গ্যাসের সৃষ্টি না হয়। এজন্য মাঝে মাঝে ঘরের পর্দা তুলে দিয়ে গ্যাস বের করে দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় আলোঃ
হাঁসের বাচ্চা পালনের জন্য আলোক কর্মসূচি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্রুডিং সময়ে প্রাথমিক অবস্থায় ২৪ ঘন্টাই আলোর ব্যাবস্থা করতে হবে। এতে করে বাচ্চা সহজেই খাদ্য ও পানির পাত্র চিনতে পারে এবং খাদ্য গ্রহনে উত্সাহিত হয়।
পরবর্তিতে একঘন্টা করে আলো দেয়া কমিয়ে আনতে হবে। দুই মাস বয়স থেকে ডিমে আসা পর্যন্ত কোন প্রকার কৃত্রিম আলোর দরকার নেই। ডিম পারা শুরু হলে কৃত্রিম আলোর ব্যাবস্থা করতে হবে।
খাবার ও পানিঃ
হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতিতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ন হলো খাদ্য ও পানি ব্যাবস্থাপনা। হাঁসের বাচ্চার বয়স অনুসারে তিন প্রকার খাবার দিতে হয়। যথা, ডাক স্টার্টার, ডাক গ্রোয়ার ও ডাক ব্রিডার।
বাচ্চা হতে প্রায় একমাস পর্যন্ত (অনেক সময় দেড় মাস পর্যন্ত) ডাক স্টার্টার খাদ্য প্রদান করতে হয়। ডাক স্টার্টার খাদ্যে কমপক্ষে ২০% প্রোটিন ও ২৮৫০ কিলোক্যালরি বিপাকীয় শক্তি থাকতে হবে।
এরপর ৩ থেকে ৩.৫ মাস পর্যন্ত ডাক গ্রোয়ার খাদ্য প্রদান করতে হবে। ডিম পারা শুরু করলে ৫% ডিমে আসা পর্যন্ত প্রিলেয়ার খাদ্য দেয়া যেতে পারে।
অতঃপর ডিম পারা শুরু করলে ডাক ব্রিডার/লেয়ার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। হাঁসের খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য তৈরি করা নিয়ে আমাদের নিচের লেখাটি অনুসরন করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ বয়স অনুসারে হাঁসের খাদ্য ব্যবস্থাপনা।
প্রাথমিক অবস্থায় বিশেষ নোটঃ
বাচ্চা নিয়ে ব্রুডারে ছেড়ে দেয়ার পর প্রথমিকভাবে পানিতে গ্লুকোজ দেয়া যেতে পারে। প্রথম তিনদিন পানিতে যেকোন একটি এন্টিবায়োটিক প্রদান করলে বাচ্চার মৃত্যুহার কম হয়।
হাঁসের বাচ্চার ব্রূডার সবসময় শুকনো রাখতে হবে। এজন্য কিছু সময় পানির পাত্র সরিয়ে রাখা যেতে পারে। তবে খাদ্য দেয়ার পূর্বেই পানির ব্যাবস্থা করতে হবে।
হাঁসের বাচ্চার ঔষধ প্রদানঃ
রোগের উপর ভিত্তি করেই চিকিৎসা করতে হবে। মনে রাখা দরকার রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করাই উত্তম। এজন্য খামারে যাতে রোগের আক্রমন দেখা না দিতে পারে তার জন্য যথাযত টিকা প্রদান করতে হবে।
নিয়মিত মাল্টি ভিটামিন দেয়া ভালো। জৈব নিরাপত্তা মেনে চলতে হবে। অসুস্থ হলে ভেটেনারিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ হাঁসের টিকা প্রদান কর্মসূচি
হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতি সম্পর্কিত বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরলে ইমেইল করতে পারেন।
ইমেইলঃ admin@poultrygaints.com
hashear pani kawabar upy
.
হাঁসের বাচ্চার প্রথম তিনদিন পানির সাথে কি এন্টিবায়োটিক দিতে হবে?
ওষুধ এর প্রয়োজন হয় কিনা, ঘর জিবানুমুক্ত রাখতে কি দিতে হবে।